চিন্তা কইরা দেখলাম ইংলিশ ফিলিমের রিভিউ লেখনের চাইতে বাংলা ফিলিমের রিভিউ লেখনই নিরাপদ । কারণ বাংলা সিনেমার রিভিউ লেখার সময় যতই ইলাবোরেট করি না কেন, তাতে সিরিয়াস বইপুক(মুভিবাগ)দের জন্য স্পয়লার এলার্টও দেওন লাগব না । এর লাইগ্যা এখন থেইকা বাংলা সিনেমাই গিলামু ব্লগলিকরে । আজইকা দিতাসি এমন একখান ফিলিমের রিভিউ যা চার-পাঁচ বছর আগে বাংলাদেশে বেদুম হাউকাউ ফালায়া দিসিল……সিনেমার নাম শুনবেন???......সিনেমাটা হইল, শাকিব-ডিপজল-ফারুক-রাজ্জাক-অপু বিশ্বাস স্টারারররর……… “কোটি টাকার কাবিন”!!!…… “কোটি টাকার কাবিন”!!!...... “কোটি টাকার কাবিন”!!!!............
সিনেমার শুরুতেই বিয়ার বাদ্য কানগোচর হইল । প্রথমেই কি নায়ক-নায়িকার বিয়া???......ধুত্তেরি ছাই! “চলতে চলতে” দেখবার বইলাম নাকি???......কিন্তু না নায়ক নায়িকা না, ওইটা আসিল নায়কের ফুপী আর নায়িকার চাচার বিবাহ………কিন্তু নায়িকার বিটল বড় ভাই তালুকদার সাহেব(ফারুক)এর বোনের বিয়া দেওয়ার ইচ্ছা আসিল না । তার মূল উদ্দ্যেশ্য ছিল বিয়ার আসরে বরপক্ষকে অপমান করা । বোনের জন্য এক কোটি টাকার দেনমোহর নগদ পরিশোধ করলেই কেবল বিয়ে হতে পারে, এই শর্ত দেয় তালুকদার……(খাইছে! এই পাত্র-পাত্রীই আসল নায়ক-নায়িকা হইলে ফিল্মের নাম “কোটি টাকার কেবিন(বাসরঘর)” ও দেওয়া যাইত, এক্কেরে খাসা আর্টহাউস ফিলিমের নাম, কলকাতায় নাকি “বেডরুম” নামে একটা ফিল্ম মাত্র বাইর হইতাসে……আমরা আরো এক সরকার(৫বছর) আগায়ে থাকলে এমন কি ক্ষতি আছিল???) যাউকগা বরের ভাই আসলাম শিকদার(রাজ্জাক) তালুকদারের কাছে সময় চায়, কিন্তু তালুকদার বলে এই বিয়ে হবে না কারণ যারা খালি হাতে বিয়ার আসরে আসে তাদের সাথে তালুকদারদের সম্পর্ক হতে পারে না ।
এই পর্যায়ে সুলতান(ডিপজল) সাহেবের খোমা দেখা গেল । সুলাতান বড়ভাই মান্নাফ তালুকদাররে বইনের বিয়া নিয়া ব্যবসা করার জন্য বাছা বাছা ডায়লগ দিয়া বড়ভাইয়ের পিত্তি জ্বালায়া দিল । কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিয়া ঠিকই ভাইংগা গেল । রাজ্জাকের ভাই বিয়ার আসর থেইকা উঠতে রাজি না হওয়ায় রাজ্জাকের আরেক ভাই তারে গুলি কইরা মাইরা ফেলল । এক ভাই আরেকভাইরে খুন করতে দেখার পরও রাজ্জাক সাহেব নির্বিকার থাকার যে পার্ট করসেন এইটা আল পাচিনো, রবার্ট ডি নিরোরাও পারবেন কিনা সন্দেহ! আরেকটা জিনিশ মনে হইল, ইহা সাউথ ফিল্ম হইতে পাকানো খিচুড়ি……উহাতেই এই অদ্ভুত হত্যাদৃশ্য দেখানো সম্ভব । এরপর দুই পক্ষে মারামারি লাগে । এইসময় ডিপজল ক্যামেরার সামনে আইসা, “ওয়ান টুকা ফোর, এই দিল চায় যে মোর……যাগর বিয়া তারা মইরা ভূত, এরা তো দেখি নতুন ভূত……মারামারি করে ঐতিহ্য নিয়া, কোটি টাকার কাবিন নিয়া……” প্রায় এইরকম একখান ডায়লগ দিয়া সিনেমা আরম্ভ করেন ।
