পর্ব-২২
নাস্তিক ঃ এবং আমি আমার বান্দার প্রতি যা অবতীর্ণ করেছি, তাতে তোমরা যদি সন্দিহান হও তবে তৎ সদৃশ একটি 'সুরা' তৈরি করে নিয়ে এসো এবং আল্লাহ্ ব্যতীত তোমাদের সাহায্যকারীদেরকেও ডেকে নাও; যদি তোমরা সত্যবাদী হও।" (সুরা বাকারা, আয়াত: ২৩)
ব্যাখ্যা: এই দাবীটি নিয়ে মুসলমানরা এমন কোন হীন পন্থা নেই যা তারা অবলম্বন করে না। তারা বারবার এই দাবীটি তুলে বুঝাতে চায় কুরআনের মতো প্রাচীন এবং অজ্ঞতাপূর্ণ একটি গ্রন্থ পৃথিবীর কেউ লিখতে পারবে না। কিন্তু তারা কিছুতেই বুঝতে পারে না এই একটি দাবীই কুরআন যে কোন অতিজ্ঞানী সৃষ্টিকর্তার বাণী নয় তার প্রমাণ বহন করে। কারণ কোন অতিজ্ঞানী সৃষ্টিকর্তা এমন একটি ফালতু, নির্লজ্জ চ্যালেঞ্জ জানাবে না। কারণ অতি জ্ঞানী কেউ কখনই অতি জ্ঞানহীন তুচ্ছ কারো প্রতি এমন চ্যালেঞ্জ জানাবে না। একজন জগত বিখ্যাত বিজ্ঞানী কখনই একজন মূর্খকে চ্যালেঞ্জ জানাবে না তার কোন থিউরীর মতো কোন থিউরী আবিষ্কার করার। কোন বিজ্ঞানী যদি তার কোন থিউরীর প্রমাণ দিতে ব্যর্থ হয় এবং তার থিউরীটিকে সত্য বলে উপস্থাপন করতে একজন মূর্খ মানুষকে চ্যালেঞ্জ জানায় তবে যেমন হাস্যকর শুনায় ঠিক কুরআনের লেখক এমনই এক হাস্যকর দাবী করেছে।
সূরা নাসের ছন্দটি খুবই নিম্ন মানের, যেমন, নাস, নাস, নাস, অর্থাৎ সবগুলোর শেষে নাস শব্দটি দেওয়া।
বরং এই সূরাটির অনুরুপ সুরা বা কবিতাটি হবে এরকম,
গরু খেতে ভালোবাসে ঘাস।
কাঁচা কাঁচা ঘাস।
তাজা তাজা ঘাস।
কাঁচি নিয়ে মাঠে যাবো কাটতে ঘাস।
সারা মাঠ চষে আনবো কেটে ঘাস।
গরু তুই মজা করে পেট ভরে খাস!
