somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একজন কার্ল ল্যান্ডষ্টাইনার কে স্মরণ এবং বিশ্ব রক্তদান দিবস

১৪ ই জুন, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



পরিচয়ঃ
লিওপোল্ড (১৮১৮-১৮৭৫) ছিলেন একজন জার্নালিস্ট ।বাবার মাত্র ৫৬ বছর বয়সের অকাল মৃত্যতে ৬ বছর বয়সী কার্ল বড় হতে থাকেন মা ফ্যানি(১৮৩৭-১৯০৮)এর আদর সোহাগ ভালবাসায় । পুরো নাম- কার্ল ল্যান্ডষ্টাইটার ।জন্মস্থান-ভিয়েনা । "ভিয়েনা সেকেন্ডারি স্কুল" থেকেই প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণ শুরু ।এরপর University of Viennaতে মেডিসিন বিষয়ে চর্চা শুরু করেন । ছাত্রাবস্থায়ই তিনি "রক্ত গঠনের উপর খাদ্যভ্যাস এর প্রভাব" শীর্ষক রচনা প্রকাশ করেন । ১৮৯১ সালে লেখেন- তার ডক্টরেট থিসিস ।
তিনি অস্ট্রীয়া ও আমেরিকার নাগরিক ছিলেন ।তার গবেষণা ইনস্টিটিউট- আমেরিকার বিখ্যাত রকফেলার ইনস্টিটিউট ।তিনি ছিলেন একজন জীববিঞ্জানী এবং চিকিত্‍সকও ।

এতক্ষণ যার কথা বলছিলাম ,আজকে তার ১৪৮তম জন্মদিন ।১৮৬৮ সালের ১৪জুন জন্ম নেন রক্তের গ্রুপ আবিষ্কারক এই কার্ল ল্যান্ডষ্টাইনার ।




অবদান ও স্বীকৃতিঃ
একজন মুমুর্ষ রোগীকে বাঁচিয়ে তুলতে কোন সুস্থ মানবদেহ হতে সফল ও সঠিক উপায়ে রোগীর দেহে রক্ত সঞ্চালনের যুগান্তকারী আবীষ্কারটা করেন তিনি ।দু শতক যাবত রক্ত সঞ্চালনের চেষ্টা করে যাওয়া চিকিত্‍সা বিঞ্জানকে সঠিক পথ দেখান তিনি ।


ছবিঃ কুকুরের রক্ত নেওয়া হত মানুষের শরিরের (আবিষ্কারের আগে)



১৯০১ সালে তিনি ব্লাড গ্রুপ আবিষ্কার করেন এবং দেখান যে ,একই গ্রুপের ব্লাডধারীদের মাঝে রক্তের আদান-প্রদানে কোন সমস্যা হয় না ।

এরপর ১৯৩৭ সালে সহকর্মী আলেক্সান্ডার এস. ওয়েইনার এর সাথে আবিষ্কার করেতধ Rhesus facor বা Rh factor। এরদ্বারা রক্তের টাইপ পজেটিভ(+ve) নাকি নেগেটিভ (-ve) তা বের করা যায় ।যা রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়াকে করল আরো বিশুদ্ধ ।
তিনি ১৯০৯ সালে তার সহযোগীদের সাথে মিলে Polio-virus আবিষ্কার করেছিলেন ।কিন্তু বিশ্ব হৃদয়ে অমর হয়ে থাকবেন রক্ত সঞ্চলন প্রক্রিয়ায় তার অবদানের জন্য । তাকে Transfusion Medicineএর জনক বলা হয় ।

তার অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯২৬ সালে পান Aronson Prize ।ব্লাড গ্রুপ আবিষ্কারের জন্য ১৯৩০ সালে চিকিত্‍সাবিঞ্জানে নোবেল যেতেন ।



১৪ই জুন ,তার জন্মদিনেই পালন করা হয় বিশ্ব রক্তদান দিবস । এই মহান ব্যক্তি ১৯৪৩এর ২৬ জুন পরলোক গমন করেন ।



বিশ্ব রক্তদান দিবস

শুধু আমাদের দেশেই দৈনিক রক্তের প্রয়োজন হয় প্রায় 'চার হাজার' ইউনিট ।এত বিশাল পরিমাণ ইউনিট রক্ত ম্যানেজ করার জন্য চাই সেচ্ছায় রক্তদাতা ।সেচ্ছাসেবকদের ভাষায় যাদের বলা হয় রক্তযোদ্ধা ।বিশ্বের দৈনিক রক্তচাহিদা মেটাতে তাই এই দিনটাতে পালন করা হয় বিশ্ব রক্তদান দিবস । ১৯৯৫ সাল থেকে পালন করা হয়ে আসছে আন্তর্জাতিক রক্তদান দিবস ।২০০০ সালে বিশ্ব স্বাস্থ সংস্থার বিশেষ উদ্যোগে অনুপ্রাণিত হয়ে ২০০৪ সাল থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নিয়মিত পালন করা এ হচ্ছে দিবসটি ।


রক্তদানের উপকারিতা-

১. রক্তদান করার সঙ্গে সঙ্গে আপনার শরীরের মধ্যে অবস্থিত ‘বোন ম্যারো’ নতুন কণিকা তৈরির জন্য উদ্দীপ্ত হয়। রক্তদানের ২ সপ্তাহের মধ্যে নতুন রক্তকণিকা জন্ম হয়ে ঘাটতি পূরণ হয়ে যায়। আর বছরে ৩ বার রক্তদান আপনার শরীরে লোহিত কণিকাগুলোর প্রাণবন্ততা বাড়িয়ে তোলে ও নতুন কণিকা তৈরির হার বাড়িয়ে দেয়।

