অলস বলে বদনাম আছে বাঙালি জাতির। রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন, ‘মাথায় ছোট বহরে বড় বাঙালি সন্তান।’ একথা বলে তিনি মূলত বাঙালির স্বল্প বুদ্ধি অথবা বুদ্ধিহীনতাসহ আলস্যের প্রতিই ইঙ্গিত করেছেন। তবে শ্লাঘার বিষয় এই যে, বাঙালির এ দুর্নাম বুঝি ঘুচতে চলেছে এতদিনে। বিশ্বখ্যাত চিকিৎসা বিজ্ঞান সম্পর্কিত সাময়িকী দি ল্যানসেটের মতে, বাংলাদেশ পৃথিবীর সবচেয়ে পরিশ্রমী দেশগুলোর অন্যতম। এটা অবশ্য পত্রিকাটির কয়েক সংখ্যা আগের মন্তব্য। সম্প্রতি দি ল্যানসেট বিশ্বের ১২২টি দেশের মানুষের মধ্যে গবেষণা চালিয়ে অলস দেশের একটি তালিকা প্রণয়ন করেছে। আমাদের জন্য বোধকরি আনন্দের সংবাদই বলতে হবে, এ তালিকায় ঠাঁই হয়নি বাংলাদেশের। অর্থাৎ ল্যানসেট তার আগের বক্তব্যটিই সমর্থন করেছে। অলস দেশের তালিকায় এক নম্বরে আছে দক্ষিণ ইউরোপের দেশ মাল্টা। বলা হয়েছে, দেশটির ৭১ দশমিক ৯ ভাগ মানুষ অলস। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের ধনী দেশ সৌদি আরব। আর তৃতীয় অবস্থানে সুইজারল্যান্ড। বিশ্বের ভূস্বর্গ ও অন্যতম শীর্ষ ধনী দেশ বলে স্বীকৃত এই দেশটির ৬০ শতাংশ মানুষই নাকি নিষ্ক্রিয়! নিজেদের পরিশ্রমী হিসেবে গর্ববোধ করা ব্রিটিশ জাতির অবস্থান আট নম্বরে। গবেষণায় প্রমাণ মিলেছে, ব্রিটিশদের ৬৩ দশমিক ৩ শতাংশ অকর্মার ঢেঁকি। লক্ষ্য করার বিষয়, এ তালিকায় দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র দেশ হিসেবে নাম এসেছে ভুটানের। সুতরাং কর্মঠ দক্ষিণ এশীয় হিসেবে বাঙালিরা গর্ববোধ করতেই পারে।
দি ল্যানসেট কিসের ভিত্তিতে আলস্যের এ তালিকা প্রণয়ন করেছে, তা আমাদের জানা নেই। তবে সৌদি আরব, সুইজারল্যান্ডের নাম দেখেই প্রতীয়মান হয়, বিপুল অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, বিত্ত-বৈভব, সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের সঙ্গে বোধকরি একটি মধুর সম্পর্ক আছে আলস্যের। আপনি যখন প্রায় সব পেয়েছির দেশে চলে যাবেন, তখন আলস্য ও আরামপ্রিয়তা আপনাকে পেয়ে বসতেই পারে। তবে বাঙালি অলস, আমোদপ্রিয়, ভোজনরসিক জাতিÑ এ দুর্নাম কিছুটা হলেও ঘোচার জন্য আপাতত আÍশ্লাঘা বোধ করতেই পারি আমরা। সম্প্রতি বিশ্বব্যাংক, দি ইকোনমিস্টের মতো বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠান ও পত্রিকাও বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিকে ‘বিস্ময়কর’ বলে অভিহিত করেছে। এটা সত্য যে, আমাদের কৃষককুল সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত হাটে-মাঠে-ঘাটে-প্রান্তরে কঠোর পরিশ্রম করে। আমাদের নির্মাণ শ্রমিকরা রাজধানীসহ বড় বড় শহর-বন্দরে স্কাইলাইন বদলে দিয়েছে। গার্মেন্টসে বিশেষ করে নারী শ্রমিকরা উদয়াস্ত কঠোর পরিশ্রম করে এনে দিচ্ছে বিপুল পরিমাণ মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা। লাখ লাখ বাংলাদেশী শ্রমিক কাজ করছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে, যাদের প্রেরিত কষ্টার্জিত অর্থে ফুলে-ফেঁপে উঠছে বাংলাদেশ। এসবই বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতির বহু ইতিবাচক অর্জন, সন্দেহ নেই। এর পরও আÍপ্রসাদ তথা থেমে থাকার অবকাশ নেই আমাদের। উন্নতির স্বর্ণশিখরে কেন নয়Ñ এই অপ্তবাক্যটিকে অবলম্বন করে আমরা আরোহণ করতে চাই উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির সর্বোচ্চ শিখরে। সুতরাং বলতেই হবে, ‘এখনই বন্ধ করো না পাখা।’
১. ২৮ শে নভেম্বর, ২০১২ দুপুর ১২:০২ ০
সাবাস বাংলাদেশি।