নিয়মিত ব্লগে আসা হয় না তবে যখনই আসি না কেন নিশ্চিত ভাবেই আমাদের তথাকথিত চালাক কাকপাখি২ ভাইজানের যেই কারনে নাস্তিকরা বেওকুব (Reason Why Atheists are Stupid) পোস্টের রি-পোস্ট চোখে পরার সম্ভাবনা খুবই প্রবল থাকে। পোস্টের বিষয়বস্তু নাস্তিকেরা উনার মত ইশ্বর বিশ্বাসী নন এবং তারা যে সকল কারণ দেখায় সেই সকল কারণ উনার মনঃপুত না সেই কারণে ওনার ভাষায় সকল নাস্তিকেরা হইল বেকুব। যা আবার উনি ইংরেজীতেও প্রকাশ করতে ভুলেন না যাতে করিয়া কাহারও বুঝিতে কোন প্রকার অসুবিধা না হয়। ওনার মত এত নিষ্ঠার সাথে কোন পোস্টের বারংবার পুনঃপ্রকাশ আমাদের অন্য প্রিয় তালগাছবাদী ব্রেদ্রেরণরাও করে বলিয়া আমার মনে হয় না। যাই হোক, ঠিক কতবার উনি পোস্টটা পুনঃপ্রকাশ করিয়াছেন এবং উনাকে গিনিজ বুকে ঠাঁই দেয়া যায় কিনা সেইটা জানার একটা অদম্য কৌতুহল থেকে উনার ব্লগে গিয়ে নিজেকে দ্বিতীয়বারের মত বেকুব হিসাবে প্রমাণ করিতে সমর্থ হইলাম। কারণ শুধুমাত্র শেষবার পুনঃপ্রকাশের লিঙ্কটা আছে। বাকিগুলা উনি মুছিয়া দিয়াছেন। দিবেনই তো, উনি আর আমার মত বেকুব নহেন। তবে উনার ব্লগে গিয়ে আমার আরও একটা লাভ হইয়াছে আর সেইটা হইল আমি একই সাথে দ্বিতীয় এবং তৃতীয়বারের মত নিজেকে বেকুব প্রমাণ করিতে সক্ষম হইয়াছি। কথায় আছে দান দান তিন দান। সেইটা কিভাবে সম্ভব হইল সেই কাহিনীই আমি এক্ষন আপনাদের কাছে বয়ান করিব। আশা করি আপনাদের ধৈর্য্য চ্যুতি ঘটিবে না।
উনার ব্লগে গিয়ে আমি আরেকটি মজার পোস্টের সন্ধান পেলাম। সেটি হলোঃ আদ জাতির কিছু বিশাল আকৃতির কংকালের ছবি।
[ছবিটা কাকপাখি২ এর ব্লগ থেকে নেয়া]
কিছু বিশালাকৃতির মানুষের কংকালের (অবশ্যই ভূয়া) ছবি সম্বলিত পোস্টের লিঙ্ক এবং একটি ক্রিয়েশনিস্ট মিউজিয়ামের ওয়েব সাইটের লিঙ্ক দিয়ে তিনি প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন এগুলো আদ জাতির মানুষের কংকাল। এখানে বলা রাখা প্রয়োজন আদ জাতির সম্পর্কে শুধু বাইবেল এবং কোরানেই উল্লেখ করা আছে। মানব ইতিহাসের আর কোন ঐতিহাসিক বই কিংবা ডকুমেন্টে আদ জাতি সম্পর্কে বলা আছে বলে আমার জানা নেই। তবে এইবার আমার সাথে প্রচুর সংখ্যক আস্তিককে পাইলাম যাহারা ছবিগুলাকে নাস্তিকদের মত আদ জাতির মানুষের কংকাল হিসাবে বিশ্বাস করিতে অপারগ। তাই এই সিদ্ধান্তে উপনিত হইলাম যে যেহেতু কাকপাখি২ বিশ্বাস করেন আর যেহেতু তিনি অলরেডি চালাক হিসাবে প্রমানিত হয়েছেন তাই যাহারা ঐ হোক্সে বিশ্বাস করেনা, আস্তিক-নাস্তিক নির্বিশষে, তাহার সবাই আসলে বেকুব। তবে কি কারণে বেকুব সেইটার কারণ নিচে বিশ্লেষন করার চেষ্টা করা যাক।
