
অস্কার ক্লাস সাবমেরিন
রাত ৯.৩০ ১১ই অগাস্ট ২০০০
শুভরাত্রি প্রিয়তমা মারিয়া,
জান আমার, কেমন আছো বলোতো আমাকে ছেড়ে!! মনে হয় ভালোই আছো !! না না দুষ্টুমী করলাম তোমার সাথে। আমি জানি আমাকে ছেড়ে তুমি এক মুহুর্তও ভালো থাকতে পারো না।
তারপর কি খবর, সব ভালোতো? এখন বলো আমার দুচোখের দুটি তারা পাশা আর মাশা কেমন আছে? ওরা তো এখন ঘুমিয়ে গেছে তাই না!! তুমি বোলো আমি অনেক মিস করি ওদের। কেমন করে যে আমার চোখের আড়ালে বড় হয়ে যাচ্ছে ওরা বুঝতেই পারছিনা ।ওদের আমার অনেক আদর দিও। আর তোমার জন্য রইলো একটু খানি! কি রাগ করলে নাকি !! নাহ্ তোমার জন্যও অনে...ক অনেক আদর।
আমি জানি মারিয়া তুমি এখন আমার মতই আমার কথা ভাবছো বসে বসে। আমার সামরিক পোশাক পরা যে ছবিটা আমাদের বিছানার সাইড টেবিলে রাখা আছে ওটার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছো, তাই না ! মন খারাপ কোরো না লক্ষীটি, মহড়া শেষে আমি খুব শীঘ্রই তোমাদের কাছে ফিরে আসবো।
শোনো আমরা এখন আছি ব্যারেন্ট সাগরে, ঐ যে যার আগে নাম ছিল মুরমন্সক সাগর। রাশিয়ার উত্তরে হীম শীতল আর্কেটিক মহাসাগরের কাছে। আমাদের রাশিয়ান নৌবাহীনি নর্দান ফ্লিটের নৌ মহড়ায় যোগ দিতে এসেছি আমরা । না না চিন্তা কোরো না। ভয়ের কিছু নেই। এটা তো আর যুদ্ধ না। মনে রেখো তুমি একজন কমান্ডারের বৌ। তুমি হবে সাহসী।
তাছাড়া আমাদের এই বিশাল অত্যাধুনিক ক্রুজ মিসাইল সাবমেরিনটি নিউক্লিয়ার পাওয়ারে চালানো। নামটিও কিন্ত ভারী সুন্দর, রাশিয়ার কুরস্ক শহর যেখানে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় নৌ যুদ্ধ হয়েছিল ১৯৪৩ সনে। সেই কুরস্ক শহরের নামে এই সাবমেরিন, 'কে - ১৪১ কুরস্ক' ন্যাটোর ভাষায় যার নাম '২য় অস্কার'।
জানো একশ চুয়ান্ন মিটার লম্বা,আর চারতালা সমান উচু এই সাবমেরিনে চালানোর জন্য দুটো পারমানবিক চুল্লি, দুটো স্টিম টারবাইন আর সাত ব্লেডের দুটো প্রপেলার আছে, চিন্তা করতে পারো কি শক্তিশালী আমাদের এই 'কুরস্ক'!
এত বড় সাবমেরিন এর আগে আর কখোনো তৈরী হয়নি। উন্নতমানের নিকেল, ক্রোম আর স্টেইনলেস স্টিল দিয়ে তৈরী অত্যন্ত মজবুত এই সাবমেরিন মনে রেখো তোমার স্বামী চোখ বুজেই চালাতে পারে।
মারুশা প্রিয়া আমার, তোমার গর্বিত হওয়া উচিৎ যে তুমি একজন পৃথিবী বিখ্যাত নৌ সেনাপতি এবং অস্কার ক্লাস সাবমেরিন 'কুরস্কের' অধিনায়কের স্ত্রী।
তুমি হয়তো জেনে থাকবে সোভিয়েত সাম্রাজ্যের পতনের আগে স্নায়ু যুদ্ধের সময় ডিজাইন করা এই সাবমেরিনটি কিন্ত বিরানব্বই সালে তৈরী হয়েছিল।আর কমিশন পেয়েছিল চুরানব্বই সালের ডিসেম্বরে। কমিশন পাওয়া মানে জানতো তাইনা ? এর মানে হলো আমাদের কুরস্ক এখন রাশিয়ান নৌ বহরের এক গর্বিত সদস্য ।
তোমার মনে আছে কসোভো যুদ্ধের সময়ও আমি কুরস্কের অধিনায়ক হয়ে ভুমধ্যসাগরে আমেরিকান নৌ বাহীনির সিক্সথ ফ্লিটকে সাফল্যের সাথে অনুসরন করেছিলাম।
এখন অনেক কাজ বাকি আছে ।কাল মহড়া শুরু হবে ভোর থেকে, ফাইনাল ব্রিফিং করতে হবে রাতে আরেকবার। ঘুম তো আর হবেনা বুঝতেই তো পারছো, তবে তুমি ঘুমিয়ে পড়ো সোনা বৌ আমার আর আমাকে নিয়ে সুন্দর একটা স্বপ্ন দেখো।
কাল আবার লিখবো। তারপর ফিরে এসে একদিন তোমার হাতে হাতেই এ চিঠি পৌছে দেবো।
ইতি তোমার প্রিয়তম স্বামী পাভেল।
রাত ৯টা ১১ই অগাস্ট ২০০০
