somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইহা আরেকখানা প্রেম বিষয়ক গল্প

০১ লা আগস্ট, ২০১৬ সকাল ৯:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ইহা আরেকখানা প্রেম বিষয়ক গল্প। (বিশেষজ্ঞ হইয়া যাইতেছি :/)

জনৈক বন্ধু আসিয়া কহিল, দোস্ত! এইবার এমন একখানা মেয়ে পিছে পড়িয়াছে! কিছুতেই পিছু ছাড়িতে চাহে না!
আমি কহিলাম, তো ছাড়াইস না! কন্যা যেহেতু এত আঁটসাঁট বাধিয়া পিছে পড়িয়াছে! নিশ্চয়ই সে তোকে প্রকৃত ভালোবাসে!
বন্ধু কহিলো, তা বুঝি না দোস্ত! আমি এমন মেয়ের সাথে প্রেম করিবো যাহাকে কিনা মাতার সামনে দৃঢ়ভাবে উপস্থাপণ করিতে পারি। এই কন্যা সেই যোগ্য নহে!

আমি শুধাইলাম, তা কন্যা এত আঁটসাঁট করিয়া পিছে পড়ার কারণ! তুই বুঝাইয়া বলিস নাই তাহাকে??
বন্ধু কাচুমাচু করিয়া মাথা চুলকাইয়া বলে, ইয়ে বলিয়াছি কিন্তু কন্যা মানিতে নারাজ! সে আমার পিছু ছাড়িবেই না! আমি তাহাকে আমার নতুন মেয়েবন্ধুর সাথেও পরিচয় করাইয়া দিয়াছি। সে হাসিমুখে পরিচিত হইয়া এখন বেদনামুখে বসিয়া আছে। ইহা দেখিয়া আমার বুকের বাঁ পাশে নিদারুণ ব্যথা হয়। আমি অস্বস্তিবোধ করি!

আমি আশ্চর্য হইয়া বলিলাম, কী বলিস হতভাগা! তা কন্যাটা কে! আর কেনই বা আমাকে এতসব বলা!
বন্ধু কহিলো, তুই কন্যাকে চিনিস। সে তোরই পরিচিত ছোটবোন।
আমি কন্যার পরিচয় পাইয়া কিছুক্ষণ মাথায় হাত দিয়া বসিয়া থাকিলাম। কন্যাকে শুধাইলাম, কি দেখিয়াছো ওই হতভাগার মাঝে! তাহার পিছু কেন ছাড়ো না!

কন্যা কাদিয়া কহে, সে আমার কাছে কি সুন্দর করিয়া তাহার মনের ভাব প্রকাশ করিত তাহা যদি আপনি জানিতেন! সে কত সুন্দর করিয়া গুছাইয়া জ্ঞানের কথা বলিত তাহাও আপনার জানবার কথা নয়! আমি এসব শুনিয়া নিজেকে বিশেষ ভাবিতাম! কিন্তু এখন আসিয়া দেখি আমি প্রকৃতপক্ষে কোন বিশেষ কেহ নই! ইহাতে আমার মন পুড়িয়া যায়! হৃদয় ভাঙিয়া যায়!
আমি শুধাইলাম, সে কি কখনো তোমাকে বলিয়াছিল যে সে তোমাকে ভালোবাসে! সে কি কখনো বলিয়াছিল যে ওই মনের ভাবগুলি তোমার জন্যে!

কন্যা কহিল, না! সে কখনোই আমাকে বুঝিতে দেয় নাই! কিন্তু আমি তো বুঝিতাম তার মনের কথা! আমরা খুবই ভালো বন্ধু ছিলাম যে!
আমি আবার শুধাইলাম, তা প্রেমপূর্ণ কথা না শুনিয়া কীভাবে প্রেমে পড়িলে!
কন্যা কহে, সে আমাকে গান পাঠাইতো! সুন্দর সুন্দর কবিতার পংক্তি পাঠাইতো! সেইখানে তাহার মনের কষ্টগুলি সব মোড়াইয়া মোড়াইয়া থাকিতো! আমাকে না পাওয়ার বেদনা তাহাকে খাইয়া যাইতো, আমি বুঝিতাম আর তাহাকে আরো গভীরভাবে ভালোবাসিতাম।

আমি হতবাক,কন্যা! কীভাবে এই আকাশ কুসুম কল্পনা সাজাইলে! তুমি তো অষ্টাদশী কিংবা কিশোরী নও! এই সকল ফাপর বুলি শুনিয়া তাহারা আবেগাপ্লুত হয়! আমি তো জানিতাম তুমি জীবন দেখিয়াছো!
এইবার কন্যা হতবাক! কি কহিবেন বুঝাইয়া কহেন!

