somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মৃত্যুর রাজনৈতিক গুরুত্ব

১৬ ই জানুয়ারি, ২০২১ রাত ৯:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বেগম জিয়া তো এই মূহুর্তে অনেকটা আউট অফ ফোকাস। আমরা যেন তাঁরে ভুলেও গিয়েছি। তবে মজার বিষয় হচ্ছে একজন মানুষ টিকে থাকেন তার কর্মে। সেই হিসাবে শত বছর পর বাংলাদেশের মাইন ফিল্ডে তাঁর কুষ্ঠি যাচাই সম্ভব হবে। জলের দামে যে দেশে মানব প্রাণের মূল্য ঠিক হয় সেখানে কারো মৃত্যু নিয়ে উৎসাহ আসে না। সে হিসাবে সাংবাদিক মিজানের মৃত্যুতে তাঁর শোকার্ত পরিবারের জন্য সমবেদনা জানানো ছাড়া খুব বলার কিচ্ছু নেই। তবুও মিজানের মৃত্যুতে সকলের বেদনা প্রকাশের বৈপরীত্য'র ধরণ দেখে পুরাতন ইতিহাস মনে পরে যাচ্ছে। বেগম জিয়ার রাজনৈতিক জীবনের কথা মনে পড়ছে।



জিল্লুর রহমানের মৃত্যু ও বেগম জিয়াঃ প্রেসিডেন্ট জিল্লুর রহমানের মৃত্যুতে বেগম জিয়া যে শোক বার্তা দেন তাতে লেখাছিলঃ

▫'বিভিন্ন ক্রান্তিকালে জিল্লুর রহমানের ইতিবাচক ভূমিকা আমাদের জাতীয় ইতিহাসের অংশ হয়ে থাকবে। তিনি ছিলেন মিতবাক, ভদ্র, নম্র একজন ভালাে মানুষ। রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের সম্পর্কেও কোনাে আক্রমণাত্মক বা অশালীন মন্তব্য করতেন না। তার ইন্তেকালে বাংলাদেশ একজন অভিজ্ঞ, মননশীল ও সুবিবেচক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে হারাল। রুচি ও প্রজ্ঞার প্রকট অভাবের এই সময় তার মৃত্যু যে শূন্যতা সৃষ্টি করল, তা সহজে পূরণ হওয়ার নয়।

#মাথাতে আঁটছে কি?

২১ মার্চ ছিল দলীয় কর্মসূচি। তাঁর সম্মানে সেই কর্মসূচি স্থগিত করেন বেগম জিয়া।

২২ মার্চ ছিল বেগম জিয়া'র জয়পুরহাট ও বগুড়াতে পূর্বনির্ধারিত সূচি। সেটা পিছিয়ে ২৩ মার্চ করেন তিনি।

রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে বঙ্গভবনে যান নেত্রী।

নেত্রীর আসার সংবাদ স্বত্তেও সরকারি দায়িত্ব প্রাপ্ত প্রটোকলের কেউ আসেনি তাঁকে রিসিভ করতে। (পরে অবশ্য রাষ্ট্রপতি'র ব্যক্তিগত সচিব আসে)

এরপরেও নেত্রী, দলীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখাতে সিদ্ধান্ত দেন।

রাষ্ট্র ঘোষিত ৩ দিনের শোকে একাত্মতা জানান।

আর সবচে আশ্চর্যজনক ঘটনা হচ্ছে -

▫রীতিমত অবহেলিত হবার স্বত্তেও বেগম জিয়া কোন রকম বিরক্তি প্রকাশ করেন নি। বরং টেবিলে রাখা শোক বই সাক্ষর করার পর তিনি লক্ষ করেন সেখানে থাকা রাষ্ট্রপতি'র ছবিটিতে কোনো কালো ব্যাচ বা কালো বর্ডার দেয়া হয়নি। এই ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অনিয়মটি বেগম জিয়ার চোখ এড়িয়ে যাইনি। তিনি সাথে সাথে স্বভাবসুলভ দৃঢ়তায় রাষ্ট্রপতি'র সামরিক সচিবকে ডেকে একটি কালো ফিতা বা ব্যাচ লাগিয়ে দিতে বলেন। সামরিক সচিব সরি বলে সাথে সাথেই কালো ব্যাচ লাগানোর ব্যবস্থা করেন।



বেগম জিয়ার সেদিনের ভূমিকা সবচে গুরুত্ব দিয়ে বুঝেছিল সম্ভবত আওয়ামী পন্থী সাংবাদিক কলামিষ্ট পীর হাবিবুর রহমান। তিনি লেখেনঃ
রাষ্ট্রপতি মাে. জিল্লুর রহমানের মৃত্যুর পর বেগম জিয়ার মন্তব্য, সম্মান প্রদর্শন ও গৃহীত পদক্ষেপ প্রসঙ্গে কলামিস্ট পীর হাবিবুর রহমান বলেনঃ

“জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে অভিনন্দন। সহিংস-সংঘাতময় হিংসা-হানাহানি, বিভেদের রাজনীতি গােটা দেশবাসীর হৃদয়ে যখন রক্তক্ষরণ ঘটাচ্ছিল ঠিক তখন জাতির অভিভাবক মহামান্য রাষ্ট্রপতি মাে. জিল্লুর রহমানের মৃত্যু সংবাদ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আপনি ও আপনার দল শােক জানাতে বিলম্ব করেন নি। এমনকি বিরােধী দলের নেতা হিসেবে দলের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে বঙ্গভবনে ছুটে গিয়ে শােকার্ত হৃদয়ে বিষণ্ণ মুখে আপনি রাষ্ট্রপ্রধানের কফিনে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন। বঙ্গভবনের প্রধান ফটকে সরকারের কেউ আপনাকে অভ্যর্থনা জানাল কি না, দরবার হলে কেউ আপনাকে সম্মান দেখিয়ে বরণ করতে এল কি না তা আপনি আমলে নেন নি। যারা আপনার আগমনের সংবাদ পেয়েও বঙ্গভবনের প্রধান ফটকে বা দরবার হলে অভ্যর্থনা জানাতে এগিয়ে আসেনি এটা তাদের দৈন্যতা হলেও আপনি গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় যে সম্মান দেখিয়েছেন, যে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন, যেভাবে শােক বইয়ে স্বাক্ষর করেছেন, শোক-সন্তপ্ত পরিবার-পরিজনকে সমবেদনা জানিয়েছেন তাতে আপনিই বড় হয়েছেন। এতে দেশের গণতান্ত্রিক মূল্যবােধ, রাজনৈতিক সংস্কৃতি, সামাজিক শিষ্টাচারই উচ্চতায় উঠেছে। আপনি তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শােক কর্মসূচির সঙ্গে একাত্ম হয়েছেন। দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন, এমনকি আপনার দুই দিনের বগুড়া ও জয়পুরহাট কর্মসূচি সহ দলীয় কর্মসূচি যেভাবে স্থগিত করেছেন তা আমাদেরও সম্মানিত করেছে।

এতে আপনি শুধু এই স্বাধীন বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক মূল্যবােধ সম্পন্ন জনতার হৃদয়ের শ্রদ্ধাই কুড়ান নি, মহামান্য রাষ্ট্রপতির আত্মাও শান্তি পেয়েছে”।




আজকের রাজবন্দী বেগম জিয়া সব সময় এমনই ছিলেন। তিনি গপ্পো দিতেন না, চোখ-কান খোলা রাখতেন ও কাজ করতেন।




সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জানুয়ারি, ২০২১ রাত ৯:০০
৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×