somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঘুরতে গেছিলুম ইউরোপ -১

২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ভাগ্নে সুজন বৌ বাচ্চা নিয়ে থাকে সুইজারল্যান্ডে। অনেকদিন থেকেই বলছিল একবার ইউরোপটা ঘুরে যান ভাল লাগবে। নিদেন পক্ষে সুইজারল্যান্ড আর পাশের দুএকটা দেশ বেড়িয়ে যান।
দুনিয়ার অনেক দেশ দেখা হলেও ইউরোপের বেশ কটি দেশে যাওয়াটা হয় নি। গিন্নী যেতে রাজি নন, অগত্যা একাই যাবার প্ল্যান করলুম।

প্রথম কাজ সেংগেন ভিসা যোগার করা। দরখাস্ত ভরলুম অনলাইনে আর ভাগ্নে পাঠালো স্পনসরশিপ। লাগবে তিরিশ হাজার ডলারের হেলথ ইনস্যুরেন্স, সেটাও করালুম হাজার দশেক টাকা দিয়ে গুলশানের এক ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী থেকে। কোন ডাক্তারী পরীক্ষা নেই!
এর আগে আমাদের সরকারী কোম্পানী 'সাধারণ বীমা'তে গেছিলুম ওটা করাতে। সরকারী কেরানীটি যেসব কাগজের ফিরিস্তি দিল যে বিরক্ত হয়ে একটা প্রাইভেট কোম্পানী থেকে বিনা ঝামেলাতে করাতে বাধ্য হলুম। সরকার বন্চিত হলো দশ হাজার টাকা থেকে।
যাহোক ভাগ্নের স্পনসরের কাগজটা সরাসরি চলে গেল গুলশান সুইশ দুতাবাসে। ফোন করে এপয়েন্টমেন্ট নিলুম, দুদিন পর এপয়েন্টমেন্ট।

নির্ধারিত দিনে সুইশ বিশালদেহী এক অফিসারের সাথে দুচারটে কথা বার্তা, কাগজগুলো দেখা, ব্যাস শেষ। বলল ৭ দিন পর আসুন পাসপোর্ট নিয়ে যাবেন। ৭ দিন পর পাসপোর্ট পেলুম ভিসা সহ। নগদ পাঁচ হাজার টাকা ভিসা অফিসে দিয়েছিলুম আগেই।

সেংগেন ভিসা মানে ইউরোপের প্রায় ২৯ টা দেশে যেতে পারবো! দুর কিসব ভাবছি! এই বয়সে তিন চারটে দেশ দেখতে পারলেই চলবে, ভাবলুম।
তারপর একদিন বিকেলে শাহজালাল বিমানবন্দরে এমিরেটস এর আজদাহা এক বোয়িং প্লেনে উঠে পড়লুম, গন্তব্য প্রথমে দুবাই। আজকাল 'এমিরেটস' এর পাইলট ক্রু সবই সংযুক্ত আরব আমিরাতের শুধু সিইও মনে হয় ভিন দেশী।

যাত্রীদের অধিকাংশই দুবাইর যাত্রী আর বাঙালাদেশী। এরা সবাই ঢাকাতে এয়ারপোর্টে ছিলেন ঘন্টা কয়েক। অথচ প্লেনে উঠেই এদের সবার বাথরুম পায়। লাইন ধরে সবাই বাথরুমে যাওয়া শুরু করলেন। ডায়াবেটিক নাকি? তা বলে এত্তো লোক একসাথে!

দুবাইতে পৌছলুম লোকাল টাইম রাত সাড়ে এগারোটা নাগাদ। আশ্চর্য দ্রততা আর দক্ষতার সাথে সাদা আলখেল্লা পড়া দুবাইর অফিসাররা ইমিগ্রশন আর অস্হায়ী ভিসার কাজটা সারলো। অস্হায়ী ভিসা লাগবে কারণ আমরা রাতটা দুবাইতে কাটাবো। এরপর এয়ারপোর্টের বাইরে দাড়ানো এয়ারকন্ডিশনড বাসে দশ মিনিটে পৌছে গেলুম একটা ফাইভ স্টার হোটেলে, । কোথাও কোন 'দেরী হবে' বা 'নেই' 'আসে নাই' 'অপেক্ষা করুন' এসব নেই!

