somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ক্লিওপেট্রা ১ম পর্ব

০৬ ই জানুয়ারি, ২০১১ দুপুর ১:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্যপিরাসে আঁকা ক্লিওপেট্রা
সকাল সাতটা আমরা দুজন হোটেল থেকে ঠিক করে দেয়া প্রাইভেট কারে করে কায়রো থেকে ২২৫ কিমি দুরে ভূমধ্যসাগরের তীরে ইতিহাস বিখ্যাত আলেকজান্দ্রিয়া নগরী দেখতে যাচ্ছি। যেখানে পৃথিবীর প্রাচীনতম সপ্তাশ্চর্যের একটি আশ্চর্য সেই বাতিঘর যে কিনা বছরের পর বছর ধরে অথৈই সাগরে দিক ভ্রান্ত নাবিকদের দেখিয়ে গেছে তীরের নিশানা। ভুমধ্যসাগরের মুক্তো বলে বিশ্বজুড়ে যার খ্যাতি।


তরঙ্গ বিক্ষুদ্ধ ভুমধ্যসাগরের তীরে আলেকজান্দ্রিয়া নগরী
এ সমস্ত পরিচয় ঢেকে গেছে তার আরেকটি পরিচয়ের কাছে তা হলো,
আলেকজান্দ্রিয়া সেই ভুবন বিখ্যাত রূপের রানী, আজ পর্যন্ত সৌন্দর্যের চুড়ান্ত প্রতীক হিসেবে চিন্হিত ইজিপ্টের শেষ ফারাও ক্লিওপেট্রার সাম্রাজ্যের রাজধানী। যাকে কেন্দ্র করে কত ঘটনার জন্ম, কত ইতিহাস, কত প্রাসাদ ষড়যন্ত্র, কত কাহীনি।

টানা সোজা, ঝকঝকে চওড়া হাইওয়ে , কোনো আকাবাকা নেই, দুপাশে কখনো ছোটো ছোটো শহর কখনও বা খেজুরের বিথী। আলেকজান্দ্রিয়া নগরীটি নীল নদের বদ্বীপে অবস্থিত বলে বেশ একটু সবুজ ভাব। মোটামুটি খালি সেই রাস্তায় ১২০/১৪০ কিমি গতিতে গাড়ী চলছে একটানা সামনের দিকে। আস্তে আস্তে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি শহরের প্রধান প্রবেশ দ্বারের দিকে।


বর্তমান আলেকজান্দ্রিয়া নগরীর প্রবেশ দ্বার

আর আমার মন যেন আরও দ্রতগতিতে পিছনের দিকে ছুটে চলেছে। মনে পড়ছে গ্রীসের একটি ছোট্ট নগর রাস্ট্র মেসিডোনিয়া জন্ম নেয়া সেই দিগ্বিজয়ী যুবক সম্রাট আলেকজান্ডার দ্যা গ্রেটের কথা, যার কাছে পদানত হয়েছিল তিন তিনটি মহাদেশ।
৩৩২ খৃঃ পুঃ এ মিশর দখল করে ভুমধ্যসাগরের তীরে আলেকজান্ডার তার নিজ নামের সাথে মিলিয়ে আলেকজান্দ্রিয়া নামে এই রাজধানী শহরটি প্রতিস্ঠা করেছিলেন। কিন্ত তার অকাল মৃত্যুর ফলে উত্তরাধিকারী না থাকায় তিন মহাদেশ জুড়ে থাকা তার এই বিশাল সাম্রাজ্য ভাগ হয়ে যায় তিন সেনাপতির মধ্যে। মিশর পড়েছিল তারই একজন প্রিয় সেনাপতি টলেমীর ভাগে।

গ্রীক আমলে তৈরী আলেকজান্দ্রিয়া নগরীতে স্ফিংক্স

সেই সেনাপতি টলেমী যিনি পরবর্তিতে ইজিপ্টের ফারাও তারই বংশধর ক্লিওপেট্রা ছিলেন স্বভাবতঃই জাতিতে গ্রীক। তাইতো আমার গাইডের কাছে যখন জানতে চেয়েছিলাম, 'কে বেশী সুন্দরী ক্লিওপেট্রা না নেফারতিতি'? তাচ্ছিল্যভরে সে উত্তর দিয়েছিল, "ক্লিওবাত্রা ওয়াজ নট ইজিপশিয়ান, শি ওয়াজ গ্রীক"। এ সমস্ত জিনিসগুলো আমাকে ভীষন কৌতুহলী করে তুলেছিল আমার জানা জিনিসগুলোকে আরও ভালো করে জানতে।

