প্রায় একবছর পর সামহোয়ারইনে লগইন করলাম । (পাসোয়ার্ড ভুলিনি এখনো )
এই ব্লগে কতোজন লিখলেন,কতোজন লেখা ছাড়লেন,কতোজন ঘোষনা দিয়ে চলে গেলেন,কেউ ফিরে এলেন,কেউ কেউ আর ফিরে এলেননা । যতদুর মনে পড়ে,সামহোয়ারে আমার না লেখালেখি ঘোষিত কিছু ছিলোনা,পুরোটাই ছিলো এথিকাল(এখনো আছে)। ব্লগ কর্তৃপক্ষ যখন লিখিত ফরমান জারী করে,এই ব্লগে প্রকাশিত যে কোন লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়াই যে কোন জায়গায় প্রকাশের অধিকার তারা রাখে তখন আমার মতো সামান্য লেখকের লেখক স্বত্বা আহত হয় । আহত হয়ে বেঁচে থাকা সবসময় খুব জরুরী মনে হয়না আমার ।
এতোদিন পর লগইন করা শুধু একটা শুভেচ্ছা জানানোর জন্য ।কাল ছিল এটিমের জন্মদিন । এটিমকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা ।
সামহোয়ার ইন ব্লগের শুরু থেকেই ঘাতকদালালদের ছানাপোনাদের উৎপাত ছিলো । তাদের জনকদের মতোই তারা ধর্ম ও শোভনতার ক্যামোফ্লেজ ব্যবহার করতো আর সুযোগ বুঝে উগড়ে দিতো তাদের অসহ্য অশ্লীলতা । তারা ঘোষনা করতো-‘গোলাম আজম মহান নেতা,মুক্তিযুদ্ধ ছিলো এক লক্ষ্যহীন অসংগঠিত গনবিস্ফোরন মাত্র, মুক্তিযোদ্ধারা ও যুদ্ধাপরাধী!’
পরাজিত ঘাতকদালালের ছানাপোনারা মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে মিথ্যাচার ও ধর্মকে ব্যবহার করে তাদের রাজনীতি প্রচারের মাধ্যম হিসেবে এই ব্লগকে ব্যবহার করতে চেয়েছিল । সুহৃদ ব্লগার আনোয়ার সাদাত শিমুল তার ‘পাকমন পেয়ার’ গল্পে এই ছবি এঁকেছেন দুর্দান্ত মুন্সীয়ানায় । এই গল্প বড় ঘা দিয়েছিল সেইসব বরাহ নন্দন-নন্দীনিদের (নতুন ব্লগাররা ঐ গল্পটা খুঁজে পড়তে পারেন,আমি লিংক দেয়া ভুলে গেছি)
কিন্তু যে জাতি মৃত্যুকে তুচ্ছ করতে জানে ভাষা ও স্বাধীনতার জন্য সে জাতি যতোই নষ্ট হোক,একেবারে পঁচে যায়না কখনোই । তাই বারবার জন্ম নেয় রক্তবীজের ঝাড়,আওরেলিয়ানোর দল । শহীদ জননী জাহানার ইমাম যখন ঘাতক নির্মুলের ডাক দেন হাজারো ছেলে মুহুর্তে নাম লেখায় সুইসাইড স্কোয়াডে, ভার্চুয়াল প্লাটফর্মে যখন দালালেরা আমাদের শ্রেষ্ঠতম অর্জনকে,আমাদের জনকদের রক্তধারাকে অসম্মান করতে দলবদ্ধ হয় তখন তার বিরুদ্ধে ও প্রতিরোধ গড়ে উঠে ।
দিনের পর দিন,রাতের পর রাত এই ব্লগে তর্ক-বিতর্ক,প্রশ্ন-উত্তর-পাল্টা প্রশ্ন চলতে থাকে । মনে পড়ে, দালালেরা আশরাফ রহমান নামের তাত্বিক ভাড়া করে এনেছিল ।এইসেই কতো নামে তাদের উপস্থিতি ছিলো । কিন্তু একদিনের জন্য, একবারের জন্য ও তারা কোনদিন কোন যুক্তি,কোন তর্কে জয়ী হতে পারেনি । বস্তুতঃ ফলাফল নির্ধারিত হয়ে গেছে ৭১ এর ডিসেম্বরের ১৬ তারিখেই ।সেদিন থেকে প্রতিদিনই ঘাতক দালাল ও তাদের ছানাপোনারা এক পরাজিত শক্তি মাত্র । এরা পরাজিত যুদ্ধের মাঠে, এরা পরাজিত যুক্তি-তর্কের টেবিলে,এরা পরাজিত বাস্তবতায়,এরা পরাজিত ভার্চুয়াল জগতে । পরাজিত বলেই এরা এতো শঠ,এতো নৃশংস ।
বেশ্যার তবু লজ্জা থাকে এদের থাকেনা কিছুই তাই যুক্তিতর্কে,প্রামান্য দলিলে টিকতে না পারলেও এদের ম্যাৎকার থামেনা,থামানো যায়না শোভন প্রক্রিয়ায় ।
পুরনো পোষ্টে আজ হাত দিয়ে দেখি , ১৭ মার্চ ২০০৭ এ কিছু প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছিলাম জামাতী তাত্বিক আশরাফ রহমানের প্রতি,বেচারা রহমান সময় নিয়েছিলো বইপত্র ঘেঁটে উওর দেবে । বছর পেরিয়ে গেছে সময় আর হয়ে উঠেনি ।
