somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইরানের অবরোধমুক্তি ও বৈশ্বিক রাজনীতির ঘেরাটোপ

১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ভোরের কাগজে প্রকাশের লিংক Click This Link
মূলত প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ইরান আমেরিকা সম্পর্ক সুসংহতকরণ প্রক্রিয়া শুরু হয়। সে সময় ১৯২২ থেকে ১৯২৭ পর্যন্ত আমেরিকা ইরানের অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণে কিছু লবিষ্ট নিয়োগ করে, যাদের কাজ হলো ইরানের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতির চুলচেরা বিশ্লেষণ হোয়াইট হাউজের পাশাপাশি জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদকে অবহিত করা। এরকম একজন লবিষ্ট হলেন ড. আর্থার মিলস-পাফ, পরবর্তীতে নানা সভা সেমিনারের তার দেয়া ব্ক্তৃতা ও বিবৃতি থেকে ইরান-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের বহু গোপন রাজনীতি সংবাদমাধ্যমে আসে। সেসব থেকে জানা যায় ইরান-আমেরিকার বন্ধুত্বের স্বর্ণযুগ হচ্ছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়। এ সময় রাশিয়া ও ইংল্যান্ড তেলবাণিজ্য করতে ইরানকে নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেয়। আর ইরান তখন ইংল্যান্ড ও রাশিয়ার প্রভাব বলয় মুক্ত হতে গিয়ে ক্রমেই আমেরিকার দিকে ঝুঁকে পড়ে। এদিকে নাটের গুরু আমেরিকাও চেয়েছিল, কোনোভাবেই ইরান যেন রাশিয়ার সঙ্গে চলে না যায়। তাহলে ইরানের বিশাল তেলসম্ভার রাশিয়ার পাইপ লাইনে ঢুকে যাবে। দেশটির তেলসম্পদে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় আমেরিকা তাই ইরানকে ঘিরে তখন পৃথিবীব্যাপী এক শীতল যুদ্ধের অবতারণা করে। এমনকি রাশিয়া যখন তার লালবাহিনী ইরান থেকে সরিয়ে নিতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করে, তখন আমেরিকা জাতিসংঘের মাধ্যমে চাপ প্রয়োগ করে রাশিয়াকে সেনা সরিয়ে নিতে বাধ্য করে। মধ্যপ্রাচ্যসহ, আরব ও উপসাগরীয় অঞ্চলে সোভিয়েত আধিপত্য রুখতে আমেরিকা এমনই বাহুবল প্রদর্শন করেছিল সে সময়। তদজন্যে ইরানের সঙ্গে বন্ধুত্বটা অটুট করে তারা

উদ্দেশ্য ঘরের কাটায় কাটা তোলা। যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের সে ম্যাকিয়াভিলিজম বাস্তবায়নের অনেক কাজ সহজও করে দেয় ইরানের শাসক মোহাম্মদ রেজা শাহ পাহলভি। তিনি ছিলেন পশ্চিমের চর, আমেরিকার পরম আত্মীয়। যিনি আমেরিকার তেল কোম্পানিগুলোকে ইরানের উত্তরাঞ্চলে বাণিজ্য করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। ১৯৭৩ সালে যখন আরব রাষ্ট্রগুলো পাশ্চাত্যের বিরুদ্ধে তেল অবরোধ করে সেই সময় একমাত্র রেজা শাহপাহলভীই পশ্চিমে তেল সরবরাহ করেছেন। আর পুরস্কার হিসেবে ১৯৫৩ থেকে ১৯৬৩ সাল পর্যন্ত ৫৩৫.৪ মিলিয়ন ডলার সাহায্য পেয়েছিলেন। সে সময় শাসক শাহ অ্যাংলো-ইরানি তেল কোম্পানির সঙ্গে ৫০ শতাংশ রয়েলটি প্রদানের শর্তে সমঝোতা করেন। ফলশ্রুতিতে যুক্তরাষ্ট্র ইরানে শক্তিশালী পুলিশ বাহিনী গঠন, আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র আমদানি ও সেনাবাহিনীর জন্য নতুন অবকাঠামো নির্মাণে সহায়তা করে। বন্ধুত্বের খাতির আরো সমমনা করতে আমেরিকা তখন ইরানে পারমাণবিক চুল্লি স্থাপন করে। সে লক্ষ্যে ১৯৫৭ সালে ইরান-আমেরিকা যুগান্তকারী পারমাণবিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ওই চুক্তিমতে পরবর্তী দুই দশকে আমেরিকা পারস্যে পারমাণবিক চুল্লি, চিকিৎসা, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের উপাদান সরবরাহ করে। এভাবেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইরান একে অপরের পরম মিত্রে উন্নীত হয়, যা আয়াতুল্লাহ খোমেনির ইসলামী বিপ্লবের আগ পর্যন্ত অত্যন্ত সুকৌশলে বজায় ছিল। কিন্তু ঘটনাপট পাল্টে যেতে থাকে ১৯৭৯ সালে ইরানি বিপ্লবের মাধ্যমে যখন ঐতিহাসিক শাহ বংশের রাজতন্ত্রের অবসান এবং তদপরবর্তীতে শাসন ক্ষমতায় আয়াতুল্লাহ খোমেনির আবির্ভাব হয়। ইরানের জনগণ পশ্চিমাদের উপর প্রতিশোধ নিতে খোমেনির নেতৃত্বে দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলকে বিতাড়িত করে। তখন খোমেনি গণভোটের মাধ্যমে ইরানকে ইসলামিক প্রজাতন্ত্র ঘোষণা করে এক ব্যতিক্রমধর্মী সরকার ব্যবস্থার প্রতিষ্ঠা করেন। ওই সরকার ব্যবস্থায় তিনি ধর্মীয় বিশ্বাস তথা ইসলামি খেলাফত ( ইমামত), গণতন্ত্র , ইরানি সংস্কৃতি ও আধুনিকতাকে সমন্বয় করেন।

