somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

“এখানে এক নদী ছিলো” সাম্প্রতিক বন্যা নিয়ে একটি হুতাশন ...........

১৬ ই জুলাই, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ছবি - বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার কালিতোলা গ্রোইন পয়েন্টে যমুনা.......

ছোটবেলায় দেখেছি, পাঁচ সাত দিন একনাগাঢ়ে প্রায় সারা দেশ জুড়ে প্রচন্ড বৃষ্টিপাত হয়ে চলেছে। থামার কোনও বিরাম নেই। তবুও বন্যায় সারা দেশ ভেসে গিয়ে একটা উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরী হয়েছে, এমনটা দেখিনি। আর এখনতো বৃষ্টি “ লোড শেডিং” এর মতো এখানে খানিকক্ষন তো ওখানে কিছুক্ষন ধরে চলেই আবার রোদের হাসিতে মিলিয়ে যাচ্ছে। ঢাকার মহাখালিতে বৃষ্টি হচ্ছে তো বনানীতে নেই। তেমনি ঢাকার কিছু অংশে বৃষ্টি হচ্ছে তো নারায়নগঞ্জে ফকফকা রোদ্দুর। সিলেটে বৃষ্টি হচ্ছে তো নোয়াখালিতে বৃষ্টি নেই। নেই অন্য কোথাও। একযোগে দেশের বেশীর ভাগ এলাকাতেই বৃষ্টির কথা এখন আর শোনা যায়না। শোনা যায়না একদমে পাঁচ সাত দিন ধরে চলা বৃষ্টির কথাও। তবুও কোথাও কোথাও ঘন্টা দুয়েকের প্রবল বর্ষনেই সৃষ্টি হচ্ছে বন্যা পরিস্থিতির। কেন এমন হচ্ছে, কারনগুলো ভেবে দেখার মতো।
গত কয়েক দিনের বৃষ্টিপাত আর প্রবল বর্ষনে ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলের কারনে দেশের বন্যা পরিস্থিতি মারাত্মক আকার ধারন করছে এটা আমরা দেখতে পাচ্ছি। জাতীয় দৈনিকগুলোতে এ নিয়ে প্রকাশিত হচ্ছে উদ্বেগজনক সংবাদ-
বন্যায় বিপর্যস্ত জামালপুরের ২ লাখ মানুষ
জামালপুর: উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল, অতিবৃষ্টি ও যমুনার পানি বাড়তে থাকায় জামালপুরে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে বন্যা। ফলে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন জেলার ছয়টি উপজেলার প্রায় দুই লাখ মানুষ।
সামান্য ঠাঁই পেতে বাঁধে ছুটছেন বানভাসিরা
বগুড়া: কয়েক সপ্তাহ আগেও যমুনা শান্ত ছিল। কিন্তু বর্তমানের চিত্রটা একেবারে ভিন্ন। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও ভারী বর্ষণে ফুলে ফেঁপে উঠেছে যমুনার পেট!
কুড়িগ্রামে বন্যায় ২৮৫ বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ
কুড়িগ্রাম: পানি বাড়া অব্যাহত থাকায় কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। পাশাপাশি নদী ভাঙনে মানুষ ভিটেমাটি হারানোসহ ভাঙছে বিভিন্ন স্থাপনা। জেলার নয়টি উপজেলার চরাঞ্চলের তিন শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
হবিগঞ্জে পানিবন্দি শতাধিক গ্রামবাসী,
হবিগঞ্জ: হবিগঞ্জে তিনদিনের ভারী বৃষ্টি ও ভারত থেকে নেমে আসা পানিতে শতাধিক গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বন্যার আশঙ্কায় চাল ও টিন মজুদ রেখেছে জেলা প্রশাসন। খোয়াই নদীর পানি কমতে শুরু করলেও সর্বনাশা রূপ ধারণ করছে কুশিয়ার।
সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, ডুবেছে শতাধিক গ্রাম
সিলেটের সাত উপজেলায় নতুন করে প্লাবিত হয়েছে অন্তত শতাধিক গ্রাম। ডুবে গেছে রাস্তাঘাট ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় জনদুর্ভোগ...
কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে
কুড়িগ্রামে আজ রোববার বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। এতে জেলার প্রায় আড়াই লাখ মানুষ বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছেন।
সামু ব্লগার “সৈয়দ তাজুল ইসলাম”ও ভাটির গ্রামগুলোর ডুবে যাওয়া আর তাদের রক্ষায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে পোস্ট লিখেছেন।
এসব দেখে মনে পড়লো বেশ আগে লেখা আমার একটি পোস্টের কথা, যেখানে আমি আশঙ্কা করেছিলুম এমনটাই হবে একদিন- বর্ষাকালে তলিয়ে যাবে দেশ। শুকিয়ে মরুভূমি হবে গ্রীষ্মকালে। অতি সম্প্রতি সেই পোস্টটি পড়েই সহ ব্লগার
“ ঠাকুরমাহমুদ” অনুরোধ করেছেন আমি যেন লেখাটি আবার ব্লগে রিপোস্ট করি।
ঠিক রিপোস্ট নয়, খানিকটা পরিমার্জন করে তাই এই লেখাটির অবতাড়না।

***প্রতিবেশী দেশের খুঁড়ে দেয়া কবরে শায়িত বাংলাদেশ নামের লাশটির উপরে মুষ্ঠিমেয় বাঙালীরা এবার মাটি চাপিয়ে ভরাট করে দিচ্ছে কবরটি । এদের কি থামানো যায় না ?***
ডাইনিং টেবিলে নাস্তা খেতে বসে চোখ গেলো সকালে দিয়ে যাওয়া খবরের কাগজখানির দিকে । ভেতরের পুরো একটি পৃষ্ঠা জুড়ে চরম ভয়াবহ একটি বিষয়ের উপর অনেকগুলি সংবাদের দিকে চোখ আটকে গেলো । বড় বড় হরফে একটি শিরোনাম – “ এখানে এক নদী ছিলো” কাব্যিক এই শিরোনামের ভেতরে এক মহা-বিভীষিকাময় আর আতঙ্কিত হওয়ার মতো সংবাদটি টেনে নিয়ে গেলো আমাকে দু’দিন আগে রেলপথে চট্টগাম থেকে ঢাকা আসার দিনটিতে ।
রেলের কামরায় বসে আমার স্বভাব মতো জানালা দিয়ে বাইরে দেখছিলাম । আদিগন্ত বিস্তৃত শষ্যের ক্ষেত । সেখানে সবে ফুটে ওঠা সর্ষেফুলের চোখ ধাঁধানো রঙ হঠাৎ হঠাৎ । তার মাঝে দিয়ে এলিয়ে থাকা শীর্ণ পানির ধারা । যেন থাকতে হয় তাই থাকা । এগুলি একসময় শাখা নদী ছিলো । রাস্তার পাশ ঘেসে বয়ে চলা একসময়ের প্রশস্ত খালগুলি ভরাট হয়ে গাঢ় সবুজ ধানের বীজতলা হয়ে উঠেছে । কেবল এখানে ওখানে পানির ছোপ । মাটিতে ডুবে থাকা দু’একটা নৌকার গলুই মাথা তুলে আছে এখানে সেখানে । ভাবলাম শীতকাল তাই পানি নেই । কিন্তু এ দৃশ্য তো সব সময়ই দেখছি, যখোনই এই পথে গেছি কি শীতে কিম্বা বর্ষায় । এই পথে যতোগুলি কালভার্ট দেখলাম তার ৯৫% এর কোথাও পানি নেই । শুকনো মাটিতে আগাছার মাথা তোলা কিম্বা সব্জীর ক্ষেত । পথে যেতে আবার অনেক নদীর দেখা মেলে । দেখলেই বোঝা যায়, অনেক ভরা যৌবন ছিলো একদিন তাদের । এখোন জড়াগ্রস্থ, মৃতপ্রায় । লম্বা লম্বা রেলসেতুগুলির নীচের নদীতে ধানের ক্ষেত, বালির হাট , ইট-সুড়কির মেলা । যেটুকু পানির দেখা মিলছে, গুটিকয়েক বছর গড়াতেই উধাও হয়ে যাবে তাও । তখোন এই পথে যেতে যেতে আমারই মতো কেউ একজন আঙ্গুল তুলে তার সন্তানকে বলবে - “এখানে এক নদী ছিলো” ।
খবর কাগজের এই সংবাদটি নতুন কিছু নয় । তবে নতুন করে আবারো ভেবে দেখার সুয়োগ করে দিলো । মোট ৯টি শিরোনামে খবরগুলো একটি পুরো পৃষ্ঠা জুড়ে । এখানে লেখা চিত্র থেকে খুব সামান্য তুলে ধরছি আমাদের কোনও বোধদয় হয় কিনা তার জন্যে -
১) এখানে এক নদী ছিলো –
