গত বর্ষায় খুব খারাপ সময় গেছে কাসুুর,হাঁটতে হয়েছে খুব তবে কামাই হয়েছে কম।যেহেতু বর্ষায় মানুষের ঘরে চাল থাকেনা আর কাসুরও খয়রাত মেলেনা।আরেক অসুবিধা হলো বর্ষায় মেজবান হয়না তাই বর্ষা কালটা তার লম্বাই যায়।বর্ষায় বড়লোক মানুষ মারাগেলে-ও মেজবানের তারিখ দেয় বৈশাখের দিকে।শীতে ভালো চলে কাসুর, খয়রাত ভালো মেলে মানুষের ঘরে চাল থাকে।কষ্টটা হয় ভরা বর্ষায়।
কাসু বছরের প্রথম মেজবান খেয়ে ফেরার পথে এ সমস্তই ভাবছিল। আজকে ভাত ভালই পেয়েছে ডাল কিছু পেলেও গোস্ত তেমন পায়নি।ভাত ডাল গোস্ত পলিথিনে পোটলা করে খুতিতে ভরে কাধে নিয়ে হাঁটা দেয় কাসু। আর এ গুলি মানুষের এঁটো ছানা খাবার। কাসু গালি দেয় পষ্ট জবানে "হালারা গাদাইয়া হান্দায় ছানেনা মোডেও"বলতে বলতে রাস্তার পাশে দাড়ায় এবং দো-কাছা দেয়া লুঙ্গিটা আরেকটু গুটিয়ে দাড়িয়ে দাড়িয়ে প্রস্রাব করে। ডানে বামে কোন দিকে তাকানোর প্রয়োজন মনে করেনা। তার কাঁধে ভাত ডালের খুতি থাকাতে, তার দাড়ানো ছাড়া অন্য কোন উপায় থাকেন। কাসু হাঁটা শুরু করলে তার সাথে একটা ডুমো মাছি উড়ে আসলে সে কয়েকবার তাড়ানোর চেষ্টা করে ক্ষান্ত দেয়।আর পথে ছড়িয়ে যায় প্রায় পচে ওঠা ডালের ঠক গন্ধ।
আজকে মেজবান ছিল প্রায় পনেরো মাইল পশ্চিমে। কাসু এই পনেরো মাউল রাস্তা টানা হেঁটে যায়। একটু জিরানোর জন্যও থামেনা। বাড়ি পৌঁছাতে রাত হবে।যত আগে যাওয়া যায় সে তাড়নায় কাসু প্রায় দৌড়ের মত হাঁটে। তাতে ভাত ডাল পচে যাবার আগে ছেলে আর বউ খেতে পারে।খাবার পরে যা বাচবে, ডাল গোস্ত গরম করে রাখা হবে ভাতে পানি দেয়া হবে।কাসুর ধারনা ভাত ডাল সহজে পচেনা,যা একটু টক হয় তাতে বরং স্বাদ বাড়ে।তার বউ পচা ভাত খাওয়া না খাওয়া নিয়ে কিছু বললে কাসু গালি দেয়--- গোলামের ঝি মোগো প্যাড অইলো প্যেলাস্টিকের, তয় তোর মাগি এত জোলা অওয়ার ভয় ক্যা.... কাল পর্যন্ত এ ভাত ডালে চলে যাবে, কাসু ভাবে।মেজবানের ভাত ডাল টোকালে একটা অসুবিধা আছে সেদিন আর চাল খয়রাত করা যায় না। টোকানো ভাতই ভরসা।
কাছুর ছেলেটা একটু পাগল কিসিমের বা পাগলই তার উপর ডান হাত বাঁকা। পাগলামির কারনে নাকি অন্য কোন কারনে ছেলের খোরাকি বেশি যা অন্য মানুষের চেয়ে দি-গুন।কাছুর চিন্তার কারন এটাই।কাছুর ছেলে গোদা সেও খয়রাত করে। তবে সে খয়রাত করে জামা লুঙ্গী। গোদা প্রতিদিন দুই একটা জামা লুঙ্গী বাড়িতে নিয়ে আসে আর এতে তার মা বিরক্ত হয়ে বলে--- তুই তো মানষের বাড়ি খাইয়া আইতে পারো, হেলে তো ভাত কয়ডা বাচে,এ রোমাচোমা দিয়া মুই কি হরমু...তাতে গোদা তার মাকে গালি দেয় প্রায় বাপের মত---- গোলামের জি মানের বাড়ি কি মানু মরছে যে মুই ভাত খামু? মোর জামা লুঙি ধরবা না, মোর বিয়া হরা লাগবেনা। আর এভাবে গোদার জামা লুঙ্গী যে বাঁশের আড়ায় রাখা হয় সেখানে জামা লুঙ্গীর স্তুপ কেবল বাড়তে থাকে।