এরপরে নায়িকা বসুন্ধরা শপিং মলে যাওনের সময় তার সামিয়ানা(পড়েন ওড়না) উইড়া গিয়া নায়ক শাকিব খানের বদন মোবারকে “খাপে খাপ, মমতাজের বাপ” স্টাইলে গিয়া পড়ে । ফাহিম তালুকদার(শাকিব খান) সিমরান(অপু বিশ্বাস) এর পিছনে ধাওয়া করে মোবাইল সেটের দোকানে ঢুকে । দুইজনে একইরকম সেট……খুললে “হউ! হউ!” শব্দ করে । সেট নিয়া তারা টাকা না দিয়াই বাইর হইয়া যায় । এরপর দুইজনে একজন আরেকজনরে ফোন করে কিন্তু মাঝে মইধ্যে হ্যালো ছাড়া কুনু কথা কয় না……একটু পরে পরে “হউ! হউ!...”……একপর্যায়ে জানতে পারলাম দুজনে নাকি একি কলেজে পরে???( কি আচানক ব্যাপার, তাহলে আগে চিনতনা নাকি??)……যাই হোক, এরপরে দুইজনে তথাকথিত “শিক্ষাসফর” করতে তথাকথিত “সুন্দরবন” এ যায়……… “জাহাজ দুলানি নাচাগানা, সেই সাথে সবার কম্পমান পাছাখানা……” শীর্ষক প্রদর্শনীর পর ফর্মুলা অনুসারে ফাহিম-সিমরান হারায়ে যায় । এই পর্যায়ে মনির খানের গীত……গানটা বেশ ভাল……কিন্তু আমার মনে হইসে এই জায়গায় গানটা জোর করে দেওয়া হইসে……বিরহের সময় দিলেও পারত………
যাই হোক, ফাহিম-সিমরান নিরাপদ জায়গায় ফিরে আসে । রাজ্জাক-ফারুক একে পরের বিরুদ্ধে নির্বাচনে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন । এই সময় ডিপজল-“এইবার শুরু নির্বাচনের খেলা, হাতি দিমু ঘোড়া দিমু, বিনিময়ে জানটা দিমু……চিটিং কেস আর ফিটিং কেস……ওই মিয়ারা মার্কাটা কি? বাঘ……মারখাটা কি? সিংহ……দুই ভাই জানোয়ার মার্কা……জ়ানোয়ারে জানোয়ারে লড়াই, পাবলিকে কয় ডরাই……ওই মিয়া খেলোয়াড় নাম্বার ওয়ান(আকাশের দিকে মুখ করে), এই পুরান খেলা আর কত দিন খেলাইবা???এইবার নতুন কিছু কর……” এই ঐতিহাসিক ডায়লগ ডেলিভারি করেন । নির্বাচনে আসলাম শিকদার জিতে যায়……গুলাগুলি, বোম ফুটাফুটি শুরু হয়(পুরানো দিনের সিনেমায় বিস্ফোরণে সেইরকম আগুন হইত, এখন খালি লাল ধুয়া…) । এইসময় ডিপজলের আরো একখান ডায়লগ-“গণতন্ত্র হইল ডুমুরের ফুল, সবাই এর কথা শুনছে, কিন্তু কেউ দেখেনাই…পাবলিক দেখসে গণতন্ত্রের ধুতরা ফুল……”
