somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পুরুষতন্ত্রের সংজ্ঞায় বন্দি নারী

০৮ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ১০:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ভোরের কাগজে প্রকাশের লিংক Click This Link
নারীবিহীন আদমের বুকে জমেছিল মেঘের পাহাড়। স্বপ্রণোদিত হয়ে সৃষ্টিকর্তা তখন হাওয়াতে ভিজিয়েছিল মেঘের বুক। আদম দুঃখ ভুলে পরম সুখে দুচোখ বুজলেন সে হাওয়াতে । আর এভাবে পুরুষের কান্নায় যখন নারী, তখন সবকটি পুরুষ জন্ম নিল নারীর জরায়ু ছিঁড়ে বেদনা হয়ে। সে সময় নারী এক জলাধার, বৃক্ষময়ী। তখন নারীর কোলে শিশু ঘুমায়, কি শান্ত, পবিত্র। পৃথিবীর প্রথম মানুষটির আগমন যখন নিষ্কণ্টক, তখন নারী স্বার্থক করে দিলো পৃথিবীর সমস্ত জমিন। মেসোটোপেমিয়ায় মাটির বুক চিরে জেগে উঠলো সবুজ। সিন্ধুতে মাথা উঁচু করে দাঁডাল নগর সভ্যতা। যুগে যুগে নারী লড়েছিল, পুরুষ না। সেই রোকেয়া, রাধা, ভিক্টোরিয়া, মার্গারেট আর মাতা মেরি সবাই কি অসাধ্য সাধন করেছিল তখন। মা মেরি কোনো পুরুষ ছাড়াই মাতৃত্ব লাভ করলেন। জীবন্ত নারী নিজেকে পুড়িয়ে কয়লা বানালেন সহমরণের যুদ্ধে। নারীর পেট থেকেই আসে পুরুষকূল। সব পুরুষই ঋণী নারীর নিকট। মা আর নারী সৃষ্টি করে। আর পুরুষ করে ধ্বংস কেবল।

পুরুষ খেয়ে ফেলে সমস্ত সংস্কৃতি, যুদ্ধ বাঁধিয়ে বিক্রি করে দেয় নারীর শরীর। পণ্য বানিয়ে তুলে দেয় নারীকে বাণিজ্যের জাহাজে। প্রশান্তের নীলে আরবের জলে প্রমোদতরীতে নাচায় নারীর দেহ। আইএস আলশবাবের পুতুল খেলায় নারীকে বানায় তার যৌনদাসী। অবেলায় উদ্যানে নারীর শরীর খামচায়, বিবস্ত্র করে। ফেটে পড়ে কুৎসিত বিকৃত অশ্লীল উৎপীড়নে। বটমূলে বৈশাখী সন্ধ্যায়, ফেব্রুয়ারীর বইমেলায় নারীকে তৈরি করে ফেলে নিজের কামচরিতার্থের যৌন খামারে। নারীদের ওপর পুরুষের আক্রমণ পুরুষতন্ত্রেরই দায়। সবগুলো পুরুষ আজো নিচক পুরুষ, মানুষ হয়ে ওঠেনি।

তাই নারী আজো পুরুষতন্ত্রের সংজ্ঞায় বন্দি। নারী পুরুষবাদের সংজ্ঞায় থেকে গেছে প্রাগঐতিহাসিক সেই আদিম নারী হিসেবেই। দেশে রাষ্ট্রযন্ত্রে নারীর বিচরণ নারীর ক্ষমতায়নের ইংগিত দেয় না। যদি পুরুষতন্ত্রের সবটুকু চেতনায় নারী আজো শিকল পরা থাকে। ধরা যায়, ছোঁয়া যায় এমন বস্তুগত দিক থেকে নারীকে বিবেচনায় আনলেও, পুরুষ তার আত্মার সৌন্দর্যবোধের জায়গা থেকে নারী জাতিকে কতটুকু গ্রহণ করেছে। রাষ্ট্র কাঠামোয় পুরুষের পাশাপাশি নারীর অবস্থান নারীর ক্ষমতায়ন সমর্থন করে না। যদি পুরুষবাদি সমাজের মনস্তত্ত্বে নারী রয়ে যায় পুতুলরুপে। এ যেন অক্সিজেনের মধ্যে থেকেও অক্সিজেনের অভাবে প্রাণ চলে যাওয়া। পুরুষ নারীকে মেনে নিয়েছে মনে নেয়নি। পুরুষই ঠিক করে দেয় নারীতন্ত্র নারীবাদ আর ওই তন্ত্রের ইন্দ্রজালে আটকে পড়া নারী জগতের মুক্তির জন্য আবার পুরুষই আসে ত্রাতারুপে। পুরুষ চায় নারীকে নারীরুপেই থাকতে হবে, মানুষ হয়ে ওঠলে থামিয়ে দিতে হবে। নারীদের মানুষ হয়ে ওঠার স্বাদ নষ্ট করে দেয়া হয় সেই শৈশব থেকে। আর চলে সমস্ত জীবন জুড়ে। ধীরে ধীরে সংখ্যাগরিষ্ঠ পুরুষ এভাবে একসময় সমগ্র নারী জাতকে পিতৃতন্ত্রের শিকলে বেঁধে ফেলে। নারীকে গড়ে অবলা, এক খণ্ড মাংসপিণ্ড রুপে। পুরুষ শাষিত রাষ্ট্র নারীকে বানায় কল্পণা দিয়ে। নারী হচ্ছে তা, যা পুরুষ তাকে মনে করে থাকে। আর সেটা পুরুষের কামের পরিতৃপ্তি বৈ বেশি কিছু নয়। নারীর প্রভু ও শোষক হলেন একজন বেটা মানুষ। তাই অন্ধ, বধির কিংবা ধ্বজভঙ্গ যেকোনো পুরুষও হয়ে উঠতে পারে অন্য যেকোনো সুন্দরীর কর্তা। প্রকারান্তে সকল কর্তাই বনে যান সমাজপতি, নারী পীড়নকারি।

