১৯৫১ সালে ব্রিটিশ রাজকীয় আর্কাইভে রহস্যজনক কিছু দলিল দাস্তাবেজ পাওয়া যায় ,এই দলিল দস্তাবেজ আর 'মুন্সি আবদুল করিম এর হারানো ডায়েরী (যা পরে পাওয়া যায়) এর উপর ভিত্তি করে রানীর সেক্রেটারি ফ্রেডেরিক পনসোনবি একটি গ্রন্থ রচনা করেন। এই গ্রন্থের মাধ্যমে সর্ব প্রথম জনসমক্ষে আসে ইতিহাসের অনুদ্ঘাটিত এক রহস্যের- 'মুন্সি আবদুল করিম ও মহারাণী ভিক্টোরিয়ার প্রেম'।
ব্রিটেনের রাণী মহারাণী ভিক্টোরিয়া সম্পর্কে সকলেই অবহিত আছেন। আমরা দেখি কে ছিলেন এই 'মুন্সি আবদুল করিম।
তার পুরো নাম মুন্সী হাফিজ মোহাম্মদ আবদুল করিম। জন্ম ১৮৬৩ সালে ঝাঁশির কাছে লালতপুরে। তার পিতা হাজী মোহাম্মদ ওয়াজির উদ্দিন। তিনি ছিলেন হাসপাতাল সহকারী।
আবদুল করিম ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর সঙ্গে কান্দাহার অভিযানে আফগানিস্তানে গিয়েছিলেন। ফারসি ও উর্দু শিখেছিলেন ব্যক্তিগতভাবে। প্রথমে তিনি আগর রাজ্যের জাওয়ারার নবাবের উকিল হিসেবে কাজ করেছিলেন। পরে সেটা ছেড়ে তিনি নিযুক্ত ছিলেন আগ্রা জেলের কেরানি হিসেবে। জেলের পরিদর্শক জন টাইলারের সাথে আব্দুল করিমের বেশ ভালো সম্পর্ক ছিলো।
রানী ভিক্টোরিয়া ভারতীয়দের ব্যাপারে অনেক বেশি কৌতূহলী ছিলেন। তাই রানীর সিংহাসনে বসার ৫০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে ভারত থেকে দুজন রাজ কর্মচারী আনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। সেই দুজনকে বাছাই করার দায়িত্ব দেওয়া হয় জেল পরিদর্শক জন টাইলারকে। জন টাইলার বাছাই করেন আব্দুল করিম আর মোহাম্মদ বকশকে। সেই মোতাবেক ‘মোহাম্মদ বকস’ আর ‘মোহাম্মদ আবদুল করিম’ নামের এই দুজন ভারতীয়কে ব্রিটেনে নিয়ে আসা হয়। তারা দুজন নিয়োগ পান রাজপরিবারের ‘খিদমতগার’ বা ‘রাজকীয় খাদ্য পরিবেশক’ হিসাবে।রানীর সেবক হওয়ার জন্যে প্রেরণ করার পূর্বে তাদের অল্পবিস্তর ইংরেজি ভাষা আর রাজপরিবারের চালচলন সম্পর্কে শিক্ষা দেয়া হয়।
রানী ভিক্টোরিয়ার নোটবুক থেকে জানা যায়, তার সাথে ভারতবর্ষ থেকে আসা দুই কর্মচারীর সাথে প্রথম দেখা হয় ১৮৮৭ সালের ৩ জুন উইন্ডসর দুর্গে। এই দুই রাজ কর্মচারীর সাথে প্রথম দেখার কথা রানী তার দিনলিপিতে এভাবে লিখে রেখেছেন–
(“The one Mohammed Buksh, very dark with a very smiling expression… and the other, much younger, called Abdul Karim, is much lighter, tall and with a fine, serious countenance. They both kissed my feet.”)
