(স্থান কাল পাত্র কাল্পনিক)
আমার নাম কালাচাঁদ। উজবেকিস্তানের অফিসার আমি। কলিগরা বলে কালো রাত্রীর চাঁদ। মাঝারি সাইজের হ্যাডাম ওয়ালা কর্তা আমি। জটিল কুটিল অপারেশনের দায়িত্ব বড় কর্তারা আমার ওপর দিয়ে থাকে পরম নিশ্চিন্ত। শুধু যে গোয়েন্দাগিরি করে আসামী ধরে বিচারের মুখোমুখি করা তা না...বরং আরো বেশি কিছু করতে হয় আমারে।
তবে আমি একজন জ্যেন্টল বটে, পার্ফেক্ট জেন্টল ম্যান। বাহিনীর অনফিন্ড ড্রেন আমি পড়ি-না। অফিসার্সদের অফিসিয়াল কমপ্লিট ফর্মা ড্রেন আমার পছন্দ। এ পর্যন্ত কাউকে গালি দেয়া দূর কি বাত, উচ্চ সবরে শার্ট পর্যন্ত করি নি কোন অপরাধী বা রাজনৈতিক কর্মীর সাথে। কাউকে পিটিয়ে হাত পা ভেঙে দিই-নি আমি, চর থাপ্পড় মারি-নি। আসলে কাউকে আঘাত করতে উৎসাহী নই আমি। আমি সাংঘাতিক নিয়ম তান্ত্রিক ও সভ্য অফিসার।
আজ বৃষ্টি পড়ছে, টিপ টিপ বৃষ্টি। করোনা প্রাদূভাবে এখন থানা-ও অনেকটা ফাঁকা। ইনফর্মাদের ঘোরাঘুরি নেই। টু-পাইস লেনদেন বন্ধ। আমার ভালো লাগে। আমি সিদ্ধান্ত পাকা করে ফেলেছি ভাইরাস মুক্ত হবার পরও থানা'র পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কঠোর থাকবো। থানা কে মানুষের জন্য কম্ফোটেবল করে গড়ে তুলবো। বৃষ্টি'র সন্ধাতে থানা কম্পাউন্ডে বিনামূল্যে এ্যরাবিয়ান কফি পরিবেশন করা হবে, অভ্যাগতদের।
তবে আজ আমার মন খানিকটা খারাপ। আজ বিষ নামানোর কাজ কাজ ছিল। ২৭ বছরের এক হারামজাদা'র খুব বার বেড়েছিল। গুনে গুনে ১৬ টা গুলি করে মানুষ থেকে ফানুস বানিয়ে ওপরওয়ালার কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি। বেচারা দু তিন টা গুলি খাওয়ার পর বলছিল তার বৌ না কি পোয়াতি, তবে আমি তখন পোষাক পড়া ছিলাম - পোষাক পরা থাকলে ভেতরে একটা জোশ থাকে। নিজেরে ইস্রাফিল ফেরেস্তার মত শিঙ্গা ওয়ালা মনে হয়। তবে বিশ্বাস করুন তারে একটা কিল ঘুষি পর্যন্ত মারি-নি। আপনি সম্বোধন করে কথা বলেছি। মারার আগে পকেটের পয়সা দিয়ে ঘানি ভাঙ্গা সরিষা'র তেলের বিরিয়ানি আর কোকাকোলা এনে খাইয়েছি। শুধু কি খাওয়ানো, গুলি চালানোর আগে তারে বারবার সরি স্যার বলেছি…আফটার অল আম এ জেন্টল ম্যান অফিসার।
