সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণকারী প্রথম পুরুষ:
হযরত মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণের আনুষ্ঠানিকতা সর্বপ্রথম সম্পন্ন করেন হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা। সেই সময়ে আহলু বাইত শরীফ উনার অন্তর্ভুক্ত ছিলেন- উম্মুল মু’মিনীন হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম, বিনতু রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন হযরত রুকাইয়া আলাইহাস সালাম, সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন হযরত উম্মু কুলসুম আলাইহাস সালাম এবং সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম। এ সংবাদ শুনে সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন হযরত যাইনাব আলাইহাস সালাম তিনিও উনার শ্বশুরবাড়ি থেকে এসে তিনিও দ্বীন ইসলাম গ্রহণের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেন।
আনুষ্ঠানিক নবুওওয়াত প্রকাশের সেই মুবারক সময়ে হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মধ্যে হতে যাঁরা যমীনে অবস্থান মুবারক করছিলেন, উনারা সকলেই ছিলেন মহিলা। সে অনুযায়ী সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণকারী প্রথম পুরুষ হলেন- ছিদ্দীক্বে আকবর হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম। উনার পূর্বে প্রাপ্ত বয়স্ক কোনো পুরুষ সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেননি। এ মতের উপর রায় দিয়েছেন ইমামে আ’যম হযরত ইমাম আবু হানীফাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি।
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার প্রচার-প্রসার:
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করার পর হতে হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারকে একনিষ্ঠভাবে আঞ্জাম দেন। শারীরিক, মানসিক, অর্থনৈতিক সর্ব দিকেই উনার খিদমতের আঞ্জাম বিস্তৃতি ছিলো। পবিত্র হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত হয়েছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমি যখন ঘোষণা করতাম যে- আমি তোমাদের সকলের জন্য রসূল হিসেবে প্রেরিত হয়েছি, তখন সকলেই আমাকে অস্বীকার করতো। তবে শুধুমাত্র হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম তিনি ব্যতীত। তিনি বলতেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আপনি সত্যই বলেছেন। (বুখারী শরীফ)
অর্থাৎ সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার প্রাথমিক যুগে হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি যে খিদমত মুবারক উনার আঞ্জাম দিয়েছেন, তা অন্য কারো পক্ষেই সম্ভব হয়নি।
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণের কারণে কাফিররা যে সমস্ত ব্যক্তিত্ব উনাদের উপর যুলুম-নির্যাতন করতো উনাদের মধ্যে যারা আযাদ ছিলেন না উনাদেরকে হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম চড়া মূল্যে ক্রয় করে আযাদ করে দিতেন। প্রথম মুয়াজ্জিন হযরত বেলাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত আমের ইবনে ফুহাইরাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারাসহ আরো অনেকে উনাদের অন্তর্ভুক্ত।
শত যুলুমেও অবিচল:
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণের কারণে কাফিররা নির্মম যুলুম-নির্যাতন করতো। অর্থনৈতিক মানসিক নির্যাতনের পাশাপাশি শারীরিক নির্যাতন ছিলো নিত্যদিনের ব্যাপার। কাফিররা সুযোগ পেলেই মুসলমান উনাদেরকে নির্যাতনের কোশেশ করতো। কিন্তু তাদের শত যুলুম সত্ত্বেও হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারকে সুদৃঢ় ও অবিচল ছিলেন।
কাফিরদের দীর্ঘ তিন বছরের অবরোধ ক্ষেত্র শিয়াবে আবু তালিবে অবস্থানকারীগণ উনাদের মধ্যে হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি অন্যতম। কাফিরদের অসহ্য যুলুমের দরুন অনেকেই হিজরত মুবারক করেছেন। কিন্তু তিনি কখনোই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছোহবত মুবারক ত্যাগ করেননি। সুবহানাল্লাহ!
ছিদ্দীক্ব লক্বব মুবারক:
আমুল হুযন তথা আনুষ্ঠানিক নবুওওয়াত মুবারক প্রকাশের একাদশ বছর এবং হিযরত মুবারক উনার প্রায় ৩২ মাস পূর্বে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ২৭শে রজবুল হারাম শরীফ লাইলাতু ইছনাইনিল আযীম পবিত্র মি’রাজ শরীফে গমন করেন। সকালে তিনি পবিত্র মি’রাজ শরীফ উনার ঘটনাবলী বর্ণনা করতে থাকেন। তা শুনে কাফিররা বিভিন্ন ধরনের কুৎসা রটনা করতে থাকে। আর এ সময়ে হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি উনার হুজরা শরীফে অবস্থান করছিলেন। ছোহবত মুবারকে যাওয়ার জন্য তিনি যখন বের হলেন, পথিমধ্যে উনার নিকট নাওয়াফেল গোত্রের নেতা যার নাম মুতঈম বিন আদী সে পবিত্র মি’রাজ শরীফ উনার বিষয়টি বললো। তিনি বললেন, তুমি কি সরাসরি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যবান মুবারক হতে শুনেছ? সে বললো- হ্যাঁ, উনার যবান মুবারক হতেই আমি শুনেছি। তখন তিনি বললেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র মি’রাজ শরীফ উনার বিষয়টি যতই আশ্চর্যজনক হোক না কেন, আমি তা বিনা বাক্যে নিঃসন্দেহে বিশ্বাস করি। উনার এই চরম সত্যবাদিতার দরুন উনাকে ‘ছিদ্দীক্ব’ লক্বব মুবারকে ভূষিত করা হয়। সুবহানাল্লাহ! (মুস্তাদেরেকে হাকীম)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
ان الله سمى ابا بكر عليه السلام على لسان نبيه صلى الله عليه وسلم صديقا-
নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যবান মুবারকে হযরত আবূ বকর আলাইহিস সালাম উনাকে ‘ছিদ্দীক্ব’ লক্বব মুবারকে ভূষিত করেছেন। (দারুকুতনী)
উম্মুল মু’মিনীন হাদিয়া করণ:
আমুল হুযন তথা আনুষ্ঠানিক নবুওওয়াত প্রকাশের দশম বছরে উম্মুল মু’মিনীন হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি বিছাল শরীফ গ্রহণ করেন। সেই সময়ে উম্মুল মু’মিনীন হিসেবে তিনি এককভাবে ছিলেন। বিধায়, উনার বিদায়ের দরুণ পবিত্র হুজরা শরীফ অভ্যন্তরীণ খিদমতের আঞ্জাম দেয়ার জন্য একজন উম্মুল মু’মিনীন উনার প্রয়োজনীয়তা তীব্রভাবে দেখা দেয়। হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি বাহিরের যাবতীয় খিদমত মুবারকের আঞ্জাম দিতেন। এখন পবিত্র হুজরা শরীফের খিদমতের আঞ্জাম দেয়ার জন্য তিনি হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনাকে শাদী মুবারক দেয়ার ব্যাপারে মুবারক খিদমতে আরজি পেশ করেন। নূরে মুজসাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার আরজি কবুল করতঃ হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনাকে শাদী মুবারক করেন। হযরত ছিদ্দীক্বে আকবার আলাইহিস সালাম তিনি আপন মুবারক আওলাদ উনাকে মুবারক খিদমতে দিয়েছেন। আবার তিনি নিজেই মোহর মুবারক পরিশোধ করেছেন। যা দ্বারা উনার খিদমত মুবারকের ব্যাপকতা দিবালোকের ন্যায় সুস্পষ্ট হয়।