সুরা নাস এবং আমার লেখা কবিতাটির মান একই রকম।
কুরআনের এই আয়াতটি একটি প্রতারণামূলক আয়াত। কারণ যখন মক্কার মানুষ মুহাম্মদের কাছে তার নবুয়তের দাবীর প্রমাণ চাইতো তখন মুহাম্মদ কোন প্রকার প্রমাণই দিতে পারতো না। উপরন্তু তাদেরকে অন্ধভাবে তাকে নবী হিসেবে বিশ্বাস করতে বলতো। কিন্তু সেই দেড় হাজার বছর আগের মক্কাবাসীরাও প্রমাণ ছাড়া কোন কিছুতে বিশ্বাস করতে চাইতো না। স্বয়ং কুরআন সাক্ষি হয়ে আছে মক্কার কুরাইশরা মুহাম্মদের কাছে বারবার তার নবীয়তীর প্রমান চেয়েছে। কিন্তু প্রতিবারই মুহাম্মদ প্রমান না দিয়ে নানা রকম কুযুক্তির অবতারণা করেছে। তারা বাইবেলে বর্ণিত নবীদের অলৌকিক ক্ষমতা দেখানোর মতো মুহাম্মদকে চ্যালেঞ্জ জানাতো কোন অলৌকিক ক্ষমতা প্রদর্শনের। কিন্তু মুহাম্মদ নানা অযুহাতে সেসব চ্যালেঞ্জকে পাশ কাটিয়ে যেতো। বরং মুহাম্মদ প্রতারণার চরম উদাহরণ রেখেছে কুরাইশদের করা নবীয়তীর প্রমানের চ্যালেঞ্জে হেরে গিয়ে উল্টো তাদেরকে পাল্টা চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে কুরআনের মতো সুরা লিখে আনার। কত বড় ধূর্তবাজ ছিল এই কুরআন লেখক। নিজে কোন প্রমাণ না দিয়ে উল্টো তাকে অবিশ্বাস করায় অবিশ্বাসকারীদের চ্যালেঞ্জ দিচ্ছে।
আস্তিকঃ- আসলে আপনার ধারনাটা সৃষ্ট মানুষদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ছিল কিন্তু ঈশ্বরের ক্ষেত্রে নয় কারন ঈশ্বরের ধারনা আপনাদের খুবই কম। যেমন- ঈশ্বর তো সবই জানবেন তাই যাদেরকে সুরা লেখার চ্যালেঞ্জ দিয়েছেন তাদের যদি সেই পরিমান জ্ঞানও পূর্বেই দিতেন আর এরপর তারা ঠিকই সেই সুরা লিখে ঈশ্বরকে ভুল প্রমান করত অথচ ঈশ্বর সঠিকই ছিলেন। তারমানে ঈশ্বর নিজেই হেরে যাবেন? হে হে হে। তারচেয়ে এটাই উত্তম যে মূর্খদের এটা বুঝানো যে তারা এমনটি পারবে না সুতারাং মেনে নিক। তাছারা বাস্তবেই কিন্তু মানুষরা চ্যালেঞ্জ ছুরে তাদেরকেই যাদের সমর্থ অনেক কম, তাছারা আপনি কি বাংগালীদের মাঝে এমন চ্যালেঞ্জ ছুরবেন যে '' কে আছে আমার মত অনর্গল বাংলায় কথা বলবে ?" কক্ষনই না বরং বাংলাদেশে এমন চ্যালেঞ্জ করলে আপনাকে পাগল বলবে তবে অবাংগালীদের মাঝে এমন চ্যালেঞ্জ করে ১ম আপনার জেতার সম্ভাবনা বেশি থাকবে পাশাপাশি বাংলাভাষার প্রতি তাদের আকর্ষনও বাড়াতে পারবেন আর জেতা ছাড়া শুধু এজন্যই যদি চ্যালেঞ্জ ছুরেন তবে আপনার উদ্দেশ্যকে সবাই সাধুবাদ জানাবে এবং বুদ্ধিমানও বলবে, কেউ ই বোকার মত বলবে না যে, অবাংগালীদের মাঝে এই চ্যালেঞ্জ ছুরা অবিচারকের কর্ম হয়েছে ঠিকই একই