স্থানঃ উগান্ডার পাশে ভুগান্ডা নামক কাল্পনিক দেশ।
।।এক।।
ফসলের জন্য জমি সেচ করা দরকার, অথচ এখন পর্যন্ত বৃষ্টির কোন নামগন্ধ নেই। গ্রামের কৃষকেরা ভয় পেয়ে গেল যদি আগের কয়েক বছরের মত এবারও সময়মত বৃষ্টি না হয়, তাহলে আর ফসল ফলাতে হবে না। মহাজন থেকে উচ্চসুদে নেয়া ধার এখনো অনেক কৃষকই পরিশোধ করতে পারেনি, তার ওপর এবারও ধার নেয়া লাগলে সেটা হবে মরার উপর খরার ঘা। তখন আর আইফোন না, ঘরের চালডাল কেনার জন্যই কিডনী বেচা লাগবে।
কৃষকেরা ভয় পেয়ে পরামর্শের জন্য গেল গ্রামের একমাত্র শতবর্ষী মুরুব্বির কাছে।সব শুনে মুরুব্বি বাইরে বেরিয়ে এলেন, আকাশের অবস্থা দেখে সবাইকে আশ্বস্ত বললেনঃ ভয় পাওয়ার কিছু নেই, আগামী দুই একদিনের মধ্যেই বৃষ্টি হবে ইন শা আল্লাহ।
গ্রামের কৃষকেরা সব আনন্দিত হয়ে ঘরে ফেরত গেল। আল্লাহ চাইলে দুদিন পরে বৃষ্টি হবে, সুতরাং এখন থেকেই তাদের প্রস্তুতি নিতে হবে।
সকল কৃষকের সাথে মুরুব্বির সাথে দেখা করতে এসেছিলেন গ্রামের চেয়ারম্যান। গতবার রাতের আঁধারে একশ ভাগ ভোট পেয়ে তিনি নির্বাচিত হয়েছেন, এবারও একই ফলাফল আশা করছেন।
মুরুব্বির কথা শুনে চেয়ারম্যানের কপালে ভাজ পড়ল। দুইদিন পর তার নেতার জন্মদিন, সে উপলক্ষ্যে কয়েকশ বস্তা চাল এসেছে সরকারের কাছ থেকে। আগের চেয়ারম্যানের মত তিনি চামার না, পুরোটাই একা খাবেন না।তিনি ঠিক করেছেন নেতার জন্মদিনে সব গ্রামবাসীর মাঝে এক বস্তা চাল বিলিয়ে দেবেন।বাকিটা নিজের কাছেই রাখবেন। আফটার অল তিনিও এই গ্রামের সন্তান, তিনি পাওয়া মানেইতো গ্রামের লোক পাওয়া।
কিন্তু যদি সত্যি সত্যি দুইদিন পর বৃষ্টি হয় তাহলে গ্রামের লোকজন থাকবে সব মাঠে, তার চাল বিতরন অনুষ্ঠানে আর কেউ আসবে না।চেয়ারম্যান মনে মনে ভাবতে লাগলেন কি করা যায়।
সমস্যার সমাধান নিয়ে এগিয়ে এল তার একমাত্র ভাতিজা। ভাতিজা অনেক দূরের গ্রাম মিতালী'তে চাকরি করে, সম্প্রতি গ্রামে ফেরত এসেছে।
-ভাইস্তা, কি করা যায়? চেয়ারম্যান জানতে চাইলেন।
-আরে চাচাজান, পানি নিয়ে সমস্যা? এই সমস্যার সমাধানও পানির মতই সোজা। ভাতিজার অতি আত্মবিশ্বাসী জবাব।
-কিরকম? ভাতিজার আত্মবিশ্বাস দেখে উৎসাহী হয়ে প্রশ্ন করেন চেয়ারম্যান।