‘একজনের নাম মোহাম্মদ বুখশ, খুবই কালো, তবে অত্যন্ত হাসিখুশি চেহারার... আরেকজন বেশ অল্প বয়স্ক, নাম আবদুল করিম, অনেক উজ্জ্বল, লম্বা ও সুদর্শন। তার পিতা আগ্রার একজন স্থানীয় চিকিৎসক। তারা উভয়ে আমার পায়ে চুমু খেলো।’
অপর দিকে আবদুল করিম তার ডায়েরিতে রানীর সঙ্গে তার প্রথম সাক্ষাতের কথাটি লিখেছেন এভাবে : ‘ডা. টেইলর ও আমাকে ডাইনিং রুমের কাছে দাঁড়ানোর নির্দেশ দেয়া হলো এবং আমরা সে অনুযায়ী হার ম্যাজেস্ট্রির আগমনের প্রতীক্ষা করতে লাগলাম। আমি মহামান্বিতা সম্রাজ্ঞীর কাছাকাছি হয়ে কিছুটা নার্ভাস হয়ে পড়েছিলাম, তিনি এইচআরএইচ দ্য ডিউক অব কনট ও প্রিন্সেস বিত্রেসকে নিয়ে প্রবেশ করলেন। ডা. টেইলর সঙ্গে সঙ্গে হাঁটু গেড়ে তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করলেন এবং আমি প্রাচ্যদেশীয় কায়দায় করলাম। আমি তাকে নজর দিলাম, তার দুই হাতে একটি সোনার মোহর দিলাম, হার ম্যাজেস্ট্রি তা স্পর্শ করে ভারতীয় প্রথা অনুযায়ী সরিয়ে রাখলেন। তারপর রানী খুশি হয়ে ডা. টেইলরের সঙ্গে দুই-একটি কথা বললেন, আর এভাবেই ভারতবর্ষের সম্রাজ্ঞীর সঙ্গে আমার প্রথম সাক্ষাৎকার শেষ হলো।’
একদিন খাবার টেবিলে পরিবেশনকৃত একটি খাবার বেশ ভালো লাগে ভিক্টোরিয়ার। তিনি জানতে চান কে রান্না করেছে এই খাবার। ভারতীয় খিদমতগার মোহাম্মদ আবদুল করিম রেঁধেছিলেন সেটি। ২৪ বছর বয়সী সুঠাম ভারতীয় তরুণ করিমকে পুনরায় দেখে বেশ উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠেন রানী ভিক্টোরিয়া।
করিমকে নির্দেশ দেন ভালোভাবে ইংরেজি ভাষা শিখে নেয়ার জন্য। তরুণ করিম ইংরেজি ভাষা দ্রুত শিখে নেয়ার ফলে রানীর সাথে বিভিন্ন বিষয়ে প্রায়ই তার কথা হতো। মাত্র এক বছরের মাথায় রানীর এতোটাই কাছের লোক হিসেবে জায়গা করে নিয়েছিলেন যে, খিদমতগারের কাজ তার ভালো লাগছে না শুনে রানী তাকে নিজের উর্দু ভাষার শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ দেন। ১৮৮৮ সালের আগস্ট মাসে আব্দুল করিমকে ‘মুন্সী’ উপাধি দিয়ে রানী তাকে নিজের শিক্ষক হিসেবে নিয়োজিত করেন।
রানীর সফরগুলোতেও সঙ্গী হিসেবে থাকতেন আব্দুল করিম। রানীর নির্দেশেই বালমোরাল ক্যাসেলের পাশে তার জন্য নির্মাণ করা হয় ‘করিম কটেজ’। সুসজ্জিত কটেজেই আব্দুল করিম সপরিবারে বসবাস করতেন। পাশাপাশি রানীর বিশেষ আদেশে তাকে ভারত বিষয়ক সচিব নিয়োগ দেওয়া হয়। তাই ভারত সংক্রান্ত রাজসিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে রানী ভিক্টোরিয়া তার পরামর্শ চাইতেন।
