সেই মে মাসের ২০ তারিখের প্রাক্কাল হতেই আমার ছোট ভাই “দি স্পিড” দেখিবার জন্য ঘ্যানর-ঘ্যানর করতেছিল




ফিল্ম শুরু হওয়ার কথা ১০টা ৫০ মিনিটে । এর কিছুক্ষণ আগেই পর্দা চালু হয়ে গেল । প্রথমেই দেখানো হল বসুন্ধরা বেবী ডায়াপারের এড




ফিল্ম শুরু হইল বিশিষ্ট ব্যবসায়ী অনন্য(এম এ জলিল অনন্ত) সাহেবের ড্রিল পর্ব দেখায়ে, দৌড়ের স্পিড ১৬ কিলোমিটার(যদিও স্পিড দেখে মনে হইছিল আরো বেশি) । এরপর নানা ভগি চগি দেখানোর পরে অনন্য সাহেবকে এক বেকার যুবককে চাকরি দিতে দেখা গেলো । কাছাকাছি সময়ে যখন দৃষ্টি(দীঘি) ও তার হস্তিনীসদৃশ দুই পরিচারিকাকে পর্দায় দেখা যেতেই হলের সবার মাঝে হাসির হুল্লোড় পরে গেল । ওদিকে কিবরিয়া সাহেব “অনন্য-সিন্ড্রোম” এ ভুগতে ভুগতে পেপার টেপার সব ছুঁড়ে ফেলে দেন । অনন্য সাহেবের সাফল্যে ব্যতিব্যাস্ত হয়ে কিবরিয়া অনন্যকে বালিশ ছাড়া শোয়ায়ে দেবার পরিকল্পনা করতে থাকল ।
এমন সময় খলনায়ক ডনের আবির্ভাব । এমন কিম্ভূতকিমাকার বেশে ডনকে লুজ থুড়ি স্লো-মোশনে আসতে দেখে হলের লুল-সুশীল নির্বিশেষে কেঁপে কেঁপে হাসতে লাগল । ডন অপমানিত হয়ে নেতাকে খুন করে । কিবরিয়া খান ডনকে অনন্যকে খুন করার তালগাছ থুড়ি “সুপারি” দেয় । অনন্য রুপী অনন্তের “পাওয়ার” সম্পর্কে ডনের অজানা ছিল না । তো ডন ডিরেক্ট রকেট লাঞ্চার নিয়ে বৃষ্টিভেজা রাতে অনন্যরে দিয়ে “লাঞ্চ” করতে অনন্যা থুক্কু অনন্যের গাড়িবহরে হামলা করে । এমন সময় শুরু হয় হল-দর্শকদের বহুল আকাঙ্খিত “দি জলিল মোমেন্ট” । বৃষ্টির মাঝে যখন অনন্য যখন কোট খুলল, তখন পোলাপানের হাসি থামায়(তালিও পড়ছিল বোধহয় সেই সময়ে) । ডন ব্রাজিলের জার্সি গায়ে দিয়া কিবরিয়া সাহেবের ঘরের ভিতরে আছড়ায়া পইরা পটল তুলে । এমন সময় অনন্যর ডায়লগবাজি শুরু……নানা কথার পর “নীতিবানরা দুর্নীতিবাজদের চ্যালেঞ্জ করে না্, থ্রেট করে……” । অনন্য গটগট করে চলে গেল । অনন্য সাহেবের ভাতিজির চাচ্চুর উপর গোসসসা করলে চাচ্চু অনন্য বিভিন্ন হাবিজাবি গল্প বলে ভাতিজিকে হাসায়(এই গল্প বলার সময়ে নায়কের এক্টিং কিন্তু খুব একটা খারাপ হয়নাই) । যাই হোক, ভাতিজির রাগ ভাঙ্গানোর পর ঢাকার রাস্তায় “চাচ্চু তোমার নেই তুলনা………





কিবরিয়া সাহেব(আলমগীর) অনন্যকে সাইজ করার জন্য এনড্রু(নিনো) কাজে লাগানোর ট্রাই মারিলেন । নিনো অনন্যরে গিয়া কইল, “আস মামু, মিল্ল্যা-ঝুইল্ল্যা পুংটামি করি!” কিন্তু অনন্য কৈলেন, এন্ড্রু ওরফে এনায়েত হইল বাংলাদেশী শূটার যে কিনা প্রতিযোগিতা থেকে পলায়ে স্মাগলিং আরম্ভ করে । আরো বিভিন্ন কথাবার্তার পর চখাম সেই ডায়লগ, “আই নো, বাট ইউ ডোন্ট নু মাই ডিটেইলস!!