-আরে চাচাজান, মিতালী নামে যে গ্রামে আমি কাজ করি সেখানেও সেচের সমস্যা ছিল। বৃষ্টি হয় না, পানির কোন দেখা নাই। আমরা করলাম কি, বাঁধ কেটে দিলাম। সুরসুর করে পানি ঢোকা শুরু করল গ্রামে। এখন আর বৃষ্টির দিকে চাইয়া থাকার দরকার আছে? যত দরকার, তত পানি নে তোর জমিতে।
-তাই নাকি? কনফিউজড হয়ে যান চেয়ারম্যান। তবে যে শুনলাম, বাঁধ কাটার পর মিতালী গ্রামে বন্যা দেখা দিছে, ওদের নিজেদের খাওয়াদাওয়ারই ঠিক নাই, সেজন্যই তোরা যারা ভিনগ্রামের তাদের এক কাপড়েই ফেরত পাঠাইছে।
চেয়ারম্যানের এমন কথায় প্রথমে একটু অপ্রস্তুত হয়ে গেলেও দ্রুতই সামলে নেন মিতালী ফেরত ভাতিজা। কি যে বলেন চাচাজী, এগুলা সব গুজব। আমরা যারা মিতালী থেকে ফেরত আসছি, তারা নিজেদের ইচ্ছাইতেই ফেরত আসছি।
-এক্কেবারেই সবাই নিজের ইচ্ছায় ফেরত আসলি? চেয়ারম্যান অবাক হয়ে জানতে চান।
-জ্বি চাচাজি, আই াক দ্যাট ভিলেজ সিস্টেম, সেজন্যই ফেরত চলে আসছি।এর মধ্যে অন্যকোন কাহিনী নাই। ভাতিজা আমতা আমতা করে জবাব দেয়।
-তাইলে এখন কি করতে কস?
-বাঁধ কাইটা দেন চাচাজি, গ্রামে পানি ঢুকুক। কাল-পরশু মিলায়া লোকজন ক্ষেতের কাম শেষ কইরা ফেলুক। দুইদিন পরে নেতার জন্মদিন, সেদিন সবাইকে স্কুলের মাঠে থাকতে হবে। সবার সামনে আপনি জন্মদিনের চাল বিতরণ করবেন।
।।দুই।।
-বাঁধ কাটাবা মানে? মুরুব্বি ঝাঝালো কন্ঠে জানতে চাইলেন।
-বাঁধ কাটব মানে বাধটা কাইটা ফেলব। চেয়ারম্যান শান্ত কন্ঠে জবাব দেন।
-নদীর পানি বাইরা গেলে গ্রামতো ভাইসা যাইব, তখন কি করবা?
-বৃষ্টির নাই খোঁজ খবর, নদীর পানি বাড়ব ক্যামনে? চেয়ারম্যানের হয়ে এবার জবাব দেন তার প্রধান চ্যালা।
-আমার অভিজ্ঞতায় বুঝতেছি দুইদিন পরেই বৃষ্টি নামব। এখন বাঁধ কাঁটা ঠিক হইব না। শুন নাই, মিতালী গ্রাম ভাইসা গেছে বন্যায়।
-আরে রাখেন আপনের মিতালী গ্রাম। অখন কাপড়চোপড় কিনার জন্য চামচিকা গ্রামের লোকজনও নিজেগো বাজার ফেলাইয়া আমগো এইখানে আহে আর আপনে আছেন মিতালী নিয়া।
-শুনো, ওই গ্রামের নাম চামচিকা না, চামেরিকা। গাঞ্জা খাইয়া আমার সামনে ভুলভাল কথা বলবা না। মুরুব্বির মুখ কঠিন হয়ে ওঠে।আর মিতালী গ্রামরে গুণার টাইম নাই তোমার? নিজের গ্রামে কাম কাজ না পাইয়া পোলাপান সব এখন মিতালী গিয়া ক্ষেতে মজদুরী করে। কামকাজের মুরদতো নাই, চেয়ারম্যানের চ্যালা হইতে না পারলে তোমারও আজ মিতালী গিয়া গতর খাটানো লাগত।