আব্দুল করিমকে সচিব নিয়োগ দেয়াকে কেন্দ্র করে রাজপরিবারের সদস্যদের মধ্যে চাপা অসন্তোষও ছিলো। সাধারণ এক ভারতীয় খিদমতগার থেকে রানীর পরামর্শক হয়ে উঠায় রাজপরিবারে অনেকের চক্ষুশুলে পরিণত হয়েছিলেন আব্দুল করিম। রাজপরিবারের অনেকের মতামত উপেক্ষা করে ১৮৯৯ সালে রানী ভিক্টোরিয়ার ৮০তম জন্মদিন উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে মুন্সি আব্দুল করিমকে রাণী ‘কমান্ডার অব দা অর্ডার (CVO)‘ উপাধিতে ভূষিত করেন।
কমান্ডার অব দা অর্ডার এ ভূষিত হবার পর আব্দুল করিম
কমান্ডারদের সম্মানের অবস্থান মূলত নাইট উপাধিধারীদের পরেই। ‘কমান্ডার অফ দ্য অর্ডার’ হিসেবে নিযুক্ত হওয়ার ফলে আব্দুল করিম রানীর দেয়া তলোয়ার বহন করার অনুমতি পেয়েছিলেন। সেই সাথে রাজদরবার এবং প্রাসাদে রানীর স্বাক্ষরিত অনুমতিপত্র ছাড়াও দেখা করার অনুমতি লাভ করেন।আগ্রার এক কেরানী থেকে তিনি ওই সময়ের সবচেয়ে ক্ষমতাধর শাসক রানী ভিক্টোরিয়ার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ ও সবচেয়ে প্রভাবশালী বন্ধুতে পরিণত হয়েছিলেন।
রানীও আব্দুল করিমের উপর রাজপরিবারের সদস্যদের চাপা ক্ষোভের স্বরূপ অনুমান করতে পেরেছিলেন। রানী বুঝতে পেরেছিলেন তার মৃত্যুর পরেই হয়তো আব্দুল করিমকে তার কটেজ থেকে বিতাড়িত করে ভারতে ফেরত পাঠানো হতে পারে।
মুন্সি আব্দুল করিমের জন্য নির্মিত ‘করিম কটেজ’
তাই তার জীবদ্দশাতেই ভারতে আব্দুল করিমের জন্যে জায়গা বরাদ্দ দেয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। পাশাপাশি রাণীর আদেশ ছিলো আব্দুল করিম যদি ব্রিটেন থেকে ভারতে ফিরে যান, তাহলে তার মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত ভারতের লর্ড ভাইসরয় তাকে প্রতিবছর ৬০০ রুপি হারে ভাতা দিতে বাধ্য থাকবে।
মুন্সীর চেয়ে রানী বয়সে ছিলেন ৪২ বছরের বড়। অসম প্রেম হতেই পারে। তবে এ ক্ষেত্রে সম্পর্কটা ছিল সম্ভবত ‘মানসিক’। বিশাল সাম্রাজ্যের অধিকারিণী হয়েও রানীর অন্তরঙ্গ বলতে কেউ ছিলেন না। বিশেষ করে ১৮৬১ সালে স্বামী আলবার্ট মারা গেলে ব্যক্তিগত জীবনে অনেকটাই নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েন রানী। এ সময় তাকে সঙ্গ দিতেন জন ব্রাউন নামে এক চাকর। তারা এত ঘনিষ্ঠ ছিলেন যে তারা পরস্পরের প্রেমে এবং এমনকি গোপনে বিয়ে করেছেন কি না তা নিয়ে গুঞ্জন চলতে থাকে। জন ব্রাউনএর মৃত্যুর পরে (১৮৮৩) এলেন আবদুল করিম। তার সঙ্গেও রানীর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। রানী আব্দুল করিমের কটেজে নিশীবাস করতে লাগলেন। ফলে আরেক দফা কানা-ঘুষা শুরু হয়।