……নদীগুলোর গতিপথ বদলে যাচ্ছে । হারাচ্ছে নাব্যতা । নদী দখলের তোড়ে ভেসে গেছে নদীর জল । মরে গেছে দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চলের ভৈরব, কপোতাক্ষ । সেই সঙ্গে অস্তিত্বের সংকটে পড়েছে মাথা ভাঙ্গা, নবগঙ্গা, চিত্রা, কুমার, হরিহর, মুক্তেশ্বরী, ভদ্রা, শালিখা, বেত্রাবতী ।
জলাবদ্ধতা, লবনাক্ততা, আর্সেনিক বেড়ে যাচ্ছে । জীববৈচিত্র হুমকিতে । অপরিকল্পিত বাধ, পোল্ডার , স্লুইস গেট , সেতু রেল লাইন নির্মান এর কারন । শিল্পায়নের ধোয়া তুলে বুড়িগঙ্গা দখলের পরিনতি তো জানাই আছে । এখানেও তাই । আজ পরিনতি দেখে মনে হয় - এখানে এক নদী ছিলো একদিন ।
২) মরছে নদী -
খুলণার ডুমুরিয়া উপজেলার হামকুমড়া নদী । আঠারো বেকি , বেতনা, কাছিবাছা, শালতা , পশুর নদী । মরছে সবাই ধুঁকে ধুঁকে ।
৩) হারিয়ে গেছে ঘুংঘুর কালা -
কুমিল্লার ঘুংঘুর আর কালা ডুমুর নদী হারিয়ে গেছে । মরে গেছে ক্ষীরাই । দখল হয়ে গেছে ডাকাতিয়া ।
৪) বাঙ্গালী-করোতোয়া একই পথে -
বগুড়ার যমুনা,বাঙ্গালী, করোতোয়া মানচিত্র থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে । নদীর বুকে চাষাবাদ, মাছের চাষ, কলকারখানার বর্জ্য, ময়লা আবর্জনা ফেলে নদীর দফারফা করা হচ্ছে । ভারতের বিভিন্ন এলাকায় বাধ দেয়াও একটি কারন ।
৫) মরার পথে রংপুরের ২৭ টি নদী -
প্রমত্তা তিস্তা এখোন শীর্ণ খাল । আত্রাই, ইছামতি, পূনর্ভবা , ডাহুক, যমুনেশ্বরী, কাটাখালি এখোন ছোট ছোট জল ধারা ।
৬) নাব্যতা হারাচ্ছে বাঁকখালি ও মাতামহুরী -
কক্সবাজারের দুই প্রধান নদী । মরমী শিল্পীদের মুখে মুখে একদিন এই নদীগুলো নিয়ে গান ছিলো । ডেজিংয়ের অভাবে সে গান শুকিয়ে গেছে ।
৭) নদীতে এখোন আবাদ হচ্ছে -
নীলফামারীর ২২ টি নদী পানিশূন্য । শষ্যের আবাদ এখোন সেখানে ।
৮) নদী শাসনের শিকার সাতক্ষীরার ২৭ টি নদী -
নদী তীর দখল, নদী শাসন, স্লুইসগেট নির্মান আর চিংড়ি চাষের জন্যে ছোট ছোট ঘের নির্মান করে সাতক্ষীরার ২৭ টি নদীকে বাকরূদ্ধ করা হয়েছে ।
৯) চলনবিলের সেই আট নদী -
মরে গেছে চলনবিল । অপরিকল্পিত বাধ, মহাসড়ক , ক্রস বাধ, স্থাপনা নির্মান করে চলনবিলের চলা থামিয়ে দেয়া হয়েছে । বিলুপ্তির পথে এর বিশাল মৎস সম্পদ ।
সব মিলিয়ে শুধু ভয়ঙ্কর একটি ভবিষ্যতের ছবি মাথার ভেতরে খেলে গেলো । আমি কোনও বিশেষজ্ঞ নই । নদীর উৎসমুখে পলি জমে কিভাবে নদীর স্রোতধারা কমে আসে, কিভাবে নদী ভাঙ্গনে নদীর গতিপথ পরিবর্তিত হয় আর এতে কি ভাবেই বা পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়, কিভাবেই বা জীব-বৈচিত্র হারিয়ে যায়, কি ভাবেই বা অভিন্ন নদীর পানির হিস্যা আদায় করতে হয় ইত্যাকার বিষয়ে আমার জানা নেই । শুধু জানি, নদী হারিয়ে যাচ্ছে । প্রাকৃতিক ভাবেই তা হোক কিম্বা প্রতিবেশী দেশের বৈরিতার কারনেই হোক, তা নিয়ে এ মূহুর্তে আমার মাথাব্যথা নেই । প্রকৃতির বিরূদ্ধে আমাদের করনীয় কিছু নেই । প্রতিবেশী দেশের বৈরিতার জবাব দিতে আমাদের রাষ্ট্রীয় শক্তি নেই, রাজনৈতিক প্রজ্ঞা নেই । কিন্তু যেখানে আমাদের করার আছে সেখানে চুপ করে আছি কেন ?