২. নিয়মিত রক্তদানকারীর হৃদরোগ ও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কম অনেকটাই ।

৩. নিয়মিত স্বেচ্ছায় রক্তদানের মাধ্যমে বিনা খরচে জানা যায় নিজের শরীরে বড় কোনো রোগ আছে কিনা।
যেমন : হেপাটাইটিস-বি, হেপাটাইটিস-সি, সিফিলিস, এইচআইভি (এইডস) ইত্যাদি।

৪. সম্প্রতি ইংল্যান্ডের এক গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত স্বেচ্ছায় রক্তদানকারী জটিল বা দুরারোগ্য রোগ-ব্যাধি থেকে মুক্ত থাকেন অনেকাংশে। যেমন, নিয়মিত রক্তদান ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক।

৫. রক্তে কোলেসটোরলের উপস্থিতি কমাতে সাহায্য করে নিয়মিত রক্তদান।

৬. মুমূর্ষু মানুষকে রক্তদান করে আপনি পাচ্ছেন মানসিক তৃপ্তি। কারণ, এত বড় দান যা আর কোনোভাবেই সম্ভব নয়।

৭. রক্তদান ধর্মীয় দিক থেকে অত্যন্ত পুণ্যের বা সওয়াবের কাজ।
একজন মানুষের জীবন বাঁচানো সমগ্র মানব জাতির জীবন বাঁচানোর মতো মহান কাজ। আমাদের সকলের ধর্মই আমাদের এই শিক্ষা দিয়ে থাকে।

৮. রক্তদানে আপনার নিজের অর্থ সাশ্রয়-ও হয়। রক্তদান কেন্দ্রের মাধ্যমে রক্ত দিলে পাঁচটি পরীক্ষা সম্পূর্ণ বিনা খরচে করে দেয়া হয় যা বাইরে করলে খরচ লাগবে প্রায় তিন হাজার টাকার মতো। সেগুলো হলো- এইচআইভি/এইডস, হেপাটাইটিস-বি, হেপাটাইটিস-সি, ম্যালেরিয়া ও
সিফিলিস। তাছাড়া রক্তের গ্রুপও নির্ণয় করা হয়।

৯. নিয়মিত রক্তদান Hemochromatosis প্রতিরোধ করে। শরীরে অতিরিক্ত আয়রনের উপস্থিতিকে Hemochromatosis বলে।

১০. স্থূল দেহী মানুষদের ক্ষেত্রেও রক্তদান অত্যন্ত সহায়ক ভূমিকা পালন করে ওজন কমাতে।

সুতরাং আপনি যদি সুস্থ থাকেন এবং আপনার ওজন ৪০ কেজির বেশী হয় তবে এই বিশেষ দিনেই নিয়মিত রক্তদানের শপথ নিন
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জুন, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৩৮
৯টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সমসাময়িক চিন্তা ও পাশের দেশের অবস্থা!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:৩৩

পাশের দেশের মি শুভেন্দু বাবু যেভাবে চিন্তা করেন, তাতে তাদের দৈনত্যাই প্রকাশ পায়! অথচ বহু বছর আগেই তাদের জ্ঞানী ব্যক্তিরা আমাদের সার্টিফিকেট দিয়ে দিয়েছেন। যাই হোক, এই সবকিছুই থেমে যাবে,... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনধিকার চর্চা নয়, শান্তিরক্ষি ভারতে প্রয়োজন

লিখেছেন মোহাম্মদ সজল রহমান, ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:৫৫

বাংলাদেশে একজন রাষ্ট্রদ্রোহী মামলায় অভিযুক্ত এবং ইসকন সংগঠন থেকে বহিঃস্কৃত ধর্ম প্রচারক বিতর্কিত চিন্ময় কৃষ্ণ দাস, তার মুক্তির জন্য প্রতিবেশী দেশ ভারতের এক শ্রেণীর জনগণ যেভাবে ক্ষেপে উঠেছে, তাতে মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমরা উকিলরা কেউ চিন্ময়ের পক্ষে দাঁড়াবো না , না এবং না

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৪২




সাবাস বাংলাদেশের উকিল । ...বাকিটুকু পড়ুন

আগরতলায় হাইকমিশনে হামলা কাকতালীয় না কি পরিকল্পিত?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৩২

গতকাল (২ ডিসেম্বর) ভোরে আগরতলার হিন্দু সংগ্রাম সমিতির বিক্ষোভকারীদের দ্বারা বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনের প্রাঙ্গণে হিংসাত্মক বিক্ষোভের পর ন্যাক্কারজনকভাবে আক্রমণ করে। বিভিন্ন তথ্যে চূড়ান্তভাবে প্রমাণিত যে বিক্ষোভকারীরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের সাথে যুদ্ধ করে ভারত লাভবান হবে বলে মনে করি না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:১০



আমাদের দেশে অনেক মুসলিম থাকে আর ভারতে থাকে অনেক হিন্দু। ভারতীয় উপমহাদেশে হিন্দু-মুসলিম যুদ্ধে মুসলিমদের সাফল্য হতাশা জনক নয়। সেজন্য মুসলিমরা ভারতীয় উপমহাদেশ সাড়ে সাতশত বছর শাসন করেছে।মুসলিমরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×