ভাবে ঈশ্বরেরও মানুষকে এই চ্যালেঞ্জ ছুরেছিল জিতার উদ্দেশ্য নয় বরং কুরান শিক্ষার উদ্দেশ্য ছুরেছিল। তাছারা আপনি নিচে সুরা নাসের মত একটি ঘাস মার্কা যে অহেতুক একটি ছন্দ মিলিয়ে ছরা তৈরী করেছেন এতে বুঝা যায় আপনার কাব্য আর সাহিত্যিক জ্ঞান কতটুকু? আসলে কুরানের আয়াত আর সুরা হল কবিতার ন্যায় ছন্দময় এমন এক ধরনের ঈশ্বরের বানী যেখানে শুধুই শব্দের বিন্যাসে ছন্দই থাকে না, থাকে অনেক কিছু যা আপনার জ্ঞানে না থাকলেও ততকালীন মক্কার কবিদের ঠিকই ছিল তাই তারা হার মেনে নিয়েছিল, আর ঈশ্বর শুধু মক্কার কাফেরদেরকেই এই চ্যালেঞ্জ ছুরে দেননি বরং সমস্ত মানব জাতিসহ জ্বিন জাতি সকলকে মিলেই এই চ্যালেঞ্জ ছুরেছিলেন। আর আপনি বার বার বলছেন মুহাম্মদ সাঃ কোন প্রমান দেখাননি , অথচ তিনি অসংখ্য প্রমান দেখিয়েছেন যেমন- তারা বলেছিল চন্দ্রকে দিখন্ডিত করে দেখালে আমরা বিশ্বাস করব, তখন এটি করে দেখানোর পর এমনকি চন্দ্রকে আবারও পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার পরও তারা জাদুকর আখ্যা দিয়ে চলে গিয়েছিল।
নাস্তিকঃ- ১৪শত বছর পূর্বে আরব দেশের একজন ছন্দ মিলিয়ে মানুষের নীতি-নৈতিকতা সন্মন্ধিয় কিছু কাব্য রচনা করে তাকে কাল্পনিক এক ঈশ্বরের বানী বলতে লাগল এবং তার নাম দিল কুরান আর সে নিজেকে নবী পরিচয় দিতে লাগল ফলে তখনকার সমাজে কিছু বোকা মানুষ তার অনুসরন করতে লাগল। অথচ বর্তমান যুগেও তো অনেক কবি-সাহিত্যিক, দার্শনিক-বিজ্ঞানীরা আছেন যাদের যোগ্যতাও কোন অংশে কম নয়, তারা কিন্তু মানুষের কাছে থেকে সুবিধা পাবার জন্য নিজেকে এমন আধ্যাত্যিক কেউ বলে প্রচার করেনি? তারপরেও মানুষ তাদের সম্মান করে আর তারা সকলেই মানবতার জন্য নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে গেছেন। স্বীকার করি নবী মুহাম্মদ তখনকার যুগের একজন কবি-দার্শনিকের মত ব্যাক্তিত্ব ছিল, তাই বলে এতকাল পরেও এই আধুনিক সভ্যতার যুগেও তাকে অন্ধভাবে মানতে হবে? সেকালের লোকজন না হয় মুর্খ্য আর বোকা ছিল কিন্তু এই একবিংশ শতাব্দিতে এসেও মধ্যযুগে পরে থাকতে হবে? সে কুরানে আর কিই বা লিখেছিল? বর্তমানের কবি-সাহিত্যিকগণ নীতি-নৈতিকতা সন্মন্ধিয় তার চাইতে আরও বেশি লিখেছে, ইংরেজিতে সেক্সপিয়র আর বাংলায় রবিন্দ্র নাথের ভূমিকা তার চাইতে অনেক বেশি বলে আমি মনে করি। এক রবিন্দ্র নাথ ঠাকুরই বাংলা সাহিত্যে যা দিয়েছে তা সত্যিই ভূলবার মত নয় অথচ তার নবীদের মত কোন দেবদূত বা ফেরেশতার প্রয়োজন পরেনি তারপরেও তারা মানুষকে সুপথ প্রদর্শন করে গেছে।