কবি জানালার পাশে বেতের মোড়াটায় বসে আছেন। বেতের মোড়াটা এই বাড়ির সবচেয়ে আরামদায়ক। একটাই সমস্যা-হেলান দেয়া যায়না। সবসময় ঋজু অবস্থানের কথা মনে রাখতে হয়। অবশ্য এখন যে সময় সেই সময় ঋজু হয়ে বসে থাকারই কথা। তিনি উঠোনের দুটো বেগুন গাছের দিকে তাকালেন । বেগুন গাছে বেগুন হয়েছে-অদ্ভুত বেগুন। হাঁসের ডিমের মত ধবধবে সাদা রঙ। এই জিনিস তিনি আগে ডেখেননি। মনে হচ্ছে গাছে ডিম ফলে আছে। কবি নাগরিক মানুষ। এখন গ্রামে পড়ে আছেন। গ্রাম গঞ্জের অনেক খুঁটিনাটি তাকে আকৃষ্ট করছে। কোনো একটি বিশেষ দৃশ্যে যখনই তাঁর চোখ আটকাচ্ছে মনে মনে রবার্ট ফ্রস্টের কবিতা আবৃত্তি করছেন-
Heaven gives Her glimpses only to those
Not in a position to look too close.
কবি লিখতে বসলেন--
স্বাধীনতা তুমি
রবী ঠাকুরের অজর কবিতা, অবিনাশী গান।
স্বাধীনতা তুমি
কাজী নজরুল ঝাঁকড়া চুলের বাবরি দোলানো
মহান পুরুষ, সৃষ্টিসুখের উল্লাসে কাঁপা-
স্বাধীনতা তুমি
শহীদ মিনারে অমর একুশে ফেব্রুয়ারীর উজ্জল সভা
স্বাধীনতা তুমি
পতাকা-শোভিত শ্লোগান-মুখর ঝাঁঝালো মিছিল।
স্বাধীনতা তুমি
ফসলের মাঠে কৃষকের হাসি।
স্বাধীনতা তুমি
রোদেলা দুপুরে মধ্যপুকুরে গ্রাম্য মেয়ের অবাধ সাঁতার।
স্বাধীনতা তুমি
মজুর যুবার রোদে ঝলসিত দক্ষ বাহুর গ্রন্থিল পেশী।
স্বাধীনতা তুমি
অন্ধকারে খাঁ-খাঁ সীমান্তে মুক্তিসেনার চোখের ঝিলিক।
স্বাধীনতা তুমি
বটের ছায়ায় তরুণ মেধাবী শিক্ষার্থীর
শাণিত কথার ঝলসানি-লাগা সতেজ ভাষণ।
স্বাধীনতা তুমি
চা-খানায় আর মাঠে ময়দানে ঝোরো সংলাপ।
স্বাধীনতা তুমি
কালবোশেখির দিগন্তজোড়া মত্ত ঝাপটা।
স্বাধীনতা তুমি
শ্রাবনে অকুল মেঘনার বুক
স্বাধীনতা তুমি পিতার কোমল জায়নামাজের উদার জমিন।
স্বাধীনতা তুমি
উঠানে ছড়ানো মায়ের শুভ্র শাড়ির কাঁপন।
স্বাধীনতা তুমি
বোনের হাতের নম্র পাতায় মেহেদির রং।
স্বাধীনতা তুমি
বন্ধুর হাতে তারার মতন জ্বলজ্বলে এক রাঙা পোস্টার।
স্বাধীনতা তুমি
গৃহিনীর ঘন খোলা কালো চুল,
হাওয়ায় হাওয়ায় বুনো উদ্দাম।
স্বাধীনতা তুমি
খোকার গায়ের রঙিন কোর্তা,
খুকির অমন তুলতুলে গালে
রৌদ্রের খেলা
স্বাধীনতা তুমি
বাগানের ঘর, কোকিলের গান,
বয়েসী বটের ঝিলমিলে পাতা,
যেমন ইচ্ছে লেখার আমার কবিতার খাতা।