ওস্কারডি লা রেন্তা ছিলেন ৬০ দশকের দূর্দান্ত ফ্যাশান ডিজাইনার। তাঁর হাত ধরে মার্কেটে প্রথম ম্যাক্সি আসে। লম্বা একটুকরো কাপড়ে হাতাকাটা পোশাকগুলো লুফে নেন সেসময়ের এলিট ও ফ্যাশান সচেতন নারীরা। বিশেষত লম্বা চেইনের মত ফিতাওয়ালা বেল্টের সাথে নারীর কাঁধে ঝুলন্ত ব্যাগগুলো এক ধরনের চোখধাঁধানো শালীন আনন্দধারা বইয়ে দিতো। ভিক্টোরিয়ান প্যটার্ণের আটোঁসাটো ও অপচয় প্রবণ ডিজাইনের কাপড়গুলো ম্যানেজ করতে যেখানে হিমশিম খেতে হতো সেখানে ম্যাক্সি এলো রীতিমত টনিক হয়ে। নারীর কম্ফোর্ট ও ফ্যাশানের এক অপূর্ব মিলন। অনেকে বলেন এই পোষাকের ফলে নারী হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছে৷ বিশেষত মধ্যবিত্ত নারীদের জন্য ম্যক্সি এসেছিল বোঝা নেমে যাবার ফর্মূলা হয়ে।
সময়ের সাথে সাথে ম্যাক্সিতে অনেক চেঞ্জ আসে। হাতে গলায় ঘটির মত ডিজাইন করে পাতলা নরম কাপড়ের ম্যক্সি বাহির ছেড়ে জাগা করে নেয় বেডরুমে। সেই ম্যক্সি লুফে নেন গর্ভবতী মহিলারা। গর্ভকালীন সময়ে সুবিধা ও নিরাপত্তা ইস্যু মাথায় রেখে এখন যেসব আধুনিক গর্ভকালীন পোষাক তৈরি হচ্ছে তার মূলনকশা ম্যাক্সি।
ব্যাবহারে আরামদায়ক ফলে দেখা গেলো নারী গর্ভের পরেও ম্যাক্সি ছাড়ছেন না। বরং ম্যাক্সি মডিফাই করে ব্রেষ্টফিডিং ড্রেস বাজারে এলো।
চূড়ান্তভাবে নারীদের আর ম্যাক্সি ছাড়া হয়ে ওঠেনি। বাইরে আধুনিক যান্ত্রিক জীবনের জন্য কিছু ছকে বাঁধা ম্যাক্সি মার্কেটে রইল ঠিক। আল্টিমেটলি ম্যাক্সি হয়ে গেলো ঘরের পোশাক, রাতের পোষাক, আরামের পোষাক।
আউটডোর ম্যাক্সি ও ঘরের ম্যক্সির মাঝে মিল তেমন খুঁজে পাবেন না এখন। বলতে গেলে দুটো আলাদা জর্না'র পোষাক।
দুনিয়ার অনেক জাগাতে ঘরের সেই ম্যক্সিকে নাইটি নামেও ডাকা হয়। (নাইটি মানেই ম্যাক্সি নয়) নাইটির ডার্ভার্সিটি নিয়ে আমার বলা লাগবেনা। আপনি অনেক বেশি অভিজ্ঞ আমি নিশ্চিত।
এখন লাখটাকা দামের ম্যাক্সি বাজারে পাবেন। ঢাকাতেও পাবেন। সুইট ড্রিমস নামে যে শপ আছে ওখানে পুরুষ হিসাবে আপনার যাত্রা রেষ্ট্রিক্টেড হতে পারে। মূলত স্পেসাল মোমেন্টেসে নাইটি ওরফে স্লিপিং ড্রেস ওরফে ম্যাক্সিগুলো পাবলিকলি পুরুষের সাথে নেড়েচেড়ে দেখা কিছুটা বিব্রতকর বটে। বিব্রত শুধু ঢাকাতে এমন নয়। বোম্বে ওরফে পাতায়া ওরফে বালি ওরফে লাসভেগাস ওরফে আটলান্টা ওরফে কাবুকিকো, ওরফে ড্যা ওয়েলেন বা Soi ইলেভেন সুকুম্বিত গেলেও দেখবেন ম্যাক্সি কিনতে নারীরা কিছুটা প্রাইভেসি চান। তাঁদের সেই প্রাইভেসিটুকু নিশ্চিত করা প্রতিটি মানুষের কর্তব্য। সেসব ম্যক্সি পিন্দে কোন কান্ডজ্ঞান সম্পন্ন মানুষকে দেখবেন না বাজারে, শপিংমলে, ৭ তারার প্রেসিডেনসিয়াল ডাইনিং এ খাস গপ্পো জুড়ে দিয়েছেন। (আমরা যে বউ বোন মা খালাদের রাস্তায় দেখি এটা পুরোপুরি অজ্ঞতা বসত)
তবে চরম উন্নত, চরম গণতান্ত্রিক, চরমে চরম, গরম গরম এ-ই চা গ্রম সমাজ হলে ভিন্ন কথা। সেখানে প্রয়োজনে রাতের কাজ দিনে করা যায়, দিনের কাজ রাতে। সময়ের অসুবিধা হলে দিনের ভোট রাতে দেয়া যায়। মৃত্যুর পর মামলার আসামী হওয়া যায়। তেমন রোলমডেল মানবিক দেশ হলে ম্যাক্সি পিন্দে ক্ষমতার দাঁড়িপাল্লার বাটখারাও ইঞ্জিনিয়ারিং করা যায়। 'কোথাও আমার হারিয়ে যাবার নেই মানা'।
দেশ এগিয়ে যাচ্ছে ভাবতে ভালোই লাগে। আর কি চান আপনারা!
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে আগস্ট, ২০২৩ রাত ১:০২