নৈরাজ্যবাদ এক ধরনের রাজনৈতিক দর্শন যা মনে করে রাষ্ট্র অপ্রয়োজনীয়, অনাকাঙ্খিত এবং ক্ষতিকর ও তার পরিবর্তে দরকার রাষ্ট্রবিহীন সমাজ। মানুষের সাথে সম্পর্কের মাধ্যমে এটি চায় কর্তৃপক্ষের বিলোপ বা ধ্বংস। নৈরাজ্যবাদীরা অবশ্য একমত হন না যে কি উপায়ে এটা করা যাবে।দ্যা অক্সফোর্ড কম্পানিওন টু ফিলোসফি অবশ্য বলেছেন যে, একটা নির্দিষ্ট সংজ্ঞায়িত অবস্থান নেই যাকে নৈরাজ্যবাদীরা আকড়ে ধরতে পারে এবং তারা বড় জোড় একটা পরিবারের তুল্য। নৈরাজ্যবাদের অনেক রকম প্রকারভেদ এবং ধরন আছে, সেগুলো সব পারস্পরিকভাবে স্বতন্ত্র না। সামাজিক এবং ব্যাক্তিগত নৈরাজ্যবাদ এই ২ ভাগে ভাগ করা যায়। নৈরাজ্যবাদককে সংস্কারপন্থী বাম ধারার আদর্শবাদ হিসেবে ধরা যায়। বেশির ভাগ নৈরাজ্যবাদী অর্থনীতি এবং নৈরাজ্যবাদী আইনী দর্শন প্রতিফলন করে কমিউনিজম ও সমবায়, সিন্ডিকেলিজম এবং অংশীদারিত্বের অর্থনীতির রাষ্ট্রবিহীন ব্যাখা।যাইহোক নৈরাজ্যবাদ ব্যক্তিগত চেষ্টাকে অন্তঃর্ভূক্ত করে যা বাজার অর্থনীতি এবং ব্যাক্তিমালিকানাধীন সম্পদকে সমর্থন করে বা নৈতিকভাবে অপ্রতিরোধ্য অহমবোধকে ।কিছু নৈরাজ্যবাদীরা আবার সমাজতন্ত্রী পদেও বহাল থাকেন এবং তারা আদি কালেও ছিলেন,আবার যুগের পর যুগ থাকবেনও।
নৈরাজ্যবাদ একটি সমাজ এবং রাজনৈতিক দর্শন যা রাষ্ট্র ব্যবস্থার অবসানের কথা প্রচার করে। আইন, তা প্রয়োগকারী বাহিনী, প্রশাসন, ইত্যাদির সমন্বয়ে গঠিত রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রকৃতপক্ষে ব্যক্তি বিকাশের জন্য বাধা একটি অত্যাচারের সুরক্ষিত যন্ত্রস্বরূপ এমন ধারণা থেকে এই মতবাদের উৎপত্তি। এই দর্শনানুসারে রাষ্ট্র মানুষ এবং সমাজের জন্য অপ্রয়োজনীয়।এই তত্ত্বের স্বাভাবিক অনুসিদ্ধান্ত হল রাষ্ট্র ব্যবস্থার অবসান ঘটিয়ে রাষ্ট্রবিহীন সমাজ ব্যবস্থার প্রতিষ্ঠা। সেই লক্ষ্য অর্জনের উপায় নিয়ে নৈরাজ্যবাদীদের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। কেউ বিপ্লবের কথা বলেন, আবার কেউ মানুষের সদিচ্ছার স্বাভাবিক বিজয়ের মাধ্যমে নৈরাজ্যবাদের প্রতিষ্ঠার কথা বলেন। রাষ্ট্রহীন সমাজ ব্যবস্থার ব্যাপারে তাদের দিকনির্দেশনায়ও পার্থক্য দেখা যায়। সাধারণভাবে - পারস্পরিক চুক্তি এবং সদিচ্ছার ভিত্তিতে একটি বিকল্প অর্থনৈতিক ও সামাজিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার কথা কল্পনা করা হয়।অরাজকতা বা সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সাথে নৈরাজ্যবাদকে যুক্ত করা হলেও তত্ত্বগতভাবে সেগুলোকে নৈরাজ্যবাদের সরাসরি পরিণতি বলা যায় না।
৬০ এর দশকে এবং ৭০ এর দশকে নৈরাজ্যবাদ বৃদ্ধি পায়। ১৯৬৮ সালে ইতালির কারারাতে আন্তর্জাতিক নৈরাজ্যবাদী ফেডারেশন গঠিত হয় যখন একটি আন্তর্জাতিক নৈরাজ্যবাদী কনফারেন্স চলছিল সেখানে। ইংল্যান্ডেও নৈরাজ্যবাদী আন্দোলন শুরু হয় পাঙ্ক রকের মাধ্যমে যাতে ছিল সেক্স পিস্তল এবং ক্রাসের মতো ব্যান্ডগুলো। বাসস্থান ও কর্ম সংকটের কারণে পশ্চিম ইউরোপে এত আন্দোলন নানা ভাবে দানা বাধতে থাকে।যদিও নারীবাদ নৈরাজ্যবাদের একটি অংশ কিন্তু ৬০ এর দশকে তা ফিরে আসে বিপুল উদ্দ্যমে দ্বিতীয় স্রোতের মাধ্যমে।আমেরিকার নাগরিক অধিকার আন্দোলন এবং ভিয়েতনাম যুদ্ধবিরোধী আন্দোলন উত্তর আমেরিকায় নৈরাজ্যবাদের উদ্ভব ঘটায়।বিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে শ্রমিক আন্দোলন ও প্রাণী অধিকার আন্দোলন নৈরাজ্যবাদে নতুন মাত্রা যোগ করে।
একটি গুরুত্বপূর্ণ সাম্প্রতিক নৈরাজ্যবাদ হলো মুক্ত ভালোবাসা। মুক্ত ভালোবাসা তার উৎস পায় জোসিয়া ওয়ারেন এবং পরীক্ষাধীন সম্প্রদায়ে যেখানে যৌন স্বাধীনতাকে দেখা হয় ব্যাক্তির নিজ মালিকানার পরিষ্কার এবং সরাসরি প্রকাশ। মুক্ত ভালোবাসা নারী অধিকারকে সংকুচিত করে যা অধিকাংশ বৈবাহিক আইন ও জন্ম নিয়ন্ত্রণবিরোধী পরিমাপের পরিপন্থী।তবে নৈরাজ্যকে ঘিরেই কিছু অসাধু রাজনীতিবিধদের মূল রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই অক্টোবর, ২০১৬ রাত ৮:০৮