উল্যেখ্য যে, রানী ও মুন্সীর সাক্ষাতের সময়ে করিমের বয়স ছিল ২৬ বছর, আর ভিক্টোরিয়ার ৬৮। ব্যবধান ৪০ বছর। প্রায় ১৫ বছর তারা একত্রে ছিলেন।
১৮৮৮ সালে রানী স্যার থিওডোর মার্টিনকে লিখেন যে, “মুন্সি খুবই চমৎকার লোক, চতুর, সত্যিকারের ধার্মিক এবং অত্যন্ত মার্জিত ভদ্রলোক, যিনি বলেন, ‘খোদা এই হুকুম দিয়েছেন’, খোদার নির্দেশ তারা পুরোপুরি পালন করে। তাদের এমন ঈমান এবং জ্ঞান আমাদের জন্য বড় উদাহরণ।” স্যার স্ট্যানলি লেন পুলের কাছে লেখা রানীর সচিব স্যার পনসোনবির একটি মূল চিঠিতে (ড. ফারহান আসারের সংগ্রহ) জানিয়েছেন, কথাবার্তায় মুন্সী নবী মোহাম্মদ ( সাঃ ) সম্পর্কে রানীকে যেসব জানিয়েছেন, তাতে দেখা যায়, তিনি (রানী) ইসলামের প্রতি আগ্রহী ছিলেন।
আবদুল করিমের গলায় একবার একটা ফোঁড়া হলে রানী ব্যক্তিগতভাবে তার পরিচর্যা করেন। তিনি তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. রিডকে চিকিৎসার ভার দিয়ে বলেন, আবদুল করিম বিদেশ-বিভুঁয়ে পড়ে আছে। তাকে দেখার কেউ নেই, এখন যেন তার কোনো অবহেলা না হয়। ডা. রিড লিখেছিলেন, ‘রানী দিনে দুবার আবদুল করিমের কক্ষে গিয়ে তার কাছ থেকে হিন্দুস্তানি শিক্ষা নেন, তার গলা পরীক্ষা করেন, তার বালিশগুলো ঠিকঠাক করে দেন।’ ওই চিকিৎসক এটাকে ‘মুন্সী-ম্যানিয়া’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন।
মুন্সীর প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করে রানী তাকে কটেজ, দামি দামি উপহার, খেতাব, তার ব্যবহারের জন্য সহিসসহ ঘোড়ার গাড়ি ইত্যাদি উপহার দিয়েছিলেন। আবদুল করিমকে একটি চিঠিতে রানী লিখেছিলেন, ‘আমার দীর্ঘ চিঠিটি আমি (আলাদাভাবে) পাঠিয়েছি, যা প্রায় এক মাস আগে লিখেছিলাম, তাতে আমার একান্ত চিন্তাভাবনা আছে এবং সেটা কোনো মানুষই কখনো জানবে না বা তোমার এর জবাব দিতে হবে না। তুমি যদি এটা পড়তে না পারো (রানীর হাতের লেখার ইঙ্গিতপূর্ণ) তবে আমি তোমাকে পড়তে সাহায্য করব এবং তারপর সঙ্গে সঙ্গে এটা পুড়িয়ে ফেলব।’রানী কী লিখেছিলেন, সেটা কোনোকালেই জানা যাবে না। কারণ তিনি পড়ার পরই চিঠিটি পুড়িয়ে ফেলার ইচ্ছা ব্যক্ত করেছিলেন। আবদুল করিমকেও ওই গোপন চিঠির জবাব পর্যন্ত দিতে বারণ করেছিলেন। তবে চিঠিটিতে রানী অনেক গুরুত্বপূর্ণ একান্ত কথা বলেছিলেন তাতে সন্দেহ নেই। তিনি ডুশেস অব কনটকেও এ প্রসঙ্গে জানিয়েছিলেন, ‘আমি তাকে অনেক ভালোবাসি, সে খুবই ভালো, ভদ্র এবং তার সঙ্গে মনের মিল রয়েছে।’
