somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বই রিভিউ- “থ্রি মিসটেকস অব মাই লাইফ-চেতন ভগত”

২৯ শে নভেম্বর, ২০১২ রাত ৯:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চেতন ভগতের কথা মনে আছে? বিখ্যাত চলচ্চিত্র “থ্রি ইডিয়টস” তাঁর “ফাইভ পয়েন্ট সামওয়ান” নামের একটি বই থেকে নির্মাণ করা হয়েছিল । ভারতীয় লেখক হলেও চেতন ভগত কিন্তু হিন্দি ভাষায় লেখেন না । তার বইগুলো ইংরেজী ভাষায় লেখা । আজকে আলোচনা হবে তাঁর তৃতীয় বই “থৃ মিসটেকস অব মাই লাইফ” নিয়ে । বাতিঘর প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত ইশতিয়াক আহমেদের করা অনুবাদটি পড়েছি আমি ।

বইটির প্রাককথন সাধারণ বইয়ের মত নয় । লেখক চেতন ভগত একটি ইমেইলের প্রসংগ তুলে কাহিনী বর্ণনা আরম্ভ করেন । আহমেদাবাদের একজন ব্যবসায়ী চিরশয্যাশায়ী হওয়ার বাসনায় ঘুমের বড়ি খাওয়ার আগে লেখক চেতন ভগতকে মেইল করেন । এই ই-চিঠিতে জি প্যাটেল তার জীবনের তিনটি ভুলের ইঙ্গিত দেন । উনিশ লাইনের চিঠি, প্রতিটা লাইন শেষ হওয়ার সাথে একটা করে ঘুমের বড়ি খাওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন জি প্যাটেল নামের সেই পত্র-টাইপক! এই ঘটনা বানানো হওয়ারই কথা, কিন্তু চেতন ভগতের ভাষা দেখে তা বোঝার উপায় নেই ।

এরপর চেতন ভগত আহমেদাবা্দে তার পরিচিত মানুষজন দিয়ে খোঁজ-খবর নেয়া আরম্ভ করেন । এতসব করার পর আসল গল্পে চলে যান লেখক । উপন্যাসের মূল চরিত্র গোবিন্দ প্যাটেল তার জীবনের কাহিনী বলে যেতে থাকে ।

গোবি্নদ একজন সাধারণ মানুষ, চুপচাপ থাকতে পছন্দ করে । কিন্তু সাধারণ মানুষ হলেও তার লক্ষ্যা কিন্তু সাধারণ নয় । তার স্বপ্ন হচ্ছে অনেক বড় ব্যবসায়ী হওয়া । তার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু হল অমি আর ইশান । গোবিন্দ সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বে বিশ্বাস-অবিশ্বাস কোনটাই ঠিকমত করতে পারে না । গোবিন্দ তার দুই বন্ধুর সাথে মিলে ক্রিকেট সরঞ্জামের ব্যববসা শুরু করে । এর পাশাপাশি সে ইশানের বোন বিদ্যাকে অংক ও শেখাতো । একপর্যায়ে সে আর বিদ্যা প্রেমে পড়ে যায় । গণিত ও ব্যবসা বুদ্ধি ভালো বলে হিসাব কিতাবএর সব দায়িত্ব ছিল গোবিন্দের ঘাড়েই ।

গোবিন্দের অতি কাছের একজন বন্ধু ইশান, ডাকনাম “ইশ” । ইশের গুণপনার মাঝে আছে- দেশপ্রেমী, ক্রিকেটপাগল, গুজরাটের তত্র এলাকার দুঁদে ক্রিকেটার ইত্যাদি ইত্যাদি । তার আগ্রহেই তাদের ক্রিকেট সরঞ্জামের দোকানের নাম হয় টিম ইন্ডিয়া ক্রিকেট শপ । ইশ শুধু খেলতই না, সে ক্রিকেট ক্যাম্পও করাত । ইশ একপর্যায়ে আলী নামের একজন প্রতিভাবান ক্রিকেটারকে আবিস্কার করে বসে সে ।

আরেকজন হল অমি । স্থানীয় পুরোহিতের ছেলে, তার পরিবার এলাকায় অনেক মানুষের ভক্তি-শ্রদ্ধা পায় । অমিদের পরিবার কঠিন ব্রাহ্মণ পরিবার । জাত-পাত ইত্যাদি মেনে চলে তারা । সে অনেকটা ভোঁতা ধরণের মানুষ । তার মাঝে বৈচিত্র্য ও স্বপ্ন কোনটাই নেই । সে তার উগ্র বিশ্বাস নিয়ে মাঝেমাঝেই দ্বিধায় ভোগে ।
বিদ্যা হল ইশানের ছোট বোন, মধ্যবিত্ত পরিবারের বিদ্রোহী মেয়ে । মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার জন্য গোবিন্দের কাছে অংক পড়তে গিয়ে তার সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে । সম্পর্ক নানা বাঁক নেয় কাহিনী এগিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে ।
আলি- মুসলমান ছেলে, ইশান তাকে ক্রিকেটের ট্রেনিং দেয় । বিদ্ধংসী ব্যাটিং করার ক্ষমতা নিয়েই জন্মেছে সে, উপন্যাসে তার ভূমিকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিশেষত শেষ দিকে । গুজরাটের দাঙ্গায় আলিকে রক্ষার জন্য প্রাণান্ত চেষ্টা করে ইশান আর গোবিন্দ । অমির উগ্র হিন্দুত্ববাদী বিট্টু মামার সাথে সরাসরি লড়াইয়ে চলে যায় তিন বন্ধু ।

গোবিন্দ, হর্ষ, ঈশান পুরনো মন্দিরের পাশে দোকান খুলে ফেলে । মন্দিরে লোকজনের আনাগোনা ভালোই থাকায় তাদের বিক্রিবাট্টা দিনে দিনে বাড়তে শুরু করে । ধীরে ধীরে শুধু ক্রিকেটের জিনিসপাতি ছাড়াও আরো নানা জিনিস যেমন খাতা-কলম ইত্যাদি বেঁচাও শুরু করল তারা । ইন্ডিয়া ভালো খেললে তাদের বিক্রিও ভাল হয় । ইন্ডিয়ার খেলা, গুজরাটের সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি, সাম্প্রদায়িক হিন্দু নেতাদের আস্ফালন, সাধারণ ছেলেপিলেদের ক্রিকেটম্যানিয়ার সাথে উপন্যাসের পাত্র-পাত্রীদের নানা ঘটনা মিশিয়ে লেখা “থ্রি মিস্টেকস অব মাই লাইফ” বেশিরভাগ মানুষের কাছে উপাদেয়ই লাগবে বলে মনে হয় আমার ।


দাঙ্গায় আলি হাতে মারাত্নক আঘাত পায় । আলিকে সুস্থ করার নিমিত্তে বিদ্যার কারণে ইশান-গোবিন্দের মাঝে কেটে যাওয়া সুর আবার ফিরে আসে । অনুবাদ বই পড়তে আমার এমনিতে কেমন জানি কাঠ কাঠ লাগে । কিন্তু এই বইটা পড়তে ভালোই লাগল । সমাপ্তি আরো ভালো লেগেছে ।

সকলকে ধন্যবাদ



সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে নভেম্বর, ২০১২ রাত ৯:৪৬
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×