নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করার পর উনার লখতে জিগার সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি প্রায় ১২টিরও অধিক সম্মানিত না’ত শরীফ পাঠ করেন। যেগুলো ‘নু‘ঊতুয যাহরা আলাইহাস সালাম’ হিসেবে খ্যাত। নিম্নে সেই সকল সম্মানিত না’ত শরীফ থেকে কয়েকখানা সম্মানিত না’ত শরীফ ও উনাদের অনুবাদ তুলে ধরা হলো।
না’ত শরীফ ও উনার অনুবাদ :
وَلَمّا تُوُفّيَ رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ وَدُفِنَ وَرَجَعَ الْمُهَاجِرُونَ وَالْأَنْصَارُ إلَى رِحَالِهِمْ وَرَجَعَتْ فَاطِمَةُ إلَى بَيْتِهَا اجْتَمَعَ إلَيْهَا نِسَاؤُهَا فَقَالَتْ
اِغْبَرَّ اٰفَاقُ السَّمَاءِ وَكُوّرَتْ ...
شَمْسُ النَّهَارِ وَاَظْلَمَ الْعَصْرَانٖ
فَالْاَرْضُ مِنْ بَعْدِ النّبِىِّ كَئِيبَةٌ ...
اَسَفًا عَلَيْهِ كَثِيْرَةَ الرّجَفَانٖ
فَلْيَبْكِهٖ شَرْقُ الْبِلَادِ وَغَرْبُهَا ... ..
وَلْتَبْكِهٖ مُضَرُ وَكُلُّ يَـمَانٖ
وَلْيَبْكِهِ الطّوْدُ الْمُعَظَّمُ جُوْدُهٗ ...
وَالْبَيْتُ ذُو الْاَسْتَارِ وَالْاَرْكَانٖ
يَا خَاتَـمَ الرُّسُلِ الْمُبَارَكُ قَبْرُهٗ ...
صَلّى عَلَيْكَ مُنَزِّلُ الْقُرْاٰنٖ
نَفْسِىْ فِدَاؤُكَ مَا لِرَأْسِكَ مَائِلًا ...
مَا وَسَّدُوْكَ وِسَادَةُ الْوَسْنَانٖ
অর্থ: “আর যখন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করার পর উনাকে সম্মানিত রওযা শরীফ উনার মধ্যে রাখা হলো, তখন হযরত মুহাজির ও আনছার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা উনাদের বাড়ি ফিরে আসলেন। আর সায়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি উনার সম্মানিত হুজরা শরীফ উনার মধ্যে প্রত্যাবর্তন করলেন। উনার চারপাশে হযরত মহিলা ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা জমা হলেন। তখন সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি বললেন (না’ত শরীফ পাঠ করলেন)
اِغْبَرَّ اٰفَاقُ السَّمَاءِ وَكُوّرَتْ ...
شَمْسُ النَّهَارِ وَاَظْلَمَ الْعَصْرَانٖ
فَالْاَرْضُ مِنْ بَعْدِ النّبِىِّ كَئِيبَةٌ ...
اَسَفًا عَلَيْهِ كَثِيْرَةَ الرّجَفَانٖ
فَلْيَبْكِهٖ شَرْقُ الْبِلَادِ وَغَرْبُهَا ... ..
وَلْتَبْكِهٖ مُضَرُ وَكُلُّ يَـمَانٖ
وَلْيَبْكِهِ الطّوْدُ الْمُعَظَّمُ جُوْدُهٗ ...
وَالْبَيْتُ ذُو الْاَسْتَارِ وَالْاَرْكَانٖ
يَا خَاتَـمَ الرُّسُلِ الْمُبَارَكُ قَبْرُهٗ ...
صَلّى عَلَيْكَ مُنَزِّلُ الْقُرْاٰنٖ
نَفْسِىْ فِدَاؤُكَ مَا لِرَأْسِكَ مَائِلًا ...
