somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অণু সাইকোলজিক্যাল থ্রিলারঃ অনিশ্চিত বিদ্রোহী

২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২২ রাত ১:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

৫০০ পৃষ্ঠার বইটাতে আমি তখন ৫৬ পৃষ্ঠায়।
-রাকিব, গল্পের বই রেখে এবার খেয়ে নাও।তোমার খাওয়া শেষ হলে আমি শুয়ে পড়ব, শরীরে আর কুলাচ্ছে না। দরজায় দাঁড়িয়ে আম্মা বললেন।
-ওফ বিরক্ত কর নাতো। আমি মুখ পেচিয়ে বললাম।আমার খাওয়া লাগবে না। তুমি শুয়ে পড়।
বলেই আম্মার মুখের ওপর দড়াম করে বন্ধ করে দিলাম দরজাটা।আবার ডুবে গেলাম বইটাতে।

***
৫০০ পৃষ্ঠার বইটাতে আমি তখন ৪০০ পৃষ্ঠায়।
দারুণ গল্প।একনায়কের বিরুদ্ধে গণ অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দিচ্ছে ছেলেটা। ইতিমধ্যেই সে ধরা পড়েছে, গোপন আদালতে তার বিচার হয়েছে।ফাসি।আগামীকাল শাস্তি কার্যকর হবে।
এদিকে বাকি বিদ্রোহীরা আগামীকাল কারাগারে আক্রমণ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। নায়ককে উদ্ধার করেই প্রেসিডেন্টস পার্কে আক্রমণ হবে। চূড়ান্ত আক্রমণ।
ওদিকে প্রেসিডেন্টস গার্ডও রেডি। রাস্তায় ট্যাংক নামার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন।
ওয়াও। বাংলা ভাষায় এমন থ্রিলার। ভাবাই যায় না।

***
৫০০ পৃষ্ঠার বইটায় আমি তখন ৪৪৪ পৃষ্ঠায়।
কারাগারে আক্রমণ হয়েছে। এখানে নাকি প্রেসিডেন্টের স্পাই আছে। সে নাকি আবার নায়কেরও আস্থা অর্জন করে নিয়েছে।
কে সে?
ঠিক বুঝতে পারছি না।
-রাকিব, আমি কিন্তু শুয়ে পড়ব। তুমি খাবা কিনা? শেষবারের মত বল।
ধ্যাত্তেরি, এই মহিলা এত পেইন কেন?
-বললাম না খাব না। গলার স্বরটা কোনভাবেই আমি আর নীচে নামাতে পারি না।

***
৫০০ পৃষ্ঠার বইটায় আমি তখন ৪৭০ পৃষ্ঠায়।
খেলা জমে উঠেছে। বিদ্রোহীরা কারাগারের দখল প্রায় নিয়েই নিয়েছে, নায়কের ফাসি কোনভাবেই হতে দেয়া যাবে না।
কিন্তু এ কি?
যম টুপি খোলার পর যাকে দেখা গেল সে তো নায়ক নয়!
তবে?
পুরোটাই কি তাহলে ধোঁকা?
এদিকে এক গোপন কুঠুরিতে নায়কের ফাঁসির সব আয়োজন সম্পন্ন!

***
৫০০ পৃষ্ঠার বইয়ে আমি তখন ৪৮০ পৃষ্ঠায়।
আম্মা কি আবার ডাকল নাকি?
দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকালাম আমি। রাত প্রায় দুইটা বাজে। আম্মার শরীর ভাল না। তাও ওপর অফিস আছে কালকে। এত রাত জাগা আম্মার পক্ষে সম্ভব না।

ভন ভন ভন।
ওফ, আমার মশা ডিস্টার্ব করা শুরু করল।কোনভাবেই কি আজরাতে বইটা শেষ করতে পারব না?
যাই, পাশের রুম থেকে ইনসেক্ট কিলার নিয়ে আসি।

***
আব্বা যে সস্তা খুঁজতে গিয়ে কিসব ইনসেক্ট কিলার আনে।
এমন বাজে গন্ধ! তার ওপর স্প্রে করার পর থেকেই চোখ জ্বালাপোড়া করছে।
যাই, চোখে পানি দিয়ে আসি।

***
এখন একটু আরাম লাগছে চোখে। আসলে এত মোটা বই, এর সময় নিয়ে একটানা পড়ছি। তার ওপর বাল্বটাও দুই নম্বর। এত কম আলো।
বইটা আবার খুললাম।
কোথায় যেন ছিলাম?
ওহ, মনে পড়েছে। কারাগারে লড়াই চলছে। নায়ককে উদ্ধার করা গেলেই প্রেসিডেন্টস পার্কে আক্রমণ হবে। প্রেসিডেন্ট হারবে, নায়ক জিতবে।
হঠাৎ কেন যেন মনে হল, আম্মাও কেমন যেন এই স্বৈরাচারী প্রেসিডেন্টের মত। কোন কথা শুনবে না, নিজের মর্জিমত সব চাপিয়ে দেবে আমার ওপর।
আমিও ভালমত দেখিয়ে দিলাম আজকে।
এখন থেকে এরকমই করব। কিচ্ছু শুনব না, কথায় কথায় বিদ্রোহ।

***
আবার খুললাম বইটা।
এবার খেলা হবে।
কিন্তু এ কি?
বইয়ের লেখাগুলো হঠাৎ মুছে যেতে শুরু করল কেন?
আমি যতই পড়ছি, লাইনগুলো ততই মুছে যাচ্ছে।
পড়ার গতি যত বাড়াচ্ছি, ততই বাড়ছে লেখা মুছে যাওয়ার গতিও।
আমি প্রাণপণে পড়ে যাচ্ছি। আমাকে জানতেই হবে কারাগার থেকে নায়ক মুক্ত হল কি না, আমাকে জানতেই হবে প্রেসিডেন্টস পার্কে আক্রমণ হবে কি না।
এখন পর্যন্ত আমি এগিয়ে আছি। যে লাইনগুলো মুছে যাচ্ছে, সেগুলো ইতিমধ্যেই পড়ে ফেলেছি।
-রাকিব, একটু পানি খাওয়াবি বাবা?
আম্মার কন্ঠ?
-রাকিব?
হ্যা, আম্মাই ডাকছে।
উঠে গিয়ে দেখব?
কিন্তু এর মধ্যে যদি আরও লাইন মুছে যায়? যদি একেবারে শেষ পৃষ্ঠা পর্যন্ত মুছে যায়?
এই পৃথিবীতে এটাই এই বইয়ের শেষ কপি, আমি যদি আর কখনো গল্পের শেষটা জানতে না পারি?
-বাবা রাকিব... আম্মার কন্ঠটা ডেস্পারেট শোনায়।
উঠে গিয়ে দেখব? নাকি পড়ব?


অণুগল্পঃ অনিশ্চিত বিদ্রোহী
২৭.১২.২০২২
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২২ রাত ১:১৭
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×