গোদা কারো বাড়ি খায় না সারা দিন লুঙী খয়রাত চেয়ে বাড়ি এসে ভাত খায়।তবে দু চার গ্রামের মধ্যে মেজবান হলে খেতে যায়।মেজবানে গোদা গলা পর্যন্ত ভাত খায় তবে বাপের মত ভাত টোকায় না।ভাত টোকানোর বিষয়ে বাপেও তারে কিছু বলেনা।গোদা কারো সাথে দেখা হলে শুধু জামা লুঙ্গী চায় তা না, হয় তো অনেকের কাছে চায়-ও না। তবে সে প্রাই বলে--- কবে একটা মানু মরবে হেলে ম্যাজবান খাইতাম।আর প্রাই বলে --- একটা মাইয়া পাইলে বিয়া হরতাম, একটা পাগলি-ও পাইনা।এরি মাঝে একদিন গোদা এক পাগলি পেয়ে যায় আর পাগলি কে নিয়ে মোল্লার কলা বাগানে ডুকলে,মোল্লা তার মোটা বেতের লাঠি দিয়ে গোদাকে মারতে থাকলে, গোদা বলে ---- কাগু পাগলরে মুই বিয়া হরছি হ্যাতে মোর দোষ কি.....।তাতে বরং মারের পরিমার বৃদ্ধি পায়।গোদার মা এ ঘটনায় আশ্চর্য রকম নিঃস্পৃহ থাকে আর গোদার বাপের, ছেলের চিকিৎসা করানো মত সংগতি না থাকাতে গোদা কিছু দিন ভুগে--- তারপর ভালো হয়ে যায়।
এ ঘটনার পর গোদা কারো সাথে দেখা হলে বা নিজে নিজেই শুধু বলতে থাকে--- কবে একটা মানু মরবে হেলে ম্যাজবান খাইতাম।গোদার এ ইচ্ছা পূরনে মোল্লা সাহেব মারা যায়।মোল্লা মারা গেলে কাসু জানাজার নামাজে যায়।কাসু, কাছে দূরে কোন মৃত্যুর খবর শুনলে সে জানাজায় অংশ নেয় আর এর কারন হলো মেজবানের তারিখ নিজ কানে শোনা যায়।জানাজার নামাজের আগে মোল্লার মেঝ ছেলে তার বাপের পক্ষে ক্ষমা ভিক্ষা চাওয়া এবং তিনি কেমন লোক ছিলেন জানতে চাইলে কাসুও সকলের সাথে উচ্চ কন্ঠে বলে ---হে ভালো মানু আলহে।মোল্লার ছেলে মেজবানের তারিখ তেসরা বৈশাখ ঘোষনা করলে জানাজার নামাজ শুরু হয়। যেহেতু কাসু দোয়া কালাম কিছুই জানেনা সে বার বার নিজ মনে আওড়াতে থাকে তেসরা বৈশাখ...,তেসরা বৈশাখ... এমন কি সে মৃদু জবানেও এক বার তেসরা বৈশাখ বলে ফেলে, আর তাতে সে হতচকিত হয়ে বোঝার চেষ্টা করে পাশের কেউ শুনলো কিনা আর তখনই ইমাম সাহেব সালাম ফিরান।
