আমরা আমাদের প্রতিদিনের কর্মকান্ডের মাধ্যমে পৃথিবীকে বসবাসের অযোগ্য করে তুলছি; আমাদের জন্য, আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য। পশু-পাখির জন্য, গাছপালা-তৃণলতার জন্য, সমুদ্রের মাছের জন্য। করোনা ভাইরাস মানুষের জন্য যদি হুমকি হয়ে থাকে, তাহলে আমরা মানুষ- পৃথিবীর জন্য হুমকি! সবেচেয়ে সাংঘাতিক ভাইরাস।
ভাবছেন আমি কিসের কথা বলছি? মানুষ দ্বারা সৃষ্ট - পরিবেশ দূষণের কথা বলছি।
পৃথিবী পৃষ্ঠের তাপমাত্রা ক্রমেই বেড়ে চলছে। কল-কারখানার সৃষ্ট বর্জ্য প্রাকৃতিক পরিবেশ নষ্ট করে ফেলছে। যানবাহনের কালো ধোয়া অন্যান্য সকল দূষণকে ছাড়িয়ে গেছে। শত শত উদ্ভিদ-প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে গেছে, অপেক্ষমান তালিকায় আছে আরো অনেকে। মানুষ ব্যবসার জন্য, বসবাসের জন্য বন উজার করছে। পৃথিবীর অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাচ্ছে, বাড়ছে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমান। প্লাস্টিক দূষণ যেন বৈল্পবিক রূপ ধারন করেছে! সমুদ্র পৃষ্ঠকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। মহাশূন্যও রেহাই পায়নি মানুষের বর্জ্যথাবার হাত থেকে। স্পেস স্টেশন আর যানগুলো ভোগান্তি পোহাচ্ছে নিজেদেরই সৃষ্ট বর্জ্য এর জন্য। কোথাও রেহাই নেই। পৃথিবীর মিঠা বা খাবার পানির স্তর আসঙ্কাজনক হারে কমে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে আমরা এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের পথে হাটছি।
সবুজ শ্যামল এই পৃথিবীকে বাঁচাতেই সারাপৃথিবী ব্যাপী বিভিন্ন কর্মশালার মাধ্যমে আজ পালিত হচ্ছে- আর্থ ডে।
আমাদের যদি এই ভয়ংকার ভবিষ্যতের জন্য যদি আমরা দায়ী হয়ে থাকি, তাহলে একথা উদ্ধার হওয়ার প্রচেষ্ট আমাদেরই করতে হবে। ভিনগ্রহের কেউ এসে নিশ্চয়ই আমাদের উদ্ধার করবে না। তাই আমরা কি করতে পারি আর কি করা থেকে নিজেদেরকে বিরত রাখতে পারি তার একটা সংক্ষিপ্ত তালিকা দেখে নেওয়া যাক।
গাছ লাগানোর অভ্যাস গড়তে হবেঃ
আমরা সবাই জানি- গাছ আমাদের ও আমাদের পরিবেশের জন্য কতটা উপকারি। তাই, বেশি বেশি গাছ লাগানোর সব মহল থেকেই বলা হয়ে থাকে। কিন্তু বলা হলেও সেটা বাস্তবায়িত আদো হচ্ছে কৈ!! তাই আমাদের গাছ লাগানোর অভ্যেস গড়তে হবে। আমরা চাইলে একটা টার্গেট নিয়েও এ কাজটি করতে পারি। সেটা হতে পারে- প্রত্যেক মাসে অন্তত একটা গাছ লাগানের টার্গেট। তাহলেও আপনি পৃথিবীর ৯৫% মানুষের চেয়ে এগিয়ে থাকবেন পরিবেশ রক্ষার কাজে!
প্লাষ্টিক ব্যবহারে থ্রি 'আর' মেনে চলতে হবেঃ
থ্রি 'আর' বলতে ইংরেজি রিডিইজ, রিইউজ এবং রিসাইকেল- বুঝানো হয়েছে। প্লাষ্টকি ও প্লাষ্টিক জাত পন্যের ব্যবহার যেমন আমাদের জন্য অপরিহার্য হয়ে পড়েছে, তেমনি পরেবেশের জন্যও মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব রাখছে। বিভিন্ন খাতে প্লাষ্টিকের অল্টানেটিভ আবিষ্কারে কাজ চলছে বিশ্ব জুড়েই। কিন্তু এখনি প্লাষ্টিককে 'না' বলার মত অল্টানেটিভ আবিষ্কৃত হয়নি। তাই দৈনন্দিন জীবনে প্লাষ্টিক ব্যবহার করলেও তা যথাসাধ্য কমিয়ে আনতে হবে(রিডিইজ)। প্লাষ্টিক পণ্য ব্যবহার শেষে তা ফেলে না দিয়ে পুনঃব্যবহার করতে হবে(রিইউজ)। এবং সর্বোপরি রিসাইকেল যোগ্য প্লাষ্টিক পণ্য আমাদের ব্যবহার করতে হবে। আমরা এক-এক জন হয়ে উঠতে পারি সচেতন প্লাষ্টিক ইউজার!
পানি সংরক্ষণ করব ও অপচয় রোধ করবঃ
পানির অপর নাম জীবন। কিন্তু বিশ্বের কিছু কিছু জায়গায় খাবার পানির স্তর আশঙ্কাজনক হারে কমে যাচ্ছে। আর এক মারাত্মক ঝুকির মধ্যে পরতে যাচ্ছে সেই সব এলাকার মানুষ ও অন্যান্য প্রাণী। আর সেই তালিকায় আছে আমাদের সেইন্ট-মার্টিন্স দ্বীপ! তাই এখনি সঠিক সময়ে পানি ব্যবহারে অধিক সচেতন হওয়ার।
বাইক মোড়-ড্রাইভ লেসঃ
যানবাহনের কালো ধোয়া পরিবেশকে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ করছে। জনজীবন বিপন্ন হয়ে পড়ছে। নগরী হয়ে যাচ্ছে বসবাসের অযোগ্য। আমাদের রাজধানী ঢাকা শহড় আছে সেই তালিকায় একদম উপরে। কিন্তু আমাদের প্রবল ইচ্ছাশক্তি হয়ত পারে এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে। সখের গাড়িটি না চালিয়ে যদি সাইকেল চালানোর অভ্যাস করতে পারি- প্রাণ ফিরে পাবো আমরা, ফিরে পাবে নগরী, ফিরে পাবে পৃথিবী।
সবাই মিলে সচেতন হতে হবেঃ
আমি একা একা হয়ত অনেক কিছুই করতে পারবো। কিন্তু সেটা আমার একার সচেতনতা পরিবেশের উপর কতটুকু প্রভাব ফেলবে তা একেবারেই নগন্য। তাই আমাদের আসেপাশের সবাইকে সচেতন করতে হবে। অনেক জায়তেই পরিবেশ সংরক্ষণে বিভিন্ন ভলান্টিয়ার গ্রুপ তৈরি হচ্ছে, নিজেদের নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে তারা।
পৃথিবী উদ্ধার করার স্লোগান নিয়ে সারা বিশ্বে পালিত হচ্ছে- বিশ্ব আর্থ ডে - ২০২১। চলুন আমরাও পৃথিবী উদ্ধারের শপথ নেই...
ছবি কার্টেসিঃ অন্তর্জাল
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ৯:১৯