নাস্তাশিয়া আমার আদরের নাস্তিয়া, প্রেয়সী আমার।
কেমন আছো বলোতো আমার লক্ষীটি ? আমি জানিনা তোমার কেমন লাগছে, কিন্ত তোমাকে ছেড়ে থাকতে আমার অনেক অনেক কষ্ট হচ্ছে যা আমি লিখে বোঝাতে পারবো না। এবার ভালো করে একটি বারও তোমার সাথে দেখা করা বা কথা বলার সুযোগ পাইনি, এত ব্যাস্ত ছিলাম।
শোনো এবার এসেই কিন্ত তোমার বাবা মা র কাছে বিয়ের প্রস্তাব দেবো আর কোনো কথা নেই। অনেক দিন হয়েছে আমাদের পরিচয়, এবার স্থির হয়ে বসতে হবে দুজন বুঝেছো। এসব নিয়ে আমি অনেক ভাবি যখন কোনো কাজ থাকে না।
কাল ভোর থেকে শুরু হচ্ছে আমাদের নৌ মহড়া।তুমি কিন্ত আমার জন্য একটুও ভেবো না সোনা। কারন আমাদের যে কমান্ডার উনি সাবমেরিন চালানোর ব্যাপারে খুবই দক্ষ একজন অফিসার। তাছাড়া আমরা তো আর যুদ্ধ করছিনা। কাল আমাদের মহড়ায় আমরা শুধু দুটো ডামী টর্পেডো ছুড়ে মারবো আমাদের নর্দান ফ্লিটের কিরভ ক্লাস যুদ্ধ জাহাজ পিওতর ভেলিকির দিকে। সব কিছু ঠিক ঠাক আছে কি না পরীক্ষা করে দেখার জন্য।
জানো নাস্তিয়া আমাদের সাবমেরিনটি কিন্ত অনেক দ্রুতগতিতে চলতে পারে, পানির নীচে এর গতি প্রতি ঘন্টায় ৩২ নটস অর্থাৎ ৩৭ মাইল আর পানির উপর ১৬ নটস অর্থাৎ ১৮ মাইল। আর তিনশ থেকে পাঁচশ মিটার সমুদ্রের গভীরে নামতে পারে। এমনকি সমুদ্রের এক হাজার মিটার নীচের পানির চাপও সহ্য করার ক্ষমতা আমাদের কুরস্কের আছে, ভাবতে পারো তুমি! এটা তে অংশগ্রহন করতে পেরে তোমার প্রিয়তম অনেক গর্বিত।
লক্ষীটি আজ এখানে শেষ করি। বোঝোই তো কাল মহড়া, কত রকম প্রস্ততি, কত্ত ঝামেলা। এরই মাঝে আর থাকতে না পেরে তোমাকে চিঠি লিখতে বসলাম । ভালো থেকো প্রিয়া আমার, অনেক আদর জেনো।অনেক মিস করি তোমাকে। কাল আবার সময় পেলে লিখবো।
ইতি তোমার প্রিয়তম ভাসিলি।
রাত ১০টা ১১ই অগাস্ট ২০০০
মাগো,
কেমন আছো মা? ভালো আছো তো! আমি অনেক অনেক ভালো আছি।
আমার জন্য তুমি আর একটুও চিন্তা করবে না বলে দিলাম। আমি কিন্ত এখন আর তোমার ছোট্ট পেত্রুশা নই ,আমি এখন অনেক বড় হয়েছি, আঠারো বছর বয়স আমার।এখন থেকে তোমার সব ভাবনা আমার,অনেক ভেবেছো আমাকে নিয়ে।
মা মনে আছে তোমার বাবা মারা গিয়েছে সেই কত বছর হলো। তুমি তো আমাকে নিয়েই জীবন কাটিয়ে দিলে। একবারও তো নিজের দিকে ফিরে চাইলে না। আমি কিন্ত এবার ফিরে এসেই তোমাকে মস্কো নিয়ে আসবো। তোমার আর একা একা গ্রামে থাকা লাগবেনা মা। আমি জানি তুমি তোমার ঐ প্রিয় বান্ধবী ইয়েলেনা খালাকে ছেড়ে আসতে চাইবেনা। তবে আমি এবার এসে কিছুদিন ছুটি নিয়ে তোমার কাছে থাকবো ।
মা আমি এখন যে সাবমেরিনে আছি এটাতে থাকা সৌভাগ্যের ব্যাপার। এত বড় সাবমেরিন খুব কমই আছে। এখানে আমরা অফিসার আর জুনিয়ার ক্রু মিলে মোট একশ আঠারো জন আছি। তাদের অনেকের সাথে আমার খুব ভালো বন্ধুত্ব।অবসরে আমরা অনেক মজা করি।
খাওয়া দাওয়া নিয়ে তুমি একটুও চিন্তা কোরো না মা। অনেক ভালো ভালো খাবার এখানে। তবে তাজা শাক সব্জী নেই আর সব্জীতো আমি পছন্দও করি না তুমি তো জানোই।
মা কাল সকালেই শুরু হবে আমাদের মহড়া। অনেক কাজ বাকী আছে। এরই ফাকে বসে তোমাকে লিখছি। কমান্ডিং অফিসার দেখলে খুব রাগ হবে। ভীষন মনে পড়ছে তোমার কথা তাই লিখলাম।
ইতি তোমার আদরের পিওতর।
চলবে
Click This Link শেষ পর্ব
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ১২:০৯