আবার এমনো অনেক জায়গা আছে যেখানে তারা থাকতে পারে এবং সত্যিই থাকে।
অনেক আগে মানে এই ধরুন বছর নব্বই আগে বিজ্ঞানীরা তুমুল তর্ক-বিতর্ক করছিলেন এই প্রানীদের বাসস্থান বিভাজন নিয়ে।ইংরেজীতে যাকে বলে 'Animal Dispersion'।অস্ট্রেলিয়াতে ক্যাঙ্গারু এলো কেমন করে অথচ আফ্রিকাতে কেন কোন ক্যাঙ্গারু নেই?? অথচ আফ্রিকার অনেক অঞ্চলের পরিবেশ ক্যাঙ্গারু-বান্ধব ছিলো ।বিশেষ করে দক্ষিন আফ্রিকাতে ইচ্ছে করলেই ক্যাঙ্গারুরা আরাম আয়েসে জীবনযাপন করতে পারতো।কিছু কিছু ব্যাঙকে পৃথিবীর অনেক উষ্ণ পুকুরে দেখা যায় কিন্তু এর থেকে হাজার মাইল দূরের কোন উষ্ণ পুকুরে আবাএ এদের টিকিটিও পাওয়া যায়না। কেন এমন হয়!!
চুপিচুপি একটা কথা বলে নেই, ওই সময়ের বিজ্ঞানীরা কিন্তু তখন প্লেট টেকটোনিক(plate tectonics) মানে ভূমির স্তরগুলোর গঠন সম্পর্কে তেমন কিছু জানতো না।আবার মহাদেশীয় সঞ্চালন(Continental Drift) মানে মহাদেশগুলো পরস্পর থেকে দূরে যাওয়ার ব্যাপারটা সম্পর্কেও জানতো না। এই মহাদেশীয় সঞ্চালনের কারনে মহাদেশগুলো একটা থেকে আরেকটা দূরে সরে গিয়েছিলো এবং সাথে সাথে এগুলোতে থাকা প্রানীরাও আলাদা হয়ে গিয়েছিলো। Ice Age 4 দেখা আছে নিশ্চয়ই?? তাহলেতো আর বুঝাতে হবেনা,না??
তো এই সকল বিজ্ঞানীরা দুইটা ভিন্ন ধরনের মতবাদকে কেন্দ্র করে তাদের এই তর্ক-বিতর্ক চালিয়ে গেলেন। প্রথমটা হলো, বরফ যুগে হিমবাহ সৃষ্টি হয়েছিলো যার ফলে সমুদ্রের পানির লেভেলও কমে গিয়েছিলো।এই কারনে স্থলভাগের মাঝেও দূরত্ব কমে গিয়ে ব্রিজ তৈরি হয়েছিলো( যেটা এখন আর নাই)। আর এই সুযোগে ব্যাঙগুলাও লম্বা লাফ দিয়ে এক অঞ্চল থেকে আরেক অঞ্চলে চলে গেছিলো।বাহ ! এক লাফে মহাদেশ পার!!
থমাস বারবার--তৎকালীন হার্ভার্ড মিউজিয়াম অব কম্প্যারেটিভ জুওলজি'র পরিচালক সাহেব।তার আবার এই ব্যাঙ এর 'লম্প' থিউরি পছন্দ হইছে।
বাকি মতবাদটা আরো চমকপ্রদ।এই ধারনা অনুযায়ী মনে করা হয় যে প্রানীসকল(ব্যাঙ, ব্যাঙ্গাচিসহ) যথাসম্ভব বাতাস,পানি কিংবা ঝড়ের মাধ্যমে উড়ে এসে একটা সন্তোষজনক দূরত্ব পেরিয়ে নতুন জায়গায় গিয়ে উপনীত হইছে। এক্কেবারে বীজের বিস্তারন এর মতো ব্যাপার!! কিংবা ওজের জাদুকর গল্পে ডরোথি যেমন ঝড়ের তালে উড়ে চলে এসেছিলো জাদুর দেশে সেইরকম কাহিনি!!