নদী দখল করে স্থাপনা নির্মান, নদী শাসনে অপরিকল্পিত বাঁধ প্রকল্প প্রনয়ন (যেমন পদ্মা ও যমুনার সংযোগকারী বড়াল নদের মুখের বাঁধ) , পরিনতির কথা চিন্তা না করে মহাসড়ক নির্মান, চিংড়ি ঘের নির্মান, নদীতে রাসায়নিক বর্জ্য উদগারন এগুলো কারা করছে ? প্রতিবেশী দেশের লোকেরা ? ভারত-পাকিস্তান-মিয়ানমার-নেপালের লোকেরা ? নাকি আমি আর আপনি ? নাকি সাধারন পাবলিক ?
যে ৫৪টি অভিন্ন নদী ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে তার স্রোত নিয়ন্ত্রন করছে ভারত নিজের স্বার্থেই । এর ও উজানে রয়েছে নেপাল আর চীন । দেশের সব নদ-নদীগুলো দিয়ে বছরে প্রায় এক হাজার ৪০০ বিলিয়ন ঘনমিটার পানি বয়ে চলে বঙ্গোপসাগরের দিকে। এর মধ্যে ভারত থেকে আসা নদীগুলো বয়ে আনে প্রায় এক হাজার ৫০ বিলিয়ন ঘনমিটার পানি। বাকি ৩৫০ বিলিয়ন ঘনমিটার পানি দেশের অভ্যন্তরে আসে বৃষ্টিপাত থেকে । এই নদীগুলো কেবল পানিই বহন করেনা , করে বিলিয়ন বিলিয়ন টন পলি (সেডিমেন্ট)। নদী স্রোত এই পলি নিয়ে যায় সাগর অবধি । ভারতের কারনে স্রোতের ধার কমে গেছে অনেক । সে কারনেই পলি জমে জমে ভরাট হয়ে যাচ্ছে এখানকার নদীগুলো । কেবলমাত্র গঙ্গা-ব্রহ্মপূত্র-মেঘনা নদী প্রবাহ দিয়ে বয়ে আসে প্রায় ৩ বিলিয়ন টন পলি, যা বিশ্বের সকল নদী পথে বয়ে আসা পলির এক-তৃতীয়াংশ । এই পলি বা সেডিমেন্টের শেষ গন্তব্য বঙ্গোপসাগর । অর্থাৎ বাংলাদেশের বুকের উপর দিয়ে এই বিপুল পলি স্রোতের সাথে ভেসে যাচ্ছে দক্ষিনে । এই একটিই পথ ।
পানি সল্পতার কারনে নদীতে স্রোত নেই তাই পলি সরছেনা । এতে নদীগুলোর পানি ধারণ ক্ষমতা কমে যাওয়ায় সামান্য বৃষ্টিতেই সৃষ্টি হচ্ছে অকালবন্যা। ড্রেজিঙ এর অভাবে জমে থাকা এই বিশাল পলি সরিয়ে নদীকে “ নদী আপন বেগে পাগল পারা ...” করা যাচ্ছেনা । দেশে ড্রেজার আছে নাকি ৬খানা । প্রয়োজন ৫৪ বা ৫৫ টি ড্রেজারের । ৯ খানি ড্রেজার নির্মানাধীন । এগুলো কয়েক বছর আগেকার হিসেব। যতোদূর জানি, এর অনেক বছর পরে ২০১৫ কিম্বা ২০১৬ সালে নাকি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) ৩৫ খানা ড্রেজার কেনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কেনা যে হয়নি তা বোঝা যায় যখন এ সম্পর্কে অনেক জায়গাতে খুঁজেও কিছু পাইনি। আবার দেখছি, ২০১৮ এর অক্টোবর ২০ তারিখের “আলোকিত বাংলাদেশ” পত্রিকা লিখেছে ,সাড়ে চার হাযার