জন্মসূত্রে মার্কিন নাগরিক হলেও, জীবনের বেশিরভাগ সময়টাই চেক প্রজাতন্ত্র'র প্রাগে কাটিয়েছেন জিন ডিচ। ইউজিন মেরিল ডিচ ১৯২৪ সালের ৮ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্র'র শিকাগোতে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। বৃহস্পতিবার রাতে প্রাগে অবস্থিত নিজ ফ্ল্যাটে মৃত্যুবরণ করেন এ অস্কারজয়ী ইলাস্ট্রেটর। সেখানকার লিটল কোয়ার্টার এলাকায় নিজের ফ্ল্যাটেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। নবতিপর এই চিত্র নির্মাতার মৃত্যুর কারণ নিয়ে এখনও পর্যন্ত নির্দিষ্ট ভাবে কিছু জানা যায়-নি। তবে বার্ধক্য জনিত কারণেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে।
তাঁর কিছু ফ্যাক্টঃ
-১৯৪৪ সালে মেডিকেল পরীক্ষায় অকৃতকার্য হন। ডাক্তার হবার স্বপ্নকে তিনি পায়ে মাড়িয়ে শিল্প জগতে প্রবেশ করেন।
-শুরুতে নর্থ আমেরিকান এভিয়েশনে নকশাকার হিসাবে নিয়োগ পান। যে কারণে তাকে পাইলট হিসাবে কিছু প্রশিক্ষণ নিতে হয়।
-সামরিক বাহিনীতে প্রশিক্ষক হিসেবেও কাজ করেছেন।
- তাঁর দূর্ভাগ্য আমাদের সৌভাগ্য বাজে স্বাস্থের জন্য ১৯৪৪ সালে তাঁর চাকরি খোয়া যায়।
-এরপরই কার্টুনিস্ট হিসেবে ক্যারিয়ার গড়ে তোলেন তিনি।
-১৯৪৭ সালে দ্যা ক্যাট নামে তার হাতে আকা কার্টুন সিরিজ প্রথম ছাপা হয় মিউজিকাল ম্যগাজিন 'দ্যা রেকোর্ডার চেঞ্জার' এ। এই সময় তিনি প্রচুর ওয়ান প্যানেল কার্টুন আকতে শুরু করেন।
১৯৫৫-৫৬ সালে পত্রীকাতে তার নিয়মিত কার্টুন Terr'ble Thompson ছাপা শুরু হয়। *
-এই ক্যারেক্টার নিয়ে পরে ফক্স এর সাথে চুক্তি করেন। দ্বিতীয় ভার্সান তৈরি হয়।
-তাঁর প্রযোজিত ‘সিডনিজ ফ্যামিলি ট্রি’ ১৯৫৮ সালে অস্কারের জন্য মনোনীত হয়।
-১৯৫৮ সালে জাষ্ট ১০ দিনের ছুটিতে Prague এ আসেন তিনি। তবে লাভ এট ফাস্ট সাইট এর মত মিস Zdenka প্রেমে পড়ে যান তিনি। পরে Zdenka এর সাথে বিয়ে হয় তার। অবশ্য বউকে নিয়ে বউ এর শশুর বাড়ি না গিয়ে নিজেই শশুরবাড়ির কাছাকাছি ফ্লাট ভাড়া নিয়ে থাকতে শুরু করেন।
১৯৫৯ সালে বান্ধবীর অনুপ্রেরণায় Gene Deitch Associates, Inc নামে এ্যনিমেশন ষ্টুডিও প্রতিষ্ঠা করেন।
ওপরের মুভিটা কারো কারো চেনা লাগতে পারে। চার বছর বয়সী বালককে নিয়ে তৈরি অ্যানিমেটেড ছবি ‘মনরো’ ১৯৬০ সালে অস্কার জেতে।
কমিক করে ১ রাত জেল পর্যন্ত খেটেছেন তিনি। সেন্সর বোর্ড Czech magazine এ ধারাবাহিক ছাপা হওয়া তার 'Maly Svet' বন্ধ করে দিয়েছিল।
-১৯৬৪ সালে একই ক্যাটাগরিতে ‘নাডনিক’ ও ‘হাউ টু অ্যাভয়েড ফ্রেন্ডশিপ’ ছবির জন্য অস্কারে মনোনয়ন পেয়েছিলেন তিনি।
-১৯৬৫ সালে শশুরবাড়ি এলাকায় নিজেই কিনে ফেলেন ফ্লাট।
-জনপ্রিয় ‘পাপাই দ্য সেইলর’ কার্টুন সিরিজেরও পরিচালক ছিলেন
