somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ডায়েরিঃ একটি ধর্ষন, অতঃপর

১৫ ই জুলাই, ২০১৪ বিকাল ৪:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


একটি মেয়ে গণধর্ষনের শুরু থেকে শেষ অবদি ঠিক কতটুকু যন্ত্রনা পায় জানা নেই। তবে মনে হয় কোন মানুষ কে দুই পা ধরে দুই দিকে টান দিনে চিড়ে ফেলার চেয়ে কম না।
সেঁযুথির সাথে আমার পরিচয়টা মোটেও সুখকর না। তবে বিব্রতকর ছিল না, ওটাকে ভয়ংকর বলা যায়। প্রচন্ড ঠান্ডার রাতে কাঁপতে কাঁপতে যখন ঘরে ফিরছিলাম, ওভারব্রিজের উপর একটা মেয়েকে শুয়ে থাকতে দেখলাম।১৪/১৫ বছর হবে হয়তো, পড়নের জামাটাও ছেঁড়া।
গায়ের সোয়েটার খুলে মেয়েটার দিকে এগিয়ে দিতে গিয়ে আবিস্কার করলাম মেয়েটি অজ্ঞান।
পায়ের কাছে অনেক খানি রক্ত জমা হয়ে আছে।
বুঝতে বাকি নেই মেয়েটিকে রাতকুকুরেরা ছিড়ে ছিঁড়ে খেয়েছে। ১৪/১৫ বছরের মেয়ের উপর এত বড় অমানুষিক শুধু জারজ রাই করতে পারে। কোলে তুলে নিয়ে কতখানি দৌড়েছি মনে নেই, মাঝ পথে এক রিক্সাওয়ালার ডাকে টের পেলাম আমি দৌড়াচ্ছি।
কেন যেন সেদিন রিক্সাওয়ালা টাকা নেই নি, মানবতা যদি রিক্সাওয়ালার থাকতে পারে তবে রাত-কুকুর জানোয়ারদের নেই কেন?
--------
মধ্যরাতে জাহানারর ফোন পেয়ে দুনিয়াবি কিছু খবর পেয়েছিলাম। ভোরের আজানের আগেই দেখি জাহানারা এসে হাজির। চোখ গুলো লাল হয়ে আছে। বেশ ভয়ার্ত লাগছে, আমাকে জড়িয়ে ধরে ফুপিয়ে কেঁদে উঠল।
ওকে কিভাবে শান্তনা দিব ভাষা জানা নেই।
ওটি থেকে ডাক্তার বের হওয়ার পর জিজ্ঞাস করেছিলাম এখন কি অবস্থা।
আশংকা মুক্ত না, প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। অনেক শক্ত জিনিস প্রচন্ড চাপে প্রবেশের কারনে অনেকখানি অংশ ফেটে গেছে।
হাসপাতালে ভর্তির সময় এডমিড কার্ডে আমরাই ওর বাবা-মা বলে পরিচয় দিয়েছিলাম। হাসপাতাল কতৃপক্ষ কে কিছু টাকা ঘুস দিয়েছিলাম যেন ব্যাপার টা পুলিশ ইনকোয়ারিতে না যায়। ওরা আমার কথা রেখেছিলো।
যেদিন ওর জ্ঞান ফিরলো, ঠিক তখন থেকেই ও ছেলে মানুষ দেখলে ভয় পেত, চিৎকার করতো। প্রায় ৬ সপ্তাহ পর বাসায় নিয়ে যাওয়ার সময় অনেক ঝামেলা হয়েছিল, ভাগ্যিস জাহানার ছিল পাশে। সারাটা রাস্তা জাহানারাকে জড়িয়ে ধরে ছিল,চোখে মুখে তখনো ভয়ার্ত ভাব।
----------
৭ মাস পর আবার হাসপাতালে আসতে হয়েছে। দেশ ছেড়ে বিদেশের হাসপাতালে। সেঁযুথি আমার হাত ধরে রেখেছে। অক্সিজেন মাক্স মুখে থাকায় কিছু বলতে পাচ্ছে না।
ওর শুকনো মুখটা দেখে প্রচন্ড কান্না পাচ্ছে, ইচ্ছা হচ্ছে চিৎকার করে কাঁদি। বুকের মাঝে প্রচন্ড ভাবে আঘাত করি।
ডাক্তারের রিপোর্ট বলছে সেঁযুথির দুটি কিডনি ড্যামেজ। ভ্যান কাজ করছে না, শুকিয়ে গেছে। ফলে রক্ত চলাচল বন্ধ।
অপারেশন এ চান্স ২০%। সেই ২০% এর ভরসায় আছি।
সেঁযুথির বেডের পাশে জাহানারা আছরের নামাজ পড়ছে। আজ যেন কত রোজা চলছে মনে নেই। ওনেকটা টেনশনে ভুলে গেছি।
জাহানারা যখন নামাজ পড়ে আমি সেদিক টায় সব সময় চেয়ে থাকি। গত ৭ বছর ধরে তাই করে আসছি।
নামাজ দেখতে ভাল লাগে তা নয়, আমি একটা পরিবর্তন দেখি। একটা উচ্ছৃঙ্খল মেয়ের বদলে যাওয়া দেখি। বিয়ের আগে আমরা যখন রিলেশন করতাম তখন অনেকবার বলতাম ""প্লিজ একটু মার্জিত ভাবে চলো, শালীনতা বজায় রেখো ""
এমনি কি বিয়ের পরেও ৪/৫ বছর অনেক চেষ্টা করেছি। কাজ হয়নি। প্রচন্ড সাজুগুজু, ওয়েষ্টার্ন ফ্যাশন ওর নিত্যদিনের সঙ্গী। এ নিয়ে ওর উপর আম্মার অনেক ক্ষোব ছিল।
কিন্তু একদিন সেই মেয়ে বদলে যেতে লাগলো। ফ্যাশন ছেড়ে শাড়ি পড়তে শুরু করলো, হঠাৎ একদিন বোরখা। প্রায় আমাকে ফজরের নামাজে ডেকে দিত, অস্বাভাবিক লাগে নি আমার কাছে, সেদিন আমি নিজেই হতবাক হয়েছিলাম।
জাহানারা কখনো মা হতে পারবে না। হুহ নিয়তি।বুকের ভিতরে শেঁল এসে বিধেছিল।
জাহানারা সেদিন আম্মাকে জড়িয়ে ধরে জোরে জোরে কেঁদেছিল।
ইফতারের সময় হয়ে যাচ্ছিলো। আমি বাহির থেকে কিছু ফ্রুট আর খেজুর নিয়ে এসেছিলাম। জাহানার বললো,
"" ইফতারের আগে দোয়া কবুল হয়, আমার সেঁযুথির জন্য একটু দোয়া করো প্লিজ""।
কথা বলতেই ওর চোখ ছলছল হয়ে গেল।
ইফতারের আগে জাহানারা হাত তুলে মুনাজাত করলো। আমি একটু পরেই হাত তুললাম। চোখ বন্ধ করে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে সাহায্য চাচ্ছি।
জানাহারা কান্না করছে আস্তে আস্তে । আমি শব্দ পাচ্ছিলাম। কান্না করুক, আল্লাহ যদি ওর কান্না কবুল করে, সন্তানহীন এক মায়ের সন্তান যেন ভাল হয়ে উঠে।
হঠাৎ আমি ভয় পেয়ে চমকে উঠে, জাহানারা চিৎকার করে কান্না করছে, চিৎকার করে আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করছে।
ডাক্তার নার্স সব দৌড়ে এসেছে। কি ব্যাপার??
আমি এসবের তোয়াক্কা করি নি, আমি চাচ্ছি জাহানার আজ কাঁদুক, আল্লাহ ওর কান্না দেখুক। একটা মিরাকেন হোক, হোক সেটা বাংলা সিনেমার মত।
শুধু একটা মিরাকেল, জাহানারার মাথায় হাত রেখে মনে মনে চাচ্ছিলাম একটা মিরাকেল...
-------
এক বছর পর।
আমি পেপার পড়ছি। সেঁযুথি আমার পাশে বসা, জাহানার ওর মাথায় তেল দিয়ে দিচ্ছে।
সেদিনের জাহানারার কান্নার ১৩ দিনের মাথায় মানে ঈদের দিন হঠাৎ ডাক্তার বললো,
mr avan,
Patients some vein works nd kidney also ... May be it will be good if the operation will done...
আমি সেঁযুথির হাত টা ধরলাম, ও আমার দিক্র চেয়ে আছে। আমি বুঝতে পারছি এ আমার সন্তান...
হঠাৎ কেন যেন আমার হাত কেঁপে উঠছে!
১৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পুতুল নাচের মাঝের গল্প : ওয়াকার বনাম ইউনূস !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২২ শে মে, ২০২৫ রাত ৯:০৯


