মহান আল্লাহ তাআলা শুধু মানুষ এবং জ্বিন জাতিকে সৃষ্টি করেছেন আল্লাহু তাআলার ইবাদত করার জন্য। আল্লাহ তায়ালার সৃষ্টির ১৮ হাজার মাকলুকাতের মধ্যে অন্য কোন প্রাণী কে আল্লাহ তাআলার ইবাদত করতে হয় না। শুধু মানুষ এবং জ্বিনকে ইবাদন করতে হয়। তাই একজন মুসলমান হিসেবে আমাদের জ্ঞান বৃদ্ধির জন্য, জ্বিন জাতির সৃষ্টির ইতিহাস জেনে রাখা প্রয়োজন।
চলুন আজ আমরা আল কোরআনের আলোকে জ্বিন জার্তির সৃষ্টির ইতিহাস সম্পকে কিছু জেনে নিই।
সুরা আল জ্বিনে বলা হয়েছেঃ
বলুন ! আমার প্রতি ওহী নাযিল করা হয়েছে যে জ্বিনদের একটি দল কোরআন শ্রবণ করেছে, অতঃপর তারা বলেছেঃ আমরা বিস্ময়কর কোরআন শ্রবণ করেছি। (আয়াত ০১)
অথচ আমরা মনে করতাম মানুষ এবং জ্বিন কখনো আল্লাহু তাআলা সম্পর্কে মিথ্যা বলতে পারে না। (আয়াত ০৫)
আর যখন আল্লাহতা আলার বান্দা তাকে ডাকার জন্যে দন্ডায়মান হল, ঠিক তখন অনেক জ্বিন তার কাছে ভিড় জমালো। (আয়াত ১৯)
জ্বিন জাতির সংক্ষিপ্ত ইতিহাসঃ
রাসুলুল্লাহ মোহাম্মদ (সাঃ) পূর্ব থেকেই জ্বিনদের সাথে মানুষের উঠাবসা ছিল। আমি এখানে রাসুলুল্লাহ মোহাম্মদ (সাঃ) এর ইন্তেকালের পর জ্বিনদের সাথে মানুষের উঠাবসার কয়েকটি কাহিনী তুলে ধরার চেষ্টা রাখলাম। তাবেঈন হযরত মুয়ায বিন উবাইদুল্লাহ বিন আম্মার (রাহঃ) বর্ণনা করেছেন আমি একবার হযরত উসমান (রাঃ) এর কাছে উপস্থিত ছিলাম। এমন সময় তার কাছে একটা লোক এসে বলল, আমি আপনাকে এক বিস্ময়কর ঘটনা শুনাতে চাচ্ছি। আমি এক সফরে বিশাল মরুভূমির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলাম। সে সময় আমার সামনে দুটি ঘূর্ণি হাওয়া এল, একটি একদিকে আরেকটি আরেকদিক থেকে। উভয়ের মধ্যে টক্কর লাগল এবং মুকাবিলা হল। তারপর ঘূর্ণি হাওয়া দুইটি আলাদা হয়ে গেল।
ঊভয় ঘূর্ণির মধ্যে একটি ছিল আরেকটির চেয়ে বেশী জোরালো। ঘূর্ণি দুইটি যেখানে মিলিত হয়েছিল সেখানে আমি যেয়ে দেখতে পাই ওখানে বহু সংখ্যক সাপ মরে পরে আছে। এক সাথে এত সাপ আমার চোখে আগে কখনই দেখেনি। ওই সাপ গুলির মধ্যে একটি সাপের শরীর থেকে মৃগনাভির খুশবু আসছিল। ওই সাপটির রঙ ছিল হালকা সবুজ। আমার দৃড় বিশ্বাস হল যে সেটা ওই সাপের কোন সৎ কাজের কারণ ছিল। সুতরাং আমি ওই সাপটিকে নিজের পাগড়িতে জড়িয়ে দাফন করলাম। তারপর আমি নিজের গন্তব্যে যাচ্ছিলাম। এমন সময় এক ঘোষকের কন্ঠস্বর শুনলাম। সে বলল ওহে আল্লাহর বান্দা! এই ঘূর্ণিঝর ছিল জ্বীনদের দুটি গোত্র বনু শাইয়ান এবং বনু আকিয়াশ এর মধ্যে যুদ্ধ। বনু শাইয়ান ছিল মুসলামান জ্বীনেরা আর বনু আকিয়াশ ছিল কাফের জ্বীনেরা। ওদের উভয়ের মধ্যে সংঘর্ষে বহু জ্বীন হতাহত হয়েছে। আর তুমি যাকে দাফন করেছে উনি ছিলেন সেই সম্মানিত জ্বীনদের অন্তর্ভুক্ত যাদের সম্পর্কে সূরা জ্বীনে আলোচনা করা হয়েছে।
