somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পেট্রল বোমা, রাজনৈতিক ডিস্কোর্স এবং বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকট

০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৯:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক সংকটে একটা কেন্দ্রীয় অবস্থানে আছে পেট্রল বোমা। কি রাজনীতিবিদ, কি আমজনতা, সকলে পেট্রল বোমা নিয়ে কথা বলছে। রাজনীতিবিদরা কেন এ বিষয়ে আগ্রহী তা' সহজেই বোঝা যায়- বিএনপি'র জন্য রাজপথে না-থেকেও আন্দোলন চালানো আর দাবী আদায়ের সুবিধাজনক উপায় হল জনসাধারণের মধ্যে পেট্রল বোমাতঙ্ক জারি রাখা। আবার আওয়ামীলীগের জন্য পেট্রল বোমাতঙ্ক বিএনপি'কে সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করা এবং বিদ্যমান রাজনৈতিক সমস্যাকে নিছক আইন-শৃংখলার সমস্যা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার উপায়। কিন্তু পেট্রল বোমা কি আসলেই বিদ্যমান রাজনীতিতে এতোটা গুরুত্বপূর্ণ যতোটা রাজনৈতিক এবং অরাজনৈতিক ডিস্কোর্সে দেখা যাচ্ছে?

আমার মতে, পেট্রল বোমা নিজে কোন সমস্যা নয়, বরং এটি অন্য আরেকটি সমস্যার বহিঃপ্রকাশ, যেমন সর্দি-জ্বর শরীরে ভাইরাস (বা অন্যান্য) সংক্রমণের বহিঃপ্রকাশ। ক্রমাগতঃ পেট্রল বোমার আঘাত এবং এর ফলে নিরপরাধ আম-জনতার দুঃখজনক অকাল মৃত্যু আমাদের নৈতিকতাকে বিরাট প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে। মানুষ হিসেবে আমরা প্রাণীকূলে শ্রেষ্ঠ শুধুমাত্র উন্নত নৈতিকতার গুণে। নৈতিকতা আমাদেরকে নিজের স্বার্থ ত্যাগ করে হলেও অন্যান্য মানুষ এবং এমনকি যেকোন জীবের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে বাধ্য করে। একারণেই কোন মানুষকে যথাযথ আইনী-প্রক্রিয়া ছাড়াই নির্বিচারে হত্যা করা সকল মতাদর্শে (ধর্মে, নিধর্মেও) কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। অথচ, বর্তমানে আমরা দেখছি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ বোমা হামলাকে মামুলী রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের উপায় হিসেবে বেছে নিয়েছি!!

বিএনপি বোমাহামলার ঘটনাগুলোকে আওয়ামী সরকারের শাসনকার্যে ব্যর্থতা হিসেবে দেখাতে চাইছে, এবং সেই কারণে নিজেরাও এইসব ন্যাক্কারজনক ঘটনায় শামিল হচ্ছে। পত্রিকাগুলোতে অহরহ আমরা এমনই দেখছি। আবার আওয়ামীলীগ বোমা হামলার মাধ্যমে বিএনপিকে সন্ত্রাসী এবং গণবিরোধী দেখাতে চাচ্ছে। ফলে এদেরকেও দেখছি বোমা হামলায় অংশ নিতে। যদিও পত্রিকাগুলো আওয়ামী বোমা হামলাকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে চলেছে (যারা এটা মানতে চান না, তারা আজকের যুগান্তর, আমাদের সময় আর মানবজমিন দেখেনঃ নারায়ণগঞ্জের রুপগঞ্জে ছাত্রলীগের ৪ জন বোমা বানাতে গিয়ে আহত)।

আমরা সকলেই একবাক্যে মেনে নিই যে বোমা হামলা করে যেকোন মানুষকে হত্যা করা গুরুতর অপরাধ, মহাপাপ। - তাই কি? আরেকবার এই বাক্যটা পড়ুন- বোমা মেরে যেকোন মানুষকে হত্যা করা মহাপাপ

- আমি বাজী ধরে বলতে পারি, আমাদের অনেকেই এই ধারণা থেকে সড়ে এসেছেন। অনেকেই মনে করেন কিছু কিছু মানুষকে বিনা বিচারে মারা ঠিকই আছে, যেমন- চিহ্নিত সন্ত্রাসী, ডাকাত, পকেটমার, ধর্ষক, ইত্যাদি। ইদানিং এই তালিকায় যুক্ত হয়েছে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষও। এই বিশ্বাস থেকেই আমাদের অনেকেই র‍্যাবের কথিত "বন্দুক যুদ্ধ" এবং "ক্রস ফায়ার"কে সমর্থন দিয়ে আসছেন। একবারও কি একান্ত নিজের সাথে কখনো বসেছেন, নিজের কাছে প্রশ্ন করেছেন যে আপনি নির্বিচারে মানুষ হত্যার বিপক্ষ থেকে পক্ষে দাঁড়িয়ে গেছেন? -

এখন আর নির্বিচারে মানুষ হত্যা দেখলে আর আমাদের মানবাত্মা কেঁপে ওঠে না। বরং আমরা সাথে সাথে বিকৃত রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে হিসেব-নিকেশ শুরু করে দিই যে, লাশগুলোকে কিভাবে নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করা যাবে- বিএনপির সমর্থকরা বলবে যে সরকার নাগরিকদের জানমালের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ, আর আওয়ামীলীগ সমর্থকরা বলবে যে বিএনপি গণহত্যা করে জনবিরোধী অবস্থান নিয়েছে।

কিসের স্বার্থে আপামর জনতা নিজেদের স্বভাবজাত নৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে এইরূপ অমানবিক আচরণ করতে পারে? এমন ত' নয় যে আমরা একেকজন মানবীর গর্ভে জন্ম নেইনি, একেকটা মানব পরিবারে বামা-মা, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী, বন্ধু-বান্ধবের স্নেহ-ভালোবাসায় সিক্ত হইনি?