১৯৬৬ সালে তিনি তৈরি করে ফেলেন মুভি Alice on Wonderland in Paris'
১৯৭৮ সালেই আজকের লর্ড অফ দ্যা রিং এর কিছু কাজ করে ছিলেন। ব্যাপারটা এমন যে তার কিছু কাজকে পরবর্তিতে লর্ড অফ দ্যা রিং এ কাজে লাগানো হয়।তাঁর চরিত্র টম হল নীলাভ-ছাই কিছুটা পশমের রাশিয়ান ব্লু প্রজাতি বিড়ালের মত। আর জেরি হল বাদামী রঙের ছোট এক ইঁদুর যার বাড়ি টমের খুব কাছেই। টমের সাথে জেরির মানসিকত দূরত্ব অনেক। কোনই মিল নেই বলতে গেলে। তবুও একের অন্যকে প্রয়োজন। প্রতিটি কার্টুনে জেরিকে বিজয়ী দেখা যায় আর টমকে ব্যর্থ। তবে টমের জয় একার্টুনে বিরল ঘটনা বৈকি। কখনো কখনো বিশেষ করে ক্রিসমাস উতসবে টমকে উপহার আদান প্রদান করতে দেখা যায়। মাঝে মাঝে দুজনের দৈনন্দিন ছোটাছুটিকে ওদের রুটিন মাফিক খেলা হিসেবে দেখানো হয়। টম যত শত্রুই হোক না কেন কোন মেয়ে বিড়ালের প্রেমে পড়লে জেরি ঈর্ষান্বিত হয়ে যায়। ভাঙ্গন ধরানোর চেষ্টা করে প্রেমে। টমকে শেষ পর্যন্ত জেরির কাছেই ফিরতে হয়। হাত মিলাতে হয়, চুমু খেতে হয়। তারপর আবার যা তাই..
কি সেই সময়ের বাম ও আমেরিকান রাজনৈতিক সাথে কি মিল পাওয়া যায়? ব্যসিকালি জিন ডিট বাম রাজনীতি নিয়ে প্রচুর পড়তেন। ভক্ত ছিলেন বলা যাবে না; তবে ভালোবাসতেন। থাকতেন-ও তো জোসেফ টিটোর দেশে। তবে টম এন্ড জেরির প্রতিটি দৃশ্য'র খরচ মাথা ঈষৎ নষ্ট করে দিতে পারে। এ পর্যন্ত US$ ৩০,০০০ থেকে US$ ৭৫,০০০ ডলার পর্যন্ত খরচ হয়েছে দৃশ্য ভেদে, পর্ব ভেদে নয়।
Comics ইন্ডাস্ট্রি তে আন্ডারগ্রাউন্ড জগত আছে। সেই জগতের আছে Father হচ্ছেন comix artist Kim Deitch. কিন্তু কমিক জগতের কাছে সবচে গুরুত্ববাহী মানুষ হচ্ছেন Gene Deitc. তবে তিনি নিজেকে এমন কেউকেটা ভাবতেন না। বলতেনJim Flora আর ওয়াল্ট ডিজনি ইজ দ্যা বেষ্ট।
পৃথিবীর কাছে তার গুরুত্ব ছিল রাজনৈতিক মতবাদের উর্ধে। কোল্ড ওয়ারের সময়েও যুগোস্লাভ বা আমেরিকা কোন সরকারই তাকে বিরক্ত করেনি। যুগোস্লাভ টু আমেরিকা বা আমেরিকা টু যুগোস্লাভ করতেন তিনি নিয়মিত। এনিয়ে কোন জেরার মুখোমুখি হতে হয়নি তাকে। তিনি অবাধে আমেরিকা থেকে তার ব্যাবহার্য জিনিষ পত্র নিয়ে আসতেন। মার্শাল টিটো সরকার এনিয়ে তারে কোন দিনই প্রশ্ন করেনি। টিটো বলতেন এই মানুষ টা আমাদের জটিল মানুষের মানসিক জগতের উর্ধে। আমেরিকান প্রশাসকরাও একই ধারণা রাখতেন।
For the Love of Prague: The True Love Story of the Only Free American in Prague during 30 years of Communism' নামে ২০০২ সালে তার লেখা অটোবায়োগ্রাফি পড়ে দেখতে পারেন। পড়লে মনে হবে ভিন্ন মাত্রার পোকা কিলবিল করছে মাথার ভেতর।
অফিশিয়াল ব্লগ
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে এপ্রিল, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৪২