কোটি টাকায় ৩৫টি ড্রেজার ও সহায়ক জলযানসহ আনুষঙ্গিক সরঞ্জামাদি সংগ্রহ এবং প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আগামী সভায় তোলা হচ্ছে বলে পরিকল্পনা কমিশন জানিয়েছেন। অনুমোদন পেলে ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে ড্রেজারগুলো বহরে যোগ করবে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীন বিআইডব্লিউটিএ। হায়রে !!!! ড্রেজারের হদিশ ড্রেজিং করেও পাওয়া গেলোনা এখনও।
আর এতো সব গড়িমসির কারনে শক্তিশালী কারো কারো পোয়াবারো হয়েছে । নদী শুকোতে শুরু করতে না করতেই তাকে ভরাটের আয়োজন শুরু করে দিয়েছে তারা । যে যেভাবে পারছে, ভরাট করে জায়গা দখলের খেলায় মেতেছে । এভাবেই ঢাকার বুড়িগঙ্গা, বালু নদী দখল হয়ে গেছে । শীতালক্ষ্যাও যায় যায় । এগুলো তো আমাদের চোখের সামনেই হচ্ছে । ভারত, নেপাল নাকি চীনকে দোষ দেবেন ?
পানি বিশারদ থেকে শুরু করে পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো সোচ্চার অনেকদিন থেকে এর ভয়াবহ পরিনতি কি হতে যাচ্ছে তা নিয়ে । বুড়িগঙ্গার শোচনীয় হাল দেখে ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ নৌবাহিনী একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিলো যেখানে বলা হয়েছে, বুড়িগঙ্গা নদী দূষণের জন্য দায়ী মূলত শিল্পবর্জ্য। নদীতে পড়া বর্জ্যের ৬০ শতাংশ শিল্পখাতের। এর মধ্যে ৪০ শতাংশ ট্যানারি, ২০ শতাংশ অন্য শিল্পের। এর বাইরে ১৫ শতাংশ কঠিন বর্জ্য, ১৫ শতাংশ অন্য ও ১০ শতাংশ নৌযান বর্জ্য। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বুড়িগঙ্গা নদীতে প্রতিদিন ঢাকা শহরের চার হাজার ৫০০ টন আবর্জনা ও ২২ হাজার লিটার বিষাক্ত ট্যানারিবর্জ্য পড়ছে।
বুড়িগঙ্গা বাঁচাও আন্দোলন হয়েছে , হচ্ছে । কতোটুকু কি হবে জানিনা । খুব একটা যে কিছু হবেনা বোঝা যায় । কারন দখলের হাতগুলো উপর তলার, রাষ্ট্রীয় প্রশাসনযন্ত্রের সুবিধাবাদীগোষ্ঠির মদদপুষ্ট, সরকারী সংস্থাগুলোর আনুকুল্যে টেবিলের নীচের আদান-প্রদান সিদ্ধ । নইলে লেক থেকে শুরু করে হাওড়–বাওর আর নদীতীরের পানি সহ সরকারী জমি বাপ-দাদার আমলের পাওয়া কিম্বা শ্বশুড়ের দেওয়া হয় কি করে ? গুলশান লেক মরতে মরতে খানিকটা বেঁচেছে । ভাগ্যিস পরিবেশবাদী আর প্রতিবাদী এলাকাবাসীরা ছিলেন ! সরকার ঢাকা ও আশেপাশের নদীগুলো দখলমুক্ত