আমাদের অধিকাংশই মনে করি নিজেদের স্বার্থেই আমরা রাজনৈতিক দলগুলোকে সমর্থন করি। কথা সত্য। কিন্তু দলকে সমর্থন করার মানে ত' এই নয় যে আমাদের মানবসত্বাকে বিসর্জন দিয়ে হবে, আমাদের স্বভাবজাত নৈতিকতাকে পরিত্যাগ করতে হবে। দুনিয়ার বুকে এমন কোন মতবাদ কি আছে যা'র জন্য মানবতাকে বিসর্জন দিতে হবে?

শিরোনামে বলেছি বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকট। আসলে এই সংকট আমাদের নিজেদের ব্যক্তিগত সংকট, যা' ক্রমাগত রাজনৈতিক দলগুলোর কার্যকলাপে প্রকাশিত হয়ে চলেছে। আমরা নিজেরা নৈতিকতা বিসর্জন দিয়েছি, অমানবিক হয়েছি। কিন্তু কখনও নিজেদের আত্মার দিকে, উপলব্ধির দিকে, মানব চেতনার দিকে না-তাকিয়ে অন্যদের দোষ খোঁজায় নিজেদের যাবতীয় শক্তি অপচয় করছি। এরই অনিযার্য পরিণতিতে এখন আমরা এমন এক অমানবিক সময়ে এসে পড়েছি যখন কিছু নিরীহ-অভাগা-নিরপরাধ মানুষের মৃতদেহও আমাদের মানবিকতাকে জাগাতে পারেনা।

অনেকে হয়তো বলবেন, লেকচার ত' বহুৎ দিয়ে গেলেন। কিন্তু এই সংকট থেকে উত্তরণের উপায় নিয়ে ত' কিছু বললেন না। - ভাই এবং বোন, উত্তর আপনি অবশ্যই জানেন, আমাকে বলতে হবে না। শুধু একান্ত নিরিবিলিতে গিয়ে নিজের মনকে জিজ্ঞাসা করেন যে, আপনি উত্তরণ চান কি না। তাহলে আপনার মনই বলে দিবে কি করতে হবে। যদি এইটুকু চেষ্টা করতে না-চান, তাহলে জেনে নিন যে আপনার মানব সত্বার মৃত্যু হয়েছে।












সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১১:০৭
৭টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ভারত ও পাকিস্তান উভয় সম্পূর্ণ কাশ্মিরের দখল পেতে মরিয়া

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:১৩



ভারত হয়ত এবার যুদ্ধকরেই পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মির দখল করতে চায়। পাকিস্তানও হয়ত যুদ্ধকরেই ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মির দখল করতে চায়। এমতাবস্থায় ভারতের পাশে ইসরাইল এবং পাকিস্তানের পাশে চীন থাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঈশ্বরের ভুল ছায়া – পর্ব ৩ | ভূমিকা-ব্রীজ

লিখেছেন শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৯:০৮



"তুমি যদি বাতাসকে ভালোবাসো, তাকে বশ করো না—তার সুর বোঝো। কারণ বাতাস একবার থেমে গেলে, তার কণ্ঠ আর কখনো শোনা যায় না।"

“ঈশ্বরের ভুল ছায়া” সিরিজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

সবার কমন শত্রু আওয়ামী লীগ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১১:৫৮


শেখ হাসিনা সবসময় তেলবাজ সাংবাদিকদের দ্বারা বেষ্টিত থাকতেন। তেলবাজ নেতাকর্মীরাও বোধহয় তার পছন্দ ছিল। দেশে কী হচ্ছে, না হচ্ছে, সে সম্পর্কে তার ধারণাই ছিল না। সামান্য কোটাবিরোধী আন্দোলন উনার পক্ষে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক কনফ্লিক্ট জোনে পরিণত করলো ড. ইউনুসের অবৈধ দখলদাররা ‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ২:২১



শেষ পর্যন্ত ড.ইউন তার আন্তর্জাতিক সক্ষমতা প্রদর্শন করে দেখালেন! উনি বাংলাদেশের মানুষের জন্য কখনোই কোন কাজ করেননি ।আমাদের কোনো দুর্যোগে কখনো পাশে দাঁড়িয়েছেন তার কোনো দৃষ্টান্ত নেই । যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারত একটি মানবিক দেশ

লিখেছেন রাজীব নুর, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১:৩৮



যতদিন বাংলাদেশ থাকবে ততদিন আমরা ভারতবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকব।
ভারতের মানুষের সঙ্গে আমাদের কোনো শত্রুতা নেই। আমরা বাংলাদেশি তোমরা ভারতীয়। আমরা মিলেমিশে থাকতে চাই। ভারতের বাংলাদেশের সাথে সাংস্কৃতিক,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×