বিজ্ঞান এবং জ্যামিতির স্কেল ল (Scale Law) দ্বারা শুধু এই পৃথিবী কেন প্রয়োজন হলে মহাবিশ্বের অন্য যে কোন গ্রহ/উপগ্রহেরও প্রাণী কিংবা কীট-পতঙ্গের আনুমানিক আকার-আয়তন কত বড় হতে পারে সেটা নির্নয় করা সম্ভব। তবে এইখানে আজ শুধু পৃথিবীতে মানুষের মাঝেই আমার আলোচনা সীমাবদ্ধ রাখার চেষ্টা করব। কাকপাখি২র দেয়া তথ্য অনুযায়ী মানুষগুলো ১৪-১৬ ফুট লম্বা ছিলো। আমরা আমাদের আলোচনার সুবিধার্থে মাঝামাঝি ১৫ ফুট (দেড় তলার সমান লম্বা) ধরে নিলাম। আমরা জানি একজন সুস্হ সবল সুঠাম দেহের ৫ ফুট উচ্চতার পুরুষের ওজন মোটামুটি ভাবে ১১৫ পাউন্ডের মত হয়। এখন কোন মানুষের উচ্চতা যদি ১৫ ফুট হয় তবে আমরা জানি স্কেল ল অনুযায়ী তার দেহের ওজন বেড়ে যাবে দেহের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধির হারের ঘনফল হিসাবে। মানে মাত্র তিন গুন বেশী লম্বা হওয়ার কারণে ঐ মানুষটির ওজন হবে ৩ * ৩ * ৩ = ২৭ গুন বেশি। অর্থাৎ ১৫ ফুট মানুষটির ওজন হবে (১১৫ * ২৭) = ৩১০৫ পাউন্ড। যা কিনা ক্যালেন্ডারে দেখা স্বাস্হ্যবান দুই কিংবা তিনটা অস্ট্রেলিয়ান গরুর ওজনের সমান। তাও আবার তাদের দেহের ওয়েট সাপোর্টের জন্য চারটা করে পা আছে এবং বুক টান টান করে দাড়াতে হয় না। আবার ১৫ ফুট লম্বা মানুষটির দেহের পেশী কিংবা হাঁড় যে শক্তি প্রয়োগ করতে পারবে তা বৃদ্ধি পাবে হাঁড় এবং পেশীর পুরুত্বের আনুপাতিক হারে। হাঁড় কিংবা পেশীর লম্বার সাথে শক্তি প্রয়োগ বৃদ্ধির কোন সম্পর্ক নেই। ১৫ ফুট মানুষটির দেহের শক্তি প্রয়োগ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে তার হাঁড় এবং পেশীর ক্রস সেকশনাল এরিয়ার (cross sectional area) বর্গ হিসাবে। অর্থাৎ তার শক্তি হবে ৫ ফুট মানুষটির তুলনায় মাত্র ৩ * ৩ = ৯ গুন বেশি। মানে হল তিন গুন লম্বা হওয়ার কারণে তার ওজন বৃদ্ধি পাবে ২৭ গুন আর দেহের শক্তি বৃদ্ধি পাবে মাত্র ৯ গুন। অর্থাৎ তুলনামূলক বিচারে (দেহ এবং শক্তির) ৫ ফুট মানুষটির তুলানায় ১৫ ফুট মানুষটি হবে অনেক অনেক বেশী দুর্বল (এক ত্বয়তীয়াংশ) এবং তার বডি স্ট্টাকচার তাকে খুব একটা সাপোর্ট