করতে ইদানীং কঠোর অবস্থান নিলেও পেরে উঠছেন না খুব একটা। দোর্দন্ড প্রতাপ দখলকারীরা সরকারী কাজে বাঁধা দিচ্ছে যখন তখন। এতে নদীকে দখল থেকে মুক্ত করতে কালক্ষেপন হচ্ছে অযথা। ট্যানারীগুলো বুড়িগঙ্গার ধার থেকে সরেছে বটে তবে সাভারের ধলেশ্বরী নদী, যেখানে নতুন করে গড়ে উঠেছে ট্যানারী তার বর্জ্যে ধলেশ্বরী আর একটি বুড়িগঙ্গা হতে সময় নেবেনা মোটেও।
ওদিকে পাকিস্তান, ভারত, নেপাল আর ভুটান মিলে সিন্ধু, গঙ্গা , ব্রম্মপূত্র , ইরাবতী নদী সমৃদ্ধ হিমালয় অঞ্চলে ৫৫২টি হাইড্রো-পাওয়ার প্রজেক্ট হাতে নিয়েছে অনেকদিন আগে থেকেই। এর মধ্যে অনেকগুলিই তৈরী হয়ে গেছে , অনেকগুলি নির্মানাধীন । টিপাইমুখ তার একটি । এতে করে পদ্মা-যমুনা আর মেঘনা দিয়ে আসা পানির পরিমান আরো কমে যাবে । পদ্মা-যমুনা তো শেষ । এবার ধীরে বইবে মেঘনা । সমস্ত দক্ষিনবঙ্গ পলিতে ভরে যাবে । আর টিপাইমুখী বাঁধের কল্যানে সিলেট সহ উত্তর-পূর্ববঙ্গ মহাশ্মশানে পরিনত হবে । আন্তর্জাতিক দরবারে “ধণ্যা” দিয়ে কিছু একটা পাওয়ার আশায় সময় ক্ষেপনের সময় কি আছে আমাদের ?
প্রতিবেশী দেশের খুঁড়ে দেয়া কবরে শায়িত বাংলাদেশ নামের লাশটির উপরে মুষ্ঠিমেয় বাঙালীরা এবার মাটি চাপিয়ে ভরাট করে দিচ্ছে কবরটি । এদের কি থামানো যায় না ?
যায় হয়তো কিন্তু যারা করবেন তারা করছেন না । কেন করছেন না ? কারন তাতে যে তাদের দখল করা বিঘার পর বিঘা জমি ছেড়ে দিতে হয় । যতোদুর মনে পড়ে, রাজউককৃত ঢাকা মহানগরের তৃতীয় মাষ্টার প্লানে, এর হারিয়ে যাওয়া নদী আর খালগুলিকে ফিরিয়ে আনার প্রস্তাব ছিলো রাজধানীকে জলাবদ্ধতা আর ভুমিকম্প থেকে বাঁচানোর জন্য । কাজ ও এগুচ্ছিলো । বন্ধ হয়ে গেছে সে প্রকল্প । কেন ? পত্রিকায় দেখেছি, প্রকল্প বাস্তবায়নে নিয়োজিত এক মহারথীর জমি নাকি তার ভেতরে পড়ে গেছে । তাই পুরো প্রকল্পের কাজটিই বাদ ।
এসব হলো জলাবদ্ধতার রাজনৈতিক অর্থনীতি বা বলতে পারেন জলাবদ্ধতার অর্থনৈতিক রাজনীতি। ব্যাপারটা খোলাসা হবে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক, ড. মইনুল ইসলামের সাম্প্রতিকতম একটি লেখায়। লেখাটি প্রকাশিত হয়েছে ১১ জুলাই ২০১৯ এর দৈনিক “সমকাল” পত্রিকায়।

সুপ্রিয় পাঠক, ঠান্ডা মাথা নিয়ে বসুন । আপাতঃ গায়ে লাগছেনা, এই এমোন বিষয়টি নিয়ে গভীর করে ভাবুন । হয়তো বলবেন, কি হবে ? দেশ মরুভূমি হয়ে যাবে , এইতো ?
