জাহিদ এফ সরকার সাদী, একজন প্রবাসী রাজনীতিবিদ। মিথ্যা তথ্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করে একটি বড় রাজনৈতিক দলকে মুখরোচক সমালোচনার পাত্র বানিয়ে দলটির বিশেষ উপদেষ্টা এবং বৈদেশিক দূতের পদবী থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। সম্প্রতি তিনি আবার আলোচনায় এসেছেন এক ভিডিও নিয়ে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নারী অফিসার, চিকিৎসক, শিক্ষাকোরের অফিসার ব্যাতীত বাকী অফিসারদের জন্য বাধ্যতামূলক বেসিক কমান্ডো কোর্স অথবা অফিসারসহ সকল পদবীর জন্য পরিচালিত এবং অপশনাল 'আর্মি কমান্ডো কোর্স' এর প্রশিক্ষনের বিষয়বস্তুর মধ্যে অন্যতম 'গ্যাগিং' এর একটি ভিডিওচিত্র নিয়ে সাদী সাহেব যে গল্প ফেঁদেছেন তার ভিডিও এবং স্ক্রীনশটের মাঝে তার ঐতিহাসিক আবিষ্কার দেখুন।
ভিডিও
এবার আসুন জানি গ্যাগিং কি। সেনাদল কোন অপারেশনে যাওয়ার সময় পথিমধ্যে যদি কোন অপরিচিত ব্যাক্তিকে দেখে যার শত্রুপক্ষের হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, সে যাতে সেনাদলের চলাচলের খবর শত্রুর কাছে পৌঁছে দিতে না পারে সেজন্য কিছু ব্যবস্থা নিতে হয়। যেহেতু সেনাদল একটি অপারেশনে যাচ্ছে, সেহেতু উক্ত ব্যাক্তিকে বন্দী হিসেবে নিতে পারবে না কেননা উক্ত বন্দীর প্রহরী হিসেবে ২/১ জনকে নিয়োগ দিতে হবে এবং যুদ্ধবন্দী চলাচলের গতি কমিয়ে দিতে পারে। সময় সেনাদলের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিশেষ করে অপারেশনের সাথে যদি আর্টিলারী ফায়ার সাপোর্টের বিষয়টি বিবেচনায় থাকে। তাছাড়া চাঁদের আলোতে আকস্মিকতা নষ্টের সম্ভাবনা থাকায় সময় এবং গতি সামরিক অভিযানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তো, সেই অপরিচিত ব্যাক্তি কে হাত, পা, মুখ একসাথে এমনভাবে বাধা হয় যেন সে কথাবলা, বা নড়াচড়া করতে না পারে। এটাকেই গ্যাগিং বলে। গ্যাগিং খুবই কষ্টদায়ক। গ্যাগিং কিভাবে করলে বেশী উপযুক্ত হয় তা ভালো করে বোঝানোর জন্য একজন সামরিক ছাত্র আরেকজন সামরিক ছাত্রকে গ্যাগিং করে বা প্রশিক্ষক ছাত্রকে গ্যাগিং করে।
সাদী সাহেবের গল্পে আসা যাক, উনি গ্যাগিং এর ভিডিওর ক্যাপশনে লিখেছেন সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলায় অফিসারদের নির্যাতন করা হচ্ছে। উনাকে যখন কমেন্টে ধোয়ামোছা করা চলছে, তখন আরেক শ্রেণীর অতিবিশ্বাসী এসে প্রশ্ন তোলেন যে এটা যদি প্রশিক্ষনের ভিডিওচিত্র হয় তাহলে র্যাব (একজনের ভাষায় আবার রেপ) কেন? উনাদের প্রশ্ন তোলার কারন উনারা কালো পোষাকের মানুষ দেখেছেন।