মুরুব্বির জবাব শুনে ক্ষেপে ওঠে প্রধান চ্যালা, কিন্তু তাকে হাতের ইশারায় থামিয়ে দেন চেয়ারম্যান। শুনেন মুরুব্বি, এত কথা শুনের টাইম নাই। আমরা কাল সকালেই বাঁধ কাইটা দিব, যা পানি ঢুকবে তাই দিয়ে এই দুইদিনের মধ্যে গ্রামের লোকজনরে ক্ষেতের কাম শ্যাষ করতে হবে। দুইদিন পরে নেতার জন্মদিনে সবার মধ্যে চাল বিতরণ হবে । আমি এরই মধ্যে ইশকুলে মাঠে প্যান্ডেল টানায়া রাখছি, অনুষ্ঠানের সময় গ্রামের সবাইরে সেখানে থাকতে হবে।
-শুনো চেয়ারম্যান, ভুলেও এমন করোনা। করলেই বিপদে পড়বা।
-আর কোন কথা নাই। মুরুব্বিকে হাত তুলে থামিয়ে দেন চেয়ারম্যান। চললাম।
।।তিন।।
দুইদিন পর।
মঞ্চে দাঁড়িয়ে চেয়ারম্যানের মন খুশি হয়ে যায়।তার সামনে গ্রামের ছেলেবুড়ো থেকে শুরু করে বউ-ঝিরা সবাই উপস্থিত। সবাইকেই একটা করে চায়ের কাপ নিয়ে আসতে বলা হয়েছে ঘর থেকে। মঞ্চের ওপর তোলা হয়েছে এক বস্তা চাল। নেতার জন্মদিনে সবাইকে সেখান থেকে এক কাপ করে চাল দেয়া হবে।আহ, কি মহান নেতা।
এমন সময় নেতার পাশে এসে দাড়ান তার প্রধান চ্যালা।
-কিরে, দরজার তালা দিছস? নেতা ফিসফিসিয়ে জানতে চান।
-হ, চেয়ারম্যান সাব। চ্যালার ছোট্ট জবাব।
-কেউ দেখে নাইতো?
-কি যে কন? কেউ দেখব ক্যান? এইসব করতে করতেইতো চুল পাকায়া ফেললাম। দাঁত কেলিয়ে জবাব দেয় প্রধান চ্যালা।
-বস্তা গুইণা দেখছস? কোন বস্তা খোয়া যায় নাইতো?
-পাঁচশ বস্তা আইছিল মোট। এক বস্তা মঞ্চের উপরে, বাকি চারশ নিরানব্বই বস্তা গুইণা তারপর তালা দিছি দরজায়।
শুনে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন চেয়ারম্যান।
দশদিন আগে নেতার জন্মদিন উপলক্ষ্যে সরকার পাঁচশ বস্তা চাল পাঠিয়েছে গ্রামবাসীর মাঝে বিতরণের জন্য।আগের চেয়ারম্যানের মত চামার নন তিনি, তাই পুরোটা নিজের জন্য রাখেননি, এক বস্তা গ্রামবাসীর মাঝে বিতরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বাকি বস্তাগুলো নিজের বাড়িতে রাখা যাচ্ছিল না, তাই স্কুলঘরে এনে রেখেছেন।কেউ যাতে দেখে না ফেলে, সেজন্য বস্তাগুলো আসার সাথেসাথেই স্কুল বন্ধ ঘোষণা করেছেন, হেডমাস্টারের কাছ থেকে চাবি নিয়ে তাকে সহ বাকিসব মাস্টারকে পাঠিয়ে দিয়েছেন যার যার বাড়িতে।আর স্কুলে সামনে টানিয়ে দিয়েছেন প্যান্ডেল-অনুষ্ঠানের অযুহাতে।
-চ্যালা।
-জ্বি চেয়ারম্যান সাব।
-বলছিলাম শহর থেকে সাংঘাতিক আনার জন্য। আনছ?