এসব ঘটনার পর আমেরিকা ও ইইউভূক্ত দেশসমূহের সঙ্গে ইরানের সম্পর্ক ধীর ধীরে খারাপ হতে থাকল। এবার যুক্তরাষ্ট্র ইরানের সঙ্গে মধু না পেয়ে যদুর তাস খেলায় মেতে উঠল। যে পরমাণু চুল্লিতে একসময় তারা ইউরেনিয়াম ঢেলেছিল সে একই চুল্লিতে প্রতিহিংসার আগুন ছড়িয়ে দিলো তারা। ৯০ এর দশকে এসে তেহেরানের অর্থনীতির পা ভেঙে দিতে আরোপ করল বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা। ২০০২ সালে পরমাণূ কর্মসূচি ও ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা বন্ধের কঠোর নির্দেশ দিল। আর ২০০৬-২০১০ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের তরফ থেকে চার দফা নিষেধাজ্ঞার খড়গ চলে ইরানের অর্থনীতি ও সামরিক খাতের উপর। মূলত শাহ বংশের পতন ও ইসলামি বিপ্লবের পর থেকে ইরান কূটনৈতিকভাবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বন্ধুহীন হয়ে যায়। কিন্তু তারপরেও ইরান একটুও দমিয়ে যায়নি, একটা দীর্ঘ সময় ইরান একা পথ চলতে থাকে। তবে ওই দেশের জনগণও ইরানি শাসকদের সঙ্গে ছিলো।আর বাণিজ্যের সঙ্গী ছিল চীন, রাশিয়া আর এশিয়ার দেশ ভারত। অবরোধ দিয়ে ইরানকে অর্থনৈতিক ও সামরিক দিক থেকে মেরুদণ্ডহীন করা যাবে এমনই ধারণা করেছিল পশ্চিমা শক্তি, কিন্তু বিপরীতে তারা দেখল- ইরান জঙ্গিবিমান, ব্যালাস্টিক মিসাইল, সাবমেরিন, ড্রোন, ডেস্ট্রয়ার ও অন্যান্য সমরাস্ত্র-প্রযুক্তি উদ্ভাবন করছে। ভূমি থেকে উৎক্ষেপণযোগ্য দূর পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ও পরমাণু প্রযুক্তির আবিষ্কার করে সামনে অগ্রসর হচ্ছে ইরান। আরব মানচিত্র থেকে ইসরাইলকে মুছে দেবার সাহস দেখাচ্ছে। ২০০৩ সালের মার্কিন নক্সাকে নস্যাৎ করে ইরাকের শিয়া সরকারকে নিজের দিকে টানছে খোমেনির আদর্শপুষ্টরা। সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে টিকিয়ে রাখতে পৃষ্ঠপোষকতা করছে। ইয়েমেনে সুন্নি শাসক মনসুর আল হাদির সরকারকে হুথি শিয়া বিদ্রোহীদের দিয়ে সামরিক অভিযানের নেতৃত্ব দিচ্ছে ইরান।