আরব দেশের নবী যেভাবে কাব্যিক আকারে মানুষের নীতি-নৈতিকতা সন্মন্ধিয় কুরান লিখেছে এবং এর মাধ্যমে সমাজে সংস্কার করার চেষ্টা করেছে যুগে যুগে বিভিন্ন কবি-সাহিত্যিকগণও একই কাজই করেছে বিশেষ করে তাদের লেখনির দ্বারা অথচ তাদের আমরা নবী মানি না তাহলে নবী মুহাম্মদকে কেন নবীর আসনে বসিয়ে পুজো করতে হবে? কবি-সাহিত্যিকগনের চাইতে তার বিশেষত্ব কোন দিক দিয়ে বেশি হল? তাছারা মানুষের নীতি-নৈতিকতা সন্মন্ধিয় বিভিন্ন কাব্যগ্রন্থ কোন ফেরেশতার সাহায্য ছারাই বর্তমানের লেখকগন কিভাবে লিখতে পারছে? নবীদের মত কবি-সাহিত্যিকদেরও এমন যোগ্যতা এটাই প্রমান করে যে সে আসলে নবী ছিল না বরং তখনকার যুগের একজন কবি-দার্শনিক টাইপেরই একজন ছিল কিন্তু সে ধর্মকে পুজি করে নিজেকে নবী সাজিয়ে সমাজ সংস্কার করতে চেয়েছে মাত্র।
আস্তিকঃ- আপনার এই প্রশ্নের যথাযথ উত্তর মোটেও অল্প কথায় দেয়া সম্ভব না তাই ধৈর্য্য সহকারে আমার পুরো আলোচনাই মনযোগের সাথে শুনতে হবে। এখানে আপনার সকল কথার সারমর্ম হল কবি-সাহিত্যিকগণও কাব্যিক আকারে মানুষের নীতি-নৈতিকতা সন্মন্ধিয় নবীদের মতই বিভিন্ন গ্রন্থ রচনা করতে পারে তাই নবী ও তারা একই শ্রেনীর হওয়া সত্ত্বেও নবীদের মানুষ অনেক বেশি অন্ধভক্তি করে চলেছে অথচ অতিরিক্ত এই ভক্তি তাদের প্রাপ্য নয় কেননা তারা একদিক দিয়ে কবি-সাহিত্যিকদের সম-পর্যায়ের অন্যদিক দিয়ে আবার মানুষের কাছে নিজেদের নবী প্রচার করে ভন্ডামীও করেছে সুতারাং এসকল বিচারে নবীদের চেয়ে কবি-সাহিত্যিকগনই উত্তম ও সৎ ব্যাক্তিদের অন্তর্ভুক্ত। আসলে এ ধরনের চিন্তাধারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যারা মানবিক বা কলা নিয়ে পড়াশুনা করে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাদের মাথায় আসতেই পারে কিন্তু এর পরিপূর্ন সদুত্তর অনেকের কাছেই পাওয়া যায় না। এখানে আমি এ ব্যাপারে ইনশাহ আল্লাহ বিস্তারিত আলোচনা করব। সাধারনত নবী-রাসুল বা অবতারগনের সাথে কবি-সাহিত্যিক, দার্শনিক এমনকি বিজ্ঞানীদেরও অনেক মিল রয়েছে আবার অনেক অমিলের পাশাপাশি তারা আসলে কিন্তু পরস্পর বিরোধী ব্যাক্তিত্ব যা একটু পরেই ক্লিয়ার হবে। আর অবশ্যই এখানে আলোচনা করা হবে এই মহাবিশ্বের জ্ঞান-বিজ্ঞানের উৎস এবং মানুষের পাঠ্য বিষয়ক বিভিন্ন পুস্তক সন্মন্ধীয় আলোচনাসহ সাহিত্য, কবিতা, উপন্যাস, ইতিহাস, দর্শন, বিজ্ঞান ইত্যাদি নিয়ে যদিও তারপূর্বে কবি-সাহিত্যিক ও অবতারগণ সন্মন্ধেও ভালভাবে জানতে হবে।
