বইটির প্রাককথন সাধারণ বইয়ের মত নয় । লেখক চেতন ভগত একটি ইমেইলের প্রসংগ তুলে কাহিনী বর্ণনা আরম্ভ করেন । আহমেদাবাদের একজন ব্যবসায়ী চিরশয্যাশায়ী হওয়ার বাসনায় ঘুমের বড়ি খাওয়ার আগে লেখক চেতন ভগতকে মেইল করেন । এই ই-চিঠিতে জি প্যাটেল তার জীবনের তিনটি ভুলের ইঙ্গিত দেন । উনিশ লাইনের চিঠি, প্রতিটা লাইন শেষ হওয়ার সাথে একটা করে ঘুমের বড়ি খাওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন জি প্যাটেল নামের সেই পত্র-টাইপক! এই ঘটনা বানানো হওয়ারই কথা, কিন্তু চেতন ভগতের ভাষা দেখে তা বোঝার উপায় নেই ।
এরপর চেতন ভগত আহমেদাবা্দে তার পরিচিত মানুষজন দিয়ে খোঁজ-খবর নেয়া আরম্ভ করেন । এতসব করার পর আসল গল্পে চলে যান লেখক । উপন্যাসের মূল চরিত্র গোবিন্দ প্যাটেল তার জীবনের কাহিনী বলে যেতে থাকে ।
গোবি্নদ একজন সাধারণ মানুষ, চুপচাপ থাকতে পছন্দ করে । কিন্তু সাধারণ মানুষ হলেও তার লক্ষ্যা কিন্তু সাধারণ নয় । তার স্বপ্ন হচ্ছে অনেক বড় ব্যবসায়ী হওয়া । তার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু হল অমি আর ইশান । গোবিন্দ সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বে বিশ্বাস-অবিশ্বাস কোনটাই ঠিকমত করতে পারে না । গোবিন্দ তার দুই বন্ধুর সাথে মিলে ক্রিকেট সরঞ্জামের ব্যববসা শুরু করে । এর পাশাপাশি সে ইশানের বোন বিদ্যাকে অংক ও শেখাতো । একপর্যায়ে সে আর বিদ্যা প্রেমে পড়ে যায় । গণিত ও ব্যবসা বুদ্ধি ভালো বলে হিসাব কিতাবএর সব দায়িত্ব ছিল গোবিন্দের ঘাড়েই ।
গোবিন্দের অতি কাছের একজন বন্ধু ইশান, ডাকনাম “ইশ” । ইশের গুণপনার মাঝে আছে- দেশপ্রেমী, ক্রিকেটপাগল, গুজরাটের তত্র এলাকার দুঁদে ক্রিকেটার ইত্যাদি ইত্যাদি । তার আগ্রহেই তাদের ক্রিকেট সরঞ্জামের দোকানের নাম হয় টিম ইন্ডিয়া ক্রিকেট শপ । ইশ শুধু খেলতই না, সে ক্রিকেট ক্যাম্পও করাত । ইশ একপর্যায়ে আলী নামের একজন প্রতিভাবান ক্রিকেটারকে আবিস্কার করে বসে সে ।
আরেকজন হল অমি । স্থানীয় পুরোহিতের ছেলে, তার পরিবার এলাকায় অনেক মানুষের ভক্তি-শ্রদ্ধা পায় । অমিদের পরিবার কঠিন ব্রাহ্মণ পরিবার । জাত-পাত ইত্যাদি মেনে চলে তারা । সে অনেকটা ভোঁতা ধরণের মানুষ । তার মাঝে বৈচিত্র্য ও স্বপ্ন কোনটাই নেই । সে তার উগ্র বিশ্বাস নিয়ে মাঝেমাঝেই দ্বিধায় ভোগে ।
বিদ্যা হল ইশানের ছোট বোন, মধ্যবিত্ত পরিবারের বিদ্রোহী মেয়ে । মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার জন্য গোবিন্দের কাছে অংক পড়তে গিয়ে তার সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে । সম্পর্ক নানা বাঁক নেয় কাহিনী এগিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে ।
আলি- মুসলমান ছেলে, ইশান তাকে ক্রিকেটের ট্রেনিং দেয় । বিদ্ধংসী ব্যাটিং করার ক্ষমতা নিয়েই জন্মেছে সে, উপন্যাসে তার ভূমিকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিশেষত শেষ দিকে । গুজরাটের দাঙ্গায় আলিকে রক্ষার জন্য প্রাণান্ত চেষ্টা করে ইশান আর গোবিন্দ । অমির উগ্র হিন্দুত্ববাদী বিট্টু মামার সাথে সরাসরি লড়াইয়ে চলে যায় তিন বন্ধু ।
গোবিন্দ, হর্ষ, ঈশান পুরনো মন্দিরের পাশে দোকান খুলে ফেলে । মন্দিরে লোকজনের আনাগোনা ভালোই থাকায় তাদের বিক্রিবাট্টা দিনে দিনে বাড়তে শুরু করে । ধীরে ধীরে শুধু ক্রিকেটের জিনিসপাতি ছাড়াও আরো নানা জিনিস যেমন খাতা-কলম ইত্যাদি বেঁচাও শুরু করল তারা । ইন্ডিয়া ভালো খেললে তাদের বিক্রিও ভাল হয় । ইন্ডিয়ার খেলা, গুজরাটের সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি, সাম্প্রদায়িক হিন্দু নেতাদের আস্ফালন, সাধারণ ছেলেপিলেদের ক্রিকেটম্যানিয়ার সাথে উপন্যাসের পাত্র-পাত্রীদের নানা ঘটনা মিশিয়ে লেখা “থ্রি মিস্টেকস অব মাই লাইফ” বেশিরভাগ মানুষের কাছে উপাদেয়ই লাগবে বলে মনে হয় আমার ।
দাঙ্গায় আলি হাতে মারাত্নক আঘাত পায় । আলিকে সুস্থ করার নিমিত্তে বিদ্যার কারণে ইশান-গোবিন্দের মাঝে কেটে যাওয়া সুর আবার ফিরে আসে । অনুবাদ বই পড়তে আমার এমনিতে কেমন জানি কাঠ কাঠ লাগে । কিন্তু এই বইটা পড়তে ভালোই লাগল । সমাপ্তি আরো ভালো লেগেছে ।
সকলকে ধন্যবাদ
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে নভেম্বর, ২০১২ রাত ৯:৪৬