পশ্চিমা জোট আরো ভেবেছিল মন্দা অর্থনীতি ও অতিরিক্ত সামরিকায়নে ইরানি আমজনতাই আহমোদিনেজাদ ও রাফসানজানি সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করবে। কিন্তু দেশটিতে জনগণের স্বাধীন মতপ্রকাশের এক ধরনের ব্যবস্থা কার্যকর করা হয়েছে। সেখানে প্রেসিডেন্ট, সংসদ সদস্য ও সর্বস্তরের কর্মকর্তা নির্বাচিত হওয়ার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চালু রয়েছে। আর পরিস্থিতি যখন এমন বেহাত, তখন কোনোভাবেই যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা পারস্য শক্তির সঙ্গে পেরে উঠছিল না। তখন মধ্যপ্রাচ্যে শক্তির ভারসাম্য ধরে রাখতে এবং ইসরাইলের নিরাপত্তা ও মার্কিন স্বার্থ রক্ষার কৌশল হিসেবে বৈরী ইরানকে বাগে আনতে নতুন উদ্যোগ নেয় তারা। পুরনো চাল ভাতে বাড়ে ওই চিন্তা থেকে মার্কিনীদের নেতৃত্বে এবার ইরানকে ফের বন্ধু করতে মরিয়া হয়ে উঠে পাশ্চাত্যের পঞ্চপাণ্ডব জার্মানি, ফ্রান্স, বৃটেন, ইতালি ও তুরস্ক। তাই গত বছর ১৪ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির প্রয়াসে, ইরান ও ছয় বিশ্ব শক্তি পি৫+১ (নিরাপত্তা পরিষদের ৫ সদস্য ও জার্মানি একত্রে পি৫+১) ভিয়েনায় ইরান প্রসঙ্গে একটি ফয়সালায় পৌঁছুতে সক্ষম হয়। আর এ বছরের ১৬ জানুয়ারী আন্তর্জাতিক আণবিক সংস্থার তরফ ইরানকে অবরোধমুক্ত ঘোষণা করা হয়। সঙ্গে সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইরানের ভূয়সী প্রশংসা করে। আর এর ফলে বিদেশি ব্যাংকে ইরানের আটকে পড়া ১০০ বিলিয়ন ডলারের অর্থসম্পদ মুক্ত হয়ে গেলো এবং অপরদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে ইরানের জ্বালানি তেল প্রবেশের দ্বার খুলে গেলো। এদিকে পুরানো বন্ধু চীন ইরানে নতুন করে আরো ৬০০ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্যসঙ্গী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। অন্যদিকে রাশিয়ার উপর যদিও নিষেধাজ্ঞা চলছে, তা সত্ত্বেও ইরানকে অবরোধ থেকে মুক্ত হতে রাশিয়া অনুঘটকের কাজ করেছে। এখন রাশিয়া ইরানের সঙ্গে নিজের অংশীদারির পরিসর বাড়াতে পারে। যেহেতু সিরিয়া যুদ্ধে আইএস নিধনে রাশিয়া ও তুরস্ক আজ মুখোমুখি অবস্থানে। এবং যেহেতু পুতিনের মস্কো ইতিমধ্যে তুরস্ক থেকে ফল ও সবজি আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। সুতরাং এমন পরিস্থিতিতে রাশিয়ার জন্য ইরান ভালো বন্ধু।

