সেই শৈশব থেকে শিখছি 'সদা সত্য বলিবে। সৎ পথে চলিবে'। এই যে আদর্শ'র ঝাকানাকা প্যাকেটে আঁটসাঁট প্যাকেজ বাণী "সদা সত্য বলিব"- এই সত্য বলার দাবী নিজেই এক ডাহা মিথ্যা।
সত্য বলে বাঁচতে পারবেন আপনি? শৈশব থেকে মৃত্যু অব্দি মিথ্যা ছাড়া উপায় নেই পৃথিবীতে। অন্যকে নিষ্কলুষ খুশি করতে মিথ্যা লাগে, মিথ্যা থেকে বাঁচতে মিথ্যা লাগে, ব্যক্তিত্ব'র নামে সত্য গোপনে মিথ্যা লাগে। মিথ্যা দিয়ে যে জীবনের শুরু সে জীবন বিনিময়ে মিথ্যাই পাবে। মিথ্যা হচ্ছে ধোঁকার অন্য এক রূপ। ইনজাষ্টিসের পয়লা নাম্বার। ইবলিসের ধোঁকা থেকে যে মর্তে মানব পদচ্ছাপের সূত্রপাত; সেই ধোঁকা থেকে কিভাবে বের হবে মানুষ!
মিথ্যা ধোঁকা আর ইন-জাষ্টিসের বাইরে কথিত জীবনের আহ্বান; সেই আহ্বান নিজেই তো মস্তবড় এক ধোকা। সেসব কথিত আহ্বান আপনারে জ্ঞান দেবে কিন্তু বেঁচে থাকার একটা জীবন দেবে না। ঐ সব জ্ঞান গরিমার বাটখারা কাঁধে টেনে আপনি টিকে থাকতে পারবেন না৷
যেদিন আপনি ভ্রুনায়িত হয়েছিলেন সেদিন থেকেই আপনি দৌড় শুরু করেছিলেন, লক্ষে পৌঁছার প্রতিযোগিতা শুরু করেছিলেন। তিরিশ চল্লিশ মিলিয়ন সিবলিং রে উচ্ছেন্নে ফেলে তবেই আপনি মা'য়ের জঠরে নিক্ত হয়েছিলেন। আপনার স্থানে ঐ সব পিছিয়ে পরাদের কেউ নিক্ত হলে আপনার মা তারেই আগলে রাখতো, আপনারে নয়। আপনি সবচে যোগ্য ছিলেন, শক্তিশালী ছিলেন, দ্রুততম হিসাবে আপনি জিতে ছিলেন। কারণ শক্তিশালীরা টিকে থাকবে, দ্রুততমরাই টিকে থাকবে। আপনার সততা টিকে থাকবে না, আপনার নীতি নৈতিকতা মূল্যবোধ টিকে থাকবে না। যে জিতে যায় শুধুমাত্র সেই একমাত্র মানুষ হয়।
ঐ যে লড়াই জিতে মা পেয়েছিলেন, বাবা পেয়ে ছিলেন। এটাই আসল কথা। পুরো প্রক্রিয়া-ই শর্তসাপেক্ষে। আনকন্ডিশনাল কিচ্ছু নেই। নাথিং এলস্। প্রথম মুহূর্ত থেকেই আপনি সিষ্টেমের দাস। সিষ্টেম চক্রে আক্রান্ত জীব। বাইসাইকেলের চেনের মত এই চক্র থেকে আপনি বেড়িয়ে আসতে পারবেন না। চক্র ভেঙে বের হতে যদি চেষ্টা করেন তো সেই সিষ্টেম আপনারে ছুড়ে ফেলে দেবে৷ সিষ্টেমের সমাজ সিষ্টেমহীনতা বরদাস্ত করে না।
আপনি সে অসম প্রতিযোগিতার ফসল সেই অসমতা বারেবারে আপনাকে আঁটকে ধরে। একটা অবিচার, ইঞ্জাষ্টিস রেফারেন্স হয়ে আপনাকে বারবার ইনজাষ্টিসের মুখে ফেলে দেবে। আপনি যতবার চক্র ছেড়ে বের হতে চাইবেন ততবার আপনার অতীত-রে স্মরণ করিয়ে দেবে চক্র। একটা অপরাধ-রে ঢাকতে আরেকটা অপরাধের জন্ম হবে। একটা অবিচার রে জাষ্টিফাই করতে হাজারো অবিচার মাথা তুলে দাঁড়াবে।
প্রকৃত পৃথিবীতে জাষ্টিস একটি ডাহা মিথ্যা কনসেপ্ট। আপনি জীবনে একবার যখন ইনজাষ্টিসের কবলে পড়বেন, You are the part of a systematic injustice. প্রতিটি নয়া ইনজাষ্টিসে আগের অবিচার রেফারেন্স হয়ে ফিরবে। নয়া অন্যায়-রে জাষ্টিফাই করবে।
সে ন্যায়সঙ্গত সমাজের স্বপ্ন দেখছেন, যে চক্র ভাঙার স্বপ্ন দেখছেন, যে সততা মানবিকতার স্বপ্ন দেখছেন - তার পুরোটাই এ্যবস্ট্রাক্ট। পুরোটাই যেন শ্রেডেঞ্জারের বিড়াল; এই আছে, এই নেই। আছে যেমন সত্য, নেইও তেমন সত্য। প্যরালাল ওয়ার্ল্ডে হয়তো সব পজেটিভিটি, সব ন্যায্যতার বসবাস। আফসোস আপনি সেই পজেটিভ প্যরালাল ওয়ার্ল্ডের বাসিন্দা নন। আপনার জন্ম প্রতিযোগিতার সময় আপনার শুক্রাণু দাতা, আপনার ডিম্বাণু দাত্রী আপনারে ঐ পজেটিভ প্যরালাল ওয়ার্ল্ডের গল্প বলেছিল। সে লোভে আপনি দ্রুত ছুটেছিলেন। নিষিক্ত হয়েছিলেন। আপনি অর্গাজমে সুখের মধ্যমনি হয়ে ওটুকুরে দুনিয়া ভেবেছিলেন। আপনি লোভে পরে ভুল করেছিলেন। এখন নেগেটিভ দুনিয়ায় এসে পস্তাচ্ছেন।
সেই একই প্রতারণার কুরুক্ষেত্র তৈরি করে চলেছেন। আপনার দেখানো ভ্রান্ত দুনিয়াদারীর লোভে আরো একটা ভ্রুন অর্গাজমের সুখ হবে। তারপর চলে আসবে সেই একই পচা নষ্ট সিষ্টেমে। সময় গড়িয়ে যাবে, তবুও ষ্টেশনের প্লাটফর্মে উপচেপড়া ভীড় কমবে না। প্যরালাল ওয়াল্ডের সাথে দূরত্ব ঘুচাবে না।
ষ্টেশনের ঘণ্টা বেঁজে উঠবে। কোনদিন আচানক দেখবেন না "চমকিয়া ওঠে মোর ধ্যনের কৈলাশে মহামৌন যোগিন্দ্র শিব"। মুঠো খুলে দেখবেন লেখা "আমি প্রত্যেক লোকের ভাগ্য তার কাঁধেই ঝুলিয়ে রেখেছি"। - তবে কেন মিছেই এই মশাল বাওয়া হে মহা-শক্তিমান? নিয়ে যাও প্রভু, বিদায় দাও আমারে, এ মহাবিশ্ব থেকে অজুত আলোক বর্ষ দূরে, যেখানে সীমাহীন ঘুমে দু'চোখ জড়িয়ে আসে দিনমান।