দৃষ্টি বায়না ধরে, তাকে ওয়ান্ডারল্যান্ড নিয়ে যেতে হবে । ওয়ান্ডারল্যান্ডে খেলতে খেলতে দৃষ্টি দেখতে পায় এক মা তাঁর সন্তানের মাথায় চুমু দিচ্ছে । সন্ধ্যা চট করে বুঝে ফেলে দৃষ্টির মন খারাপ হওয়ার ব্যাপার, আর বুঝেই দ্রুত দৃষ্টিকে ঐ মায়ের মত করে চুমু দিয়ে বলে, “চলো, আমিও খেলব তোমার সাথে……”(এই অংশটা ব্যাক্তিগতভাবে আমার ভাল লাগছে, কারণ পারভীন আর দীঘি দুইজনই অভিনয় জানে……) । ভাল লাগা দূর হতে বেশি দেরি হল না । দৃষ্টির স্কুলে তাকে না পেয়ে অনন্য সবখানে খোঁজ লাগায় । পরে দৃষ্টি ফোন করে জানালে নায়ক অনন্য জলিলের মার্কামারা এক্সপ্রেশন আরেকটা জলিল মোমেন্টের অবতারণা করে । দৃষ্টিকে আনতে যখন অনন্য অফিসের বাইরে যায়, তার রুমের বাইরে নিউইয়র্কের সময়ওয়ালা একটা ঘড়ি ছিল । কিন্তু পর্দায় দেখা গেছে ঘড়িটা আসলে নষ্ট । ঘড়ির কাঁটা ৬-৪৫ এর দিকে আটকে ছিল । আর অনন্যর সাথে সন্ধ্যার একটি কথোপকথনের সময় নায়কের চুল একবার বড় আরেকবার ছোট দেখাচ্ছিল ।
যাই হোক, এরপরে সামান্য টেনশনের পর অনন্য-সন্ধ্যার বিয়া হয়ে গেল । বাসররাতে অনন্য-সন্ধ্যা(দুইজনেই এক ব্র্যান্ডের লিপ্সটিক লাগাইছে কিনা কে জানে???) বাসরঘরে ঢুকে দেখে দৃষ্টি ঘুমিয়ে আছে । নিজেদের মধ্যে দুই একটা সোহাগের কথা বলে ইনভল্ভ হওয়ার চেষ্টা করতেই দৃষ্টি বলে, “এই তোমরা কি করছ???”……পাবলিক হাসাহাসির জন্য প্রস্তুত হয়ে নিল । পরে অনন্য দৃষ্টিকে ঘুম পাড়িয়ে চলে আসার সময় বলল, “মামণি, ঘুমিয়ে পড়……” একটু পরে বিটলা ভাতিজী দৃষ্টি কৈল, “তোমরাও তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড় কিন্তু……






অনন্যের কপালে সুখ বেশি দিন সইল না । কিবরিয়া খানের লুল পাট্টির আক্রমণে ভাতিজী মরল । দৃষ্টি মরলে পরে শুরুর চাচা-ভাতিজির গানটা থেকে সাদা-কালো ফ্লাশব্যাক দেখানো শুরু হইল । আমরা দর্শকরা যেই একটু একটু করে সিরিয়াস হতে শুরু করেছি এমন সময়েই আচমকা ফ্লাশব্যাক খতম আর অনন্য বিকট একটা এক্সপ্রেশন দিয়ে ভেউ ভেউ করে কাঁদতে(অথবা কাঁদার শব্দ) করতে লাগলেন । পাবলিকের মাঝে আরো এক প্রস্থ হাসাহাসি হয়ে গেল । এই পরিস্থিতিতেও কেউ যখন দর্শকদের হাসাতে পারে তার কৌতুক প্রতিভার প্রশংসা করতে হয় বৈকি






এরপরে বিরহ শুরু । বিরহের গানে যেই অনন্ত সাহেবের এক্টিং একটু একটু করে ভাল হৈতেছে একেবারে ঠিক এই সময়েই একটা ফ্লাশব্যাক দেখায়ে পাবলিকদের আবারো হাসানো হল । ফ্লাশব্যাকে বাসরঘরে দুইজনের দৌড়াদৌড়ি আর মুখ ঢেকে শুয়ে পড়া- এই কথা মনে করে অনন্তের করুণ(!) এক্সপ্রেশন দেখে পাবলিক “আহারে!