এখন যদি রাশিয়া ইরান থেকে ভালো মানের ফল, সবজি ও দুগ্ধজাত খাবার আমদানি করে তাদের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য আরও বাড়বে, আর তা কেবল যা শুধু খাদ্যদ্রব্যের মধ্যে সীমিত থাকবে না। আশা করা যায়, দুই দেশের মধ্যে প্রাযুক্তিক, পারমাণবিক ও মানবিক সহায়তাও বাড়বে। আর রুশদের যদি বিনা ভিসায় ইরানে ঢুকতে দেয়া হয়, ওইদিকে ইরানে পর্যটনেরও বড় সুযোগ সৃষ্টি হবে। তবে ব্যাপারটা রাশিয়ার জন্য উল্টোও হতে পারে। কারণ, ইরানের হাতেও বিপুল পরিমাণ তেল আছে। ইরানের সস্তা তেল বাজারে আসা শুরু করলে রাশিয়ার জন্য হীতে বিপরীত হতে পারে। কারণ, দেশটির সিংহভাগ রাজস্ব আসে তেল বেচে। এসব ভৌগলিক ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিবেচনা করলে আবার বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় ইরানের আবির্ভাব তার প্রতিবেশীদের জন্য তেমন সুখকর নাও হতে পারে। কারণ ইরানের শাসন চরিত্রে কিছুটা শীতল সাম্রজ্যবাদিতাও লক্ষ্যণীয়। আর সেজন্যই ইরান এখন আরব দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলাতে পারে। ধারণা করা যায় আরবে বিভাজন ধরাতে অথবা প্রক্সিদের দিয়ে কিছু করতে চেষ্টা করবে ইরান। আর তাতে সবচেয়ে বড় মাথাব্যথার কারণ হতে পারে বর্তমান সৌদি সরকার ও তার নেতৃত্বাধীন উপসাগরীয় মিত্রদের। এমনিতে ধর্মীয় দিক দিয়ে শিয়া সম্প্রদায়ের উপর ইরানের ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ খোমেনির মাতব্বরি কোনোদিনও পছন্দ না সৌদি পক্ষের। আবার অন্যদিকে, ধর্মীয় তাত্ত্বিক মোহাম্মদ বিন আবদুল ওয়াহ্হাবের মৌলিক শিক্ষার ওপর প্রতিষ্ঠিত সুন্নি অধুষ্যিত সৌদি রাজতন্ত্রের বিপক্ষে ইরান। যার ফলশ্রুতিতে সারা মুসলিম বিশ্বে শিয়া-সুন্নি দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে। আর মধ্যপ্রাচ্যে মতাদর্শগত ওই লড়াই আজ রাজনৈতিক লড়াইয়ে পর্যবসিত হয়েছে। ওই অঞ্চলের মূল নিয়ন্ত্রক বা ক্রীড়ানক হতে মাঠে রয়েছে, সৌদি আরব, ইরান ও তুরস্ক। সেজন্যে ইরাক, সিরিয়া, লেবানন ও বিশেষ করে ইয়েমেনের শিয়া অধ্যুষিত রাজনীতিতে ইরানের প্রভাব সুন্নি মতাবলম্বী নেতৃস্থানীয় দেশ হিসেবে সৌদি আরব, কাতার, বাহরাইন ও তার অন্য মিত্রদের অত্যন্ত বিচলিত করে।

সে কারণেই মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি থেকে ইরানকে মুছে ফেলবার অসংখ্য আর্থরাজনৈতিক ও কূটনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করে সৌদি আরব। ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা ধ্বংস করবার জন্য যুক্তরাষ্ট্র, এমনকি ইহুদিবাদি রাষ্ট্র ইসরায়েলকেও বন্ধু বানিয়েছে তারা। ওইদিকে ইরানও তাদের আধিপত্য বজায় রাখতে সমাজতান্ত্রিক বলয় রাশিয়া ও চীনের লেজে ভর করেছে। আর অন্যদিকে মধ্যপ্রাচ্যের আরেক মডোল প্রার্থী তুরস্ক তার অভ্যন্তরে ইরানের মদদপুষ্ট কুর্দি সমস্যা নিরসনে আমেরিকার দুয়ারে হাজির হয়েছে। ইরানের প্রতিবেশী মুসলিম রাষ্ট্র তুরস্কের সঙ্গে ইরানের সম্পর্ক অটোমান সাম্রাজ্যের প্রথম থেকেই ছিল সন্দেহপ্রবণ। কারণ ওই সাম্রাজ্যের ধ্বংসস্তূপে বেড়ে ওঠা তুরস্কের সরকার তার অভ্যন্তরের স্বাধীনতাকামী কুর্দি বিদ্রোহের জন্য সবসময় ইরানকে দায়ী করে। তবে ইরানের সঙ্গে রাশিয়ার সখ্যতার কথা ভেবে আবার চুপসে যায় তুরস্ক। এদিকে এশিয়ায় মুসলিম রাষ্ট্র পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সঙ্গে ইরানের সম্পর্ক কখনো ভালো ছিল না। বরং পাকিস্তানের শত্রু রাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে ইরান নির্বিঘ্নে তেল বাণিজ্য করেছে। ওইদিকে পাকিস্তান সর্বদা ছিল ইরানের বিপরীত মার্কিন বলয়ে। আর পাকিস্তানের দীর্ঘদিনের মিত্র মার্কিনীরা ভোল পাল্টে ভারতমুখী নীতি গ্রহণ করেছে। তাই ভবিষ্যতে যদি ইরানের সঙ্গে আমেরিকা সম্পর্ক উন্নয়নে আরও তৎপর হয়, তবে মধ্যপ্রাচ্যে তথা মুসলিম বিশ্বে ইরান-যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধুত্ব ও শত্রুতার যোগবিয়োগ পাল্টে যাবে। আর ওই সুযোগে ইরানও যদি মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে দূরত্ব কমিয়ে আনে, তবে ভবিষ্যতে ইরান আরো প্রতিনিধিত্বশীল অবস্থানে যাবে।