৬৯ খৃঃ পূঃ এর জানুয়ারী মাসে মিশরের তৎকালীন রাজধানী আলেক্জান্দ্রিয়ায় ফারাও দ্বাদশ টলেমী ও মা ক্লিওপেট্রা এর কোল আলো করে জন্ম নেয় কিম্বদন্তীর সৌন্দর্যের রানী ক্লিওপেট্রা থিও ফিলোপেটার।আজও সে বিনা প্রতিদ্বন্দীতায় পৃথিবীর সেরা সুন্দরী হিসেবে বিবেচিত। তাঁর সিংহাসন টলে গিয়েছিল, কিন্ত সৌন্দর্যের প্রতীক হিসেবে তার আসন কেউ টলাতে পারেনি।


ক্লিওপেট্রা ছবিতে নাম ভুমিকায় এলিজাবেথ টেলর

৫১ খৃঃ পূঃ এ দ্বাদশ টলেমী মারা গেলে জেস্ঠ সন্তান হিসেবে সিংহাসনের উত্তরাধিকারী হলেন ক্লিওপেট্রা, কিন্ত মিশরীয় রীতি অনুযায়ী কোনো মেয়ে সন্তান এককভাবে ফারাও হতে পারবেনা । ফলে তার ছোটোভাই ১২ বছরের অস্টম টলেমী কে সঙ্গী মতান্তরে বিয়ে ( তখনকার রীতি অনুযায়ী) করে যৌথভাবে সিংহাসনে আরোহন করেন আঠারো বছরের ক্লিওপেট্রা। সে সময় তার মতন এক অল্পবয়সী রানীর পক্ষে রাজ্য পরিচালনা করা এত সোজা ছিলনা। কারন ঐ সময় পরাক্রমশালী রোমানরা একের পর এক শহর দখল করে প্রায় পুরো মিশরের নিয়ন্ত্রনের ভার নিজেদের হাতে তুলে নিয়েছিল। নিজের সাম্রাজ্য রোমান মুক্ত রাখা একটা কঠিন সংগ্রামে পরিনত হয়েছিল তার জন্য। শুধু রোমানই নয় নিজেদের মধ্যেও আন্তকোন্দলও ছিল। নয়টি ভাষায় অনর্গল কথা বলার দক্ষতা ছাড়াও অসম্ভব বুদ্ধিমতী ও কুশলী ক্লিওপেট্রা তার বিভিন্ন গুনাবলীর জন্য রাজ দরবারের অনেকেরই হিংসার পাত্রী হয়ে উঠেছিলেন।


পাথরের ভাস্কর্যে ক্লিওপেট্রা

ক্লিওপেট্রার শাসনকালের প্রথম তিনবছরে ক্রমাগত এক একটি বিপর্যয় ঘটছিল,যেমনঃ অর্থনৈতিক মন্দা, দুর্ভিক্ষ, নীল নদের বন্যা ছাড়াও নিজেদের মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ ইত্যাদি। ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য এ সমস্যাগুলোর বিরুদ্ধে তাকে অবিরত কঠিন সংগ্রাম করতে হচ্ছিল। এছাড়াও সে তার ভাই তথা স্বামীর সাথে যৌথ নেতৃত্বেও সন্তষ্ট ছিলেন না। যে কারনে সে বিভিন্ন রাজকীয় নথিপত্র এমন কি মুদ্রা থেকেও তার ভাইয়ের নাম বিলুপ্ত করে তার নিজ নামে একক মুদ্রা প্রবর্তন করেন। তার এসব কাজে তার অনেক পারিষদই অসন্তষ্ট হয়ে উঠে।
শেষ পর্যন্ত তারই পিতার এক পরামর্শদাতার ষড়যন্ত্রে তিনি সিংহাসনচ্যুত হয়ে সিরিয়া পালিয়ে যান। এর পর তার ছোটো ভাই একক ভাবে ইজিপ্টের সিংহাসনে আরোহন করলে ক্লিওপেট্রা তা সহজ ভাবে নিতে পারেনি এবং এর প্রতিশোধ নেয়ার জন্য তিনি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হন।


