আসেন আমরা আমাদের শরীরটা নিয়ে একটু ভাবি। এটা খারাপ হলে মনে রাখবেন দুনিয়াটাই খারাপ হয়ে যাবে আপনার কাছে! টাকা পয়সা বাড়ি গাড়ি পরিবার বিদেশে ট্যুর পুত্র কন্যা গার্ল ফ্রেন্ড কিছুই ভাল লাগবেনা। বিশ্বাস করুন।
আমাদের শরীরের অন্যতম গুরুত্বপুর্ণ একটা অর্গান হল এই লিভার। এর কাজ রক্তের রাসায়নিক পদার্থগুলোকে সুষম রাখা, বাইল নামক একটা পদার্থ তৈরী করে খাদ্য হজম ও পুস্টিকে শরীরে শোষন করার জন্য সহায়তা করা। ঐ জিনিসটা না হলে জীবিত প্রানী বাঁচতে পারেনা। বিস্তারিত না লিখে শুধু এটুকু জানুন বাঁচতে হলে লিভার দরকার, সুম্হ লিভার।
আধুনিক যুগে খাবার দাবারের ভেজাল সহ রাসায়নিক পদার্থের পরিমান ও মানের কারণে আমাদের লিভারটাকে প্রয়োজনের চাইতে বেশী পরিশ্রম করতে হয়। সেজন্যই লিভারটাকে ভাল রাখা দরকার, তাইনা? এই ভেজালের যুগে লিভারটাকে সুস্হ রাখতে হলে নীচের প্রাকৃতিক খাবারগুলো খেলে লিভার ভাল থাকে বলে জানা যায়।
রসুন:
এক কোয়া রসুণ আপনার লিভারের ভিতরের এনজাইমকে জাগিয়ে দিয়ে শরীরের বিষাক্ত পদার্থগুলো বের করে দিকতে সাহায্য করে্ তৈরী করে । রসুনে এলিসিন এবং সেলিসিয়ান নামক দুটো শক্তিশালী রাসায়নিক পদার্থ লিভারকে প্রাকৃতিক ভাবে পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। এছাড়া রসুন আপনার হার্টকেও ভাল রাখে, সুতরাং রসুন বেটে পানিতে গুলে খান, কাচা খাবেন।
আঙুরফল:
এক কাপ তাজা আঙুরের রস লিভারকে পরিষ্কার টক্সিনমুক্ত করতে সাহায্য করে। দাম বেশী? মোটেই না, এক প্যাকেট বেনসন সিগারেটের চাইতে কম টাকায় আপনার পরিবারের একবেলার আঙুর কিনতে পারবেন!
বীট ও গাজর:
বীট ও গাজর দুটোতেই বিশেষ কিছু রাসায়নিক পদার্থ সহ বেটা কেরোটিন রয়েছে যা লিভারের কার্যক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। বেটা কেরোটিন আপনার অন্যান্য অঙ্গকেও ভাল রাখে। রোজ গাজর খান। বীট খাওয়া একটু ঝামেলার মনে হয়, স্বাদও কম! গাজরের হালুয়া খেলে উপকার কম হবে, কাচাই খাওয়া যায়!
সবুজ শাক:
লিভারকে পরিষ্কার রাখতে সবুজ শাক যেমন পালং শাক এর তুলনা নেই। অবশ্য কিডনী রোগীরা পালং শাক খাবেন না। সবুজ শাকে ক্লোরোফিল আছে যা রক্ত থেকে টক্সিন বের করতে সাহায্য করে, বাইল তৈরীতে লিভারকে সাহায্য করে, লিভারকে সুস্হ রাখে। সরিষা শাক, মুলা শাক কলমী শাক সবই খুব ভাল। দামেও সস্তা, আপনার বাসায় রাধতে পারলেই হল। ভাল করে গরম পানিতে ধুয়ে খাবেন, শাকে সবজীতে চাষী ভাইরা প্রচুর কেমিকাল দেন। সাবধান!