দিতে পারবে না। ফলে হাটাহাটি কিংবা দৌড়াদৌড়ি করতে গেলেই তার হাঁড়গোড় ভেঙ্গে পরে থাকবার ব্যাপারে মোটামুটি নিশ্চিত থাকা যেতে পারে। শিশু থেকে পূর্ন বয়স্ক জীবনে পৌছানো তো অনেক পরের কথা। এ কারনেই লম্বা খেলোয়ারদের মাঝে আঘাতের হার অনেক বেশী থাকে। আর জিমন্যাস্ট কিংবা আইস স্কেটারদের আকৃতি অনেক ছোট হয়ে থাকে কারণ আনুপাতিক হারে তাদের পার ইউনিট বডি ম্যাসের তুলনায় তাদের দেহের শক্তি প্রয়োগের ক্ষমতা অনেক বেশী হয়ে থাকে।
প্রাণীদেহের অভ্যন্তারে উৎপাদিত তাপ হারানোর হারও নির্ভের করে প্রাণীটির দেহের সারফেস এরিয়ার উপর। ফলে মানুষটি দৈর্ঘ্যে যদি তিনগুন লম্বা হয় তবে তার তাপ হারানোর হার হবে ৩ * ৩ = ৯ গুন। কিন্তু দেহের অভ্যন্তরে তাপের উৎপাদনের পরিমাণ এর আয়তনের সাথে ওজনের মত ঘনফল হিসাবে বৃদ্ধি পাবে। অর্থাৎ দেহের ভিতরের তাপ বৃদ্ধি পাবে ২৭ গুন। আমরা জানি মানব দেহের তপমাত্রা সাধারণত ৯৮ ডিগ্রী ফারেনহাইট থাকে। এখন হিসাবটা করে ফেলেন.. ২৭ গুন হারে তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং ৯ গুন হারে তাপ মাত্রা হারানো। ইয়াইকস ...... এযে জ্বলন্ত চুলা। এটাকে ব্যালান্স করতে হলে ঐ মানুষটির বডি সারফেস এরিয়া বাড়াতে হবে। আর সেটা সম্ভব হবে যদি লম্বা ঠিক রেখে তার প্রস্হ ৩ গুন না বাড়িয়ে ৫-৬ গুন মত বাড়ানো যায়। যদি ধরে নেই গড়ে প্রতিটা মানুষ প্রস্হে ২ ফুট হয়ে থাকে তবে ১৫ ফুট লম্বা মানুষটিকে প্রস্হে হতে হবে ১০-১২ ফুট। এইবার কল্পনা করেন একটা ১৫ ফুট লম্বা আর ১০-১২ ফুট মোটা মানুষ। কি কল্পনায় আসে? এতো দেখি ১ বেডরুমের একটা দেড়তলা সমান বাড়ী। ছবির মানুষগুলাকে দেখে আপনার সেরকম কিছু মনে হচ্ছে।
উপরের তাপ আর বডি সারফেস এরিয়ার সম্পর্কের কারনে আকারে অনেক বড় প্রাণীরা তাদের দেহের তাপ ছোট প্রাণীদের তুলনায় অনেক দেরী করে হারায়। এজন্যই ছোট আকৃতির মানুষেরা অনেক তাড়তাড়ি ঠান্ডা হয়ে পরে। এই ঘটনা ব্যাখ্যা করে কেন সংবাদ পত্র অনেক তাড়াতাড়ি পোড়ে। গাছের গুড়ি পুড়তে অনেক বেশি সময় লাগে কারণ তাদের অপেক্ষাকৃত কম সারফেস এরিয়ার জন্য। এটা আরও ব্যাখ্যা করে কেন তিমি মাছের আকার গোলাকার হয়। কারণ একটা গোলকের সারফেস এরিয়া তার প্রতি একক ভরের তুলনায় সবচে কম হয়ে থাকে। আর এখানে বলে রাখা ভাল তিমি মাছ অনেক বড় হয়ে থাকে সামুদ্রিক পানির প্লবনশীলতার (buoyancy) বা ভাসিয়ে রাখার ক্ষমতার কারণে। আর তাই যখন কোন তিমি মাছ সমুদ্রের বেলাভূমিতে আটকে যায় তখন তিমিটা তার নিজের দেহের অত্যধিক ওজনের নিচে চাপা পরেই মারা যায়।