-সাংঘাতিক না চেয়ারম্যান সাব, সাম্বাদিক। আইছে।
-ওরে বইল সুন্দরমত ছবি তুলতে।
-আইচ্চা।
চাল বিতরণ শুরু হয়। প্রথমে ভেবেছিলেন প্রত্যেককে এক কাপ করে চাল দেবেন, দেখা যায় তাতে এক বস্তায় কুলাবে না। তাই একটু পরেই চেয়ারম্যান সিদ্ধান্ত নেন প্রতি পরিবারের জন্য এক কাপ চাল।
-চেয়ারম্যান সাব। হঠাৎ চ্যালা ডাক দেয়।
-কি হইছে? বিরক্ত হয়ে জানতে চান চেয়ারম্যান।
-লাইনে এরপর করিমন বেওয়া।
চেয়ারম্যান তাকিয়ে দেখেন লাইনে দাঁড়ানো করিমন বেওয়াকে। বছরখানেক স্বামী মারা যাওয়ার গ্রামে ফেরত এসেছে সদ্য কৈশোর পেরনো করিমন বেওয়া, বিধবা মাকে নিয়ে ভিক্ষা করেই এখন যার দিন চলে। যদি আমার কথমত চল তাইলে কোন অভাব হবে না-বেশ কয়েকবার ইঙ্গিতে চেয়ারম্যান বোঝাতে চেয়েছেন, করিমন গা করেনি। অনাবৃষ্টির এই দিনগুলোতে যেখানে লোকেরা নিজেরাই খেতে পারছে না, সেখানে তারা করিমনকে কি ভিক্ষা দেবে? এতদিনে বাগে পাওয়া গেছে মাগীকে।
-চ্যালা।
-জ্বি চেয়ারম্যান সাব।
-ওরে বল, ও কোন চাল পাবে না। যদি চাল লাগে, তবে রাতে আমার বাড়িতে আসতে।
-আইচ্চা। বলতে বলতে একটা কুৎসিত হাসি দিয়ে নেমে যায় চ্যালা।ওই, তুই যা।করিমনকে উদ্দেশ্য করে বলে সে।
-ক্যান? রুক্ষ কন্ঠে জানতে চায় করিমন।
-তোর সোয়ামি আছিল ভিনগ্রামের। সেইখানে গিয়া চাইল চা।
-সোয়ামি ভিনগ্রামের তো কি হইছে? আমি এই গ্রামের মাইয়া না?
-দেখ, বেশি কথা কইস না।যদি চাইল লাগে, তাইলে রাইতে চেয়ারম্যান সাবের বাড়িত যাবি। সেইখানে চাইল-ডাইল পাবি, লগে আরও কতকিছু পাবি।বলতে বলতেই কুৎসিত হাসি দেয় প্রধান চ্যালা।
-হারামজাদা, কুত্তার বাচ্চা। বলেই চ্যালার মুখে চড় কসিয়ে দেয় করিমন, ছিটিয়ে দেয় এক দলা থুথু।
পাল্টা চড় কসানোর জন্য হাত তোলে চ্যালা, তার আগেই থামিয়ে দেন চেয়ারম্যান। এখন না, মাইনসে দেখতেছে।
উপস্থিত জনতার দিকে তাকিয়ে নিজের হাত নামিয়ে নেয় চ্যালা।
করিমনের দিকে এক কাপ চাল বাড়িয়ে দেন চেয়ারম্যান, সেই চাল নিয়ে দ্রুতই মঞ্চ থেকে নেমে পড়ে করিমন।একবার করিমনের চলার পথের দিকে তাকান, তারপর ফিসফিসিয়ে বলেন, ওরে আইজ রাইতেই উঠায় আনবা।
চেয়ার কথা শুনেই চ্যালার মুখে হাসি ফোটে, নীরবে মাথা নাড়তে থাকে।
।।চার।।
ঘন্টা দুয়েক পর।