ইহুদি পুরুষ প্রাতে প্রার্থনা করে এ্ই বলে , হে ইশ্বর তুমি আমায় নারী বানাওনি, তদজন্যে তোমাকে ধন্যবাদ। আর গ্রীসের জ্ঞানরাজ প্লেটোর গর্ব হয় এই ভেবে যে তিনি একজন পুরুষ। এ হলো পুরুষতন্ত্র ও তার মানববাদী চরিত্র। তাই সারা বিশ্বে নারী নির্যাতনের ঘটনায় জড়িত কোনো হন্তারকের ছবি আমাদের চোখে ভেসে উঠবে না। যতক্ষণ না পুরুষশাসিত এ সমাজের দর্পনে নারীর বিমূর্ত রুপটিই ফুটিয়ে তোলা হয়। যতক্ষণ থাকছে পুরুষের রাহুগ্রাস নারী পুরুষের সাম্যে আকাশপ্রমাণ ব্যবধান, ততদিন চলবে নারীর পোশাক টানাটানির জয়োল্লাস। আজ টিএসসিতে তো কাল রবীন্দ্রসরোবরে। আজ বটমূলে তো কাল আবার শিরিষ তলায়।

জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে একজন নারীকে জৈবিকভাবে যতোটা না নারী বা মেয়েলোক করে রাখা হয় তারচেয়ে বেশি বদ্ধ করে রাখা হয় সাংস্কৃতিভাবে। একটি মানুষ যতোটা না শারিরীকভাবে নারী তার চেয়ে বেশি সামাজিকভাবে তাকে নারী করে রাখা হয়। লৈঙ্গিক পার্থক্যকে যখন সংস্কৃতির চেয়ে এমন মু্খ্য করে বিবেচনায় আনা হয় তখন সমাজে সংক্রমিত রোগের প্রাদুর্ভাব আরো গভীরে ছড়িয়ে যায়। কিন্তু নারী উন্নয়ন ও অগ্রগতিকে এভাবে রুখে দিয়ে পুরুষ চলতে পারে না। একপায়ে পুরুষ আর কতদূর যাবে। নারী দিবসে একটিই প্রার্থনা- পরিবার মসজিদ-মন্দির-মিডিয়ায়, বিদ্যালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয় মনোজগত তৈরির সব কারখানায়, সর্বত্র নারীর জয়োধ্বনি ধ্বনিত হউক। পাশাপাশি প্রতিটি পুরুষও নারীর জন্য কাঁটা না হয়ে বরং একেকটি ফুল হয়ে ফুটুক। কারণ পৃথিবীটা মানুষের অর্থাৎ নারী-পুরুষ উভয়ের। যদিও ভাবাদর্শে বিশ্বাসীরা এটা মানতে নারাজ। তাই একটি মিথ্যাকে আঁকডে ধরে সমস্ত জীবন পার করে দেয় তারা।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ১০:১৬
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পার্বত্য চট্টগ্রাম- মিয়ানমার-মিজোরাম ও মনিপুর রাজ্য মিলে খ্রিস্টান রাষ্ট্র গঠনের চক্রান্ত চলছে?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:০১


মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী লালদুহোমা সেপ্টেম্বর মাসে আমেরিকা ভ্রমণ করেছেন । সেখানে তিনি ইন্ডিয়ানা তে বক্তব্য প্রদান কালে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী chin-kuki-zo দের জন্য আলাদা রাষ্ট্র গঠনে আমেরিকার সাহায্য চেয়েছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাসান মাহমুদ গর্ত থেকে বের হয়েছে

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১২


যুক্তরাষ্ট্রের একটি বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল হাসান মাহমুদের সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে। আমি ভাবতেও পারি নাই উনি এতো তারাতারি গর্ত থেকে বের হয়ে আসবে। এই লোকের কথা শুনলে আমার গায়ের লোম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দারিদ্রতা দূরীকরণে যাকাতের তাৎপর্য কতটুকু?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১৮



দরিদ্র দূরীকরণে যাকাতের কোনো ভূমিকা নেই।
যাকাত দিয়ে দারিদ্রতা দূর করা যায় না। যাকাত বহু বছর আগের সিস্টেম। এই সিস্টেম আজকের আধুনিক যুগে কাজ করবে না। বিশ্ব অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্তান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্তান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের বিয়ের খাওয়া

লিখেছেন প্রামানিক, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৮


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

১৯৬৮ সালের ঘটনা। বর আমার দূর সম্পর্কের ফুফাতো ভাই। নাম মোঃ মোফাত আলী। তার বিয়েটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। বাবা ছিলেন সেই বিয়ের মাতব্বর।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×