এ ধরনের ঘটনা ঘটলে আমার হালকা সাফোকেশনের মত হয়। তাই অফিসেই ষ্টিম বাথ নিয়ে বরফ কুচি ছিটানো বাথটাবে ঝরনা ছেড়ে বসে পরলাম। পিয়ন টা এসে অরেঞ্জ জুস দিয়ে গেল, টাবে বসেই পরপর তিন টা অরেঞ্জ জুস শেষ করবো। ভিটামিন সি, মন কেও সতেজ করে। সব করেও, তবু মন খারাপ কাটছে না। তাই ইউনিফর্ম ছেড়ে সাদা শার্ট, নীল গ্যাবাডিন পরে বসে আছি আমার কক্ষে। উদাস মুখ করে..বৃষ্টি দেখছি।
হটাৎ পরিপাটি নীল শারী পড়া একটা মেয়েকে দেখলাম আমার রুমের দিকে আসছে। বৃষ্টি'র ঝাঁপটা ক'ফোঁটা তার শারীরেও দেখা যাচ্ছে। আমি ভাবলাম এরে আজ রাতে খাইতে পারলে বেশ হবে। আমরা যারা সারাদিন রাত পরিশ্রম করি, তাদের যৌবন জ্বালা একটু বেশিই থাকে। পজিসন ঠিক করে ফেললাম মনে মনে। এরে প্রথম থেকেই উপ্তায়া খামু। শরীরের বিষ নেমে গেলে হয়তো মন-টা হালকা হবে একটু। তবে তার আগে অবাশ্য বায়োডাটা জেনে নিতে হবে। আমার প্রভুদের কারো কেউ হলে খুব লজ্জার ব্যাপার হয়ে যেতে পারে…বৃষ্টি'র সন্ধায় খিচুড়ি, ইলিশ মাছের ভাজা আর মেয়ে মানুষ - আর কি লাগে জীবনে!
ছিপছিপে মেয়ে-টা জাষ্ট রুমে ঢুকে বসে পরল আমার সামনের চেয়ারে। কোন রকম দ্বিধা নেই তার ভেতর। বললাম বলুন কি করতে পারি আপনার জন্য!
আমাকে এ্যরেষ্ট করুন। আমার খালি খুন করতে ইচ্ছা করছে বলে মেয়েটি থামলো। আমি স্বাভাবিক ভাবে বললাম, খুন করতে ইচ্ছা করার জন্য একজন ডিসেন্ট সুন্দরী কে গ্রেফতার করতে আইন আমারে বাধা দিচ্ছে.. আপনি বরং খুন করে আসুন; আমরা আপনাকে গারদে পুরে নেব।
মেয়েটি বিরক্ত হয়ে বলল আপনারা পুলিশ-রা একটু বেশি বুঝেন। আমি ২ জন-কে মাত্র খুন করে এসেছি। আমি তবুও স্বাভাবিক থেকে বললাম - না তবুও এরেষ্ট করা যাবে না। আগে সে লাশ দেখতে হবে, আপনি খুন করেছেন তেমন প্রমাণ পেলে তবে-ই গ্রেফতার হবেন। আমরা জনগনের বন্ধু। প্রমাণ ব্যতীত কারো গায়ে ফুলের টোকা পরতে দিই না আমি..
৭ বছরের অভিজ্ঞতা বলছে এই মেয়ে'র মিথ্যা বলার কথা না। কথা বলতে চোখের পাতা পড়ছে না..হার্ট রেট কম বেশি হচ্ছে বলেও মনে হচ্ছে না..। আবার এই মেয়ে খুন করে এসেছে বলেও পুলিশী চোখে বুঝা যাচ্ছে না।
আমি জানতে চাইলাম তো কারে কারে খুন করেছেন? লাস দেখাতে পারবেন? লাশ দেখার পর সিদ্ধান্ত নেব গ্রেফতার করব কি না!