মোল্লার মেজবান নিয়া কাসু নানান ভাবনা-চিন্তা করতে থাকে। যেহেতু সে খয়রাতের জন্য হাঁটতে থাকে তাই তার চিন্তার অঢেল সময় থাকে আর এ চিন্তার পুরোটাই চাল আর ভাতের। মোল্লার মেজবান নিয়া কাসুর চিন্তাটা বরাবরের চেয়ে বেশি। হাজার দশের মত মানুষে খাবে, কাসু ভাবে--- কত মানসে ভাত গোস্ত ছানবে। আরেকটা সুবিধা নিজ গ্রামের মেজবান বারবার আসা যাওয়ায় সুবিধা হবে।বেশি ভাত ডাল টোকানো যাবে।কপালে থাকলে বেচে যাওয়া ভালো, ভাত ডাল গোস্ত-ও পাওয়া যেতে পারে।কাসু যেন এক কল্পনার জগতে হাঁটতে থাকে যেখানে শতশত ভাতের ঢিবী ডালের,নহর আর এগুলার মালিক সে। ঠিক যেন ইমাম সাহেবের বেহেস্তের বয়ানের সাথে সাদৃশ্য পূর্ণ।কাসু হাঁটার সময় আরেকটা কাজ করে প্রায়ই তেসরা বৈশাখ, তেসরা বৈশাখ বিড়বিড় করে বলতে থাকে। কাসু ভাবে তেসরা বৈশাখে সে কতইনা ভাত আর ডালের মালিক হবে।
তেসরা বৈশাখের দশ পনেরো দিন আগ থেকেই গ্রামে মোল্লাবাড়ি কেন্দ্র করে উৎসব ভাব বিরাজ করে।কাসু এ আনন্দ থেকে নিজেকে বঞ্চিত মনে করে যেহেতু তাকে হাঁটতে দূর গ্রাম পর্যন্ত যেতে হয়।
কাসুর দীর্ঘ দিনের অপেক্ষা ফুরিয়ে একে একে গরু জবাই করা হয়,মনকে মন চাল শতশত চুলায় বসানো হয়।রান্না শুরু হয় দোসরা বৈশাখ সন্ধ্যায় আর চলতে থাকে গভীর রাত পেরিয়ে পরের দিন সকাল এমনকি দুপুর অবধি । ভাতের ঢিবী বাড়তে থাকে। ডালের, গোস্তের পাতিলের সারি বাড়তে থাকে।দিন, দুপুরের দিকে গড়ালে মানুষের ঢল বাড়েতে থাকলে নদীর চরে হোগল পাতা বিছিয়ে দেয়া হয়। কাসু তার সিদ্ধান্ত মোতাবেক একটু দূরে গাছের তলে বসে থাকে। সে সিদ্ধান্ত নিয়েছে শেষ ছরকটে সে বসবে। তাতে করে বেশি ভাত টোকানো যাবে। ওদিকে মাথা গোনা শুরু হয় আর চলতে থাকে ঘন্টা পেরিয়েও আরো বেশি সময়।বৈশাখের রোদে মানুষ অধৈর্য হয়ে যায়। তার পরে-ও তারা বসে থাকে। তারা জানে মাথা গোনা শেষ না হলে খাবার পাবেনা।
মাথা গোনা শেষ হলে ---বলরে বল মুমিন চিৎকারে জানান দেয়া হয় খাবার দেয়ার।ভাত যেহেতু আগে দেয়া হয়, আর খাদিমদার ভাত দেয়া শুরুর আগে বলে----চাইল খারাপ হেইরফান্নে ভাতে একটু বেজা ভাব আছে,তয় খাওন যায়। এর পর গোস্ত দিলে তা আর মানুষ খেতে পারেনা। যারা মুখে দিয়েছে তারা থু করে ফেলে দেয়। একটা শোরগোল ওঠে আর তা ছরিয়ে যায় সারা চরের এমাথা থেকে ও মাথায়। ছরকটের সব মানুষ দাড়িয়ে যায় খাদিমদার ডাল দেবার ফুরসত পায় না আর । প্রথম ছরকটের মানুষের সাথে যারা অপেক্ষায় ছিল পরের ছরকটের জন্য তারাও হাঁটা দেয় বাড়ির দিকে।