পৃথিবীতে মোট মুসলমানের প্রায় ১.৫ বিলিয়ন (৮০ শতাংশ) সুন্নি আর ১৫০-২০০ মিলিয়ন শিয়া। ইরান শিয়াদের অন্যদিকে সৌদি আরব যদি সুন্নিদের নেতা হতে চায় তবে নেতৃত্ব ভাগে আনতে সৌদি বাদশাদের অতিরিক্ত পশ্চিমা নির্ভরতা মধ্যপ্রাচ্যে তাদেরকে বিপাকে ফেলতে পারে। সেক্ষেত্রে অবরোধ মুক্ত ইরান কিন্তু বিশ্ব বাণিজ্যে ঢুকে নিজ অর্থনীতিকে আরো শক্তিশালী করবে। আর বাংলাদেশ সহ বিশ্বের অপরাপর মুসলিম দেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও সম্ভাবনা কাজে লাগাতে চাইবে দেশটি। অন্যদিকে সুন্নি দেশগুলোর সঙ্গে পারস্পরিক সম্পর্ক ও নির্ভরতাকে কাজে লাগাতে সৌদি আরবও বাংলাদেশের মতো মধ্যম সারির দেশগুলোকে পাশে পেতে চাইবে। আর তাতেই বাংলাদেশের পররাষ্ট্র দপ্তর দোটানায় পড়তে পারে। গেল বছর ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাবেদ জারিফ বাংলাদেশ সফর করেছেন আর বাংলাদেশও ইরানের পরমাণু ও প্রযুক্তি ইস্যুতে ইরানের সঙ্গে থাকার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে। ওইদিকে ইরানও বাংলাদেশে আরো বেশি বিনিয়োগের সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে। এর আগে আইএস দমন ইস্যুতে মুসলিম দেশগুলোকে নিয়ে কোয়ালিশন করা প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ভ্রমণ করেন সৌদি কর্তৃপক্ষও। ওই কোয়ালিশনে পৃথিবীর ৩৪টি দেশ যোগ দিয়েছে। বাংলাদেশও যোগ দেয়ার প্রতিশ্রুতি জানিয়েছে। কারণ সৌদি আরব এখনো বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রম বাজার, রেমিটেন্সের বড় উত্স। ওইদিকে ইরানও বাংলাদেশের পুরনো বন্ধু। তাই আন্তর্জাতিক সংঘাতে বাংলাদেশ কোনো পক্ষ নেবে না এমন বলাটা কঠিন। কিন্তু বাংলাদেশকে একটু কৌশলী হয়েই চলতে হবে। অন্যান্য মুসলিম দেশের ভূমিকাকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে নিজ স্বার্থ এগিয়ে নিতে হবে। দক্ষিণ এশিয়ার একীভূত অবস্থান ও মুসলিম বিশ্বের অবস্থানের সঙ্গে মিল রেখে সৌদি ও ইরানের সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য রক্ষা করে কূটনৈতিক ছক সাজাতে হবে।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:৩২
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পার্বত্য চট্টগ্রাম- মিয়ানমার-মিজোরাম ও মনিপুর রাজ্য মিলে খ্রিস্টান রাষ্ট্র গঠনের চক্রান্ত চলছে?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:০১


মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী লালদুহোমা সেপ্টেম্বর মাসে আমেরিকা ভ্রমণ করেছেন । সেখানে তিনি ইন্ডিয়ানা তে বক্তব্য প্রদান কালে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী chin-kuki-zo দের জন্য আলাদা রাষ্ট্র গঠনে আমেরিকার সাহায্য চেয়েছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাসান মাহমুদ গর্ত থেকে বের হয়েছে

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১২


যুক্তরাষ্ট্রের একটি বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল হাসান মাহমুদের সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে। আমি ভাবতেও পারি নাই উনি এতো তারাতারি গর্ত থেকে বের হয়ে আসবে। এই লোকের কথা শুনলে আমার গায়ের লোম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দারিদ্রতা দূরীকরণে যাকাতের তাৎপর্য কতটুকু?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১৮



দরিদ্র দূরীকরণে যাকাতের কোনো ভূমিকা নেই।
যাকাত দিয়ে দারিদ্রতা দূর করা যায় না। যাকাত বহু বছর আগের সিস্টেম। এই সিস্টেম আজকের আধুনিক যুগে কাজ করবে না। বিশ্ব অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্তান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্তান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের বিয়ের খাওয়া

লিখেছেন প্রামানিক, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৮


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

১৯৬৮ সালের ঘটনা। বর আমার দূর সম্পর্কের ফুফাতো ভাই। নাম মোঃ মোফাত আলী। তার বিয়েটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। বাবা ছিলেন সেই বিয়ের মাতব্বর।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×