হোটেলে শ'খানেক আইটেমের এক এলাহি ডিনার সেরে (খেয়েছিলুম বোধ করি চার পাঁচটে আইটেম) হোটেলের বিলাস বহুল রুমের জানালা দিয়ে বাইরে আলোকসজ্জিত দুবাইর খানিকটা দেখে হালকা পাতলা ঘুমে রাতটা কাটিয়ে পরদিন সকালে আবার যাত্রা শুরু। হোটেলের বাইরে বাস যাচ্ছে এয়ারপোর্ট প্রতি কুড়ি মিনিট পর পর। বাসে করে দুবাই এয়ারপোর্ট, এরপর প্লেনে ।
দুবাই এয়ারপোর্টে ম্যালা হাটতে হয়, ট্রেনে উঠে যেতে হয় - বেশ কয়েকটা প্লেনে যাবার গেটে যাবার জন্য! আমাকে আর চেক ইন করাতে হয়নি কারণ ওটা ঢাকাতেই করে ফেলেছি। হাঁটা আর ট্রেন শেষ করে উঠলুম নির্ধারিত প্লেনে, এবার যাবো জেনেভা।



জেনেভা পৌছলুম জেনেভা টাইম বেলা দেড়টার দিক।

যতটা নাম ডাক শুনেছি জেনেভা এয়ারপোর্ট ততটা বড় নয় তবে তাই বলে আবার আমাদের শাহজালাল বিমানবন্দরের সাথে মেলাতে যাচ্ছিনা। নিজের দেশের এয়ারপোর্টের ভয়াবহ বাজে সার্ভিস আর বিমানবন্দর স্টাফদের জঘন্য ব্যাবহারের কথা বলব ফাঁকে ফাঁকে।

প্লেন থেকে নেমে প্রথমেই ইমিগ্রশন। কুড়ি মিনিটে ওসব শেষ। তাপর লাগেজের জন্য বেল্টের কাছে।
তার আগে একটা কথা বলতেই হয়। লাগেজ বহন করার জন্য ট্রলি খুজতে গিয়ে দেখলুম প্রচুর ট্রলি সাজানো আছে মাগার আপনাকে দিতে হবে দু ফ্রাংক, ট্রলিতেই একটা ছিদ্র আছে সেখান দিয়ে ঢুকাতে হবে, না হলে ট্রলি মহোদয় জায়গা থেকে নড়বেনা। তা আমার কাছে তো দু ফ্রাংক নেই, সব ১০০ ফ্রাংক আর একশ ডলারের নোট, কোথা পাই দু ফ্রাংক ভাবছি। আমার অবস্হাটা মনে হয় এক সুন্দরী সুইশ রমনীর চোখে পড়ল, তিনি কাছে এসে প্রথমে ফরাসী ভাষায় 'পুই জভ্যু আইডাখ' (আমি আপনাকে সাহায্য করতে পারি?) আমি বুড়ো আঙুল মুখের কাছে নিয়ে বললুম 'জ নে পায পাখলে ফ্রঁসে' (আমি ফ্রেন্চ জানিনা';) তিনি তারপর ইংরেজীতে শুধোলেন সমস্যা কি। আমি বললুম, আমার পয়সার বড়ই অভাব, অন্তত দু' ফ্রাংকের মুদ্রা আমি জীবনে চোখেই দেখিনি অথচ তোমার দেশে দু ফ্রাংক ছাড়া জীবন অচল মনে হচ্ছে! ব্যাস তিনি তার দামী ওয়ালেটের ভিতর থেকে একটা দু ফ্রাংকের মুদ্রা আমার হাতে দিয়েই মৃদু হেসে বাই বলে কেটে পড়লেন, আর একবার তাকালেনওনা! যাহ, তাকে তো তাঁর নামটাই জিজ্ঞেস করা হলোনা! দুর্ভাগ্য আমার তাকে আমি পরে আর কখনও দেখিনি, দেখব বলেও মনে হচ্ছেনা! তিনি আমার কাছে চিরদিনের জন্য দু'ফ্রাংক পাবেন! সুইশ সভ্যতা আর ভদ্রতার পরাকাষ্ঠা!

