রূপ যৌবন সব হারিয়ে আজ উটের এই অবস্থা
অনেক অনেকদিন আগের কথা সে সময় সারা জগত জুড়ে যত্ত প্রানী ছিল তার মাঝে সবচেয়ে সুন্দর দেখতে ছিল কিন্ত উট। কারণ তার লেজটি ছিল এক মস্ত গোছা আলা লম্বা ঘন সিল্কের চুলের মত, যা কিনা সামান্য বাতাসেই উড়তে থাকতো আলোর ছটা ছড়িয়ে। আর সেই সাথে ছিল নয়ন জুড়ানো নঁকশা করা বিশাল দুটো শিং যার আগাটুকু ছিল স্বর্নালী।উটের সেই রূপের বর্ননা দিতে গেলে রাশিয়ান উপকথার মত বলতে হয় এ যেন ‘রূপকথাতে বলার নয়, কলম দিয়ে লেখার নয়’। মেজাজ মর্জি আর স্বভাবেও উট বাবাজী ছিল ভারী নরম শরম ।
উট তার নিজের এই অসামান্য রপ সম্পর্কে ভালো করেই জানতো। তাই সারাদিন নদীর তীরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পানিতে তাঁর ছায়া দেখতো আর গর্বের সাথে অহংকার মিলে বুকটা তার ফুলে উঠতো দশ হাত। সে পথে যার সাথেই দেখা হতো তাকেই তাঁর লম্বা গলাটি বাড়িয়ে বলে উঠতো ,‘শুনে নাও তোমরা সারা পৃথিবী ঢুড়ে বেড়ালেও আমার মত এত সুন্দর লেজ আর শিং আলা রূপসী প্রানী কোথাও পাবে না বলে দিলাম’।
উটের এই সব কথা অহংকারী কথাবার্তা শুনে অন্যান্য প্রানীরা কেউ ছিল ক্ষুদ্ধ, কেউ ছিল বেজার।
মনে হয় এত গর্ব তার না করাই বোধহয় ভালো ছিল।
একদিন উটের ভীষন পানি পিপাসা লাগলো। নদী থেকে পেট ভরে পানি খেয়ে মুখ তুলতেই দেখা হলো মরাল অর্থাৎ এক কাস্পিয়ান লাল হরিন এর সাথে।
কাস্পিয়ান লাল হরিণ
ধুর্ত হরিনটি উটকে দেখে এগিয়ে এসে মিনতির সাথে বল্লো ‘উট ভাই, উট ভাই একটা কথা শুনবে’?
"কি কথা বলো শুনি "? উট জিজ্ঞেস করলো।
হরিণ মাথা নীচু করে করুন গলায় বল্লো,‘ ভাই আজ আমার একটা দাওয়াত আছে, কিন্ত এই শিং ছাড়া মাথায় সেখানে যেতে ভীষন লজ্জা করছে। তুমি যদি তোমার শিং দুটি আমাকে কিছুক্ষনের জন্য ধার দিতে তাহলে আমি হয়তো দাওয়াতে যেতে পারতাম’।
লাল হরিনের কথা শুনে উটের মনটা নরম হয়ে গেল "ওহ এই কথা আচ্ছা নাও, নাও", বলে সাথে সাথে মাথা থেকে শিং দুটো খুলে দিল।
আর কপালের কি ফের, লাল হরিণকে শিং ধার দেয়ার কিছুক্ষন পরেই সেই একই জায়গায় উটের সাথে দেখা হলো এক ঘোড়ার।
'কেমন আছো ঘোড়া মশাই'? উট এ কথা জিজ্ঞেস করতেই ঘোড়া ম্লান গলায় বল্লো আজ তার এক জায়গায় দাওয়াত।কিন্ত এই বিশ্রী লেজ নিয়ে সে কেমন করে যাবে ? উট যদি দয়া করে তাঁর এই অপরূপ সুন্দর লেজটা কিছুক্ষনের জন্য তাকে ধার দেয় তবেই সে দাওয়াতে যেতে পারে।
কি আর করা ঘোড়ার দুঃখের কাহিনী শুনে উট আর থাকতে পারলো না । বদলে নিল তার সেই অপরূপ রেশম কোমল বিশাল লেজটি ঘোড়ার ঝাঁটার কাঠির মত লেজের সাথে।
লেজ দুলিয়ে দুলকি চালে ঘোড়া ছুটছে স্তেপে
এরপর উটের অপেক্ষার পালা হলো শুরু । কিন্ত ধুর্ত লাল হরিণ আর ঘোড়া দুজনেই শিং আর লেজ লাগিয়ে দৌড় দৌড় যাকে বলে এক্কেবারে পগারপাড়। এদিকে উট শুধু নদীতে নেমে পানি খায় আর পথের দিকে চেয়ে থাকে। মিনিটের পর মিনিট, ঘন্টার পর ঘন্টা পার হয় কিন্ত হরিণ বা ঘোড়া কারো সাক্ষাৎই নেই।তাদের পথের তাকিয়ে থাকতে থাকতে উটের চোখ ব্যাথা করতে লাগলো তাও দেখা নেই তাদের।
লাল হরিণ উটকে ধোকা দিয়ে সোজা রুশ দেশের বরফের রাজ্য তাইগায় গিয়ে হাজির।আর তারপর থেকে সেখানেই শুরু করলো বসবাস। খোলা সেই স্তেপের প্রান্তরে যেখানে উট থাকতো সেখানে লাল হরিণ আর জীবনে কখনোই আসলো না। আর সবার কাছে ভাব দেখাতে লাগলো শিং গুলো যেন সব সময় তারই ছিল।
এদিকে ঘোড়াও উটের লেজ ফেরত দেয়ার নামটিও করে না। একবার আচমকা দেখা হয়েছিল উটের সাথে আর তাকে দেখেই অনেক অনেক দূরে দৌড়ে পালিয়ে গেল ঘোড়া বাবাজী। এ ভাবেই বোকা উট অহংকার আর সরল বিশ্বাসের কারনে খুইয়ে ফেল্লো তার অপরূপ লেজ আর শিং দুটো আর সেই সাথে তার ন্ম্র স্বভাবটিও।
এর পর থেকেই পথ চলা শুরু হলো ঝাঁটার কাঠির মত এত্তটুকুন লেজ আর শিং ছাড়া ন্যাড়া বেল মাথাটি নিয়ে জগতের সবচেয়ে বদমেজাজী প্রানী উটের বাকিটা জীবন।
আমার কথাটি ফুড়োলো
নটে গাছটি মুড়ালো
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জুন, ২০১৯ সকাল ১১:৪১