এখন এই 'বাতাসের মাধ্যমে বিস্তারন' থিউরি আবার পছন্দ হইছে হার্ভার্ডের এক প্রফেসরের। নাম তাঁর ফিলিপ ডার্লিংটন।সে আর থমাস ছিলো জানের দোস্ত কিন্তু এই দুই থিউরি নিয়া তাদের মতের মিল হইলোনা।তো একদিন কফি খাওনের পরে থমাস চিন্তা করলো যে ব্যাঙ হয়তো প্রচন্ড বাতের তোড়ে আকাশে উড়তে পারবে কিন্তু একটু ঝামেলা আছে।ফিলিপরে বলাতে সে জিজ্ঞাস করলো,'কি ঝামেলা??'।থমাস বললো,'যখন বাতাস থেমে যাবে তখন কিন্তু ব্যাঙ আর ভেসে থাকতে পারবেনা এবং সে পড়ে যাবে।আর মাটিতে ল্যান্ড করার জন্য ব্যাঙ শরীর বেশ ভারী।ব্যাঙ তো এক্কেরে ভর্তা হয়ে যাবে।'
'তোরে কইছে',ডার্লিংটন মানতে চাইলোনা।' ব্যাঙ বরং নিজের পতন রোধ করতে সক্ষম'
এই নিয়ে দুই বন্ধু বাজি ধরলো এবং তারা একটা 'ব্যাঙ পরীক্ষা করার জন্য প্রস্তুত হলো।''আজকের দিনে আমরা এই ধরনের পরীক্ষা ভুলেও করতাম না। কিন্তু তখনকার পরিস্থিতি ভিন্ন ছিলো।''--এই কথা বলছিলেন নেইল শুবিন, তাঁর 'The Universe Within' নামক বইয়ে।
তো এই বিখ্যাত 'ব্যাঙ-পরীক্ষা' করার জন্য ক্যামব্রিজের একটা বহুতল ভবনের ছাদে প্রফেসর ডার্লিংটন উঠে গেলেন। সাথে এক ব্যাগ ভর্তি জ্যান্ত ব্যাঙ। আর নীচে দাঁড়িয়ে রইলেন প্রফেসর বারবার।
প্রপফেসর ডার্লিংটন এবার এক এক করে ব্যাঙ ফেলতে লাগলেন নীচের দিকে। প্রথম ব্যাঙটা খুব একটা সুন্দরভাবে ল্যান্ড করলো না। নীচে থাকা প্রফেসর বারবার উঁকি মেরে দেখলেন যে ব্যাঙ এইটা নড়েচড়ে না।চিৎকার করে জানান দিলেন,'এইটা মইরা গেছে।'
ডার্লিংটন আরেকটা ছুঁড়ে দিলেন।
নেইল শুবিন তাঁর বইতে বর্ননা করেন এইভাবে যে,' বারবার একের পর এক ব্যাঙকে ল্যান্ড করতে দেখলো এবং এগুলি সব স্পদনহীন অবস্থায় তাঁর পায়ের লতলায় ঘাসের উপর পড়ে রইলো। ডার্লিংটন খালি বস্তাটা নিয়ে নীচে নামলেন।বারবারকে জিজ্ঞেস করলেন।'কিরে,ব্যাঙগুলা কিরকমভাবে বাতাসের প্রভাব প্রতিরোধ করলো?? তখন চিটপটাং হয়ে থাকা ব্যাঙগুলার দিকে নির্দেশ করে বারবার নির্লিপ্তভঙ্গীতে ঘোষনা দিলো,'সবগুলা মইরা গেছে'।
এই কথা শোনার পর ঝাড়া তিন মিনিট স্তব্ধ ছিলেন প্রফেসর ডার্লিংটন। এরপর যেই হেরে যাওয়া বাজির টাকা দিতে যাবেন তৎক্ষণাৎ একটা আওয়াজ শুনলেন।কেমন জানি ঘোঁত টাইপ শব্দ। আর এরপরেই একের পর এক ব্যাঙ নড়াচড়া শুরু করলো আর উঠে পুরা জায়গাটাতে লাফানো শুরু করলো।
এইভাবে ডার্লিংটন নিজের পয়েন্ট প্রমানিত করলো।'আসলে এইযে ব্যাঙগুলা নিজেদের পতনের হাত থেকে রক্ষা করলো এতে অলৌকিক কিছুই নেই' বললেন নেইল সাহেব।
বড় প্রানীগুলোর তুলনায় ছোট প্রানীগুলো পতনের সময় নিজেরদের বেগ আস্তে আস্তে বাড়ায়।এর কারন এদের অন্যদের চেয়ে বেশী বাতাসের চাপ সহ্য করার ক্ষমতা আছে।যদিও ব্যাঙ এক্কেবারে পিঁপড়ার মতো না। তবুও নিরাপদে মাটিতে অবতরন করার মতো কম ওজন এদের আছে।তাছাড়া এঁরা খুব দ্রুত বেগে পড়ে ক্রাশ ল্যান্ডিং না করে নিজেদের গতিকে নিয়ন্ত্রন করে আস্তে আস্তে নিরাপদে ল্যান্ড করতে পারে।
এই প্রসঙ্গে বিখ্যাত বায়োলজিস্ট জে বি এস হেল্ডেনের একটা কথা বলা যায় যে,' আপনি একটা ইঁদুরকে এক হাজার গজ গভীর একটা খনি খাদে ফেলে দিলে এটা সামান্য একটু শক পাবে এবং এরপর দৌড়ে পালাবে'।
যাই হোক, এই বিখ্যাত পরীক্ষার জন্য আমরা এখন জানি যে, প্রায়ই ব্যাঙেরা আলাদীনের কার্পেটের মতো করে উড়তে পারে এবং যার কারনে এরা নিজেদের এলাকা থেকে অনেক দূরেও বসতি স্থাপন করে ফেলতে পারে।এটা নিয়ে আর কোন সন্দেহ নাই।
আপনি যদি কোন নির্জন পুকুরের পাড়ে বসে থাকেন এবং হঠাৎ করে ঘ্যাঙর ঘ্যাঙ শব্দ শুনতে পান এবং দেখেন যে পুকুরে দুই একটা ব্যাঙ লাফাচ্ছে। আপনি তাড়াতাড়ি আকাশের দিকে তাকাবেন।হয়তো দেখতে পাবেন যে কিছু ব্যাঙ উড়ছে আর পুকুরে এসে ল্যান্ড করছে। মাঝে মাঝে ব্যাঙের বৃষ্টি হয়ে থাকে অনেক জায়গায়। এতেও অবাক হবার কিছু নাই।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা এপ্রিল, ২০১৬ রাত ৮:২৬