কাছাকাছি অবস্থান করার পরেও রানী ভিক্টোরিয়া ১৩ বছর ধরে ‘মুন্সী’ আবদুল করিমকে প্রায় প্রতিদিন চিঠি লিখতেন এবং কোনো কোনো দিন একাধিক। কোনো কোনো চিঠিতে তাকে তিনি সম্বোধন করতেন ‘প্রিয়তম মুন্সী’ ও ‘তোমার ঘনিষ্ঠতম বন্ধু’ বলে। কোনো কোনো সময়ে রানী ভিক্টোরিয়া এমনকি চুমু খেয়ে চিঠি শেষ করতেন। তাদের সম্পর্ক নিয়ে নানা কানাঘুষা চলত।রাজপরিবারের সদস্যরা এমনকি রানীর পুত্র ও উত্তরসূরি পর্যন্ত এই সম্পর্কে ক্ষুব্ধ ছিলেন। কিন্তু রানী এসবের থোড়াই কেয়ার করতেন। তিনি উইল করে গিয়েছিলেন যে তার মৃত্যুর পরে আবদুল করিমই যেন অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার ব্যবস্থা করে। এবং কফিনে শেষ বারের মত তাঁর মুখ দেখবে মুন্সী’ আবদুল করিম, মুন্সী দেখার পর পরই যেন কফিনের মুখ স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়।
বোনহ্যামের ২০০৮ ক্যাটালগে উল্লেখ করা হয়েছে যে রানী ‘বুঝতে পেরেছিলেন যে তার মৃত্যুর পর বিদ্যমান বর্ণবাদী মনোভাব আবদুল করিমকে বিপদে ফেলবে, তাই তিনি তার উইলে তার জন্য কিছু ব্যবস্থা করে যান’। তিনি ভাইসরয়কে আগ্রায় আবদুল করিমকে কিছু জায়গা বন্দোবস্ত করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। ভাইসরয় অনিচ্ছুকভাবে সেটার ব্যবস্থা করেছিলেন। তিনি রানীকে ফিরতি চিঠিতে জানিয়েছিলেন যে, ১৮৫৭ সালের যুদ্ধে যে ব্যক্তিজীবনের ঝুঁকি নিয়ে দিল্লি গেট উড়িয়ে দিয়েছিল তাকে সারা জীবনের জন্য যে জমিটি দেয়া হয়েছে তা থেকে আয় হয় ২৫০ রুপি, আর আবদুল করিম পান তার দ্বিগুণ। রানী এ নির্দেশও দিয়েছিলেন যে তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় আবদুল করিমকে প্রধান শোকপ্রকাশকারীর সম্মান দিতে হবে।
রানী ভিক্টোরিয়া মারা গিয়েছিলেন ১৯০১ সালের ২২ জানুয়ারি। তার কফিন বন্ধ করার আগে আবদুল করিম শেষ ব্যক্তি হিসেবে তাকে দেখেছিলেন। রানী মারা যাওয়ার পরে রাজপরিবারের সদস্যরা এবার আবদুল করিমের ওপর প্রতিশোধ গ্রহণের মওকা পেল। সিংহাসনে বসেই প্রথম আদেশে রাজা সপ্তম এডওয়ার্ড দৃশ্যমান কোনো অপরাধ ছাড়াই বরখাস্ত করলেন তার মায়ের খুব কাছের এই মানুষটিকে? প্রহরীদের নিয়ে নতুন রাজা অ্যাডওয়ার্ডের স্ত্রী আলেক্সান্দ্রা, মৃত রানীর কনিষ্ঠা কন্যা প্রিন্সেস বিয়েত্রা দরজা ভেঙে আবদুল করিমের কটেজে প্রবেশ করলেন এবং রানী ও তার মধ্যে যেসব চিঠি আদান-প্রদান হয়েছে, সেগুলো পুড়িয়ে ফেললেন। মুন্সী অসহায়ভাবে চেয়ে চেয়ে দেখলেন যে রানীর লিখিত কথাগুলো আগুনের পেটে চলে যাচ্ছে। রাজা অ্যাডওয়ার্ড তখনই মুন্সীকে ভারতে ফেরত পাঠানোর নির্দেশ দিলেন।
