...
..
.
ইন্টারে পড়ার সময় বাসা থেকে বাইরে গিয়ে কোচিং করার অনুমতি দেওয়া হয়নি। আবার প্রাইভেট পড়ার জন্য স্যার ও পাচ্ছিলাম না। তখন বান্ধবী কণা তার স্যারকে অনেক বলে কয়ে রাজী করালেন যাতে আমাকে পড়ায়....সেই নূরে আলম স্যার দুপুর ৩টার সময় পড়াত এরপর বিকেলে একটা পার্ট-টাইম জব করত রাতে কণার বাসার কাছে হওয়ার সুবাদে ওকে পড়াত।উনি কখনোই আমাদের নাম ধরে ডাকত না পড়ানোর প্রথমদিকে একদিন হিসাব কষে দেখলেন উনি আমাদের চেয়ে প্রায় ১০ বছরের বড়। সেই যে আমাদের পিচ্চি ডাকা শুরু করলেন এখনো ফেসবুকে আমাদের দুই সখীরে খুঁজে পেয়ে খুশীতে বলে ফেললেন "২ পিচ্চি দেখি ম্যালা বড় হয়ে গেছে...তাও তোমাদের পিচ্চিই লাগে"। আমাদের যখন পড়াতেন আমরা নিজেরা অংক তেমন করতাম না ,বেশীরভাব সময় খাতা ভরে উনিই অংক করে দিতেন। ইন্টারে আমার রেজাল্ট খারাপ হওয়াতে উনি বলেছিলেন "তোমাদের ঝাড়ি দেই নাই বলেই এমন বাজে রেজাল্ট করলা....আর আমি কখনো স্টুডেন্টদের গায়ে হাত তুলিনা...মেয়ে হলেতো আরো না...তাই বলে খারাপ রেজাল্ট করে আমার নাক কান ডুবাইবা"। উনাকে আমি একজন ভালো মানুষ হিসেবে চোখ বন্ধ করেই ১০ থেকে ৯ দিবো কারণ আমার নিজস্ব গুডবুক লিস্টে অনেকের মাঝে উনিও আছেন....।
এইবার এক বদমাইশের কথা বলি। উনার নোংরামি আচরণের জন্য উনারে স্যার বলতে রাগ লাগে। অর্নাসের লাস্ট ইয়ারে কোন কারণে আমাদের সিলেবাস শেষ হয়নি। কোন স্যার পাচ্ছিনা সাথে আমাদের আরেক বন্ধু রাসেল আর কণাও ছিলো। কোনমতে এই বদমাইশটা রাজী হলো পড়াতে। যে ব্যাচের সাথে পড়তাম সেই ব্যাচের সিলেবাস প্রায় শেষের দিকে... তারমানে ঐব্যাচ চলে গেলেও আমাদের আরো এক-দেড়মাস পড়তে হবে এমন অবস্হা.. পড়াও শুরু করলাম।এইবার বদমাইশটার বাসার বর্ণনা দেই। উনি অনেক টিউশনি করে বলে বড় একটা ফ্ল্যাট নিয়ে থাকত। সাথে উনার বউ ,বাবা-মা ও ছিলো। উনার বউটা আমাদের বয়সী কিন্তু অন্য কলেজের। মাঝে মাঝে বউটা আমাদের সাজেশন ও কালেক্ট করে দিতে বলত। আমাদের ব্যাচের পড়ানোর সময় বদমাইশটা তার পাশে একটা চেয়ার রাখত।আর কেন জানি সে চেয়ারে রাসেলকে বসতে দিতো না... সম্ভবত এই কারণেই রাসেল উনাকে সন্দেহ করেছিলো। অংক করতে গিয়ে কোন ভুল করলাম উনি মুখে বললেই হয় কিন্তু ঐযে মনের বদমাইশি দেখা গেল লিখছি হাত চেপে ধরে বলবে ভুল লিখছো। আবার কখনো কখনো ইচ্ছাকৃতভাবে পায়ে পা লাগাত আর এমন ভাব করত যেন ভুলে হয়ে গেছে...একই ব্যাপার ডেইলি ডেইলি তো হতে পারেনা....