সাধারণত কবি-সাহিত্যিক, দার্শনিক ও বিজ্ঞানীগন সর্বদাই বিভিন্ন বই-পুস্তক হতে জ্ঞানার্জন করে থাকে যদিও কেউ কেউ সরাসরি বিদ্যালয়ে না গিয়ে ঘরে বসেই শিক্ষা অর্জন করে শিক্ষক বা গুরু-ওস্তাদের নিকট কিন্তু নবী মুহাম্মদ সঃ হতে শুরু করে ঈসা মুসা আঃ গৌতম বুদ্ধ এবং রাম কৃষ্ণ এর মত মহাপুরুষগনের কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাই ছিল না বিশেষ করে শেষ নবী মুহাম্মদ সঃ এমনি নিরক্ষর ছিলেন যে ইচ্ছে থাকলেও কখনই তার পক্ষে কোন বই-পুস্তকাদি পড়া সম্ভব হত না।তাহলে আমাদের প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ি দেখা যায় কবি-সাহিত্যিক দার্শনিক ও বিজ্ঞানীগন লৌকিক কোন মধ্যম হতে জ্ঞানার্জন করেছেন কিন্তু নবী-রসুল ও অবতারগন সন্মন্ধে যতদূর জানা যায় ইনারা লৌকিক কোন মধ্যম হতে জ্ঞানার্জন করেছেন এটির কোন প্রমাণই পাওয়া যায় না বরং তাদের জ্ঞান ছিল অলৌকিক বা সরাসরি ঐশী মধ্যম হতে অর্জিত এমনটাই তথ্য পাওয়া যায় আর যুক্তির খাতিরে একেই সত্য ধরা হলে হিসাব অনুযায়ি সত্যিকারের আধ্যাত্বিক ব্যাক্তিবর্গ অবশ্যই সৎ এবং সত্যবাদী হওয়ার কথা সুতারাং ইনাদের জ্ঞানকে সত্য-স্বাধীন, মৌলিক, আদি, স্বতন্ত্র, নিরপেক্ষ এবং নির্ভূলই বলতে হবে কেননা ইনাদের জ্ঞান অপর মানুষের কাছ থেকে ধার করা নয় বরং সরাসরি ঈশ্বর কর্তৃক প্রাপ্ত যদিও ঈশ্বর আছে কি নেই এর প্রমানও পরে দেওয়া যাবে। আর সবচেয়ে বড় কথা হল কবি-সাহিত্যিক দার্শনিক ও বিজ্ঞানীগন নিজেরাই স্বীকার করেন যে তাদের জ্ঞান লৌকিক বা অপরের কাছ থেকে ধার করা, আবার কোন মানুষই বলতে পারবে না যে তার অর্জিত সকল জ্ঞান বা লিখিত সব পুস্তকাবলী সম্পূর্ন নির্ভুল, অতএব কবি-সাহিত্যিক দার্শনিক ও বিজ্ঞানীগন যে সব মাধ্যম হতে জ্ঞানার্জন করেছেন সেগুলোতে মানবীয় ভুল থাকতে বাধ্য এমনকি পক্ষপাতদুষ্টতা হতেও নিস্তার অসম্ভব। এখানে এটা খুব ভালভাবেই পরিস্কার হওয়া গেল যে কবি-সাহিত্যিক দার্শনিক ও বিজ্ঞানীগনের সাথে নবী-রসুল ও অবতারগনের কর্মপদ্ধতিগত কিছুটা মিল থাকলেও তাদের জ্ঞানার্জনের মাধ্যমগুলো সম্পূর্ন আলাদা।
তাছারা কবি-সাহিত্যিক দার্শনিক ও বিজ্ঞানীগনের সাথে নবী-রসুল ও অবতারগনের কর্মপদ্ধতিগতও অনেক অমিল দেখা যায় যেমন-কবি-সাহিত্যিক দার্শনিক ও বিজ্ঞানীরা সাধারনত রাজা-বাদশাহ ও শাষকদের পক্ষে কাজ করে থাকে এবং এদেরকে শাষকরা পুরস্কিতও করে কারন এরাই প্রজা বা সাধারণ জনগনের মাঝে শাষকদের প্রতি ভালবাসার সৃষ্টিতে সহায়তা করে তাই এরা দেশাত্ববোধ ও জাতীয়তাবাদের মাধ্যমে শাষকশ্রেনীর প্রতি