ইজিপ্টের লুক্সর থেকে কেনা এ্যলাবাস্টারের (alabaster) শ্লেটের উপর নকশায় কার্তুচ
পোস্টের শিরোনাম দেখে ভয় পেয়ে গেলেন কি ! না কোনো ভয় নেই সেটা আমি হলফ করে বলতে পারি। আমি যার কথা বলছি সে অত্যন্ত নিরীহ একটি বস্তু, কারো কোনো ক্ষতি করার তার ক্ষমতা নেই, শুধু একমাত্র স্বামী প্রবরের পকেট ছাড়া!
তবে যারা নিজেরা রোজগার করে তাদের কথা আমি বলছিনা।
মডেলের গলায় অনিন্দ্য সুন্দর এক কার্তুচ আকৃতির লকেট
এখানে আমি যে কার্তুচের কথা বলছি তা হচ্ছে ওভাল আকৃতির একটি বস্তু বা ফলক চিন্হ যার মধ্যে কারো নাম লেখা থাকে। সোজা বাংলায় যাকে বলা যায় নাম ফলক।
মিশরীয় ভাষায় এর নাম হচ্ছে shenu অর্থ এনসার্কেল।কার্তুচ নামটা দিয়েছে ফরাসী সম্রাট নেপোলিয়নের সৈন্যরা,কারন এটা তাদের কাছে বন্দুকের কার্টিজের (গুলি) মত মনে হয়েছিল!
লুক্সরের কার্নাক মন্দিরের স্তম্ভের গায়ে আঁকা কার্তুচ
প্রাচীন কালে মিশরীয়রা বিশ্বাস করতো যে, কেউ যদি জীবিত অবস্হায় কোথাও তার নামটি লিখে রাখে, তবে মৃত্যুর পরেও সে কখনো হারিয়ে যাবেনা।
প্রথম দিকে শুধু মিশরের রাজা রানীরাই তাদের শবাধারে হায়রোগ্লিফিক ভাষায় কার্তুচ আঁকাতো।শবাধারে কার্তুচ চিন্হ যোগ করায় তারা ভাবতো, যাক কোথাও না কোথাও শেষ পর্যন্ত তাদের নামতো লেখা রয়েছে, হারিয়ে যাবার ভয় আর রইলোনা।
আসোয়ানের আবু সিম্বলের মন্দিরের গায়ে লেখার মধ্যে কার্তুচের বহুল ব্যাবহার
শবাধার ছাড়াও প্রাচীন মিশরের বিভিন্ন মন্দির ফলক ও স্হাপনায় কার্তুচের বহুল ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। কার্তুচ আঁকা ছাড়া কোনো শিল্পকর্ম সেখানে দেখেছি বলে মনে পড়ছেনা।
পরবর্তীতে রাজা রানী ছাড়াও অন্যান্যরাও মৃত্যুর পর নিখোঁজ হবার ভয়ে নিজেদের শবাধারে বিভিন্ন শিল্পীদের দিয়ে কার্তুচ চিন্হ আঁকাতো!
তুতেনখামুনের নাম লেখা আমার স্বর্নের কার্তুচ লকেট
কিন্ত পরবর্তীকালে এই কার্তুজ মিশরীয় অলংকার জগতে এক প্রচন্ড আলোড়নের সৃস্টি করে। কার্তুচ কি ভাবে আলোড়ন সৃস্টি করলো তাই হয়তো ভাবছেন আপনারা।
তাহোলো কার্তুচ আকৃতির স্বর্ন বা রূপার তৈরী লকেট যা অনিন্দ্য সুন্দর ভাবে তৈরী এবং এটা পর্য্টক বিশেষ করে নারী পর্য্টকদের কাছে একটি বিরাট আকর্ষন।
এটা কিনেনি এমন ট্যুরিস্টের সংখ্যা খুব কম।অন্যান্য প্রতীক চিন্হ ব্যবহার করা অনেক কিছুই আছে তবে কার্তুচের আকর্ষন অপ্রতিরোধ্য। বিভিন্ন ডিজাইনের এই দৃস্টিনন্দন লকেট টি যে কোনো স্যুভেনীর শপ অথবা স্বর্নের দোকানের শোভা বাড়িয়ে তুলেছে। কার্তুচ ডিজাইনে লকেট ছাড়া ব্রেসলেট ও পাওয়া যায় ।
রূপার তৈরী একটি কার্তুচ লকেট
এই কার্তুচে প্রাচীন রাজা রানীদের নাম ছাড়াও নিজের পছন্দমত যে কোনো কথা, এমন কি নিজের নামও হায়রোগ্লিফিক ভাষায় অর্ডার দিয়ে তৈরী করে নেয়া যায়।
আমাদের সময় না থাকায় টুটেনখামুনকেই পছন্দ করেছি।দোকানী মেয়েটির ভাষায় এই নামটি নাকি খুব লাকি ! দেখা যাক কি করে রাজা টুটেনখামুন আমার ভাগ্যকে!
যে কিনা নিজেই ভাগ্যহত। আঠারো বছর বয়সেই যাকে রহস্যময় মৃত্যুকে বরণ করে নিতে হয়েছিল ।
২য় এবং শেষ ছবিটি নেট থেকে নেয়া ..
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মে, ২০২০ রাত ৯:৫২