ফাহিম ততক্ষণে বাড়িতে আইসা পড়ছে । খুব সাহস কইরা চাচা ডিপজলরে একদিন তার ডার্লিং বিষয়ক সন্দেশ দিতে যায়……কিন্তু তারে আমতা আমতা করতে দেইখা ডিপজল “কি……গাড়ি কিনবি…???”……তখন ফাহিমরূপী শাকিবের অমর সেই ডায়লগ, “চাচ্চু, আমি তো নারী………আমি তো নারীও না গাড়িও না আমি ছুরি(ছুড়ি না তো আবার!)……” যাই হোক সব শুনার পর সুলতান ওরফে ডিপজল বিয়ার বন্দোবস্ত করে………কিন্তু বিয়ার আসরে আবার ব্যাম্বু চালান খায় ফাহিম……কিন্তু সিমরানের পিছু ছাড়ে না সে……দুই বার মার খাওয়ার পর বিশিষ্ট ওয়াইন ব্যবসায়ী রাহুলের সাথে(হলুদ কোট, কমলা উইগ )……এইখানে আমার একটা খুশি হওয়ার ব্যাপার ঘইটা গেসে……নায়িকা সিমরানের সাথে ভিলেন রাহুলের বিয়া……ইন্ডিয়ান ফিলিমের ক্যারেক্টার লাইনআপের এমন পুটু কে কবে মারতে পারসে???......ডিরেক্টররে একখান সাবাশি দিয়া বাকি ফিল্মে মনোনিবেশ করিলাম ।
সিমরানের বিয়ার খবর পাইয়া সুলতান হকিস্টিক দিয়া রাহুলের ওয়াইন ফ্যাক্টরি শুয়ায়ে দেন । ওয়াইনের কালার তো জানতাম লাল, বোতলের ভিতরের জিনিশ পানি ছাড়া আর কিছু মনে হইল না । যাই হোক বাগদানের দিন যেই রাহুল সিমরানের হাতে আংটা থুড়ি আংটি পরাইতে যাবে……এমন সময় ফাহিমের আগমন, সে টুক করে(ইংরেজি TOOK মানে হল “নিয়ে নেয়া”)……আংটিটা নিয়ে “ঢুক”(এইটা ব্যাখ্যা করতে পারব না, লজ্জা লাগে) করে আংটাটা সিমরানের রানে……উপস…সরি সরি……আংটিটা সিমরানের আঙ্গুলে পড়িয়ে দিল । টাশকা সহকারে লক্ষ্য করিলাম, মিশা কিছু না বইলা বইসা পড়ল……কাওয়ালী মার্কা গান, তার পরে হাল্কা মারপিট……তারপরে সিমরানকে নিয়ে ফাহিম নিজের বাড়িতে চইলা গেল……কিন্তু সুলতান সিমরানরে আবার বাড়িতে পাঠায়ে দেয় । তারপর সুলতান নিজেই আসলাম শিকদারের কাছে পাঁচ কোটি টাকা মোহর নগদ পরিশোধের পুরোনো শর্ত মানার ঘোষণা দেয় । আসলাম শিকদার নিজেও আপত্তি না করায় তার বাকি দুই ভাই রাহুলের সাথে ফর্টিনাইন করার প্ল্যান করে । অন্যদিকে মান্নাফ তালুকদারও ফাহিমের দাবি মেনে নেয়……কোটি টাকা মোহর নিয়ে শিকদার বাড়ি রওয়ানা হয় তালুকদাররা । কিন্তু ততক্ষণে সিমরানকে রাহুল কোম্পানি তুইলা নিয়া গেসে । ফাহিম-সুলতান ভিলেনদের সাথে কুস্তাকুস্তি শুরু করে । কুতাকুতি সরি কুস্তাকুস্তি শেষে বিয়া শাদি হয়……মেয়েকে উদ্ধার করার জন্য কৃতজ্ঞতা বশত আসলাম শিকদার কাবিনের দাবি তুইলা নেন । এইভাবেই সিনেমা শেষ হইল ।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই নভেম্বর, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:৩৫