কাসু প্রথমে কিছু বুঝতে পারেনা,সে মানুষের কাছে জানতে চাইলে তারা বলে---- ব্যাবাক ভাত গোস্ত পইচ্চা গ্যাছে, বাড়তে যাও এ্যা খাইলে জোলা অইবে....কাসু প্রথমে কিছুটা হতচকিয়ে গেলে-ও, পরে তার মন তীব্র আনন্দে ছেয়ে যায়।তার মনে হতে থাকে সে পৃথিবীর সব চেয়ে ধনীলোক।সে কিছু ক্ষনের মধ্যেই বিপুল ভাত, ডাল, গোস্তের মালিক হবে।সে নিজেকে প্রস্তুত করে নেয়। কাসু ছক আঁকে কিভাবে এ বিপুল খাদ্য তার বাড়িতে নেয়া যায়।এ সময় ছেলে বউ পাশে থাকলে উপকার হতো।তার ইচ্ছা বেশির ভাগ ভাত রোদে শুকিয়ে রাখবে অল্প কিছু পানি দিয়ে রাখবে। ভাত শুকালে তা চালের মত হয়, তা ভেজে খাওয়া যায়।সে কোথায় যেনো শুনছিল ভাত দিয়ে মদ তৈরি করা যায়।আর এ কথা মনে হলে কাসুর নিজেকে পাপি মনে হয়। সে মনে মনে তওবা করে নেয়। দানা খাবার, রিজিক নিয়া এমন পাপের কথা চিন্তা করা তার উচিত হয়নি।কাসুর ভাত টোকানোর প্রতিযোগী আছে আর তারা হল তার মত কিছু মানুষ,কুকুর আর কাক।কাসুু চরের দিকে নজর দেয় তার প্রতিপক্ষের অবস্থান দেখে নিতে।চর প্রায় ফাকা হয়ে গেছে। শুধু পরে আছে সাদা সাদা ভাতের স্তুপ। কাসুর চোখ চকচক করে ওঠে। তাকে প্রচুর খাটতে হবে। কাক কুকুর বা অন্য খয়রাতি গুলায় নিয়েও অনেক বেচে থাকবে।যদিও প্রতিযোগী মানুষদের চোখে পরে না তার,দূরে কিছু কুকুর দাড়িয়ে তবে তারা কিছু খাচ্ছেনা। আর আকাশে এক ঝাক কাকা বৃত্তাকারে কেবল উড়তে থাকে কিন্তু নিচে নামেনা।
দিন,বিকালের দিকে হেলে গেলে,কাসু চরের মধ্যে ধিরে নামতে থাকে এতক্ষন সে পরিস্থিতি দেখে গেছে। তার ধারনা ছিল মোল্লার ছেলেরা হয়তো খাবার তার আত্মীয় পরিজনের মধ্যে বিলিয়ে দিবে। কিন্তু কাসু দেখলো চর থেকে সর্বশেষ মানুষটিকেও চলে যেতে। ফলে সে নিশ্চিত হয় সমস্ত খাদ্যের মালিক সে। আর তাকে ধিরে সুস্থে কাজে নামতে হবে।চরের যে পাশে ভাতের ঢীপি গুলি সার করে রাখা সে দিকে কাসু যায়। কাছু ভাতের ঢিপী গুলি গুণতে থাকে এক দুই তিন...... সে গণনা ভুল করে ফেলে সে আবার গনে, আবার গনে। সে এক ঢীবি থেকে আরেক ঢীবিতে দৌড়াতে থাকে যেন সে বিবি হাজেরা আর প্রতিটা ভাতের ঢীবি যেন এক একটি সাফা মারওয়া।কাসু হাফিয়ে যায়,তার ক্লান্ত লাগে এবং তার মনে পরে সে আজকে কিছু খায়নি। সে ক্ষুধা টের পায় সে নিজের সাথে বলতে থাকে সব ভাতই তো তার, গোনার কি দরকার।
কাসু কাটা কলাপাতার স্তুপ থেকে পাতা নিয়ে, তাতে বেশ কতগুলি ভাত নেয়। আর বসে গিয়ে গোস্ত ফেলে রাখা হয়েছে যেখানে। খাবলা খাবলা গোস্তো নিছে ভাত মেখে খেতে থাকে।কাসু ভাবে---- একটু চুক্কা অইছে ঠিকই তয় খাইতে খারাপ না।কাসু পচা খাবার খেয়ে অভ্যস্ত, সে আরো ভাত নেয় গোস্ত নেয় আর খেতে থাকে। কাসু নিজের সাথে বলতে থাকে-----মোর প্যাড অইছে প্যেলাস্টিকের প্যাড, য্যা খামু অজম অইয়া যাইবে।তখনি কাসু খেয়াল করে কাক গুলি তীব্র কাকা স্বরে পশ্চিম দিকে উড়ে যাচ্ছে আর কাসুর মনে পরে তার ছেলে বউয়ের কথা।