মুসলিম বিশ্বে ২য় উমর নামে পরিচিত উমাইয়া খলিফা হযরত উমর বিন আব্দুল আযীয (রহঃ) এর সময় প্রধান সেনাপতি ছিলেন মূসা বিন নাসির। মূসা বিন নাসির মরক্কো, আলজেরিয়া থেকে আফ্রিকা মহাদেশের বহু দেশ জয় করেছিলেন। মূসা বিন নাসির একবার বলেন আলজেরিয়া অভিযান কালে এক পোড়া রাজপ্রাসাদ আমার চোখে পড়ে। আমি সেই পোড়া বাড়িতে ১৭ টি সবুজ গড়া দেখতে পাই। আমি সেই গড়াগুলির একটির মাঝে ছিদ্র করি। সাথে সাথে এক দমকা বাতাস জোরে বের হয়ে আসে। বের হয়েই বলতে থাকে আল্লাহর কসম, হে আল্লাহর নবী। আগামীতে আমি আর কখন অন্যায় করবো না। মূসা বিন নাসির বুঝতে পারেন যে এই হল সেই জ্বিনদের অন্তর্ভুক্ত সূলায়মান (আঃ) যাদের কে কয়েদ করে রেখেছিলেন। তারপর সেই জ্বীন টা এদিক সেদিক তাকিয়ে বলল আল্লাহর কসম না আমি সুলায়মান কে দেখতে পাচ্ছি না তার সাম্রাজ্যকে। তারপর সেই জ্বীন টা অদৃশ্য হয়ে গেল।
ভারত বর্ষে ইলমে হাদীস চর্চ্চার যিনি অগ্রদূত উনি হলেন শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দেস দেহলভী (রহঃ)। যুবক বয়সে শাহ ওয়ালী মুহাদ্দেস দেহলভী (রহঃ) একবার একটি সাপকে মেরে ফেলেন। তো এর কিছু দিন পর কিছু লোক এসে উনাকে বললো হুজুর আসেন একটা জানাজা পড়তে হবে। তো শাহ ওয়ালী মুহাদ্দেস দেহলভী (রহঃ) তাদের সাথে গেলেন। কিছুক্ষন হাটার পর উনি বুঝতে পারলেন যে উনি ভিন্ন একটা শহরে এসে উপস্থিত হয়েছেন। উনার আশপাশের এলাকার সাথে এই এলাকার কোন মিল নাই। তখন উনি বুঝতে পারেন উনি জ্বীনদের শহরে এসে উপস্থিত হয়েছেন। আর ওই লোক গুলি হল জ্বিন। তখন সেই জ্বিনেরা উনাকে একটি আদালতে উপস্থিত করলো। আর সেখানে জ্বিনদের কাজী জিজ্ঞাস করলো আপনি কেন ওই সাপটিকে হত্যা করলেন কেন ? ওই সাপটি জ্বিনদের একজন ছিল। সে আপনার কাছে হাদিস শ্রবন করতে আসতো। তো শাহ ওয়ালী মুহাদ্দেস দেহলভি (রহঃ) বলেন রাসুলুল্লাহ মোহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন কেউ যদি তার আকৃতি পরিবর্তন করে তাহলে তাকে হত্যা করা জায়েজ। তো জ্বীনদের সেই এজলাসে উপস্থিত কয়েকজন জ্বিন তাবেইনও হাদিসটারস সত্যতার পক্ষে কথা বলে। তারপর জ্বীনেরা আবার উনাকে ভারত বর্ষে দিয়ে আসে।
রাসুলুল্লাহ মোহাম্মদ (সাঃ) এর নব্যুয়তের খবর প্রথম মদীনায় পৌছেছিল জ্বিনদের মাধ্যমে। বায়হাকী শরীফে বর্ণিত আছে মদীনায় এক মহিলা থাকত। জাহেলিয়াতের যুগে ওই মহিলার একজন জ্বিন প্রেমিক ছিল। সেই জ্বিন একবার পাখির রুপ ধরে ওই মহিলার বাড়ির দেওয়ালের সামনে এসে বসে। মহিলাটি তখন পাখিটিকে বলে তুমি নেমে এসো। আমি তোমাকে কিছু শোনাব আর তুমি আমাকে কিছু শোনাবে। পাখিরুপি জ্বিনটি মহিলাকে বললো এখন থেকে তা আর হবে না। কেননা মক্কায় শেষ নবী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আবির্ভাব হয়েছে। উনি আমার এবং তোমার মাঝে ব্যভিচারকে চিরতরে হারাম ঘোষনা করে দিয়েছেন।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই অক্টোবর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৫৬