ঐদিকে কিবরিয়া পার্টি উদ্ভট স্টাইলে ফুর্তি করতেছে । দুইটা লেসবিয়ান মার্কা নর্তকী ও কিবরিয়া সাহেবের সিগারেট না খেয়ে খালি শুঁকার ব্যাপারটা মানুষজনকে পীড়া দেয়া আরম্ভ করল । পুলাপান “ধরা! ধরা!” বলে নির্দেশনা দেয়া শুরু করল । কাছাকাছি সময়ে একটা আইটেম গানে নেচে(ক্যামেরাম্যানের নাচনেওয়ালীদের পেটের দিকে এত আগ্রহ কেন বুঝলাম না)……অনন্যকে “আই লাব্বু অনন্য!” বলে পটল তুলে ক্রিষ্টিনা । অনন্য কিবরিয়ার ঘাঁটিতে দৌড় লাগায় । কিবরিয়ার ঘাঁটিতে যাওয়ার আগে যথাযথভাবে সাজগোজ করতে থাকে অনন্য । তার খালিগা দেখে দর্শকরা হেসে উঠে । আয়নার সামনে জামা পড়ার সময় বুক-বগল দেখা গেলে কয়েকজন মহিলা দর্শককে “ছি! ছি!”

অনন্যর আসার খবর টের পেয়ে এন্ড্রু পালাতে থাকে । কিন্তু কিবরিয়া না পালানোর সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয় । এই সময় বাইরে গোলাগুলি টের পেয়ে কিবরিয়া ব্যবস্থা নেয় । ঢিচকিয়া! ঢিচকিয়ার পর চার নম্বর ভিলেন এন্ড্রুর রেটিনা স্ক্যান করে অনন্য । এরপর কিবরিয়ার খোঁজ করতে করতে সিগারেট ধরানো অবস্থায় কিবরিয়াকে দেখতে পায় অনন্য । সিগারেট অবশেষে ধরানো হয়েছে দেখে পাবলিক অকৃপণতার সাথে হাততালি দিল । যাই হোক, একপর্যায়ে কিবরিয়া আত্মহত্যা করলেন । শেষদিকে একেবারে “আলিফ লায়লা” মার্কা একটা এন্ডিং হল । শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ আগে থেকেই পুলাপান “ইশটপ! ইশটপ!” বলে চিলাচ্ছিল ।
হল থেকে বের হওয়ার পরে ভাই জিজ্ঞেস করল, “আমার চোখ কি বান্দরের মত লাল?” বুঝলাম, মুভি দেইখা একটু হ্যাং ওভারের মত হইছে । এর পরে বসুন্ধরার এক্সেলেটর দিয়া নামতে নামতে নানা দোকান দেখলাম । ঐ দেখা পর্যন্তই, পকেটে আমার তখন ৫০টাকাও ছিলনা । এরপরে আবারো বেসমেন্ট দিয়া বের হয়ে রিকশা দিয়ে ফার্মগেটে চলে আসলাম । পরে দেখি, যেই ফ্রিটিশার্ট টা দিছে সেইটা হইল “Rise Of The Planet Of The Apes- Evolution Becomes Revolution” । আমি ছোটভাইকে বললাম, “এইটা কি আমাদের দেখা মুভিটার সাথে “বিশেষ” সম্পর্কযুক্ত নাকি তোমার চেহারা দেইখা দিছে??” সে তেমন কিছু বলল না ।
মুভিটির সবচেয়ে বড় অসঙ্গতি অনন্ত জলিলের অভিনয় । এই কারণে মুভিটা কমেডি হয়ে গেছে । বাকি সবার অভিনয় ভালোই ছিল । আলমগীরকে বার বার সিগারেট না শুঁকালেই বোধহয় ভাল হত । কারণ তাঁর অভিনয়ই সবচেয়ে মাপা ছিল । দীঘি, পারভিন ভালোই করেছে । মুভিতে কিছু টুইস্ট দিলে মুভিটা আসলেই জমে যেত । সেটা নিচে বলছি ।
যা টুইস্ট দেয়া যেত মুভিটিতেঃ
সন্ধ্যা ও এন্ড্রু পি আই এ এর প্লেনে আসে কেন? যদি দেখানো যেত সন্ধ্যার ভাই, সন্ধ্যা , এন্ড্রু তিনজনেই কিবরিয়ার সেট আপ, আর শেষে যদি ২য় নায়িকার সাথে মিলিয়ে দেয়া হত, সন্ধ্যা মাফ চেয়ে অনন্যকে বাঁচিয়ে মারা যেত , তাহলে কিন্তু অনেকেই এই সামান্য টুইস্টের জোরেই মানুষজন অনেক কিছু ভুলে যেত ।
(এটা আমার আপাতত বিদায়ী পোস্ট । বেশ কয়েকমাস আমি আর নতুন লেখা দিবনা । মাঝে মাঝে এসে কমেন্ট করতে পারি । সবাইকে ধন্যবাদ । ভালো থাকবেন সবাই ।)
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই আগস্ট, ২০১২ রাত ১২:২০