চ্যারিটি কিংবা ক্ষুদ্রঋণ কখনোই দারিদ্র্যতা খতম করে না। চ্যারিটি এবং ক্ষুদ্রঋণ দরিদ্রকে আরো বেশি দরিদ্র করে মানে অভাবীকে আরো বেশি অভাবী করে।
যারা চ্যারিটি এবং ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্প চালায় তারা ব্যসিক্যালি রাষ্ট্রের অব্যবস্থাপনা বা অসহায়ত্বকে টার্গেট করে জনগণের দারিদ্রতার উপরে দ্রুত সমাধানের প্রলেপ লাগিয়ে নিজেদের ব্যাক্তিগত, সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ করে। এইসব কাজ যারা করে তারা ব্যসিক্যালি জুমা মসজিদের ঈমামের মতন পাবিলিক ক্যারেক্টর তৈয়ার করে আর ভিত্রে ভিত্রে আকাম করে! মানে ধান্ধা করে! নিরেট ভদ্র ভাষায় যেটাকে বলে, বাটপারি।
দারিদ্রতা খতম করতে হইলে কর্মসংস্থানের বিকল্প নাই। নয়া নয়া কর্মসংস্থান তৈয়ার না করার বদলে দরিদ্র ব্যক্তিকে এক টাকায় কিংবা ফ্রি চাল ডাল নুন তেল অথবা অর্থনৈতিক সহায়তা দেওয়া অথবা একবেলা পেট ভর্তি ভাত খাইয়ে দেওয়া কোন সমাধান নয়।
কিন্তু এই পদ্ধতিতে যারা দারিদ্র্য বিমোচন করতে চায় তারা ব্যাসিক্যালি দারিদ্রতাকে মানে অভাবকে পুঁজি করে ব্যবসা করে। তাই আই হেইট পেশাদার চ্যারিটি এবং ক্ষুদ্র ঋণ নামের ভাওতাবাজি।
চ্যারিটি'কে যদি কেউ পেশা বানাই ফেলে বুঝতে হবে সেটা প্রকৃত পরোপকার নয়। চ্যারিটি পেশা হইগেলে সেটা আর চ্যারিটি থাকে না সেটা চাকরি বা রুটি রুজির মাধ্যম হইযায় কিংবা ব্যক্তিগত, সামাজিক অথবা রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের উপায়তে পরিণত হয়।
আমাদের আশেপাশে বহু মানুষ আছে যারা নিজেদের অপরাধ এবং অপকর্ম ঢাকতে মানে আড়াল করতে চ্যারিটি করে। ধর্মীয় উপসনালয়ে দান খয়রাত করে, গরিব অভাবীদের সাহায্য করে। মাদ্রাসা এতিমখানা ডোনেশন দেওয়াসহ আরো অনেক কিছুই করে। কারণ এইসবে সাধারণ মানুষ ব্যক্তিগত অপরাধ কিংবা অপকর্ম আড়াল করে "ভালো মানুষের" পার্মানেন্ট সার্টিফিকেট দিয়ে দেয়!
চট্টগ্রামের একজন সাংসদ আছেন। যিনি প্রথবার আওয়ামীলীগের নমিনেশন পাওয়ার ঠিক আগ মূহুর্ত পর্যন্ত জামাত করেছে। কিন্তু নৌকা পাওয়ার পর নির্বাচনে জিতেও যায়। তারপর সমালোচনা শুরু হয় দলের ভেতরে এবং বাইরে! এইলোক আবার চরম এক্সপার্ট মগজ ধোলাইয়ে। সে গোটা শহরে ভর্তুকি দিয়ে শ্রমজীবী এবং গরিব মানুষদের জন্য বিরানি বিক্রি করে। প্রজেক্টের নাম "বিশ টাকায় বিফ বিরানি"। বিফের পাশাপাশি সবজি ও মুরগি বিরানিও থাকে। সবজি বিরানি দশ টাকা। মুরগি আর বিফ বিশ টাকা।
আমি বেশ কয়েকবার খেয়েছি। হেবি টেষ্ট এবং খাবারের মান অত্যন্ত ভালো। সকাল এগারোটা থেকে শেষ না হওয়া পর্যন্ত শহরের বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে ভ্যান নিয়ে বিতরণ করে। সবাই খুশি হয়। ভ্যানে সাংসদের ছবি সম্বলিত পোষ্টার থাকে।
এইটাও একটা চ্যারিটি। এইখানে তার দুই পয়সা আয় হয় না। কিন্তু যেটা আয় হয় সেটা হচ্ছে তার রাজনৈতিক এবং সামাজিক ফায়দা! সাংসদের এই প্রজেক্টের উদ্দেশ্যও তাই। এই প্রজেক্ট প্রায় দশ বছরের বেশি সময় ধরে চলছে। ভবিস্যতে কতোদিন চলবে কে জানে...
শুধু এইটা না এই টাইপ আরো বহু চ্যারিটি তার আছে। যেমন আছে শ্রমজীবী নারীদের জন্য ফ্রি পরিবহন সার্ভিস। তার উদ্দেশ্য এইসবের মধ্য দিয়ে টাকা ইনকাম নয়; উদ্দেশ্য রাজনৈতিক এবং সামাজিক ইমেজ তৈরি করে বারবার সাংসদ নির্বাচিত হওয়া!