করিমন বেওয়ার বিব্রতকর ঘটনার পর আরো দুইঘন্টা কেটে গেছে, আবার চাল বিতরণ শুরু হয়েছে। চেয়ারম্যান মহাউৎসাহে প্রতিটি পরিবারকে এক কাপ করে চাল বিতরণ করছেন। শুরু বিতরণই নয়, শহর থেকে আসা সাংবাদিকের ক্যামেরায় প্রতিটি পরিবারকে ছবি তুলতেও বাধ্য করছেন।
মুরুব্বির অনুমান সত্য হয়েছে, ঘন্টাখানেক আগে মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। গ্রামের লোকজন কেউ ছাতা আনেনি, কিন্তু তাদের মাঠ ছেড়ে যেতে দিচ্ছে না চেয়ারম্যানের পান্ডারা। আগে চাল নিবি, তারপর বাড়িত যাবি। ততক্ষণ বৃষ্টিতে ভিজতে থাক। তোরাইতো 'বৃষ্টি চাই, বৃষ্টি চাই' বলে লাফালাফি করছিলি। এবার ভিজতে থাক বৃষ্টিতে।
এভাবে আরও এক ঘন্টা কেটে যায়। বস্তার চালে টান পড়েছে, এখন প্রতি পরিবারকে দেয়া হচ্ছে এক চামচ চাল।এই চাল নিয়েই সবাই বাধ্য হয়ে নেমে যাচ্ছে মঞ্চ থেকে, নামার আগে চেয়ারম্যানকে কদমবুচিও করতে হচ্ছে, কিন্তু মুখ খোলা যাচ্ছে না। চেয়ারম্যানের রাজত্বে প্রশ্ন করা নিষেধ।
এভাবেই সময় চলে যেতে থাকে। এক চামচ চাল পাওয়ার আশায় তখনো বৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে ভিজতে থাকে প্রায় শখানেক হাড় জিড়জিড়ে পরিবার।
এবার বিরক্ত হয়ে পরেন চেয়ারম্যান।আসলে প্রতি পরিবারে না, প্রতি পাড়ায় এক চামচ চাল দেয়া উচিত ছিল।
-চেয়ারম্যান সাব। চ্যালা ডাক দেয়।
-কি?
-চাইলতো শ্যাষ।
-কয় ঘর বাকি?
-আরো একশ ঘর।আরেকটা বস্তা বাইর করুম নি?
-পাগল হইছ নি, পাইছিতো মাত্র পাঁচশ বস্তা। এর মইধ্যে এগোরে দিয়া দিলাম এক বস্তা, আবার তোমারে দিমু দুই বস্তা। এরপর আমার জন্য আর থাকে কি? দিতে চাইলে নিজের ভাগের থেকে দেও।
জবাব শুনে চুপ হয়ে যায় চ্যালা।
এরইমধ্যে হঠাৎ দৌড়ে আসতে দেখা যায় মুরুব্বির ছেলেকে।
-সর্বনাশ হইছে। বৃষ্টিতে নদীর কূল উপচায় উঠছে, কাঁটা বাঁধ দিয়ে পানি ঢুকতেছে, সবার ক্ষেত ভাইসা যাইতেছে।
কথা শুনে জনগণের মাঝে শোর ওঠে, তাদের ক্ষেত ভেসে যাচ্ছে, এদিকে চাল বিতরনও বন্ধ হয়ে গেছে।
-কি হইল? চাইল কই? ভিড় থেকে হঠাৎ চিৎকার ওঠে।
-চোপ। বাড়িত যা। চ্যালা চিৎকার করে ওঠে।
-যামুনা। আমার চাইল দে। ভিড় থেকে নতুন আরেকটা কন্ঠ শোনা যায়।
-ওই, কে কথা কয়? চিৎকার করে ওঠে চ্যালা। বাড়ি ফেরত যা সবাই, নাইলে খবর আছে কইলাম।
-আমার ক্ষেত ভাসায়া দিছস, অহন সরকারী চাইলও খাবি? এইটা আমি হইতে দিমু না। বলতে বলতে কে যেন পাথর ছুড়ে মারে চ্যালাকে লক্ষ্য করে। কপলা কেটে রক্ত পড়তে শুরু করে চ্যালার।