প্রজাশ্রেনীদের মাঝে একধরনের প্রেমমায়া গড়ে তুলতে চেষ্টা করে। আর এভাবেই এরা সাধারন জনগনকে তাদের সাহিত্যকর্মের দ্বারা বিভিন্ন কাল্পনিক মিথ্যে স্বপ্ন দেখিয়ে সর্বাদাই প্রজাদের বোকা বানিয়ে রাখে। অপরদিকে নবী-রসুল ও অবতারগন রাজা-বাদশাহ ও শাষকদের স্বৈরাচারী ভন্ডামী সকলের মাঝে প্রকাশ করে প্রজাদের সত্যিকারের জ্ঞানী ও সচেতন করে ফলে শাষকদের পক্ষ হতে ইনাদের অনেক অমানবিক অত্যাচার নির্যাতন আসলেও কখনও সত্য প্রচার হতে পিছপা হতে দেখা যায় না এবং অবশেষে নির্যাতিত জনগনের সাথে ইনাদেরই বিজয় হয়।
বেশিরভাগ কবি-সাহিত্যিক দার্শনিক ও বিজ্ঞানীগনই তাদের শিল্পকর্মের বিনিময় নিয়ে থাকে এবং এর দ্বারাই তারা জীবিকা নির্বাহ করে থাকে কিন্তু নবী-রসুল ও অবতারগন তাদের কর্মের কোনই বিনিময় নেয় না বরং তারা আরও দানশীল হয়ে থাকে।
আরেকটি ব্যাপার লক্ষণীয় যে, হাতেগোনা কয়েকজন ব্যাতীত বেশিরভাগ কবি সাহিত্যিক দার্শনিক ও বিজ্ঞানীগনেরই জ্ঞানের সীমা এবং কর্মকান্ড শুধুমাত্র এই দুনিয়ামুখীই হয়ে থাকে অর্থাৎ শুধুমাত্র মানবচক্ষু সাধারনভাবে যা দেখে থাকে যেমন- জন্ম হতে মৃত্যু পর্যন্ত যা যা ঘটে থাকে তাদের জ্ঞানের পরিধি এরমাঝেই সীমাবদ্ধ থাকে কিন্তু নবী-রসুল ও অবতারগনের জ্ঞানের পরিধি তাদের চাইতে অনেক বেশি অর্থাৎ মানবচক্ষু সাধারনভাবে যা দেখে থাকে যেমন- জন্ম হতে মৃত্যু পর্যন্ত যা যা ঘটে থাকে সেসব জ্ঞানের পাশাপাশি জন্মের পূর্বে কি কি ঘটেছিল তা সহ বিশেষ করে মৃত্যুর পরে আরও কি কি ঘটতে চলেছে সেগুলোও বর্ননা করে। সবচেয়ে বড় কথা হল তারা মানুষের মৌলিক সকল প্রশ্নেরই উত্তর দেয় এবং দুনিয়াবী এবং পরকালীন আধ্যাত্মিক সকল সমস্যারই সমাধান দেয়। পরকাল সত্যিই থাকুক আর নাই থাকুক সেটি পরের কথা কিন্তু কবি সাহিত্যিক ও বিজ্ঞানীদের চাইতে যে তাদের জ্ঞানের পরিধি অনেক বেশি এটা স্বিকার করতেই হবে কেননা তারা একই সাথে কবি-সাহিত্যিক দার্শনিক ও বিজ্ঞানীগনের মতই দুনিয়াবী জ্ঞানও দিয়ে থাকে আবার আধ্যাত্মিক জ্ঞানও দেয় যেটি আবার কবি-সাহিত্যিক দার্শনিক ও বিজ্ঞানীগন দেয় না। এছারাও আরও অনেক অমিল রয়েছে যা পরে আরও বিস্তারিত আলোচনা করা হবে তাই এখন মূল আলোচনায় আসা যাক।
