somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লোকটি বিক্রি করত আলো

১১ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ১২:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১.
লোকটি বিক্রি করত আলো
মানিব্যাগ, মোবাইলের চার্জার
কোন কোন দিন হরেক রকম চকলেট আর যষ্ঠিমধু।
যদিও আলো বিক্রি করাই তার প্রিয় ছিল।
ঘর অন্ধকার হলে কি আর
জীবন আলোকিত হয় ?
উদ্ভ্রান্ত আঠারো-এ সে সুকান্ত পড়েছিল
আর কিছুটা মায়াকোভস্কি।
সেদিন স্বপ্ন দেখত-
একটি আলোকিত পৃথিবী, আলোকিত রাষ্টের
আজ লোকটা আলো বিক্রি করে রাস্তায়, গাড়িতে
তার নিজের ঘরেও আলো আছে
না থাকলেই বরং ভালো ছিল
ক্ষত বিক্ষত কাথা, ইতিহাসের মত পুরনো চাদর অন্তত দ্যাখা যেত না
২.
মা বলত রাজনীতি বড়লোকের বিষয়
কিন্তু সে ভাবত ওরা তো অর্থনৈতিক প্রানী
সংবিধান ধর্ষন করে দু'টি চকচকে গাড়ি
আর একটি সঙ্গম যোগ্য নারী পর্যন্ত তাদের রাজনৈতিক উপন্যাসের বিস্তার
দু'বেলা ভাতের জন্যে রাষ্টের দিকে তাকিয়ে থাকার
যে বিষাক্ত কবিতা এসবের তারা কি বোঝে ?
আজ সে রাষ্ট্রের একান্ত অনুগত নাগরিক
অক্ষম সংবিধান নিয়ে সে একটি প্রশ্ন পর্যন্ত তোলে না
যদিও রাষ্ট্র তাকে দু'বেলা ভাতের বিনিময়ে
তিন বেলা অপমান ব্যাতিত কিছুই দিতে পারেনি।
৩.
প্রতিদিন সকালে শহরের আলোগুলো
নিভে যাবার আগেই সে উঠে পড়ে।
ক্ষুধার্ত পায়ে এগিয়ে যায় শাহবাগের দিকে
সেখান থেকে কখনো গুলিস্থান কখনোবা মতিঝিল।
মানুষের ঘাম জড়ানো বিষাক্ত বাতাস উপেক্ষা করে
সে বিনয়ী কন্ঠে গুনগান গেয়ে যায় পন্যের।
মানুষকে বোঝায় ঘরের জন্যে আলো কতটা জরুরী
এমনকি জীবনের জন্যেও।
তখন তার মনে পড়ে যায়
ছেলেবেলার সেই নদীটির কথা, গ্রামের একমাত্র সেতুটির কথা
সেতু থেকে নদীতে লাফিয়ে পড়ার কথা
সেদিন স্বপ্ন দেখত-
একদিন সে ঠিক ঠিক উড়ে বেড়াবে পাখিদের মত
আজ সে আলো বিক্রি করে গুলিস্থান, মতিঝিলের উন্মুক্ত কারাগারে
যেখানে আকাশ বলতে শুধু কাচে ঘেরা অট্টালিকা।
৪.
বাবা খুব ধার্মিক ছিলেন
তজবির গুটিতে লুকিয়ে থাকত তার সমগ্র শুদ্ধতা
বাবার হাত ধরে জুম্মার পবিত্রতা দেখতে দেখতে
সেও পৈতৃক ধর্মটিকে শ্রদ্ধা করত
মনে করত সকল কিছুর থেকে মহৎ।
পথে হেটে হেটে আজ সে জানে
মানুষের ধর্মের নাম ক্ষুধা
এবং ঈশ্বর বলে কিছু নেই
যদি থেকেও থাকেন তাকে পাচ বেলা জপ করার কিছু নেই।
কেননা ঈশ্বরের কোন বিনিময় যোগ্যতা নেই
একশ বার ডাকলে কিংবা একহাজার বার ডাকলেও
এক কেজি চাল পাওয়া যায় না।
পাওয়া যায় কি ?
ঈশ্বরের টিকিও সে দ্যাখে না
যখন তার স্ত্রী একটি নতুন শড়ির জন্যে
অন্যের কাছে শরীর বেচে দেয়।
রাত্রি বেলা ত্রিশ টাকার আলোতে সে দ্যাখে
দারিদ্রতায় ক্রমশ অসুস্থ হতে থাকা স্ত্রীর যোনী।
সে আলো বিক্রি করত রাস্তায়, গাড়িতে
তার ঘরেও আলো আছে
না থাকলেই বরং ভালো ছিলো
একমাত্র প্রিয় শরীরে অন্যের কামড়ে দেবার
দাগ নিশ্চই দেখতে হত না ।
৫.
একদিন সন্ধ্যায় সে ঘরে ফিরে এলো
শহরের অনেক ঘরে আলো বিক্রি করে।
আজ সে নিজের অন্ধকার দেয়াল গুলো
একটি একটি করে আলোকিত করে চলে গেল অন্ধকারের দিকে
যেখানে রাজনীতি বলে কিছু নেই
ধর্ম বলে কিছু নেই
এমন কি নেই নিজের স্ত্রীর গায়ে অন্যের কামড়ের দাগ
অন্ধকারের চেয়ে অধিক সুখ কি আর আলো দিতে পারে ?
আলো বিক্রি করা লোকটা তাই অন্ধকারেই চলে গ্যালো।
পেছনে রেখে গেল অনেক অনেক আলোকিত ঘর
যার কোন একটিতে তার স্ত্রী একটি নতুন শাড়ি খুজছে।

সর্বশেষ এডিট : ১১ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ১২:৪৪
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পার্বত্য চট্টগ্রাম- মিয়ানমার-মিজোরাম ও মনিপুর রাজ্য মিলে খ্রিস্টান রাষ্ট্র গঠনের চক্রান্ত চলছে?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:০১


মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী লালদুহোমা সেপ্টেম্বর মাসে আমেরিকা ভ্রমণ করেছেন । সেখানে তিনি ইন্ডিয়ানা তে বক্তব্য প্রদান কালে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী chin-kuki-zo দের জন্য আলাদা রাষ্ট্র গঠনে আমেরিকার সাহায্য চেয়েছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাসান মাহমুদ গর্ত থেকে বের হয়েছে

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১২


যুক্তরাষ্ট্রের একটি বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল হাসান মাহমুদের সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে। আমি ভাবতেও পারি নাই উনি এতো তারাতারি গর্ত থেকে বের হয়ে আসবে। এই লোকের কথা শুনলে আমার গায়ের লোম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দারিদ্রতা দূরীকরণে যাকাতের তাৎপর্য কতটুকু?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১৮



দরিদ্র দূরীকরণে যাকাতের কোনো ভূমিকা নেই।
যাকাত দিয়ে দারিদ্রতা দূর করা যায় না। যাকাত বহু বছর আগের সিস্টেম। এই সিস্টেম আজকের আধুনিক যুগে কাজ করবে না। বিশ্ব অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্তান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্তান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের বিয়ের খাওয়া

লিখেছেন প্রামানিক, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৮


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

১৯৬৮ সালের ঘটনা। বর আমার দূর সম্পর্কের ফুফাতো ভাই। নাম মোঃ মোফাত আলী। তার বিয়েটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। বাবা ছিলেন সেই বিয়ের মাতব্বর।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×