শীল্পির তুলিতে আকা জুলিয়াস সীজার

ক্লিওপেট্রা জানতো যে তার ভাইয়ের শত্রু রোমান সেনাপতি জুলিয়াস সীজার তখন আলেকজান্দ্রিয়া অবস্হান করছেন। সে সীজারেরর সাথে দেখা করে সিংহাসনের উপর তার দাবীর কথা জানানোর জন্য একটি আবেদন পেশ করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্ত সীজারের সাথে দেখা করাটা এত সোজা ছিলনা। ক্লিওপেট্রা জানতো সে যদি প্রকাশ্যে শহরে প্রবেশের চেস্টা করে তবে ভাইয়ের হাতে তার মৃত্যু অনিবার্য। তার ফলে সে এক অভিনব কৌশল গ্রহন করেন।


কার্পেট থেকে বেরিয়ে আসা রূপের রানী ক্লিওপেট্রা

অসম্ভব চতুর ও বুদ্ধিমতী ক্লিওপেট্রা নিজেকে প্রাচ্য দেশীয় এক কার্পেটে মুড়িয়ে তার সঙ্গীদের মাধ্যমে সীজারের সামনে কার্পেট টাকে উপঢৌকন হিসেবে পেশ করেন। এরপর ক্লিওপেট্রার সঙ্গীরা পুর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী সীজারকে দেখানোর জন্য গোল করে মোড়ানো কার্পেটটার এক মাথা ধরে এক টানে সেটাকে খুলে ফেল্লে তার ভেতর থেকে বেরিয়ে আসে বিশ্বের বিস্ময়, অবর্ননীয় সৌন্দর্যের প্রতীক, ইজিপ্টের সিংহাসন থেকে বিতাড়িত, নির্বাসিত রানী ক্লিওপেট্রা।
বিখ্যাত সেনাপতি জুলিয়াস সীজার, রোমান সাম্রাজ্যের অধিপতি ,বহু যুদ্ধের বিজেতা সেই রাস্ট্রনায়ক বিস্মিত নয়নে চেয়ে থাকে কার্পেটের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসা সেই একুশ বছরের বিস্ময়ের দিকে...
চলবে...

Click This Link
২য় পর্ব।

Click This Link
৩য় পর্ব
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জুলাই, ২০১১ সকাল ৯:১৪
৩৭৫ বার পঠিত
১১২টি মন্তব্য ১১৩টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ভিসা বন্ধ করায় ভারতকে ধন্যবাদ।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩



ভারত ইদানীং ভিসা দিচ্ছেনা; তারা ভিসা না দিয়ে আমাদেরকে শিক্ষা দিতে চায়! তাদের করদ রাজ্য হাতছাড় হওয়া খুবই নাখোশ, এতোই নাখোশ যে মোদী মিডিয়া দিনরাত বয়ান দিচ্ছে এই দেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতের চিকিৎসা বয়কট এবং

লিখেছেন পবন সরকার, ০২ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:৫৬


ভারতের এক হাসপাতাল ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশের কোন রুগিকে তারা চিকিৎসা দিবে না। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো যে হাসপাতাল থেকে এই ঘোষণা দেয়া হয়েছে সেই হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার জন্য বাংলাদেশের... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। চামচা পুঁজিবাদ থেকে চোরতন্ত্রে পরিণত হয়েছিল দেশ

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০২ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:১৩






চামচা পুঁজিবাদ থেকে দেশ চোরতন্ত্রে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন অর্থনৈতিক শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, আমলা, রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা মিলে চোরতন্ত্র করেছে।

সোমবার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখ হাসিনাকে ভারত ফেরত পাঠাবে তবে............

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০২ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:৪২


শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে বিচারের জন্য ভারতের কাছে ফেরত চাইতে হলে অবশ্যই বাংলাদেশকে প্রতিহিংসামূলক বিচারপদ্ধতি বাদ দিতে হবে। বিচারে শেখ হাসিনা যাতে ন্যায় বিচার পান বাংলাদেশকে আগে তা নিশ্চয়তা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারত সোনার ডিম পাড়া হাঁস হারিয়েছে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৫২



শেখ হাসিনা ভারতে বসে ষড়যন্ত্র-অপপ্রচার করছেন। ভারত চাচ্ছে বাংলাদেশে একটি অশান্তি হোক। কারণ ভারত একটি মসনদ হারিয়েছে। সোনার ডিম পাড়া হাঁস হারিয়েছে।

আওয়ামী লীগ প্রতিদিন একটি সোনার ডিম পেড়ে নরেন্দ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

×