ভোরের কাগজে প্রকাশের লিংক Click This Link
যে মানুষটির জন্ম না হলে একটি স্বাধীন মাতৃভূমির সৃষ্টি হতো না, ৫৬ হাজার বর্গমাইল জুড়ে সবুজের বুকে লাল উড্ডীয়মান হতো না। যে বরপুত্রের আবির্ভাব না ঘটলে আজ এ বদ্বীপের ষোলো কোটি মানুষের জাতীয়তা পাল্টে যেতো, সংবিধান, সার্বভৌমত্ব, যুদ্ধ আর রাষ্ট্র নির্মাণের সব স্বপ্ন ধূলোয় মিশে যেতো। সেই অসামন্য মানুষটির নাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। শেখ মুজিব একটি ত্যাগ, বিদ্রোহ আর অগ্নিস্ফুলিঙ্গের নাম। স্বাধীনতার পাঞ্জেরী শেখ সাহেব একটি সুবিশাল ও একক ক্ষমতাধর ভূখণ্ডের জনক। যিনি স্বাধীন একটি পতাকা অর্জনের লড়াইয়ে দীর্ঘ আটাশ বছর মুক্তি সংগ্রাম করেছেন। একটি স্বপ্ন পূরণের আন্দোলনে প্রায় সমস্ত জীবনই কাটিয়েছেন কারা প্রকোষ্ঠে। জীবনের সবটুকু দিয়ে এভাবে পৃথিবীর কোথাও কেউ লড়েনি আগে। ছড়িয়ে দেয়নি মানুষে মানুষে স্বাধীনতা আর মুক্তির জয়োগান। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি, মুক্তিযুদ্ধের সেই কবি শেখ মুজিব অবহেলিত হতদরিদ্র একটি জাতিকে শোষক জেনারেলদের নাগপাশ থেকে মুক্ত করেছিলেন। উপহার দিয়েছেন একটি ভাষা, আত্মপরিচয় আর স্বাধীন দেশ বাংলাদেশ। আজ সেই হিরম্ময় দিন যে দিনে এ মুক্তিত্রাতা বাংলার মুখ দেখেছিলেন। ১৯২০ সালের ১৭ই মার্চ গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় পিতা শেখ লুৎফর রহমান এবং মাতা সায়েরা খাতুনের ঘর আলোকিত করে জন্ম নেন বাঙালির স্বপ্নদ্রষ্টা শেখ মুজিব। জন্মের পর মা-বাবা আদর করে নাম দিয়েছিলেন খোকা। ছোট্ট সে খোকা পরবর্তীতে হয়ে উঠেছিলেন রাজনীতির ধাতব মুজিব। মুজিব থেকে বাংলার বন্ধু (বঙ্গবন্ধু), আর বঙ্গবন্ধু থেকে বাঙালি জাতির জনক। তাই শুধুমাত্র জন্মদিনেই নয়, তাকে মনে পড়ে- পুড়ে যাওয়া কৃষকের ম্লান মুখে, মুক্তিযোদ্ধার নির্লিপ্ত চোখের চাহনিতে, কিংবা বদলে যাওয়া নতুন এক বাংলাদেশে। বেগম রোকেয়া একবার তার স্কুলের ছাত্রীদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, তোমরা যে স্কুলভবন দেখছ, তার জন্য কত মাটি নিজেকে পুড়িয়ে ইট হয়েছে, কত শামুক নিজেকে পুড়িয়ে চুন হয়েছে জানো? ঠিক তেমনি আজ আমাদের চোখে যে নতুন বাংলাদেশ তার জন্য বঙ্গবন্ধু কতো নির্মম অত্যাচার সহ্য করেছেন তা আমাদের অনেকেরই অজানা। ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ, ছয়দফা থেকে সংবিধান রচনা, এ জাতির সকল ইতিহাস বিনির্মাণ করতে গিয়ে নির্মম নির্যাতন সহ্য করেছেন তিনি। বিনা বিচারে মাসের পর মাস কারারুদ্ধ থেকেছেন। কিন্তু পিছপা হননি, বরং উৎপীড়িতের ক্রন্দনরোল দমনে অনশন চালিয়ে গেছেন। আর পাকিস্তানি রাষ্ট্রযন্ত্র তাকে পুঁতে ফেলবার জন্য জেলের ভেতরেই কবর খুঁড়েছিল। বঙ্গবন্ধুর নিজের লেখা বই ’অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে উঠে এসেছে এসব বর্ণনা। ভাষা সংগ্রামের উত্তাল সময় গুলোতে টানা দুই বছরের বেশি সময় জেলে বন্দি আছেন বঙ্গবন্ধু। না খেয়ে অনশন করছেন। কিন্তু চারদিন পর কর্তৃপক্ষ নাক দিয়ে খাওয়ানো শুরু করলো। এতে নাকের ভেতরে প্রচণ্ড ঘা হওয়াতে রক্ত ঝরছে বঙ্গবন্ধুর। আত্মজীবনীতে তিনি লিখেছেন (পৃ: ২০৪) ‘যেকোনো মুহূর্তে মৃত্যুর শান্তি ছায়ায় চিরদিনের জন্য স্থান পেতে পারি। ডেপুটি জেলার সাহেব বললেন, ‘কাউকে খবর দিতে হবে কী না? আপনার ছেলে- মেয়ে ও স্ত্রী কোথায়? আপনার আব্বার কাছে কোনো টেলিগ্রাম করবেন? বললাম- দরকার নাই। আর ওদের কষ্ট দিতে চাই না। আমি আশা ছেড়ে দিয়েছি, হাত-পা অবশ হয়ে আসছিল। এভাবেই জীবন বাজি রেখে এদেশের অধিকারহীন, দেশহীন অভাবী মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