প্রথমত আলোচনা করা হবে এই মহাবিশ্বের জ্ঞান-বিজ্ঞানের উৎস এবং মানুষের পাঠ্য বিষয়ক বিভিন্ন পুস্তক সন্মন্ধীয় আলোচনাসহ সাহিত্য, কবিতা, উপন্যাস, ইতিহাস, দর্শন, বিজ্ঞান ইত্যাদি। এখন পর্যন্ত এই বিশ্বে একমাত্র মানব প্রজাতিকেই সবচেয়ে জ্ঞানের দিক দিয়ে উন্নত দেখা যায় এমনকি মানব প্রজাতির গঠন প্রণালীও বুদ্ধিমান প্রাণীই প্রমান করে। এই পৃথিবীতে একমাত্র মা্নুষের মাধ্যমেই জ্ঞান বিজ্ঞান উন্নতির চরম শিখরে পৌচেছে কিন্তু মানুষ এইসব জ্ঞান পেল কোথায়? এই প্রশ্নেও রয়েছে এমনি পরস্পরবিরোধী দুই ধরনের মতবাদ যে যার একটি সত্য হলে অন্যটি অবশ্যই মিথ্যা হতে হয়। বর্তমানে আমরা স্বাভাবিকভাবে যা দেখি তা হল এক মানুষ হতে অপর মানুষ জ্ঞান অর্জন করে থাকে যার বেশিরভাগই বই-পুস্তক এর মাধ্যমে এবং স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে। বর্তমানের মত অতীতে কোন বিশ্ববিদ্যালয় ছিল না তবে জ্ঞানার্জনের জন্য সকল জাতিরই নিজস্ব আলাদা আলাদা বৈশিষ্টের বিদ্যালয় ঠিকই ছিল এবং সেখানে আধ্যাত্বিক ও কর্মমুখী উভয় শিক্ষাই একইসাথে দেওয়া হত আর বিভিন্ন ধর্মালয়ই ছিল প্রধান বিদ্যালয় এমনকি বট-বৃক্ষের নিচেও বিদ্যার চর্চা হত। এরপর মধ্যযুগে বিশ্বে সর্বপ্রথম মুসলিমরাই বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভব করে যেমন ইতিহাস হতে দেখা যায় ৮৫৯ সালে মরক্কোর ফেজ শহরে, ফাতিমা আল-ফিহরি একটি মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, যা বিখ্যাত আল-কারাউইয়িন বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়। বর্তমানে এটি বিশ্বের ১ম প্রাচীনতম বিদ্যমান বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে স্বীকৃত, এরপরই মিশরে ৯৭০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় আল আজহার বিশ্ববিদালয় তারপরই খ্রিষ্টানদের দেশেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হতে শুরু করে যেমন-১মেই ইতালিতে ১০৮৮ সালেUniversity of Bologna প্রতিষ্ঠিত হয় এরপরই বৃটেনে ১০৯৬ সালে University of Oxford প্রতিষ্ঠিত হবার পর মুসলিম ও খ্রিষ্টান মিলে ১১৩৪ সালে স্পেনে সবচেয়ে উন্নত University of Salamancaপ্রতিষ্ঠিত করে একে সকলে অক্সফোর্ড অফ স্পেন নামে অভিহিত করে এদিকে ফ্রান্সেও ১১৬০ সালেUniversity of Paris প্রতিষ্ঠিত হয় তখনই আবার বৃটেনে ১২০৯ সালে University of Cambridgeপ্রতিষ্ঠিত হয়। এর পর হতেই সারাবিশ্বে ধীরে ধীরে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হতে থাকে। তবে জ্ঞান-বিজ্ঞানের এই যুগে নিজেদেরকে শিক্ষায় উন্নত প্রমান করতে অনেক জাতিই আজকে তাদের অনেক পুরনো বড় ও উন্নত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকেও বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে দাবী করছে কিন্তু এগুলো একটিও