আগেই বলেছি "বডের হাড্ডি কি জিনিস কত প্রকার ও কি কি" সেটার তালিম পেয়েছিলাম প্রাইমারীতে । এই তালিম অর্জন করতে কম হ্যাপা পোহাতে হয়নি । যখনের কথা বলছি তখন আমি ক্লাশ ফাইভে । মাত্রই মার্শাল আর্ট মুভি দেখা শুরু করেছি । অচিরেই মার্শাল আর্টের ভক্ত হয়ে পড়লাম । শুরুটা হয়েছিল বাংলা ছি:নেমা দিয়ে । বেশী দেখা হতো বাংলা ছবি । কাহিনীর আগা মাথা কিছুই বুঝতামনা । শুধু দেখতাম বিশাল শরীরের নায়কের হাত ছুড়াছুড়ি আর লস্ফজস্ফ । আর ব্যাকগ্রাউন্ন্ডে মাইর পিটের মিউজিক । ♫♪ ইয়া ঢিসুম -ঢুসুম । ঢুস ..ঢিস.. টিয়াস..... ♫♪ । তাতেই আমি পুলকিত হতাম ।
কখন যে সেই মাইর পিটের মাঝে নিজেই ঢুকে পরতাম বুঝতে পারতাম না । আমিও সমানে নাক মুখ খিঁচিয়ে ভিলেন পিটানোর মহৎ কর্মে ইয়া! ঢিসুম ! টিসুম বলে হাত ছুড়াছুড়ি শুরু করে দিতাম । এই হাত ছুড়াছুড়ি করে কতবার যে কত জায়গায় আঘাত পেয়েছি । কখনো বা দরজায়, দেয়ালে । আবার কখনো চেয়ারে । তাতে আমার উৎসাহ আরো বেড়ে যেত । ভিলেনদের যখন দেখতাম মাটিতে লুটোপুটি খাচ্ছে সজোরে হাত তালি দিতাম । তারপরই দেখা যেত স্বল্প বসনে ইয়া মোটা নায়িকা ছুটে আসছে নায়কের কাছে । নায়ক হাত বাড়িয়ে রেখেছে । মনে হতো নায়িকা আমার কাছেই ছুটে আসছে । শুরু হতো বাংলা ছি:নেমার বিখ্যাত ঝাকানাকা গান+নৃত্য ।
♫♪"আমার সারা অঙ্গ রসে রসে ভরা...
এই যৌবন জীবন তোমারই লাগিয়া...ও ও ও ও" ♫♪
কেন যেন গান শুরু হলেই আম্মু টিভি অফ করে দিতো । বলতো "এসব দেখতে নেই" । আমি হাউকাউ করলে দিতো ধমক । হতাশ হয়ে বসে থাকতাম টিভির সামনে । বিদেশী মার্শাল আর্ট মুভি গুলোই আসলে বেশী ভালো লাগত । ততদিনে জ্যাকি চান, জেট লি আর ব্রুস লি এর ভক্ত হয়ে গেলাম ।
মার্শাল আর্টের এতো বিদ্যা যখন অর্জন করলাম সেগুলো কাউকে না দেখালে কি চলে ? প্রাকটিক্যাল ফিল্ড হিসেবে বেছে নিলাম আমার ক্লাসকে । ক্লাসে কিছু সুন্দর সুন্দর পরীও ছিলো । ভাবলাম, মার্শাল আর্টের প্রাকটিস ও হলো , পরীদের কাছে হিরো ও হওয়া গেল । মন্দ কি ? একদিন স্যার ক্লাসে আসতে দেরী করায় আমার প্রতিভা দেখানোর সুযোগ পেয়ে গেলাম । কয়েক বন্ধুকে ক্লাসের একদম সামনে নিয়ে বললাম-
তোরা মার্শাল আর্ট ছবি দেখিস ?
-হুম দেখি ।
ফ্লাইং কিক মারতে পারিস ?
-পারি ।
কচু পারিস । দেখি পারিস কিনা ?
সবাই তাদের প্রতিভা দেখানো শুরু করলো । আর আমিও তাদের নানা খুঁত দেখিয়ে দিতে শুরু করলাম । ততক্ষণে ক্লাসের আরো ছেলে পিলে আমাদের সাথে যোগ দিয়েছে । ওদের একজন বলল- দোস্ত, তুই এবার দেখাইয়া দে কেমনে ফ্লাইং কিক দিতে হয় ? আমি মহা উৎসাহে আয়োজন করে ফ্লাইং কিক দেখানোয় ব্যস্ত হয়ে পড়লাম । নায়কের মতো দিলাম কিক । তারপর..................
তাল সামলাতে না পেরে ধপাস করে পড়লাম কনক্রিটের মেঝেতে । সবার আগে বাম হাত টা মাটিতে পড়েছিল । খেয়াল করলাম সেই হাতটা নাড়াতে পারছিনা । কেমন যেন অবশ হয়ে রয়েছে । তাড়াতাড়ি বাসায় এসে হাসপাতালে গেলাম ।
তারপর ছবির মতো আমাকে দেড় মাস থাকতে হয়েছিল । তখনো আফসোস করছিলাম -" হাত ভেঙ্গেছে দু:খ নেই । কিন্তু পরীদের সামনে এভাবে হিরু থেকে ভিলেইন হওয়ার দু:খ কোথায় রাখি ।" কিছুদিন পরেই ছিলো প্রাইমারী বৃত্তি পরীক্ষা । ভাঙ্গা হাত নিয়ে পরীক্ষার প্রিপারেশনটা টা খুব খারাপ হলো । যার ফল পেলাম রেজাল্টে । বৃত্তি জুটলোনা কপালে । আজো সেই দু:খ মুছবেনা । আমার বিষাদময় অপূর্ণতার পথ চলা শুরু হয়েছিল সেই থেকেই ।
জীবনের ক্যানভাসের অন্য পর্ব গুলো
১. প্রথম প্রেমের অনুভূতি
২. আমাকে লেখা মেয়েটির সেই প্রেমের চিঠি
৩. আমার প্রথম পর্ণো দেখা