স্যার আমার বাড়িতেই আছে লাশ।
বাড়িতে আর কে কে আছে জানতে চাইলাম। বলল দুইটা লাস আর একটা জার্মান শেফার্ড। আমি কিছুটা অসন্তুষ্ট হলাম যে বাড়িতে শেফের্ড আছে সেই বাড়িতে গিয়ে ছিটকিনি লাগিয়েও এরে খাওয়া সম্ভব না- কুত্তাডা দুনিয়া মাথায় তুলে ফেলবে। দেশি কুত্তা হলে সমস্যা ছিল না- আমাদের মত ই - গোস্ত'র টুকরা দিলেই প্রভু বদলে ফেলত! বাল এটা তো জার্মান শেফার্ড…
এতটা সুন্দরী না হলে এক্ষুনি হয়তো গ্রেফতার করতাম, কিন্তু তার আভিজাত্য, চোখের শীতলতা আমাকে বাধা দিল। একবার খাইতেই হবে এরে। সেই খাওয়ার বিনিময়ে এরে বাঁচিয়ে দেব আমি। খুনি হলেও বাঁচিয়ে দেব। আমার মত নামজাদা ক্ষমতাধর অফিসারের জন্য দুপাচ টা মার্ডার কেস নাই করে দেয়া জাষ্ট একটা তুড়ি'র ব্যাপার।
গাড়ি ষ্টার্ট নেবার পর মেয়েটির সেই সপ্রতিভ বিষয়টা কমতে থাকলো। আস্তে আস্তে চোখ ভিজতে থাকল..মা মা বলে ডুকড়ে কেঁদে উঠলো মেয়েটা…হায় ওয়েতে বৃষ্টি'র ঝাঁপটা আর মুনা নামের মেয়েটার চোখের জলে আমার মত বাজখাঁই অফিসারের হৃদয়কেও আদ্র করে তুলল।
আমি সান্ত্বনা দিলাম, ছিপ ফেলতে শুরু করলাম। তদন্তে সহযোগিতা করলে তোমার কিচ্ছু হবে না। আরে আমি তো আছি বলে এক হাত মেয়েটার মাথায় রাখলাম..সে হাত ছিল আস্থা'র হাত..মেয়েটা তবুও কেঁদেই চলেছে…আমি অডিও ডিভাইস অন করে দিলাম..
আমি বৃষ্টি চাই, আমি বৃষ্টি চাই বারে বার
সুখে যন্ত্রণা এই ঠিকানা বারে বার।
বাড়ি পৌছানোর পর মেয়েটা সেপটিক ট্যাংকের ঢাকনা দেখিয়ে বলল, আব্বাকে এখানে ফেলে দিয়েছি...বলেই চিৎকার করে উঠলো, হাহাকার আর অপরাধবোধের ঢেউ বেড়িয়ে এলো তার তার বুকের ভেতর থেকে…
তারে বললাম কিচ্ছু হবে না তোমার। তুমি তো বুঝতে পেরেছ ভুল করে ফেলেছ। আমরা ছুটি নিয়ে আজই খুলনা সুন্দরবন রওনা দেব লঞ্চে। তবে লঞ্চে তোমার টিকিটের ডেট খুনের আগের দিন দেখাবো…
মেয়েটা কি ভাবল কে জানে, কিচ্ছু বলল না। আশ্রয়হীনার মত আমার হাত চেপে ধরল হটাত। এই দু ঘণ্টা সময়ে মেয়েটা আমারে বিশ্বাস করতে শুরু করেছে। বাবা মা খুন হবার পর আমি ছাড়া এখন কেউ নেই তার….
সেপ্টিক ট্যাংক থেকে লাস বের করা বহুত হ্যাপার কাজ। ফায়ার ব্রিগেডে ফোন দিলাম। তারা এসে পৌছুলো ৫ মিনিটের ভেতর। ট্যাংক থেকে লাশ বের করার নির্দেশ দিয়ে আমি মেয়েটাকে নিয়ে বাড়ি'র ভেতর প্রবেশ করলাম…
সারা বাড়ি ময় তুলো উড়ছে, বিছানা বালিশ লেপ ছাড়া সব কিছু পরিপাটি করে সাজানো...একটা রুম ইঙ্গিত করল মেয়েটা। মা'র লাশ এখানেই আছে। মন থেকেই মুনারে আশ্বস্ত করলাম তারে কোন বিপদে পরতে দেব না আমি...মেয়েটা কি ভাবল বুঝা গেল না..তবে আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম জোড় করেও যদি এরে চু***তে না পারি তবে এরে মামলা থেকে আমি মুক্তি দিয়ে দেবো...চাইলে বিবাহ করব..এই বালের দেশ ছেড়ে দূরে কোথাও চলে যাব। চোর বাটবারদের সেবা- দিতে জীবনভর স্বার্থকতা নষ্ট করা ঠিক হবে না। কিন্তু আমার মত লয়াল টু মাষ্টার মানুষরে কি কেউ বুকের সব মায়া দিয়ে ভালবাসবে?
