ইরানি ছবি মানেই একটু অন্যরকম।জীবনের হালকা অথচ গভীর দিকগুলোও অত্যন্ত সুন্দরভাবে ফুটে উঠে ওদের চলচ্চিত্রগুলোতে।সেটার একটা কারন হতে পারে ওদের কড়া সেন্সরবোর্ড।সহজ সরল কাহিনি।কিন্তু নির্মানের গুনে সেটাই আমাদের কাছে ধরা দেয় শিল্প হিসেবে।মাজিদিরই 'চিল্ড্রেন অভ হ্যাভেন' এর কথাই ধরুন না।কিংবা আব্বাস কিয়োরোস্তমির 'হোয়ার ইজ মাই ফ্রেন্ডস হোম?'।
এই ধরনের ছোটখাট ব্যাপারগুলোতো আমাদের সবার সাথেই ঘটে থাকে।কিন্তু তাও যে সেলুলয়েডের পর্দায় তুলে ধরা যায় ইরানি ফিল্ম না দেখলে বিশ্বাসই করতাম না।
আজকে দেখলাম মাজিদ মজিদির 'পেদার' সিনেমাটা।পিতা পুত্রের কাহিনি।না,স্বাভাবিক পিতা-পুত্রের মধ্যে যে সম্পর্ক তেমন নয়।১৪ বছর বয়সী মেহেরোলাহ নামে এক কিশোর।বাবার মৃত্যুর পর মা আর বোনদের ভরণ পোষণের জন্য শহরে যায়।যথেষ্ট টাকা উপার্জনের পর সবার জন্য উপঢৌকন নিয়ে ফিরেও আসে নিজ গ্রামে।এবং এসেই দেখে তার মা বিয়ে করেছে এক পুলিশ অফিসারকে।স্বভাবতই সে এটা মেনে নিতে পারেনা।
দেখা দেয় এক বিব্রতকর পরিস্থিতি।এদিকে পুলিশ অফিসার কিন্তু তাকে নিজ ছেলে হিসেবে ঘরে নিতে প্রস্তুত।মেহরোলার স্বাভাবিক বিচারবুদ্ধি বলে,এই পুলিস অফিসারের কারনেই সে আজ তার মা বোনদের থেকে বিচ্ছিন্ন।সে ফিরে যায় তাদের পুরোন পরিত্যক্ত বাড়িতে।সাথে আছে বন্ধু লতিফ।আর সৎ বাবাকে শিক্ষা দেবার জন্য ফন্দি আঁটে।তারই প্রেক্ষিতে বোনদের অপহরন করে নিয়ে আসে সেই বাড়িতে।কিন্তু নিয়তি তাকে নিয়ে যায় মা বোনদের সাথে সেই সৎ বাবার বাড়িতেই।
সেখানে মায়ের সেবা শুশ্রূষায় পেয়ে ভালোও হয়ে উঠে।
তাই বলে মেহরোলাহর প্রতিশোধ স্পৃহা তখনও যায়নি।সে পুলিশ অফিসার সৎ বাবার পিস্তল চুরি করে বন্ধু লতিফকে নিয়ে পালিয়ে যায় শহরে।
পিছে আসে সৎ বাবা।সাথে হ্যান্ডকাপ।
বাকিটা বলছিনা।
এটুকু বলি,ছবির প্রথমে মেহরোলাহ যখন গ্রামে আসে দেখা যায়,সে একটা ঝরনা থেকে পানি পান করছে।তখন তার বুক পকেটে থাকা বাবার ছবিটা ভেসে যায় ঝরনার পানিতে।সেই ছবি খুঁজতে গিয়ে দূরে মাঠে কাজ করতে থাকা বন্ধু লতিফকে দেখতে পায়।এবং ভুলে যায় ছবিটার কথা।
সিনেমার শেষ দৃশ্যে সেই ব্যাপারটার একটা কাব্যিক ইঙ্গিত আছে।সেখানে জনশুন্য প্রান্তরে পানির অভাবে কাহিল এবং অজ্ঞান সৎ বাবাকে মেহরোলাহ টেনে আনে একটা জলাধারের কাছে।আর সেই সময় সৎ বাবার বুক পকেটে থাকা একটা ছবি বের হয়ে পানিতে ভেসে উবু হয়ে থাকা মেহরোলার কাছে আসে।সে দেখতে পায় পুলিশ অফিসারের পাশে তার মা বোনদের হাস্যজ্জ্বল মুখ।এ যেনো এক বাবাকে হারিয়ে আরেক বাবাকে ফিরে পাওয়া।
মাজিদ মজিদি বলেই এই যে জীবনের বাস্তব ঘটনাগুলো একেবারে বাস্তবভাবেই তুলে ধরতে পেরেছেন।ইরানিরা একাজ অবশ্য ভালো পারে।না,একটিবারের জন্য মনে হয়নি আমি কোন বানানো কাহিনি দেখছি।কিংবা কারো অভিনয় দেখছি।আমার কাছে মনে হয়েছে আমি কারো জীবনের গল্প শুনছি তারই মুখ থেকে আর তা মাথার ভিতর সিনেমা হিসেবে কল্পনা করছি।হ্যাটস অফ!! মাজিদ মজিদি।
সিনেমার এক দৃশ্যে মেহরোলাহ আর তার মা
আনাড়ি হাত।লেখায় ভুলত্রুটি হলে মাফ করে দিবেন।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ১:৩১