আমি আবারো বলিলাম, দেখো কন্যা! বালক তোমাকে ভালোবাসিলে নিজের ভাষায় প্রেম নিবেদন করিবে, গান কিংবা কবিতার ভাষায় নয়! গান-কবিতা শুনিতে চমৎকার হইলেও প্রকৃত প্রেম প্রকাশের ভাষা মোটেও নয়। যে সময়মত নিজের মনের ভাব নিজের ভাষায় সোজা বাংলাতে প্রকাশ করিতে পারে না তাহার আবার প্রেম কিসের! সেই প্রেম তো তাহার নহে, ওই গান লিখনেওয়ালার! ইহা গেল প্রথম কথা। দ্বিতীয় কথা, তুমিই বলিতেছো সে তোমাকে সরাসরি প্রেমের কথা বলে নাই! তাহলে কীভাবে তুমি মনে মনে তাজমহল বানাইলে! তাহাকে একবার বলিয়াছিলে? তোমার পছন্দ কী! তোমার হৃদয় কি চাহে! তাহাকেও কী জিজ্ঞেস করিয়াছিলে???
কন্যা নীরবে মাথা নাড়ে। আর আমি মৃদু কন্ঠে আমার জ্ঞান ঝাড়িতেই থাকি।

কন্যার মনের কষ্ট আমি বুঝি, এককালে আমিও গান শুনিয়া প্রেমে পড়িতাম কিনা! সেই স্কুল জীবনের কথা! কিন্তু তখন একটা ব্যপার খুব ভালো ছিল, বন্ধুত্ব হইতো মুখোমুখি, এভাবে মুখোবইতে (ফেসবুক!) নয়। তখন আমরা একটা গান শুনিয়া বিভোর হইতাম, দ্বিতীয় গানেই বুঝিতাম বালক তো আমার জন্য গায় না! আমি বোধকরি তখন আমরা সরাসরি এক আসরে বসিতাম বলিয়া ভাবের আদান প্রদানও জোড়াল হইত। আর এখন মুখোবইতে মুখ তো দেখাই যায় না, গান শুনিলে তাজমহল গড়িয়া উঠিতে দেরী হয় না আবার সেই তাজমহল ভাঙিতেও দেরী হয় না। আজকালের গানে লিখনেওয়ালারাও জবর ব্যবসায়ী! তাহারা প্রথম গানে মনের মিলের কথা বলে, ঠিক পরের গানেই মন ভাংনের কথা বলে! ওইতো সেইদিন কথিত ইউটিউবে দেখিলাম, ‪#‎পারফেক্ট_টু‬ নামে একখানা গান বেশ চলিতেছে। নিজে খুঁজিতে গিয়া দেখিলাম ইহার সাথে #পারফেক্ট_টু-ব্রেকাপ ভার্সনও আছে! মানে একগানে আপনি স্বর্গে ভাসিবেন, আহা প্রিয়তম! কত ভালোবাসা! পরের গানেই আপনি বলিবেন, সে আমার হৃদয় ভাঙিয়া গেল!
(চুপিচুপি বলি পারফেক্ট টু এর দুটি গানই আমার ভীষণ পছন্দের!)

তাজমহল বানানোর আগে একটু দেখিয়া শুনিয়া বুঝিয়া বানাইলে ক্ষতি কী! নিজের হৃদয় বলিয়া কথা! কেন অপরের হাতে এত সহজেই দেয়া যে সে সহজেই ভাঙিয়া ফেলিতে পারে! ভুল করিয়া ভুলের মাশুলও দেয়ার ক্ষমতা থাকা উচিত বৈকি! এবং ভুল খুব দ্রুত ভুলিয়াও যাইতে হয় ভালো অভিজ্ঞতা মনে করিয়া।

!ধন্যবাদ!
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা আগস্ট, ২০১৬ সকাল ৯:৪৮
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাসান মাহমুদ গর্ত থেকে বের হয়েছে

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১২


যুক্তরাষ্ট্রের একটি বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল হাসান মাহমুদের সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে। আমি ভাবতেও পারি নাই উনি এতো তারাতারি গর্ত থেকে বের হয়ে আসবে। এই লোকের কথা শুনলে আমার গায়ের লোম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দারিদ্রতা দূরীকরণে যাকাতের তাৎপর্য কতটুকু?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১৮



দরিদ্র দূরীকরণে যাকাতের কোনো ভূমিকা নেই।
যাকাত দিয়ে দারিদ্রতা দূর করা যায় না। যাকাত বহু বছর আগের সিস্টেম। এই সিস্টেম আজকের আধুনিক যুগে কাজ করবে না। বিশ্ব অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্তান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্তান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের বিয়ের খাওয়া

লিখেছেন প্রামানিক, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৮


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

১৯৬৮ সালের ঘটনা। বর আমার দূর সম্পর্কের ফুফাতো ভাই। নাম মোঃ মোফাত আলী। তার বিয়েটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। বাবা ছিলেন সেই বিয়ের মাতব্বর।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপি-আওয়ামী লীগের মধ্যে মৈত্রী হতে পারে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০০


২০০১ সাল থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত আওয়ামী লীগের ওপর যে নির্যাতন চালিয়েছে, গত ১৫ বছরে (২০০৯-২০২৪) আওয়ামী লীগ সুদে-আসলে সব উসুল করে নিয়েছে। গত ৫ আগস্ট পতন হয়েছে আওয়ামী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×