তার যদি পাখা থাকতো তবে উড়ে গিয়ে তাদের কিছু খাবার দিয়ে আসা যেত।আর মনে পরে পখিরা কিভাবে তার বাচ্চাদের ঠোঁটে করে খাবার খাওয়ায়।কাসু ভাবে পাখির মতো কি মানুষের পক্ষে তার বাচ্চাদের খাওয়ানো সম্ভব। তার ঘৃণায় গা গুলিয়ে ওঠে। কাসুর বমিবমি লাগে এবং সে বমি করে দেয়।তার দূর্বল লাগে সে ভাবে এই অদ্ভুত চিন্তার ফলে তার এমন হয়েছে।কাসু খেয়াল করে সন্ধ্যা প্রায় শেষ। নদীর ওপারে পূব আকাসে বড় একটি চাঁদ উঠলো কেবল। কাসুর মনে হয় আজ বুঝি পূর্ণিমা। চাঁদের আলোয় তার ভাত টোকাতে সুবিধা হবে।কাসুর মনে তাড়া আসে তবে সে ক্লান্ত। সে ভাবে বমি হয়েছে তাই মনে হয় শরীর এমন করছে। সে সিদ্ধান্ত নেয় সে আর একটু ভাত খেয়ে নিয়ে কাজে নেমে পরবে। কাসু এক নলা ভাত মুখে দিলে তার শরীর আবার গুলিয়ে ওঠে। কাসু উঠে দাড়ায় আর তখন তার মনে হয় সে যেন হঠাৎ অন্ধকারে তলিয়ে যাচ্ছে।এবং সে অন্ধকার কেটে গিয়ে সে যেন তীব্র আলোর সুরঙ্গে ভেতর ভেসে যাচ্ছে।তার নিজেকে খুব হালকা মনে হয় এবং হালকা হতে হতে কাসু অসীম শূণ্য হয়ে যায়।
কাসু দূর গ্রামে গেল মাঝে মধ্যে বাড়ি ফেরেনা। কোন মসজিদেরর বারান্দায় রাতে থেকে যায়।কাসুর বউ ভাবে ---মানুটা ম্যাজবানে গ্যালো, গ্রামের ম্যাজবান, রাইতে ঘরে আবার কতা, গ্যালো কোম্মে।কাসুর বউ কোন খোঁজ করেনা। গ্রামে এতবড় একটা ঘটনা ঘটলো তার ঝামেলায় কে মাথা ঘামাবে বা অন্য সময়েও বা কে আসে তার অসুবিধায়।
পরের দিন বিকালে কাসুকে পায় গ্রামের লোক জন। কোন না কোন ভাবে কাসুকে তারা পায় চরের উপর। ভাতের স্তুপের উপর চিৎ হয়ে পরে আছে কাসু।কাসুর গাল ভর্তি ভাত ফলে তার ভাঙা গাল ফুলে আছে।কাসুর শরীরও কিছুটা ফুলে আছে। একটা উৎকট গন্ধে ভরে আছে পুরা চর। পচা ভাত, পচা গোস্ত, পচা কাসুতে পুরা চরে মানুষের টেকা দায়। তবুও কিছু মানুষ গামছ নাকে মুখে পেঁচিয়ে কাসুকে দেখতে থাকে।
যেন এক অসীম নিঃশব্দতা ঘিরে আছে পুরো চর। এ নিঃশব্দতা বার বার ভেঙে দেয় একটি নীলডুমো মাছি,মাছিটি কাছুর ঠোঁটের উপর বার বার পরে আর পোঁপোঁ শব্দ করে। এর চেয়েও অনাকাঙ্ক্ষিত শব্দে জমায়েত লোকজন চমকে ওঠে। যখন কাসুর ছেলে কোথা থেকে এসে বলতে থাকে--- আব্বায় মরছে ম্যাজবান খামু....আব্বায় মরছে ম্যাজবান খামু......গোদা বাড়ির দিকে হাঁটা দেয় আর বলতে থাকে--মা আব্বায় মরছে ম্যাজবান খামু.....মা আব্বায় মরছে ম্যাজবান খামু.......
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা অক্টোবর, ২০২০ সকাল ১০:৫০
১. ০৩ রা অক্টোবর, ২০২০ দুপুর ১:৪২ ০