মাঝে মাঝে হুট করে দেখতাম বদমাইশটা আমাদের পড়তে দিয়ে পলক না ফেলে তাকিয়ে থাকত। যাইহোক রাসেল আমাদের সাবধান করে দিয়েছিলো পাশের চেয়ারে না বসতে,কণা কিংবা আমি যে আগে প্রাইভেটে যেতাম সে বাসায় না গিয়ে বাইরে সিড়িতে ওয়েট করতে ও বলেছে।এরপর থেকে বদমাইশের চেয়ারের পাশে রাসেল বসত....আর বদমাইশের সে কি বিরক্তি। ২দিনের মাথায় বলে বসলো উনি কণা আর আমাকে পড়ালেও রাসেলকে পড়াবেন না ....আর রাসেলের সবচেয়ে বড় দোষ সে আমাদের প্রটেক্ট করতে চেয়েছে আর উনার নোংরামিটা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে... উনার নোংরামিতে বাধা দিয়েছে। রাসেল ও পুরুষ আর ঐ বদমাইশটাও পুরুষ কিন্তু একজন ছিলো রক্ষক আরেকজন ছিলো ভক্ষক মনোভাবের । প্রিয় বন্ধু রাসেলকে নিয়ে শুধু এইটুকুই বলতে চাই হাজারো কীটের মাঝে গুটিকয়েক রাসেলরা এভাবেই আমাদের বাচিয়ে দেয় .....।
এটা আমাদের সমাজের দোষ ।ছোটবেলা থেকেই মা,দাদীরা শিখিয়ে আসেন মেয়েদের মুখ বুঝে সব সহ্য করতে হয়...আর এসব লজ্জ্বার কথা তো আরো চেপে যেতে বলে। এভাবে চেপে যেতে যেতে ব্যাপারগুলা আজ ধর্ষণ পযন্ত ঠেকেছে।অনেকরেই দেখছি এসব সেনসিটিভ ইস্যুতে নীরব থেকে সুশীল সাজে। কিন্তু তারা কি একবার ও ভাবে না এই ঘটনা তো নিজের ফ্যামিলি কিংবা আত্মীয়মহলে ও ঘটতে পারত? আজ আমার জীবনে এমন সমস্যা হয়নি বলে কি আমার অন্যকোন বোনের জীবনে এমনটা ঘটবেনা....তার নিশ্চয়তা কে দিতে পারে? আজ থেকে কয়েক বছর পরে আমার মেয়ে ও যে এমন সমস্যার সম্মুখীন হবেনা..সেটার ও নিশ্চয়তা আমি দিতে পারিনা। অতএব প্রতিবাদের মানসিকতা সবার আগে নিজেকে দিয়ে শুরু করি আর নিজেদের বিবেককে নির্দিষ্ট কোন ইস্যুতে সীমাবদ্ধ না রেখে সুশীলতার খোলস ছেড়ে সঠিক সময়ে যার যার বিবেককে জাগ্রত করি ....।
..........................................................
(ব্লগে ৩টা বছর পার করে দিলাম.... ইচ্ছা ছিলো অনান্য বারের মতন এবার ও বর্ষপূর্তিতে ফান করে কিছু লিখবো ভিএনসি ইস্যুটা দেখে সেটা সম্ভব হলো না...একটা সময় ব্লগিং নেশার মতন হয়ে গিয়েছিলো। সারাদিনে একবার হলেও চেহারা দেখিয়ে যেতাম। আস্তে আস্তে সে নেশাটাও কেটে যাচ্ছে....বেশীরভাগ সময় অফলাইনেই থাকি....হয়ত আর কয়েকদিন পরে আর একবারেই থাকা হবে না। পুরানো ব্লগারদের অনেক মিস করি তাদের না পেয়ে নতুনদের মাঝে নিজেরে বুজুর্গ টাইপের মনে হয়। তবে নতুনরাও অনেকে ভালো ও পরিণত লেখা লিখে ....তাদের জন্য ও শুভকামানা রইলো......। সবশেষে সবাইকে শুভ-ব্লগিং)