শৈশব থেকেই এদেশেরে খেটে খাওয়া মানুষের দুঃখে বিচলিত ছিলেন তিনি। মানুষের অধিকার আদায়ের মতো মানবিক গুনাবলী তখন থেকেই তার চরিত্রে ফুটে ওঠেছিল। সপ্তম শ্রেণিতে পড়াকালিন কিশোর মুজিব স্বদেশী আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন। আর ১৯৩৯ সালে ৮ম শ্রেণিতে পড়াকালিন সময়ে দুই মন্ত্রীর নিকট বিদ্যালয়ের দাবি জানানোর দরুণ সেই কিশোর বয়সেই তাকে সাতদিন কারাবাস করতে হয়েছিল। তখন থেকেই তার চরিত্রে নেতৃত্বের গুণাবলী ও বিদ্রোহের আগুন প্রকাশ পেয়েছিলো। ঘটনাটি ছিলো এমন - সে সময়কার অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক এবং অন্যতম মন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মুজিবের বিদ্যালয় পরিদর্শনে যান। কিশোর মুজিব দুই মন্ত্রীকে সহপাঠীসমেত সংবর্ধনা জানান। পরে সব শিক্ষার্থীর পক্ষ থেকে বিদ্যালয় ছাত্রাবাসের নষ্ট ছাদ মেরামতের দাবি জানিয়ে অবিলম্বে তা কার্যকর করার ব্যবস্থাও করিয়ে নেন। কিন্তু ওই সংবর্ধনাকে ঘিরে মুজিবের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হয় এবং তাকে জেলহাজতে যেতে হয়। কিশোর জীবনের কারাবাসের অভিজ্ঞতা ও ষড়যন্ত্রের কূটচাল থেকে বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনের সংগ্রামকে এগিয়ে নেয়ার সাহস ও শক্তি সঞ্চয় করেছিলেন তিনি। প্রকৃত অর্থেই মুজিব জন্মগত সাহসী। স্বার্থক প্রতিবাদি, অকুতোভয় সংগ্রামী। আর তা কেবল শাব্দিক অর্থেই নয় বাস্তবেও প্রমাণিত সত্য। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এ বাংলায় জন্ম নিয়েছিলেন নিপীড়িত ও পরশাসিত জাতির ত্রাণকর্তা ও পিতার দায়িত্ব পালনের নিমিত্তে। তাইতো বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু একে অপরের সঙ্গে এমন ওতপ্রতোভাবে জড়িত। যেভাবে শরীর ও তার আত্মা, গাছ ও তার শিকড় একে অপরের অন্তঃপ্রাণ। যেগুলোকে কখনো একটির চেয়ে অন্যটি বিচ্ছিন্ন করা যায় না। ১৯৩৪ থেকে চার বছর কিশোর মুজিব স্কুলের পাঠ চালিয়ে যেতে পারেন নি। কারণ সে সময় তার চোখে জটিল রোগের কারণে সার্জারি করাতে হয়েছিল। তাই অনেক পরে এসে গোপালগঞ্জ মিশনারি স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন তিনি। ১৯৩৮ সালে ১৮ বছর বয়সের মুজিব বেগম ফজিলাতুন্নেসাকে বিয়ে করেন। ওই দম্পতির ঘরে দুই কন্যা এবং তিন পুত্রের জন্ম হয়। কন্যারা হলেন শেখ হাসিনা (বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী) এবং শেখ রেহানা। আর পুত্ররা হলেন শেখ কামাল, শেখ জামাল এবং শেখ রাসেল। মুজিবের কলেজ জীবন কাটে কলকাতার ইসলামীয়া কলেজে। কলেজ জীবন থেকে সক্রিয়ভাবে তিনি ছাত্র রাজনীতি শুরু করেন। ১৯৪৭ সালে দেশবিভাগের পর ওই কলেজ থেকেই বিএ ডিগ্রী লাভ করেন। পাকিস্তান-ভারত পৃথক হয়ে যাওয়ার পর মুজিব পূর্ব পাকিস্তানে বর্তমান বাংলাদেশে ফিরে আসেন। ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে। ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠা করেন পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ। পরবর্তীতে এর মাধ্যমে তিনি এ অঞ্চলের অন্যতম প্রধান ছাত্রনেতায় পরিণত হয়েছিলেন। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে তার প্রত্যক্ষ ভূমিকা ছিলো। বাঙালিকে দমিয়ে রাখার পশ্চিম পাকিস্তানি কূটচালের প্রথমটি ছিলো এদেশের ভাষার ওপর আঘাত। তা খুব সহজে ধরে ফেলেছিলেন তুখোড় নেতা মুজিব। তাছাড়া আগে থেকেই পূর্ব পাকিস্তানের ওপর রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক সব ধরণের বৈষম্য কখনো মেনে নিতে পারতেন না স্বাধীনতার স্থপতি শেখ মুজিবুর। তিনি তার রাজনৈতিক মেধা ও প্রজ্ঞা দিয়ে মানুষদের অধিকার সচেতন করে তুলেছেন। একটি জাতিকে বিশ্বের বুকে মাথা তুলে দাঁড়াবার স্বপ্ন দেখিয়েছেন। পশ্চিমের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে আমজনতাকে এককাতারে দাঁড় করিয়েছেন। পূর্বের অবহেলিত জনগণের চোখে স্বাধীনতার স্বপ্ন এঁকে দিয়েছেন। জেনারেল শাসিত একটি শক্তিশালি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে গিয়ে স্বাধীন অন্য একটি মানচিত্রের লড়াই চালিয়ে গেছেন। আর এসব করতে গিয়ে তিনি অনবরত কারাবাস বরণ করেছেন। জেলহাজত থেকে কিছুদিনের জন্য মুক্তি পাওয়ার পর আবার সে হাজত গেটেই আবার গ্রেপ্তার হয়েছেন। মুক্ত শেখ সাহেবকে পাকিস্তানিরা সবসময়েই ভয় পেত। কিন্তু তারা জানতো না খাঁচা বন্দি শেখ সাহেব আরো ভয়াবহ। দেশপ্রেমক এ নেতা তখন জেলে বসেই দেশ স্বাধীনের সকল অংক মিলিয়ে ফেলেছিলেন।
তার বড় গুণ ছিল তুখোড় বক্তৃতা প্রদানের ক্ষমতা। সমাজতন্ত্রের পক্ষসমর্থনকারী একজন অধিবক্তা হিসেবে তিনি পূর্ব পাকিস্তানের জনগোষ্ঠীর ওপর চাপিয়ে দেয়া সকল বৈষম্যের বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন। পূর্বের লোকেদের স্বাধিকার প্রতিষ্ঠায় তিনি ১৯৬৬ সালে ছয়দফা সহ স্বায়ত্ত্বশাসনের অধিকার আদায় করেন। কিন্তু ১৯৬৮ সালে আইয়ুব খানের সামরিক শাসন আমলে পাকিস্তানিরা ভারত সরকারের যোগসাজশে ষড়যন্ত্রের অভিযোগে এনে তার বিরুদ্ধে বিচার শুরু করে। যদিও মানুষের ভালোবাসার মুজিব পরবর্তীতে এতে নির্দোষ প্রমাণিত হন। আর তার দুই বছর পর ১৯৭০ এর নির্বাচনে মুজিবের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগকে এদেশের মানুষ ভোট দিয়ে বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়ীও করে। কিন্তু পাকিস্তানি রাষ্ট্রযন্ত্র ক্ষমতা হস্তান্তরে চরম কাপুরুষতার পরিচয় দিলো। নতুন সরকার গঠনে ইয়াহিয়া খান এবং জুলফিকার আলী ভুট্টোর সঙ্গে শেখ মুজিবের সকল আলোচনা বিফলে গেলো। আর ৭১’র ২৫ মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ঢাকায় গণহত্যা চালালো। একই রাতে শেখ মুজিবকে আটক করে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যায় তারা। রহিমুদ্দিন খান সামরিক আদালতে মুজিবকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করে। কিন্তু মুজিব ৭ মার্চের ঐন্দ্রজালিক ভাষণে দেশ স্বাধীনের ঘোষণা দিয়ে গিয়েছিলেন। সে মোতাবেক এদেশের আবালবৃদ্ধবনিতা ২৬ মার্চ মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে ৭১’র ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। দ্রুতই