আরেকটা কথা বলে রাখা দরকার। কোষ দ্বারা গঠিত যেকোন প্রাণিরই অক্সিজেন গ্রহণের দরকার হয়। অক্সিজেন কনজাম্পশন আর সারফেস এরিয়ার মধ্যেও সম্পর্ক আছে। মানুষের ক্ষেত্রে ফুসফুসের সারফেস এরিয়ার উপর ডিপেন্ড করে মানুষ কতটুকু অক্সিজেন কনজিউম করবে। মানুষের দৈর্ঘ্য বাড়ার সাথে সাথে সেটারও প্রয়োজনীয়তাও অনেক বেড়ে যায়। তবে সেই ডিটেইল এখানে বলার খুব একটা প্রয়োজন নেই বোধহয়।
বিজ্ঞানী গ্যালিলিও প্রথম প্রাণীদের আকার-আকৃতির উপর স্কেল ল প্রয়োগ করে এর সত্যতা যাচাই করেছিলেন। আর জীব বিজ্ঞানী জেবিএস হ্যালডেন দেখিয়েছেন কিভাবে সারফেস এরিয়া এবং আয়তনের মধ্যকার সম্পর্ক প্রাণিদের বিবর্তিত হতে সাহায্য করেছে।যাইহোক একথা নির্দ্বিধায় বলে দেয়া যায় কাকপাখি২র ছবিগুলা বানোয়াট। ইন্টারনেট ঘাটলে সে সম্পর্কে অনেক তথ্যও পাওয়া যাবে। তবে কাকপাখি২ যেহেতু বলেছেন এগুলো সত্যি তাই আমি স্কেল ল অনুযায়ী কাকাপাখির২র হিসাব মতে বেকুব হিসাবে থাকারই সিদ্ধান্ত নিলাম। তার মত চালাক হওয়ার কোন প্রয়োজনীয়তা আমি অনুভব করছি না। আপনাদের বুঝ আপনারা বুঝবেন। কাকপাখি২র মত চালাক হবেন না বেকুব হবেন সেটা আপনাদের ব্যাপার।
এর পরও কারও মনে যদি ৯০ ফুট কিংকং কিংবা আদম বা নুহের (আমি শিওর না) কথা মনে পরে তবে একটা কথা জেনে রাখবেন তারা এক স্টেপ নেয়ার সাথে সাথেই হাড়গোড় ভেঙ্গে পরে থাকবে। চলাফেরা তো পরের কথা।
--------------------------------------------------------------------
নিচে স্কেল ল প্রয়োগ করে উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে ওজন এবং দেহের পেশি শক্তি বৃদ্ধির একটা তুলনামূলক টেবল দিলাম। (স্ট্যান্ডার্ড: ৫ ফুট উচ্চতা, ১১৫ পাউন্ড ওজন, এবং ২০০ পাউন্ড শক্তি প্রয়োগ ক্ষমতা) ।
উচ্চতা ওজন শক্তি
------- ------------- ----------
৫ ফুট ১১৫ পাউন্ড ২০০ পাউন্ড
৬ ফুট ১৯৫ পাউন্ড ২৮৮ পাউন্ড
৭ ফুট ২৪৭ পাউন্ড ৩৯২ পাউন্ড
৭ ফুট ৬ ইঞ্চি ৩৮৮ পাউন্ড ৪৫০ পাউন্ড
৮ ফুট ৪৭২ পাউন্ড ৫১২ পাউন্ড
১০ ফুট ৯২০ পাউন্ড ১৬০০ পাউন্ড
১৫ ফুট ৩১০৫ পাউন্ড ১৮০০ পাউন্ড
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১০ রাত ১:০৪