যাই হোক মুদ্রাটি ট্রলির স্লটে ঢুকাতেই ট্রলিটি খুলে এলো, তারপর সেটা নিয়ে বেল্টের কাছে এসে দেখি আমার মাঝারি সাইজের স্যুটকেস দুটো পড়ে পড়ে ঘুরছে! অভ্যস্ত হাতে স্যুটকেস দুটোকে তুলে ট্রলিতে রেখে বাইরে বেরুলুম। ভাগ্নে লাগেজ দুটোকে গাড়ীতে রেখেই ট্রলি নিয়ে চলল আরেক জায়গাতে। সেখানে ট্রলিটি রাখা মাত্রই দু ফ্রাংক আবার ব্যাক! চমৎকার ব্যাবস্হা। আপনি যদি মাল নামিয়ে ট্রলি যেখানে সেখানে রেখে কেটে পড়েন তো আপনার দু'ফ্রাংক গেল অন্য কারো হাতে যিনি ভদ্রলোকর মত ট্রলিটি নির্ধারিত জায়গাতে রাখবেন।
সুন্দরী সুইশ ভদ্রমহিলার দুফ্রাংক মুদ্রাটি আজও আমার কাছে আছে হয়ত বহুদিন থাকবে। কতদিন থাকবে জানিনা।

এয়ারপোর্টের বাইরে এসে ভাগ্নের ছোট একটা হোনডা গাড়ি চেপে বাইরের অসাধারণ সুন্দর প্রকৃতিকে দেখতে দেখতে চললুম বাসার দিকে, প্রায় ষাট কিলোমিটার দুরে, সুইজারল্যান্ডের অসম্ভব সুন্দর শহর লুজান। পাশেই নাতি বসা আর গাড়ী চালাচ্ছে ভাগ্নে।




চলবে

সর্বশেষ এডিট : ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:৫৭
৩৯টি মন্তব্য ৪০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাসান মাহমুদ গর্ত থেকে বের হয়েছে

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১২


যুক্তরাষ্ট্রের একটি বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল হাসান মাহমুদের সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে। আমি ভাবতেও পারি নাই উনি এতো তারাতারি গর্ত থেকে বের হয়ে আসবে। এই লোকের কথা শুনলে আমার গায়ের লোম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দারিদ্রতা দূরীকরণে যাকাতের তাৎপর্য কতটুকু?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১৮



দরিদ্র দূরীকরণে যাকাতের কোনো ভূমিকা নেই।
যাকাত দিয়ে দারিদ্রতা দূর করা যায় না। যাকাত বহু বছর আগের সিস্টেম। এই সিস্টেম আজকের আধুনিক যুগে কাজ করবে না। বিশ্ব অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্তান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্তান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের বিয়ের খাওয়া

লিখেছেন প্রামানিক, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৮


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

১৯৬৮ সালের ঘটনা। বর আমার দূর সম্পর্কের ফুফাতো ভাই। নাম মোঃ মোফাত আলী। তার বিয়েটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। বাবা ছিলেন সেই বিয়ের মাতব্বর।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপি-আওয়ামী লীগের মধ্যে মৈত্রী হতে পারে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০০


২০০১ সাল থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত আওয়ামী লীগের ওপর যে নির্যাতন চালিয়েছে, গত ১৫ বছরে (২০০৯-২০২৪) আওয়ামী লীগ সুদে-আসলে সব উসুল করে নিয়েছে। গত ৫ আগস্ট পতন হয়েছে আওয়ামী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×