এমনকি মুন্সী ভারতে ফেরার পরও ব্রিটিশ রাজকীয় কোপানল থেকে রেহাই পাননি। রানীর অবশিষ্ট চিঠিগুলো হস্তগত করতে রাজা অ্যাডওয়ার্ড আগ্রায় মুন্সীর বাড়িতে অভিযান চালানোর নির্দেশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। এমনকি মুন্সী মারা যাওয়ার পরও একবার অভিযান চালানো হয়েছিল। পরে ভাইসরয় মিন্টো ও তার স্টাফ ওই অভিযান অনুমোদন করেননি এবং তারা জব্দ করা কাগজপত্র আবদুল করিমের বিধবা স্ত্রীর কাছে ফেরত দিতে সুপারিশ করেন।
ভারতে ফিরে এসে আগ্রায় রানীর দেয়া জমিতেই ‘করিম লজ’ নামের বাড়ি তৈরি করে এখানেই নিরিবিলিতে বাস করতেন আব্দুল করিম। ব্রিটেন থেকে ফেরার ৮ বছর পরে ১৯০৯ সালের এপ্রিলে মাত্র ৪৬ বছর বয়সে পরপারে পাড়ি জমান রানী অন্যতম কাছের সহকারী। তবে রাজচক্ষু ফাঁকি দিয়ে আব্দুল করিম তার যে দিনলিপিটি ভারতে নিয়ে এসেছিলেন সেটির তথ্য বিশ্লেষণ করে শ্রাবণী বসু নামে এক সাংবাদিক লিখেছেন ‘Victoria & Abdul: The True Story of the Queen’s Closest Confidant’ নামের একটি বই।
‘Victoria and Abdul’ চলচ্চিত্রের একটি দৃশ্য;
এই বইয়ের উপর ভিত্তি করেই হলিউডে নির্মিত হয়েছে ‘Victoria and Abdul’ নামের একটি চলচ্চিত্র, যেটি ২০১৭ সালের ২২ সেপ্টেম্বর মুক্তি লাভের অপেক্ষায় আছে ।
‘Victoria and Abdul’ চলচ্চিত্রের একটি পোস্টার ।
তার কোনো সন্তানাদি ছিল না। বড় ভাই ও ছোট পাঁচ বোন ছিল। আবদুল করিম তার ডায়েরিতে লিখেছিলেন, ‘আমি সর্বশক্তিমানের কাছে মুনাজাত করছি যাতে তিনি আমাদের দয়ালু সম্রাজ্ঞীর প্রতি রহমত বর্ষণ করেন।’
রানীর সঙ্গে সম্পর্কের ধরন নিয়ে আবদুল করিম কখনো কাউকে কিছু বলেননি, কারণ এতে রানীর মর্যাদাহানি হতে পারত বলে মনে করতেন। তিনি হয়তো চাইতেন তার ও ভারতবর্ষের রানীর মধ্যকার সম্পর্কটি শুধু তাদের মধ্যেই থাকুক। আবার রানীও তার বিশেষ কিছু চিঠি সংরক্ষণ করেননি।
করিমের আঁকা মহারানীর প্রতিকৃতি
২০০২ সালের ডিসেম্বরে লন্ডনের ন্যাশনাল গ্যালারিতে একটি চিত্র প্রদর্শনী হয়। সেখানে করিমের আঁকা মহারানী ভিক্টোরিয়া’র একটি বিখ্যাত প্রতিকৃতি স্থান পায় এই প্রদর্শনীতে, যা ছিল আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে।
সুত্র- এক
সুত্র- দুই
সুত্র-তিন
" style="border:0;" />সুত্র-চার
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ৮:৩৪