যারা ১৯৭১ এ ঢাকায় ছিলেন শুনেছেন আমেরিকা সপ্তম নৌবহর পাঠাচ্ছে পাকিস্তানের পক্ষে! সেই নৌ বহরে একটা ক্যারিয়ার ছিল নাম ছিল ইউএসএস এন্টারপ্রাইজ, বিশাল এক যুদ্ধবিমানবহনকারী জাহাজ। সেটার আতংকেই ঢাকাবাসীদের জান যায় যায়! পরে ভাগলুম কোলকাতায়। সেটা আরেক ঘটনা।
সেআমলে ওগুলোর নাম শুনলে বহু দেশের আত্মারাম খাঁচাছাড়া হয়ে যেত, এখনো যায়। অবশ্য আমাদের দেশের লোকদের কোন কিছুই হবেনা কারণ এগুলোর ব্যাপারে খুব কমই জানা আছে। আসুন দেখি কিছু জ্ঞান অর্জন করি! কোন বিষয়ে? আজ্ঞে আজাইরা একটা অকম্মার জিনিস ফালতু জিনিস এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার। আজকাল আদার ব্যাপারীরাই জাহাজের খবর রাখে!
আধুনিক এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার একেকটা বিশাল যুদ্ধের মেশিন। এটা দিয়ে একটা দেশ তার নিজের বিমানবাহিনীকে পৃথিবীর যে কোন প্রান্তে স্হাপন করে বিমান হামলা যুদ্ধ পরিচালনা করতে পারে।
এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ারের উপর ছোট্ট ভিডিও।
জেরাল্ড ফোর্ড জাতীয় ক্যারিয়ারগুলো ৯০ টি প্লেন আর হেলিকপ্টার বহন করতে পারে, আর তার সাথে থাকবে ৫০০০ ক্রু!
১৯১১ তে প্রথম ক্যারিয়ারের হালকা পাতলা ব্যাবহার শুরু হয়। বৃটেন শুরু করে। ১৯১৮ সালে বৃটেনের এইচএমএস আরগাস নামক যুদ্ধজাহাজকে মডিফাই করে ক্যারিয়ারের মত ব্যাবহার শুরু হয়। তখন সাধারণ যুদ্ধজাহাজকেই রূপান্তর করে ক্যারিয়ার বানানো হত।
১৯২০ থেকে দুনিয়াতে আরো ক্যারিয়ার বানানো শুরু হয় আর ওগুলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বৃটেন আমেরিকা আর জাপানের জন্য দারুণ ভুমিকা পালন করে।
##দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জেট প্লেনের প্রচলন শুরু হওয়াতে ক্যারিয়ারগুলোর ডিজাইনে আরো পরিবর্তন আসল যাতে সুপারসনিক গতি সম্পন্ন প্লেনগুলো টেক অফ আর ল্যান্ড করতে পারে। #
পরে আনবিক যুগ আসার পর ক্যারিয়ারগুলো নিউিক্লিয়ার পাওয়ারড হল যাতে ডিজেলের বদলে আনবিক ফুয়েল ব্যাবহার শুরু হল আর তাতে ওগুলো ফুয়েল ছাড়া একনাগারে দীর্ঘদিন চলতে সক্ষম হল। কারণ ডিজেল ইন্জিনে বাতাস লাগে আর বাতাসের জন্য উপরে আসতে হয় বা বাতাস তৈরী করতে হয় কিন্তু নিউক্লিয়ার ফুয়েলে বাতাস লাগেনা ফলে বাতাস ছাড়াই দীর্ঘদিন চলতে সক্ষম হল ওরা।
খানিকটা আরো কারিগরী দিক বলি।
টেক অফ করার সময় গতি বাড়াবার জন্য ইলেকট্রো ম্যাগনেটিক শক্তি ব্যাবহার শুরু হল যাতে কম জায়গাতে প্লেনটি বেশী গতি পেয়ে সহজে টেকঅফ করতে পারে।
অতটুকু জায়গাতে একটা সুপারসনিক প্লেন কি করে ল্যান্ড করে? ঘন্টায় কয়েকশ মাইল গতিসম্পন্ন একটা প্লেনকে কয়েকশ ফুটের মধ্যে থামানো চারটি খানি কথা না!
গতি থামায় কিভাবে?
হ্যাঁ তার জবাব হল প্লেনটি ল্যান্ড করার সঙ্গে সঙ্গে একটা শক্তিশালী তারের বানানো হাইড্রলিক এরেস্টর দিয়ে প্লেনটাকে বেঁধে ফেলা হয় যাতে দ্রুত থামতে পারে, থামতে বাধ্য হয় । যদিা না থামাতে পারে তাহলে পাইলট আবার গতি বাড়িয়ে উড়ে ফেরৎ চলে যাবে পরে আবার আসবে ল্যান্ড করার জন্য। #
একটা ক্যারিয়ারের হর্স পাওয়ার কত?
###একটা এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ারের ইন্জিনগুলোর মোট শক্তি প্রায় ৬৬০০০ হর্স পাওয়ার! এছাড়া ইমার্জেন্সি আরো ৪-৫ টা ইন্জিন থাকে, প্রত্যেকটা দশ হাজার হর্স পাওয়ার!
একটা ক্যারিয়ার লিটারে কত কিলো বা নট যায়? একটা নিমিজ ক্লাশ ক্যারিয়ার একবারে মোটামুটি এক কোটি বত্রিশ লাখ লিটার জেট ফুয়েল শ্রেনীর বিশেষ তেল নিয়ে যাত্রা শুরু করে। পথে তাকে আবার রিফিল করাতে হয়। সুতরাং ও হিসাব বাদ। #
নিমিজ ক্লাশ ক্যারিয়ারের প্রপেলার শ্যাফটগুলো একেকটা ২৫ ফুট ডায়ামিটার মানে ব্যাস আর ওগুলোর প্রত্যেকটার ওজন প্রায় ৩০ টন!
এটা রাশিয়া থেকে ভারত ৪৮৮০ কোটি রুপীতে কিনে নেয়। ১৯৮২ সনে তৈরী জাহাজটি কেনার পর অনেক মডিফাই করা হয় আর আধুনিক জাহাজে রূপান্তরিত করা হয়।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মার্চ, ২০১৭ সকাল ৯:৫৯