বেয়ার, ওয়াইন, স্পিরিট, কফি, চা আর কোলা এই ছয়টি পানীয় দ্বারা নাকি মানব সভ্যতার বিকাশকে মূল্যায়ন করা যায়! আর Tom Standage এর A History of the World in 6 Glasses নামক বইয়ে সভ্যতার বিকাশের সাথে বিভিন্ন ধরনের পানীয় এর আভির্ভাব/প্রভাব নিয়েই আলোচনা করা হয়েছে। যারা বইটি পরেছেন তারা আরো ভালো বলতে পারবেন।
এসব পানীয়ের মাঝে সর্বপ্রথম তৈরি হয় বিয়ার, প্রায় ৫ হাজার বছর আগে (Fertile Crescen era) এবং মেসোপটেমিয়াতে বিয়ার ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ পানীয় কারণ তখনকার সময় শ্রমের মূল্য পরিশোধ করা হতো এই বেয়ার দিয়ে। এর পর আসে ওয়াইন (জর্জিয়া/গ্রীস), তারপর স্পিরিট মানে ব্র্যান্ডি আর রাম (Age of Exploration)। সবচেয়ে জনপ্রিয় ড্রাগ ক্যাফেইন মানে কফির বিস্তার হয় ১৫০০ শতাব্দিতে এবং এর যাত্রা শুরু হয় ইথোপিয়া থেকে। অ্যালকোহলের বিকল্প হিসাবে আরব বিশ্বে এর বিস্তার লাভ ঘটে। ১৮ শতকে (Age of Reason / Age of Enlightenment) ইউরোপে এর বিস্তার লাভ করে এবং তৎকালীন সময়ে কফি হাউজ গুলো ছিল দার্শনিক মত বিনিময়ের কেন্দ্র, মানে জ্ঞানী(ধনী!) লোকদের আড্ডার স্থান। চায়নিজরা প্রথম চা পান শুরু করে এবং তা ১০০ বছরেরও আগে, পরে এটি ব্রিটেনে জনপ্রিয়তা লাভ করে। সর্বশেষ ১৯ শতকে আসে কার্বনেটেড ড্রিংক্স যার মধ্যে অন্যতম কোকা কোলা।
কফিঃ
এই ছয় ধরনের পানীয় এর মাঝে একেক জনের কাছে একেকটা প্রিয়!! এই লেখা পড়ে অনেকের হয়তো প্রথম দিকের কয়েকটা পানীয়ের জন্য কলিজাটা পুড়ে যাচ্ছে, ঠিক বলিনি



ভূমিকাতেই যেমনটি বলেছি যে পানীয় হিসাবে কফির যাত্রা শুরু ইথোপিয়া থেকে ১৫০০ শতাব্দিতে। এই ক্যাফেইন বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ড্রাগ যা সারা বিশ্বব্যাপি পান করা হয় এবং ফিনল্যান্ড এটি সবচেয়ে বেশি পান করা হয়, প্রতি জন বছরে গড়ে ৬০৮.২ লিটার কফি পান করে। তুরস্কতে কফির মিহি গুড়া একটা কপারের পাত্রে ফুটানো হয় যেটাকে ibrik বলে। সম্ভবত টার্কিশ ভাষায় সকালের নাস্তাকে kahvaltı বলে যার অর্থ কফি পানের আগে (before coffee)। টার্কিশ কফি সাধারণত খুব কড়া, ঘন এবং মিষ্টি, যা ছোট কাপে পরিবেশন করা হয়।
ইতালীয়ান এসপ্রেসচ (espresso, এক অসাম কফি


ব্রাজিলিয়ানরা কফি বানায় আমাদের দেশে চা এর মতো করে। গরম পানিতে কফির গুড়া আর চিনি দিয়ে পরে ছাকনি দিয়ে ছেকে কফি পান করে। জাপানে বিখ্যাত হলো কোল্ড কফি, এরা প্রথমে গরম কফি বানায় এবং বানানোর পর সাথে সাথে ঠান্ডা করে ফেলে। থাইল্যান্ডেও কোল্ড কফি বেশি জনপ্রিয়।
ভিয়েনার কফি হাউজ কালচারকে তো জাতিসংঘ অস্ট্রিয়ার National Inventory of Intangible Cultural Heritage হিসাবে ঘোষনা দিয়েছে! ভিয়েনার কফি হাউজগুলো (kaffeehaüser) ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত খোলা থাকে। এদের বিখ্যাত কফি wiener mélange (coffee with steamed milk, topped with milk foam)। এরা মগ ভর্তি করে কফি খায়। ভিয়েনাতে আমি যে ল্যাবে কাজ করতাম সেখানে এক মহিলা ছিল যে কিনা সকালে প্রায় হাফ লিটার কফি পান করতো


আমেরিকায় চলে আমেরিকান কফি, যাকে বলে Americano (espresso mixed with hot water)। আমেরিকায় কফি জনপ্রিয় হয় যখন Peet’s Coffee and Tea (১৯৬৬) and Starbucks (১৯৭১) প্রতিষ্ঠিত হয়। আমাদের দেশেও মনে হয় এই টাইপ কফি তৈরি হয়! দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় আমেরিকান সৈন্যরা এই কফির প্রচলন করে।
অন্যতম কফি উৎপাদন কারী দেশ কেনিয়াতে ট্র্যাডিশনালী এক ধরনের তিতা (Kahawa chungu, or “bitter coffee”) কফি পান করা হয় এবং তৈরির জন্য ব্যবহার করা হয় পিতলের কেটলি আর কয়লার চুলা। এই তিতা কফি সাধারণত পুরুষরা পান করে। যদিও বিশ্বের ভালো কোয়ালিটির কফি এরা তৈরি করে কিন্তু নিজেরা পান করার সুযোগ পায় না, সব চলে যায় ইউরোপ আমেরিকায়!! অনেকটা আমাদের গার্মেন্টস সামগ্রীর মতো!
যাই হউক, ঈদে সবাই যার যার পছন্দের পানীয় নিয়ে আনন্দে মেতে উঠুক! সবাইকে ঈদ মোবারক!