আরো দেখবেন ড্রাগস ডিলার, সুদখোর ঘুষখোর চ্যারিটি কইরা বেড়াচ্ছে। কিন্তু ক্যান? কারণ চ্যারিটিই একমাত্র সার্বজনীন মাধ্যম যেটাতে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি মূহুর্তের মধ্যে চেঞ্জ হয়ে যায়!
নিরেট চ্যারিটি কোথাও নাই সবই রাজনৈতিক সামাজিক এবং অর্থনৈতিক ফায়দা হাসিলের মাধ্যম। কারণ চ্যারিটি কখনোই দারিদ্র্যতা খতম করতে পারে না পারে না সমস্যার সমাধান করতে।
তাই আবারো বলছি, বিদ্যানন্দ বলেন আস সুন্নাহ ফাউন্ডেশন বলেন কিংবা মাস্তলসহ আরো যা যা ননপ্রফিটেবল সংগঠনের নামই বলেন না ক্যান সবই ব্যাক্তিগত, সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্যই তৈয়ার হইছে।
এরা আমার আপনার টাকায় অন্যকে সাহায্য করার নামে মধ্যস্বত্ব ভোগ করে। আমি অবশ্য নিজের আত্বীয়-স্বজন পাড়া প্রতিবেশি চেনা জানা লোক ছাড়া কোন প্রতিষ্ঠানে অর্থ সহায়তা করি না। ইনশাআল্লাহ ভবিস্যতেও করবোনা!
এই সেইদিন আমি যখন ডলার পাঠাইলাম মা'রে ; মা আমাকে ফোন করে জিজ্ঞাস করলো, এতিমখানায় পাঁচ হাজার টাকা দান করবে কি না? আমি কইলাম, মা তোমার যদি এতিম খাওয়াইতে মন চায়, তাইলে দাওয়াত দিয়া ডাইকা আইনা পেট ভরাইয়া খাওয়াই দাও কিন্তু খবরদার আমার মেহন্নতের টাকা এতিনখানার ফান্ডে দিও না। তারা আমার টাকা যে এতিমদের খাওয়াবে তার গ্যারেন্টি কী?
আমি দুনিয়াতে যদি কোন গোষ্টিকে সবচাইতে বেশি অবিশ্বাস করি সেটি হইলো আলেম-ওলেমা গুষ্টি! এরা দুনিয়ার সবচাইতে বড় বাটপার! দুনিয়া শুরুর পর থিকাই এই আলেম-ওলেমা শ্রেণি ধর্মের লেবাসে মানুষের বিশ্বাসকে ধোঁকা দিয়েই যাচ্ছে! এদের বিশ্বাস করে ঠকার চাইতে একেবারে অবিশ্বাস করাই উত্তম! মামুনুল হক কি ধোঁকাটাই না দিলো আমাদের অন্যের বউরে নিজের নামে চালাইয়া দিয়া... নাউজুবিল্লাহ!
একটা এনজিও দশজন দরিদ্র মহিলাকে একসাথে করে একটা সমিতি করে। তারপর প্রত্যেককেই ২৫ হাজার করে ঋণ দেয় গরু কেনার জন্য। উদ্দেশ্য গরুকে ছয়মাস পালবে তারপর কোরবানির ঈদে বিক্রি করে ঋণ পরিশোধ করবে। যা লাভ হবে তা দিয়ে তাদের দারিদ্র্যতা খতম হয়ে যাবে। একেতো তারা খাইতে পারতেছেনা দারিদ্রতার জন্য। তার উপরে গরুর খাবার জোগাড় করার জন্য আবারো ঋণ নিতে হলো। গরিব হইলো আরো গরিব! এই যে ঋণের চক্করে পইড়া কিডনি বেচতে হচ্ছে ঘরবাড়ি ভিটে মাটি বিক্রি করে দেউলিয়া হচ্ছে সেইসব খবরতো আমরা প্রায়ই দেখি! কিন্তু আমরা ভুলে যাই নোবেল পুরস্কারের আনন্দে!
একটা নসিহত দিই আপনাদের, আপনে যদি মানুষকে সাহায্য করতেই চান তাহলে কর্মসংস্থান তৈয়ার করে দিন। সেটা না পারলে আপনে আপনার আত্বীয় স্বজনকে সাহায্য করুন পাড়া প্রতিবেশিদের সাহায্য করুন।
দেশের সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী বেকারত্বের সংখ্যা ২৭লাখ। সংখ্যাটা বেশ ছোট লাগছে না? যেটা পাঁচ বছর আগেও ২কোটি ছিলো। আমি যেহেতু একজনকেও বেকার হিশেবে দেখতে চাই না তাই সংখ্যাটা আমার কাছে এখনো অনেক বড়। আপনার কী ধারণা দেশের চ্যারিটি সংগঠন কিংবা ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্প এইসব বেকারের দারিদ্রতাকে খতম করতে পারবে?
তাই বলছি, আপনার দানে অন্যকোন মধ্যস্বত্বভোগী যেনো অংশীদার হইতে না পারে তার জন্য নিজের দান নিজে করুন আপনার আত্বীয়-স্বজন পাড়া প্রতিবেশীদেরকেই করুন। তারাই আপনাকে দাফন কাপন করবে। আপনার জন্য স্রেফ তারাই কাঁদবে; অন্যকেউ নয়!
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে এপ্রিল, ২০২৩ সকাল ৮:২২