সেই সময়টাতে এদেরকে পৃষ্ঠপোষকতা করতো সামহোয়ারইন ব্লগের লোকজন । এর প্রমান মিলেছে বহুবার । গেলোবছর পহেলা বৈশাখে রেটিং সিস্টেম চালু করার প্রথম দিনে দেখা গেলো মুক্তিযুদ্ধবিরোধী পোষ্টগুলো সর্ব্বোচ্চ রেটেড হয়ে ঝুলে আছে অথচ তখনো সাধারন ব্লগাররা রেটিং করা শুরু করেনি । এই পোষ্টগুলোকে রেটিং করেছিলো ব্লগের তৎকালীন ডেভেলপাররা । মুক্তিযুদ্ধকে হেয় করা পোষ্টগুলো প্রথম পাতার শোভাবর্ধন করে অথচ প্রতিরোধ পোষ্টগুলো কোন এক বিচিত্র কারনে প্রথম পাতা থেকে সরে যায় ।
সম্ভবতঃ ব্লগ কর্তৃপক্ষ ম্যাৎকার সর্বস্ব ছাগকুলকে ব্যাঘ্র ভেবেছিলো । যেহেতু বেনিয়ার কোন ধর্ম নেই ,যেখানে গ্রাহক বেশী সেখানেই সে শরীর বিকিয়ে দেয় তাই সামহোয়ার ঐ ছাগকুলের আস্ফালনকে পৃষ্ঠপোষকতার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ।
আর এইভাবে বাংলা ব্লগিং প্লাটফর্মের সবচেয়ে জনবহুল সাইটটি ধীরে ধীরে মারা যাচ্ছিলো । একটা সময় এই সাইট পুরোপুরি কোমায় চলে গিয়েছিলো । কোমা থেকে কোনভাবে বেঁচে উঠেছে,শেষপর্যন্ত ব্লগ কর্তৃপক্ষের বাস্তবতা অনুধাবনের ফলে । তারা শেষপর্যন্ত বুঝতে পেরেছে বাঘের ছাল গায়ে দিলে ও শেষপর্যন্ত ওগুলো ছাগলই, যতোই গাজোয়ারি করুক শেষপর্যন্ত দৌড় কিন্তু ঐ তিন আসনই ।
আর কর্তৃপক্ষের এই অনুধাবনের পেছনে কাজ করেছে দুটো ফ্যাক্টর । প্রথমতঃ সচলায়তনের জন্ম । নানামুখী চাপ ও সমালোচনা স্বত্বেও এই সাইটের বেশ ভালোভাবে টিকে যাওয়া ছিলো সামহোয়ারের জন্য একটা ওয়ার্নিং,মনোপলির দিন ফুরালো বলে ।
তবে সামহোয়ারকে শেষপর্যন্ত বাঁচিয়েছে যারা-তারা এ টিমের পাগলা কমরেডরাই । প্রতিরোধ যুদ্ধের দ্বিতীয় পর্যায়ের গুরুত্বপুর্ন দায়িত্ব পালন করেছে তারা । যুক্তি,প্রমান ও শোভনতার অস্ত্র দিয়ে যখন ঘাতক দালালদের ছানাপোনাদের ম্যাৎকার বন্ধ করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছিল তখন এরাই এই অসম্ভবকে সম্ভব করেছে । খোঁয়াড় থেকে শুয়োর বেরিয়ে এসে যখন ঘরগেরস্থালিকে অপবিত্র করে তখন কাউকে না কাউকে দায়িত্ব নিয়ে শুয়োর তাড়া করতে হয়, তাড়া করতে গিয়ে শুয়োরের বাচ্চাকে শুয়োরের বাচ্চা বলেই গালি দিতে হয়, মায়াকোভস্কির কবিতা নয় বরং শক্তপায়ে লাথি দিয়েই শুয়োর তাড়াতে হয় ।
এই দায়িত্ব যারা নেয় তাদের ভূমিকা, দায়িত্ব না নেয়া দর্শককুলের কাছে সবসময় শ্লীল মনে নাও হতে পারে । কিচ্ছু করার নেই ঐ সব নপুসংস্কদের জন্য দুঃখ প্রকাশ করা ছাড়া । ‘গোলাম আজম মহান নেতা’ এর চেয়ে বেশী অশ্লীল শব্দমালা বাংলা ভাষায় আর কি হতে পারে? ‘মুক্তিযোদ্ধারা ও যুদ্ধাপরাধী’ এই কথার চেয়ে জঘন্য কোন গালি এই ভাষায় সৃষ্টি হতে পারে আর?
এই সব অশ্লীল উচ্চারন যারা করে আর যারা এই সব অশ্লীলদের সমব্যাথী হয় যে কোন প্রকারে, প্রিয় ব্লগারের তালিকায় এদেরকে যুক্ত করে,এদের সাথে সামাজিক সম্পর্ক বজায় রাখে -তারা কোন অধিকারে শ্লীলতা দাবী করে অন্যদের কাছ থেকে?
সকলে নবকুমার হয়না । কিন্তু কেউ না কেউ হয় । কেউ না কেউ হয় বলেই ঘোর দুঃসময়ে ও একচিলতে স্বপ্নদেখার সাহস অবশিষ্ট থাকে ।
সময়ের নবকুমারদের অভিনন্দন । এটিমের সকলের জন্য তিন উল্লাস ।