এভোকাডো:
প্রচুর পুস্টিতে পরিপুর্ণ ফলটি শরীরে গ্লোটাথায়োন তৈরি করতে সাহায্য করে যা লিভারকে বিষাক্ত পদার্থ থেকে মুক্ত রাখে। এটাকে আমি খুব গুরুত্ব দিচ্ছিনা কারণ এটা আমাদের দিশী ফলের পর্যায়ে পড়েনা। দামও অস্বাভাবিক বেশী! পারলে খাবেন না পারলে ক্ষতি নেই।
আপেল:
আপেলে পেকটিন আছে যা খাদ্যনালী থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে দিয়ে পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। আরে সেই পুরোনো প্রবাদ মনে নেই? এন এপল এ ডে কিপস দি ডকটর এওয়ে! আপেল পারলে রোজ একখান করে খান। এক ঈদে একটা জামা কম কেনেন, আপেল খান। বাঁচুন বেশীদিন, সুস্হভাবে।
অলিভ অয়েল:
অল্প পরিমানে অলিভ অয়েল লিভারের জন্য খুবই উপকারী, শরীরের বিষাক্ত পদার্থকে বের করতে সাহায্য করে, ফলে লিভারের কাজ কমে যাওয়াতে লিভার ভাল থাকে। সোয়াবীন তেল তো খান তার বদলে মাঝে মাঝে অলিভ অয়েল কিনুন, আত্মীয় বন্ধুদের সাথে ফোনে আজাইরা প্যাচাল কম পেরে টাকা বাঁচিয়ে অলিভ অয়েল দিয়ে তরকারী রাধুন। যারা বড়লোক তাদের বলছিনা।
ব্রকলী ও বাঁধাকপি।
ভিটামিনে পরিপুর্ণ, লিভারের জন্য খুব ভাল। অন্যান্য রোগের জন্যও উপকারী, দামও সস্তা, খেতে থাকুন।
লেবু:
এই সাইট্রাস ফলটিতে প্রচুর ভিটামিন সি আছে যা টক্সিনকে পানিতে মিশে গিয়ে বের হতে সাহায্য করে, লিভার ভাল থাকে। সকালে খালি পেটে হালকা গরম পানিতে দু চামচ লেবুর রস লিভারের জন্য দারুণ উপকারী। সকালে খালি পেটে লেবুর আরো বহুরকম উপকারিতা আছে, সেটা বলার জায়গা এটা না। সকালে খালি পেটে হর রোজ আধা কাপ লেবুর রস খান, পেট ভাল থাকবে হাড়ের জোর ভাল থাকবে আরো কত কি! জীবনটা আনন্দে ভরে যাবে। ট্রাস্ট মি। এসিডিটির সমস্যা থাকলে পরামর্শ নিবেন ডাক্তারের।
আখরোট:
আখরোটে প্রচুর এমাইনোএসিড আরজিনাইন আছে যা শরীরের এমোনিয়া টক্সিনকে হজম করে। আখরোটে গ্লুটাথায়োন এবং ওমেগা -৩ ফ্যাটি এসিড আছে যা স্বাভাবিক ভাবে লিভারকে ডিটক্সিফাই করে। খাবার সময় আখরোট ভাল করে চিবিয়ে খাবেন। অবশ্য এর দামটা একটু বেশী, দেশের সব জায়গাতে খুব বেশী পাওয়া যায় না। না খেতে পারলে খাবেননা ব্যাস! আরো কত আইটেম আছে না?
ফুলকপি বাঁধাকপি:
লিভারকে বিষমুক্ত করতে সহায়তা করে। এটা সবাই খেতে পারেন, শীতকালে মানে আজকাল তো পানির দাম, খেতে থাকুন, ভাজি তরকারী স্যুপে যেভাবে খুশী!
হলুদ:
বাঙালী রান্নাঘরে খুব দরকারী মশলাটি লিভার ও হৃদযন্ত্র দুটোর জন্যই দারুণ উপকারী। কাচা খাওয়া একটু সমস্যা তরকারীতে যা আসে তাই ঠিক আছে তাছাড়া কাঁচা হলুদ জ্যুস করে খেতে পারেন, হার্টের জন্যও দারুণ উপকারী।
শুনুন, লিভার ট্রান্সপ্লানট্ আমাদের দেশে এখনো ভাল করে শুরু হয় নি, একবার নস্ট হলে ওটা মেরামত করা কঠিন, আমার মত মধ্যবিত্তের টাকায় কুলোবেনা, মৃত্যুর জন্য ওয়েট করা ছাড়া উপায় থাকবেনা! তেলে ভাজা, গুরুপাক খাবার কম কম খান, লাল মাংশ (খাসী গরু) কম খান। পানি খান প্রচুর, দিনে দেড় লিটার, মানে ৮ গ্লাস। জীবন তো একটাই, গেলে আর পাবেননা! তার উপর আপনি যদি বেশী অসুস্হ হন তাহলে মধ্য বিত্ত নিম্নবিত্ত মানুষের পরিবারের উপর টাকা পয়সার চাপ পড়ে। তাই নিজে বাঁচুন পরিবার নিয়ে আনন্দে ভাল ভাবে থাকুন।
সুত্র:
http://www.collective-evolution.com/2014/07/06/19-super-foods-that-naturally-cleanse-your-liver/
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:৫২