ওর দেখানো লাশের রুমটাতে আমি নির্দ্বিধায় ঢুকে গেলাম। অন্ধকার সাংঘাতিক, আমার কাছে টর্চ নেই..মেয়েটা বলল আলো লাগবে?
আমি বললাম টর্চ বা হারিকেন হলে ভালো হয়…
আলো আনতে চলে গেল সে। স্যার টর্চে ব্যাটারি ভরতে পারছি না যে, অন্ধকারে..। আচ্ছা বাড়িতে আলো নেই কেন? ওকে সাবধানে এগিয়ে এসে আমার হাতে দাও টর্চ ব্যাটারি...অন্ধকারে বুঝতে পারছি মেয়েটা এগিয়ে আসছে, কিন্তু একি ওর চোখ অন্ধকারের এভাবে জ্বলছে কেন? আমি ভয় পেয়ে গেলাম। বিউটি & দ্যা বিষ্টের ক্ষপ্পরে পরেছি বুঝে ফেললাম আমি..কিন্তু হাত নাড়াচাড়া করার মত সুযোগ পেলাম না।
জার্মান শেফার্ড ইতিমধ্যেই ঝাঁপিয়ে পরেছে, ক্ষতবিক্ষত করতে শুরু করেছে আমারে। বাড়ির লাইট জ্বলে উঠেছে। মেয়েটা হাসিমুখে একটা হ্যান্ডিক্যমে ভিডিও করছে আমার রক্তাক্ত দেহ। ওর অন্য হাতে আমার রিভলবার। আমি শক্তি হারা হতেই শেফার্ড শান্ত হয়ে আসে ধীরে ধীরে। অবলা জন্তুটা শক্তিহীনের বিরুদ্ধে লড়াই করতে চাচ্ছে না। আমি মরে যাচ্ছি কিনা ভাবতে পারছি না। মৃত্যুর চেয়েও মৃত্যুর ফাঁদে আমি যারপরনাই বিস্মিত। বিষ্ময়ের ঘোর কাটছে না আমার। জিজ্ঞাস করলাম why Muna? কেন এমন করলে?
Never mind officer, it was just a kidz play… মুনা উত্তর দিল।
ঝড়ো বৃষ্টির তেজ থেমে এসেছে। গাড়িতে রাখা আমার ওয়াকিটকির শব্দ শুনা যাচ্ছে। ওভার ওভার, ইটস ওভার। আমার কন্সটেবলরা ডাকাডাকি শুরু করেছে স্যার No dead body sir, No dead body. ক্ষত বিক্ষত শরীরে উত্তর দেবার ক্ষমতা আমার নেই…
মেয়েটা বলল স্যার লাল টিপ আপনার কেমন লাগে? যারে ১৬ টা গুলি করছিলেন তার বৌ লাল টিপ ভালবাসে খুব। আমিও ভালোবাসি। বলেই মেয়েটা আর শেফার্ড দাঁড়িয়ে গেল আয়নার সামনে...খোঁপা খুলে ফেললো। ফ্যানের বাতাসে এলোমেলো উড়তে শুরু করল তার চুল। বাইরে বোধ হয় আবার বৃষ্টি শুরু হল। সেই বৃষ্টি'র তাল ধরে নিয়ে মেয়েটা গেয়ে ঊঠলো...
চলে নাগরী দোলে ঘাগরী
কাঁখে বরষা-জলের গাগরী
বাজে নূপুর-সুর-লহরী
যায় ঝিলমিল ঝিলমিল ঢেউ তুলে
দেহের কূলে কে চঞ্চলা দিগঞ্চলা
মেঘ-ঘন-কুন্তলা….
মুনার গানের সুর দরজার বাইরে পৌঁছুলো কিনা বুঝতে পারলাম না। শুধু বুঝলাম ওয়াকিকটির রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি দূর্বল হয়ে যাচ্ছে, দূর্বল আওয়াজ হারিয়ে যাচ্ছে শব্দমালা ওভার & অউট, ক্লিয়ার আউট...
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই অক্টোবর, ২০২০ রাত ৮:৫৮