কয়েকজন শ্রোতা পেলে অনেক ভাষণদাতারই হয়ত মাথা ঠিক থাকে না। চায়ের দোকানে অল্পকিছু মাছির সাথে অগণিত গাঁজাখুরি গল্প উড়ছে। কিছু মানুষ চায়ের সাথে হাঁ করে সেই গল্পও গিলে নিচ্ছে, অনেকে বিশ্বাসও করছে হয়ত। আমার ইদানিং কারো কথাই বিশ্বাস হতে চায় না। লোকে বলে,
"বিশ্বাসে মিলায় বস্তু, তর্কে বহুদূর।"
এখন বিশ্বাসে বস্তু মিলাবে, এই বিশ্বাসে বসে থাকতে অস্বস্থি লাগে। আমি বরং তর্কের পথটাই বেছে নিই। একটা সময় বিতর্কটাই ভালো জানতাম.......
এখন ঝগড়া করি। কারণে-অকারণে ঝগড়া বাধাই। ফেসবুকে ঝগড়া করি, ফ্রেন্ডদের সাথে ঝগড়া করি। সময়, সুযোগ, পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে আম্মা-আব্বাও বাদ যায় না।
আমি কিন্তু কারো উপরে রাগ করি না। স্পেশালি আম্মা-আব্বার উপর তো একদমই না। অবশ্য রাগ করলেও কিছু আসত-যেত না। আমার মা-বাবা এমনই। আমার কথা-বার্তাকে বিন্দুমাত্র পাত্তা দেন বলে মনে হয় না।
আমার মা-বাবা সম্ভবত এখনও আমার উপর কিছুটা আপসেট, আমি কোনো সরকারি ইন্সটিটিউটে সুযোগ পাইনি বলে। তাঁরা সেটা লুকানও না। আমার মন খারাপ হতে পারে, এটা তাঁদের মাথায়ই আসে না! তাঁরা কেন জানি এখনও আমাকে সেই পিচ্চি ছেলেটা ভাবেন, একটা চকবার কিনে দিলেই সব ভুলে যাব। আমিও হাসি হাসি মুখ করে চকবার খাই, মন ভালো থাকার ভাণ করি।
কেন? কারণ আমি ভয় পাই।
কলেজে পড়ার সময় একটা মেয়েকে খুব ভালো লাগত। সেকেন্ড ইয়ারের ৩৬৫ দিনই গেছে "আজ বলব, কাল বলব" করে। আর কোনোদিন বলাই হলো না। বরং মেয়েটাই ফেয়ারওয়েলের দিনে হাসতে হাসতে বলে গেল,
"তুই একটা এক নম্বরের ভিতু! মনে যা আছে, তার কিচ্ছু বলতে পারিস না।"
মেয়েটা আসলে ঠিক কি বোঝাতে বলেছিল কথাগুলো? জানা হয়নি, জিজ্ঞেস করার সাহস হয়নি।
জ্বী, আমি এতটাই ভিতু।
পুরুষ মানুষের নাকি ভয় পেতে নাই। খুব করে একবার হেসে নেয়া যায়, তবে শুধুমাত্র একজন পুরুষ হয়ে ওঠার ইচ্ছেও ছিল না খুব বেশি। জেন্টলম্যান, ভদ্রলোক বা ভদ্র পুরুষ, কোনোটাই আমার সাথে যায় না ঠিকঠাক। লুকিয়ে রাখা ডায়েরীতে দুই-একটা অখাদ্য কবিতা লিখে যে মহাপুরুষ হয়ে যাওয়া যায় না তাও জানি। আমি বরং মানুষ হতে চেয়েছিলাম।
জেন্ডার বড় ইম্পরট্যান্ট বিষয়। এই দেশে তুমি কুকুর না, বিড়াল না; দুঃখের বিষয়, তুমি মানুষও না। তুমি হয় পুরুষ, নয়ত নারী। এই সমাজে পুরুষ বা নারীর খোলস ভেঙে মানুষ হতে চাওয়া বড় কঠিন। সামনে বসা বান্ধবীকে দেখতে সুন্দর লাগছে বললে তার পাশে বসা দ্বিতীয় বান্ধবী তাতে কেবল আমার পুরুষ দিকটাই খুঁজে পায়। কোনো মেয়ের লেখা কবিতা পড়ে প্রশংসা করলে আমার মাঝে তার প্রেমিকও আমার মাঝে শুধুই পুরুষ দেখে। তাঁর চাপে পড়ে বান্ধবী তার এই "পুরুষ বন্ধুকে" এড়িয়েই চলে। আমি কিছু বলি না। বললেও কেউ কি শুনত? আমি মানুষ হলে হয়ত আমার খারাপ লাগার একটা ব্যাপার থাকত, পুরুষদের অতসব পাত্তা দিলে নাকি চলে না।
আজকাল হাতে হাত পেতে দিলে হাতে হাত মিলিয়ে এক ধরণের আনন্দ প্রকাশ করা হয়। আমিও করি, "হাই ফাইভ", "লো ফাইভ" আরো অনেক কিছু। আমার এক দার্শনিক টাইপের বন্ধু বলে, এটা নাকি আনন্দ প্রকাশ নয়। এটা নাকি বাড়িয়ে দেয়া হাতকে চড় মেরে সরিয়ে দেয়া.........
আমি ঘাঁটাতে যাই না। কি হবে ঘেঁটিয়ে? কিচ্ছু বদলাবে না। আমারও মানুষ হওয়া হবে না। সাহসীও হওয়া হবে না। আমি বরং নিজেকে নিজের সাথে মানিয়ে নেবার চেষ্টা করি।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই মে, ২০১৬ রাত ১০:৪২