'মালাউন' শব্দের অর্থ লানতপ্রাপ্ত, অভিশাপ প্রাপ্ত বা আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত । আল্লাহ তায়ালা'র লানতপ্রাপ্ত হলেন ইবলিশ। এ শব্দটি কোনো মানুষের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যায় না, শুধু ইবলিশের ক্ষেত্রেই এ শব্দ উপযুক্ত।
সূরা আর-রহমানে আল্লাহ তায়ালা তাঁর নেয়ামত ও রহমতের কথা উল্লেখ করেছেন। মূলত আল্লাহর রহমত বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না। একজন অমুসলিম সৃষ্টিকর্তার(আল্লাহ্র) রহমতে প্রকৃতিতে বেঁচে আছেন। আলো, বাতাস, পানি, খাদ্য মুসলিম ও অমুসলিম সবার জন্য একই। বরঞ্চ আল্লাহ্ অমুসলিমদের কিছু ক্ষেত্রে মুসলিমদের তুলনায় বেশি রহমত দেন, দ্বীনের দিকে ধাবিত হওয়ার জন্য।
আল্লাহর লানত প্রাপ্ত কে, সেটা আল্লাহ্ই জানেন। আর আপনি যদি কোনো অমুসলিমকে 'লানতপ্রাপ্ত' বলেন তাহলে তাকে আপনি গালি দিচ্ছেন এবং আল্লাহ্র রহমতকে অস্বীকার করছেন। অর্থাৎ আল্লাহ্র বিরুদ্ধাচরণ করছেন। 'মালাউন' শব্দ ব্যবহার করে কাউকে গালি দেয়া নাজায়েজ কারণ কাউকে গালি দেয়া ইসলামে হারাম।
এ উপমহাদেশের অজ্ঞ, গোঁড়া এবং বিদ্বেষপরায়ণ মুসলিমেরা খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, ইহুদিদেরকে মালাউন বলেন না কেন?? শুধু হিন্দুদের কেন বলেন?? দেশভাগের সময় ১৯৪৬-৪৭ সালের দিকে হিন্দু মুসলিম দাঙ্গায় প্রথম মালাউন শব্দের ব্যবহার শুরু হয়। ৭১'এর মুক্তিযুদ্ধে পাক বাহিনিরা হিন্দুদের 'মালাউন' বলে সম্বোধন করতেন এবং হিন্দু বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করার আগ মুহূর্তে 'মালাউন' বলা হতো। পাক বাহিনিরা 'মালাউন' শব্দের অর্থ জেনে শুনে বুঝে ইচ্ছেকৃতভাবে বলতেন। পরবর্তীতে এ শব্দটি জনশ্রুতি হিসেবে অজ্ঞ মুসলমানদের মধ্যে এর ব্যবহার দেখা যায়। যেহেতু নব্য দেশের মানুষেরা প্রত্যক্ষ করেছে, পাকবাহিনি এ শব্দটি হিন্দুদের গালি দেবার জন্য ব্যবহার করে তাই সংখ্যাগরিষ্ঠের কিছু অংশ মানুষ ধর্মীয় বিদ্বেষানলের ক্ষেত্রে না জেনে, না বুঝে, শুধু শুনে শুনে 'মালাউন' শব্দ চর্চা করে আসছে।
সাম্প্রতিক নাসিরনগরের ঘটনায় হিন্দু জনগোষ্ঠী সামাজিক মাধ্যমে ক্ষোভ ও প্রতিবাদ প্রকাশার্থে নিজেদেরকে 'আমি মালাউন' পরিচয় দিচ্ছে। এ ক্ষেত্রেও হিন্দুদের অজ্ঞতা প্রকাশ পাচ্ছে। কেউ কি আর নিজেদের 'লানতপ্রাপ্ত' বলে গালি দেয়??
মূলত এ শব্দ পৃথিবীর কোনো সৃষ্টির ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য নয়। আসুন, আমরা গালি থেকে বিরত থাকি।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই নভেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৫৮