বাংলাদেশের রাজনীতির বর্তমান অবস্থা দেখে একজন সাধারণ নাগরিক কি ভাবছেন? তাদের ভাবনার আদৌতে গুরুত্ব আছে কোনো ? দেশে ইন্টেরিম সরকার ক্ষমতায় থেকে টেনেটুনে চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। দেশে নির্বাচন... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন কত খবর আসে যে কাগজের পাতা ভরে...

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২২ শে মে, ২০২৫ রাত ৯:৪৪


পঞ্চগড় সদর উপজেলার পানিমাছপুকুরি এলাকায় তাওহীদ মডেল মাদরাসার এক শিক্ষার্থী (সুমনা)’র রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। পরিবারের দাবি, এটি স্বাভাবিক মৃত্যু নয়, বরং পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।

নিহতের বড় বোন আমেনা খাতুন জানান, কিছুদিন আগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খুউব ইচ্ছে করে

লিখেছেন মাসুদ রানা শাহীন, ২৩ শে মে, ২০২৫ সকাল ৭:০১


হ্নদয়ের অমিত প্রাচুর্য পেশিতে ধারন করে আমার খুউব দৌড়াতে ইচ্ছে করে
খুনের এই জনপদ ছেড়ে শান্তি সম্মান স্বস্তির
ওয়ান ওয়ে টিকিট কাটতে ইচ্ছে করে।

হ্নদয়ের অনিরুদ্ধ তেজ ঠোঁটে মেখে আমার খুউব
গলা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ওরা সাতজন - বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথে প্রধান অন্তরায় !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৩ শে মে, ২০২৫ দুপুর ১:২৬


সংকট ঘনীভূত; ড. ইউনূস কে ঘিরে একটি চক্র সক্রিয়-শিরোনামে মানবজমিন পত্রিকা একটা এক্সক্লুসিভ রিপোর্ট করেছে। ড.ইউনূস কে ব্যবহার করে ইন্টেরিম সরকারের ভিতরে চারজন ও বাইরে তিনজন এক... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপি - জুলাই বিপ্লবের বিশ্বাসঘাতক

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ২৩ শে মে, ২০২৫ বিকাল ৩:০১



ডক্টর ইউনুস এই দেশের ক্ষমতায় আর থাকতে চাচ্ছেন না। তবে এর দায় ভারতের নয়, পলাতক স্বৈরাচারী আওয়ামিলীগেরও নয়। এই দায় সম্পুর্নভাবে এই দেশের বৃহত্তম রাজনৈ্তিক দল বিএনপির। অথচ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×