مَا وَسَّدُوْكَ وِسَادَةُ الْوَسْنَانٖ
অর্থ: “আকাশের দিগন্তসমূহ ধূলায় ধূসরিত হয়েছে, দিবসের সূর্য হয়েছে আলোক শূন্য, আর যামানা হয়েছে অন্ধাকারাচ্ছন্ন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশের পর সারা পৃথিবী, সারা কায়িনাত শুধু দুঃখ-মলিনই হয়নি; বরং দুঃখ ভারে প্রকম্পিতও হয়েছে। অতঃপর যেন ক্রন্দন করে উনার জন্য প্রাচ্য-পাশ্চাত্য, আরো যেন ক্রন্দন করে মুদ্বার ও প্রত্যেক ইয়ামেনবাসী। যেন ক্রন্দন করে উনার জন্য মহান বদান্যতার অধিকারী বিরাট পাহাড় এবং রুকন ও গিলাফ বিশিষ্ট ঘর তথা সম্মানিত কা’বা শরীফ। ইয়া খ¦াতামার রসূল. নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, যাঁর সম্মানিত রওযা শরীফ বরকতময়, সম্মানিত কুরআন শরীফ অবতীর্ণকারী মহান আল্লাহ আপনার প্রতি ছলাত পাঠ করুন। সুবহানাল্লাহ! আমার জীবন আপনার জন্য কুরবান হোক, আপনার সম্মানিত শির বা মাথা মুবারক কাত হয়নি, তন্দ্রাচ্ছন্নের বালিশ আপনাকে বালিশে শয়ন করায়নি। অর্থাৎ আপনি সম্মানিত রওযা শরীফ উনার মাঝে তন্দ্রাচ্ছন্ন নন; বরং আপনি সদা-সর্বদা সবকিছু অবলোকন করছেন এবং শুনছেন তথা আপনি সব জায়গায় হাযির এবং নাযির।” সুবহানাল্লাহ! (আর রওদ্বুল উনফ ৪/৪৫৭, সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ ফী সীরাতি খইরিল ইবাদ ১২/২৮৯, ইত্তিহাফুয যায়ির ১/১৭১, ইরশাদুস সারী ৬/৪৭২, সালওয়াতুল কায়ীব বিওয়াফাতিল হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ১/২৭, ‘উইয়ূনুল আছার ২/৪৩৪, আল মুক্বতাফা মিন সীরাতিল মুছত্বফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ১/২৪৩, আল ইকতিফা ২/৬১, বাহজাতুল মাহাফিল ২/১২০, নিহায়াতুর আরাব ১৮/২৮৫, আল হামাসাহ ১/৭৮, যাহরুর আদাব ১/৪২ ইত্যাদি)
শব্দার্থ: اِغْبَرّ ধুলায় ঢেকে গেছে, ধূসরবর্ণ হয়েছে, ধূলিময় হয়েছে, اٰفَاقُ দিগন্তসমূহ, সুদূর প্রান্তসমূহ, দূরবর্তী অঞ্চলসমূহ, السَّمَاءِ আসমান, আকাশ, গগন, كُوّرَتْ অন্ধকার হয়েছে, অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়েছে, কিরণবিহীন হয়েছে, আলোক শূন্য হয়েছে, شَمْسُ সূর্য, النَّهَارِ দিবস, দিবা, দিন, اَظْلَمَ অন্ধকার হয়েছে, তমসাচ্ছন্ন হয়েছে, তিমিরাচ্ছন্ন হয়েছে, الْعَصْرَانٖ সময়, যুগ, কাল, শতাব্দী, الْاَرْضُ পৃথিবী, কায়িনাত, بَعْدِ পরে, পরবর্তীতে, النّبِىِّ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, كَئِيبَةٌ বিষণœ, দুঃখপূর্ণ, অবসাদগ্রস্ত, اَسَفًا দুঃখ করা, দুঃখিত হওয়া, অনুতপ্ত হওয়া, মনক্ষুণœ হওয়া, عَلٰى উপর, ه উনার, كَثِيْرَةَ অনেক, বেশি, অধিক, বহু, প্রচুর, পর্যাপ্ত, الرّجَفَانٖ কেঁপে উঠা, কম্পিত হওয়া, فَ অতঃপর, لْيَبْكِه যেন উনার জন্য কাঁদে, شَرْقُ পূর্ব, প্রাচ্য, الْبِلَادভূখ-সমূহ, ভূমিসমূহ, শহরসমূহ, غَرْبُ পশ্চিম, পাশ্চাত্য, هَا তার, وَ আর, আরো, لْتَبْكِهٖ যেন কাঁদে উনার জন্য, مُضَرُ মুদ্বার, كُلُّপ্রত্যেক, يَـمَانِ ইয়ামেনবাসী, الطّوْدُ উচ্চ পর্বত, বিরাট পাহাড়, الْمُعَظَّمُ সম্মানিত, শ্রদ্ধেয়, মর্যাদাবান, মহান, جُوْدُ দান, দানশীলতা, বদান্যতা, উদারতা, الْبَيْتُ ঘর, ذُو অধিকারী, বিশিষ্ট, الْاَسْتَارِ পর্দাসমূহ, আবরণসমূহ, الْاَرْكَان রুকনসমূহ, স্তম্ভসমূহ, খুঁটিসমূহ, يَا হে, خَاتَـمَ শেষ, الرُّسُلِ রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা, الْمُبَارَكُ বরকতময়, বরকতপূর্ণ, কল্যাণময়, قَبْرُ সম্মানিত রওযা শরীফ, هٗ উনার, صَلّى তিনি ছলাত পাঠ করুন, عَلٰى উপর, كَ আপনার, مُنَزِّلُ নাযিলকারী, অবতীর্ণকারী, الْقُرْاٰنٖ সম্মানিত কুরআন শরীফ, نَفْسِ আত্মা, প্রাণ, জীবন, ىْ আমার, فِدَاؤُكَ আপনার জন্য উৎসর্গ হোক, আপনার জন্য কুরবান হোক, مَا নেই, নাই, لِ জন্য, رَأْسِ শির মুবারক, মাথা মুবারক, كَ আপনার, مَائِلًا কাত, مَا وَسَّدُوْكَ বালিশে শোয়ায়নি, وِسَادَةُ বালিশ, الْوَسْنَانٖ তন্দ্রাচ্ছন্ন, নিদ্রাচ্ছন্ন, তন্দ্রালু, নিদ্রালু।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৮:৪৬