স্বীকৃত নয় তবে এগুলো তখনকার আমলে অনেক নামিদামী বড় ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছিল যেমন- ভারতের নালন্দা ও পাঞ্জাবের তক্ষশীলা সেগুলোর মধ্যেই পরে। বিদ্যালয়কে বৈশ্বিক রুপ দিয়ে সকলের জন্য উন্মুক্ত করে শিক্ষা দেবার সার্থে বিশ্বে সর্বপ্রথম বিশ্ববিদ্যালয় এর ধারনা মুসলিমদের হতেই এসেছে যা পরবর্তীতে ইউরোপের খ্রিষ্টানরা অনুকরন করে বৃটীশদের মাধ্যমে সারা বিশ্বে তা প্রতিষ্ঠিত করেছে সুতারাং ৬০০ খ্রিষ্টাব্দের পূর্বে বিদ্যালয় ছিল ঠিকই কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে মানুষের কোন ধারনাই ছিল না। তবে সেসব বিদ্যালয় এবং পাঠশালাতে ধর্মীয় ও কর্মমুখী উভয় শিক্ষাই দেয়া হত বর্তমানের মত প্রধান দুই ক্যাটাগরির যেমন- ১/ সেক্যুলার শিক্ষা বা ধর্মহীন শুধুই কর্মমুখী শিক্ষা এবং ২/ শুধু ধর্মীয় শিক্ষা এই ধরনের ব্যাবস্থা অতীতে কোন জাতির মাঝেই ছিল না, প্রায় কয়েকশত বছর পূর্ব হতে বৃটিশ ইংরেজরাই সারাবিশ্ব শাষনকালে এই নব্য শিক্ষাপদ্ধতির উদ্ভাবন করে নিজেদের স্বার্থেই। এই ধরনের শিক্ষাব্যাবস্থা সকল দেশে কায়েম কিন্তু তাদের অনেক পরিকল্পনার ফসল, বর্তমানে আমরা যেসব স্কুল-কলেজ দেখি তা অতীতে মোটেও এমন ছিল না। একটু পেছনে ফিরলেই দেখা যায় এসব স্কুল কলেজ পূর্বে সম্পূর্নই খ্রিষ্টানদের চার্চভিত্তিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল প্রথমে, পরে এগুলোকেই স্কুল কলেজ আলাদা নামে গড়া হয়। যেমন উইকিপিডিয়া হতে প্রাপ্ত তথ্যমতে-রোমের পতনের পর, ক্যাথলিক চার্চ পশ্চিম ইউরোপে সাক্ষরতার ও স্কলারশিপের একমাত্র রক্ষাকর্তা হয়ে উঠেছিল। চার্চ ক্যাথিড্রাল স্কুলকে আধুনিক যুগের শিক্ষা ব্যবস্থার কেন্দ্র হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেছিল। এই প্রতিষ্ঠানগুলি শেষ পর্যন্ত মধ্যযুগীয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইউরোপের বিভিন্ন আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলির অগ্রদূত হিসাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছিল। উচ্চ মধ্যযুগে সময় চার্টার্স ক্যাথিড্রাল দ্বারা বিখ্যাত এবং প্রভাবশালী Chartres ক্যাথিড্রাল স্কুল পরিচালিত হয়েছিল।সুতারাং পশ্চিম ইউরোপের বৃটিশ ইংরেজরাই বিভিন্ন দেশ দখল করে ১মে চার্চভিত্তিক পরে স্কুল কলেজ ভিত্তিক সেক্যুলার শিক্ষা ব্যাবস্থা প্রনয়ণ করে সারাবিশ্বব্যাপী। ।
……। ইনশাহ আল্লাহ(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৫৯