কালো পোষাকধারীরা আর কেউ নয়, স্কুল অব ইনফ্যান্ট্রী এ্যান্ড ট্যাকটিকস এর স্পেশাল ওয়ারফেয়ার উইং তথা কমান্ডো প্রশিক্ষন শাখার জেসিও/এনসিও প্রশিক্ষক। তাঁরা সরাসরি রনকৌশল সংক্রান্ত প্রশিক্ষন ছাড়া অন্যান্য প্রশিক্ষন, বিশেষ করে শারীরিক দক্ষতাকে চরম শিখরে নিয়ে যাওয়া সংক্রান্ত প্রশিক্ষনের সময় কালো ট্রাউজার এবং কালো গেন্জ্ঞী, অথবা কম্ব্যাট ট্রাউজার এবং কালো গেন্জ্ঞী পরিধান করেন। এটা স্পেশাল ওয়ারফেয়ার উইং এর একটি ড্রেস। একজন ফেসবুকার অবশ্য বলেছেন, "আপনি যদি কালো পোষাকধারী সবাইকে র্যাব ধরেন তাহলে ক্যাম্ব্রিয়ান কলেজের সকল ছাত্র-ছাত্রীই র্যাব কেননা তারাও তো কালো পোষাক পরিধান করে।" একেবারে মোক্ষম জবাব।
র্যাব তো হয়েছে সেদিন। ২০০৪ সালে। তার অনেক আগ থেকেই আর্মার্ড কোরের সদস্যরা ট্যাংকের সাথে প্রশিক্ষনের সময়, বিএমএ ক্যাডেটরা, যেকোন প্রশিক্ষনের সময় এবং ইলেক্ট্রিকাল এ্যান্ড মেকানিক্যাল ইন্জ্ঞিনিয়ারিং কোরের সদস্যরা রিপেয়ারিং এর সময় কালো পোষাক পরিধান করে আসছে। অতএব, কালো মানেই র্যাব না। কালো মানে আর্মার্ড কোর হতে পারে, বিএমএ ক্যাডেট হতে পারে, ইলেক্ট্রিকাল এ্যান্ড মেকানিক্যাল ইন্জ্ঞিনিয়ারিং কোর হতে পারে অথবা ক্যাম্ব্রিয়ান কলেজ হতে পারে।
এত ধোলাই খাওয়ার পর নির্লজ্জ এই ব্যাক্তিটি আবারো দাবী করেছেন তার ভিডিওর বিষয়বস্তু সত্য, এমনকি কয়েকজন সেনাসদস্য প্রতিবাদ করার পরেও।
আরেক শ্রেনীর কুতুব সেনাসদস্যদের প্রতিবাদের উত্তরে বলেছে, সরকার ৫৭ জন সৎ ও মেধাবী কর্মকর্তাকে হত্যা করার পর এখন যারা আছে সব দূর্নীতিবাজ। ভালো তো, ভালো না? তার মানে হচ্ছে ৫০০০ এর অধিক অফিসার নিয়ে গঠিত এই সেনাবাহিনীতে মাত্র ৫৭ জনই ভালো ছিলো, আর বাকী সবাই খারাপ। আইডিয়া খারাপ না। একটা গবেষনার দাবী রাখতেই পারে।
এসব লেখার উদ্দেশ্য একটাই। সেনাবাহিনী দিয়ে সরকার পতন। অতীতে সেনাবাহিনী নিজেদেরকে রুমালের মত ব্যবহার হতে দিয়েছে। সেইদিন আর নাই। এখনকার ছেলেরা অনেক বুদ্ধিমান। রুমালের মত ব্যবহার করে স্বার্থ উদ্ধার শেষে ছুড়ে ফেলে দিবেন, তার মধ্যে সেনাবাহিনী নেই। ঐসব না করে বরং নিজেরাই রাজপথে আন্দোলন করুন। লুকোচুরি না খেলে, সেনাবাহিনীকে জড়ানোর চেষ্টা না করে রাজনীতিবিদ হিসেবে নিজের কাজ করুন। সরকার পতন রাজনীতিবিদদের কাজ, সেনাবাহিনীর কাজ না।