লিবিয়ায় দিনগুলো সুন্দর ছিলো। আমি সুনীল সাগর দেখেছিলাম, দেখেছিলাম মরুময় পর্বতমালা। কি দেখি নাই?
আমাদের বাড়ির সামনে ছিলো ভুমধ্যসাগরের বীচ, আর পেছনে ছিলো দিগন্ত ছোয়া বিশাল পাহাড়। কেউ কোন দিন যার শীর্ষ ছুয়ে দেখেনি।
আমি যে স্কুলে পড়তাম, তাও ছিলো পাহাড়ি উপত্যকায়। আল-মার্জ শহরের নাম। আমাদের শহর থেকে ৩৫ কিঃমিঃ দূরে। আমরা কয়েকজন ছেলে মেয়ে একসাথে স্কুলে যেতাম। তার মধ্যে পোল্যান্ডের ভাই-বোন, মিশরের একটি মেয়ে, আর লিবিয়ান একটি ছেলে ছিল।
মিশরীয় মেয়েটির নাম ছিলো দিনা। আমি ক্লিওপেট্রার পাশে ছিলাম বছর গুলোতে আজ বুঝতে পেরে খুব প্রেম নিবেদন করতে ইচ্ছা করে তাকে।
দিনারা ছিলো দুই বোন। দিনার চেহারার বর্ণনা করা যায় না। স্বর্গের পরি অথবা মর্তের স্বরস্বতি দেবী যেন। ক্লাসে আমার পাশে বসতো, যখন নার্সারি আর কেজি ওয়ানে পড়েছি। সব সময় আমার লেখায়, পড়ায় যেন ছায়ার মত লেগে থাকতো সে। ব্লন্ড ছিলো। চোখ দুটো কেমন যেন মায়াময়। আমি অঙ্ক না পারলে আমাকে অঙ্ক করে দিত, বকা খেলে টিচারের কাছে সুপারিশ করতো।
ওকে নিয়ে একটা ঘটনা খুব মনে পরে। একদিন টিফিন টাইম থেকে ক্লাসে গিয়ে দেখি বেচারির সারা গায়ে পানি। হোসেন নামে একটি ছেলে তাকে ভিজিয়ে দিয়েছে। যদিও সেদিনকার মত বিচার করেছিলেন টিচার, আমি দমে যাই নি। কিসের বিচার? কান ধরে উঠবস করা কোন বিচার না।
বাবাকে বলে দিলাম। বাবা স্কুলের গভর্নিং বডিতে ছিলেন। তিনি ছেলেটাকে পরের দিন খুব করে বুঝিয়ে দিলেন এসব করতে হয় না। কিন্তু যাহা লাউ তাহাই কদু হয়ে রইল।
কেজি-২ তে ওঠার সময় দিনা তার দেশে ফিরে গেল। আমাকে একা ফেলে। মিস করা কাকে বলে তখন জানতাম না। কিন্তু এখন পাগলের মত মিস করতে শিখেছি ওকে। দিনা যদি আবার আসতে?
স্কুলের বারান্দা আর মাঠের পাশে মরুভূমির ক্লান্ত হাহাকার। স্টিলের তৈরী স্কুলটি আমার জন্য বিষময় হয়ে গিয়েছিলো। সেই শোক কাটাতে হবে কেমন করে? দিনার দেওয়া হাতে লেখা এ বি সি ডি, আর কিছু করে দেওয়া অঙ্ক সংরক্ষণ করে রেখে দিলাম। কিন্তু ১৯৯৪ সালে ফিরে দেশে ফিরে আসার সময় নিয়ে আসতে আর মনে ছিলো না।