ঘটনাপট পাল্টে যায়, ভারত ও রাশিয়ার কূটনৈতিক তৎপরতায় বাংলাদেশের পক্ষে বিশ্বজনমত গড়ে উঠে। ফলে ৭২’র ১০ জানুয়ারি বিশ্ব নেতাদের চাপে পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী মুজিবকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তিলাভ করে বাংলার অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিব স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন। দেশে ফিরেই তিনি যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠনের কাজ শুরু করেন। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, সেই সুযোগ বেশিদিন পাননি তিনি। ৭৫’র ১৫ আগস্ট ঘাতকদের তপ্ত বুলেটে সপরিবারে নিহত হন বাঙালি জাতীয়তাবাদের জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। অকাট্য সত্য এই যে, বঙ্গবন্ধু সারাজীবন যে দেশ ও দল নিয়ে গর্ব করতেন সেই দেশের মানুষ ও দলীয় নেতাদের একাংশ তার পরিবারের সঙ্গে চরম কাপুরুষতার পরিচয় দিল। তিনি শক্র-মিত্র বাছ-বিচার করেন নি। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর জিন বহন করা এদেশীয় অফিসারদের ভেতর যে ভারত বিরোধীতা রয়েছে তা তিনি অবহেলা করেছিলেন। জাতীয়বাদি সেই সামরিক চক্রটি পরে আওয়ামী সংস্কারবাদিদের সঙ্গে যড়যন্ত্রের জাল বুনেন, যার ফলাফল আগষ্টের রক্তপাত। তাদের প্রথম ম্যাকিয়াভিলিজম ছিল বঙ্গবন্ধুকে প্রাণে মেরে ফেলা। আর চমকপদ সমীকরণ হলো, সেই হন্তারকদের অনেকে ৭১-এ মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিলেও রাজনৈতিক চেতনায় অন্তরালে ছিলেন, ঘোরতর রক্ষণশীল ও সাম্প্রদায়িক বাঙালি। তা না হলে তারা কিভাবে প্রাণের নেতার বুলেটে ঝাঁঝরা শরীর ৩২ নম্বরের বাড়ির সিঁড়িতে ফেলে রেখে মোশতাক আহমদের কেবিনেটে শপথ নিলেন। আর যে মজলুম নেতা মাওলানা ভাসানি বঙ্গবন্ধুর মাথার হাত রেখে দোয়া করলেন, তিনিই আবার চালবাজ মোশতাক সরকারকে অভিনন্দন জানালেন। এ হলো বাঙালির রাজনৈতিক পতিতাবৃত্তি ও সুবিধাবাদিতার মৌলিক বহিঃপ্রকাশ। কিন্তু সর্বগ্রাসী বাঙালি নিজ পিতার প্রাণ নাশের মাধ্যমে আত্মহননের যে পথে গেছে, তাতে নিজেরাই পড়লো আত্মপরিচয় সংকটের অতল গহ্বরে। কিউবান বিপ্লবী ফিদেল কাস্ট্রো এ মহানায়ককে শ্রদ্ধাভরে বলেছেন, ‘আমি হিমালয় দেখিনি, কিন্তু শেখ মুজিব দেখেছি” সেখানে হতভাগ্য বাঙালি সে মানুষটিকে পেয়েও হারালো। এ জাতি মুজিবকে মেনে নিয়েছিল, মনে নেয়নি। মুজিবের জন্মদিনে তাই মনে হয়, এই মহাপুরুষের জন্ম না হলে এই বাঙালি জাতি তাদের স্বাধীন সার্বভৌম স্বদেশ ও স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য অর্জন করতে সমর্থ হতো না। শেখ সাহেবের বিশাল সাংগঠনিক ক্ষমতা, অতি উচ্চ দেশপ্রেমিক চেতনা এবং জনগণের স্বার্থের প্রশ্নে তার আপোষহীনতাকে আমাদের প্রাতঃস্মরণীয় করে রাখা উচিত। ঘাতকের নির্মম বুলেট তার নশ্বর দেহ আমাদের মধ্য থেকে কেড়ে নিলেও তার মৃত্যুঞ্জয়ী আদর্শ যুগে যুগে এ জাতিকে আলোর পথের যাত্রায় অনুপ্রাণিত করবে। মুজিবের ৯৭ তম জন্মদিনে ও জাতীয় শিশু দিবসে আমরা তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করি। পাশাপাশি তার দেশপ্রেমের আদর্শে উজ্জীবিত হওয়ার শপথ গ্রহণ করি।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৫:৪০