-হ, হ, চাইল চাই। নেতা আর চ্যালাকে লক্ষ্য করে হঠাতই পাথর বৃষ্টি শুরু হয়।
-আপনেরা শুনেন, বৃষ্টি হইতেছে, বাড়িত যান। যারা চাইল পান নাই, তারা কাইল আইসেন। উপস্থিত জনতাকে শান্ত করার চেষ্টা করেন চেয়ারম্যান।
-কিসের কাইল? আমার হকের চাইল, আমারে অহন বুঝায় দিতে হইব।
পাথর বৃষ্টি থেকে বাঁচতে হাত দিয়ে মুখ ঢেকেছিলেন চেয়ারম্যান, হঠাৎ লক্ষ করে দেখেন করিমন বেওয়া মঞ্চে উঠে এসেছে।
-আমার হকের চাইল, আমারে অহন বুঝায় দিতে হইব। আবার চিৎকার করে ওঠে করিমন।
-হারামজাদী, খাইছি তোরে। বলেই করিমনের দিকে তেড়ে আসতে থাকে চ্যালা, কিন্তু একটু পরেই তাকে থেমে যেতে হয়।চ্যালার অন্ডকোষ বরাবর প্রচন্ড লাথি কষিয়েছে করিমন, কামড়ে ধরেছে তার কান।
করিমনের রুদ্ররূপ দেখে হঠাৎ করেই প্রচন্ড ভয়ে যান চেয়ারম্যান, এই পাথরবৃষ্টির মাঝেই প্রাণপণ চেষ্টা করে মঞ্চ থেকে নেমে যেতে।
কিন্তু না।চেয়ারম্যানের সব চেষ্টাই বৃথা হয়।আকাশ থেকে নেমে আসা গায়েবী বৃষ্টি আর জনতার দিক থেকে ছুটে আসা পাথর বৃষ্টি, এরমাঝে কোনভাবেই তিনি মঞ্চ থেকে নেমে আসার পথ খুঁজে পান না।
চেয়ারম্যান সামনে তাকান। করিমন ইতিমধ্যেই প্রধান চ্যালাকে শায়েস্তা করে ফেলেছে, এবার এগিয়ে আসছে তার দিকে।
চেয়ারম্যান আশেপাশে তাকিয়ে তার অপ্রধান চ্যালাদের খুঁজতে থাকেন, কিন্তু তাদের কারও ছায়ারও দেখা পাওয়া যায় না। সুযোগ বুঝে সব কয়টাই আগে আগে সটকে পড়েছে।
এবার প্রচন্ড বেদনার নিজের অন্ডকোষ চেপে ধরেন চেয়ারম্যান, তার কানের ওপর তখন চেপে বসেছে করিমনে ধারাল দাঁত। জ্ঞান হারানোর আগে তিনি শুনতে পান কে যেন মঞ্চের পেছন থেকে বলছে, ভাইয়েরা, আমি জানি চেয়ারম্যান কই লুকায় রাখছে সব চাইল। আহ, আমরা নিজেদের ভাগ বুইঝা নেই।
সংবিধিবদ্ধ সর্তকীকরণঃ গল্পে বর্ণিত স্থান, কাল ও সকল চরিত্রই লেখকের কল্পনা, বাস্তবে এদের কারোরই কোন অস্তিত্ব নেই। কেউ বাস্তবের সাথে কোন মিল খুঁজে পেলে তার দায় একান্তই পাঠকের নিজের, লেখক এখানে কিচ্ছু করতে পারবেন না।
আমার লেখা আরো কিছু গল্পঃ
ছোটগল্পঃ আবেগ, বিবেক ও গতিবেগের গল্প
ছোটগল্পঃ ইঁদুর দৌড়
ছোটগল্পঃ হাইওয়ে
ছোটগল্পঃ জঙ্গল বসন্ত
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ৮:১৫