( নদী শুকিয়ে গেলে কি হয় প্রসঙ্গে এই লিঙ্কটি দেখে নিতে পারেন -কষ্টে শুকিয়ে যাওয়া এক সাগর )
বলবেন, আরবের মরুভূমিতে কি মানুষ থাকেনা ? সাহারা মরুভূমিতে কি মোটেও মানুষ নেই ? আছে অনেক মানুষ আছে ! সেখানে কেউ নদী ভরাট করে মরুভূমি বানায়নি । আরবের মরুভূমি এখোন স্বপ্নের দেশ । ঐশ্বর্য্যের আর সবুজের ছড়াছড়ি সেখানে । সাহারা মরুভূমিতে সবুজের সমারোহ আর ফসল দেখেছি আমি । কিন্তু আমাদের ভৌগলিক অবস্থান কি ওদের মতো ? ওদের কি নদী আছে তেমন একটা ? নেই । আমাদের আছে, আর তা দিয়ে পানি সাগরে পড়ে । ভূ-তাত্বিক ভাবে আমরা একটি “বেসিন” এলাকায় বাস করি । এই বিষয়টা মাথায় রাখুন । দেশ যদি শুধু মরুভূমি হয়েই যেতো তা না হয় দাঁত কামড়ে মানা যেতো ! কিন্তু শুধু কি মরুভূমিই হয়েই থেমে থাকবে দেশ ? মোটেও না ।
উষ্ণায়নের কারণে ধারণার চেয়ে দ্রুতগতিতে গলছে হিমালয়ের বরফ। গত ৪০ বছরে হিমালয়ের বরফ গলার হার দ্বিগুণ হয়েছে। এখন প্রতিবছর গড়ে প্রায় ৮০০ কোটি টন বরফ গলছে। এই যে প্রতিবছর ৮০০ কোটি টন বরফ কমছে, তা দিয়ে অলিম্পিকে ব্যবহৃত সুইমিংপুলের মতো ৩২ লাখ পুল ভরাট করা সম্ভব।
হিমালয়ের হিমবাহ গলে যে পানি নামে প্রতি বছর, বর্ষামৌসুমে যে পানির ঢল বয়ে যায় তাতেই আমরা বন্যায় ভাসতে থাকি বছরের অনেকটা সময় জুড়ে । নদীগুলো দিয়ে এখোনো পানি নেমে যেতে পারে বলে রক্ষা । সব নদী যখোন বুক চিতিয়ে ভরাট হয়ে যাবে, যা আমরাই করে ফেলবো অতি দ্রুত, তখোন গঙ্গা- ব্রহ্মপূত্র দিয়ে নেমে আসা পানি কোথায় যাবে ? ভারত বন্যার পানি সরাতে তাদের সব ক’টি স্লুইসগেট সারা বর্ষাকাল জুড়ে খুলে রাখবে, রেখেছেও গত ক'দিন ধরে । কারন সকল পানিকে বাংলাদেশের উপর দিয়েই বয়ে যেতে হবে দক্ষিন সাগরে । বর্ষা মৌসুমে পরিনতিটা কি ভয়ানক হবে, একবার ভাবুন । এখোন বন্যার পানিতে ঘরের খাট পর্য্যন্ত ডুবে যায় । তখোন বন্যার পানি ছাড়িয়ে যাবে ঘরের ছাদ-টিনের চাল । আক্রান্ত এলাকার ব্যাপ্তি হবে সমগ্র বাংলাদেশ । অথৈ পানিতে ভাসবে সব । বর্তমানে যে বন্যা পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে এ তারই আলামত। এটা ঘটতে থাকবে ঘন ঘন।

সবটা মিলিয়ে যে চিত্র আমরা দেখছি তাতে আমরা মরবো দু’ভাবে - শুষ্ক মৌসুমে মরুভূমিতে আর বর্ষাকালে ভয়াবহ বন্যায় । একবার চরম আবহাওয়ায় আর একবার পানিতে ।

আর অদুর ভবিষ্যতে এইরকম ভয়ঙ্করতা নিয়ে যা ঘটবেই তার জন্যে আমরাই দায়ী থাকবো অর্ধেকটা । কেন যে আমরা নিজেরাই ডেকে আনছি নিজেদের মরন !

এখান থেকে কি আমরা ফিরতে পারিনা ?
সে বোধদয় আদৌ কারো হবে কি !
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জুলাই, ২০১৯ রাত ১১:১৯
৩৩টি মন্তব্য ৩৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাসান মাহমুদ গর্ত থেকে বের হয়েছে

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১২


যুক্তরাষ্ট্রের একটি বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল হাসান মাহমুদের সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে। আমি ভাবতেও পারি নাই উনি এতো তারাতারি গর্ত থেকে বের হয়ে আসবে। এই লোকের কথা শুনলে আমার গায়ের লোম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দারিদ্রতা দূরীকরণে যাকাতের তাৎপর্য কতটুকু?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১৮



দরিদ্র দূরীকরণে যাকাতের কোনো ভূমিকা নেই।
যাকাত দিয়ে দারিদ্রতা দূর করা যায় না। যাকাত বহু বছর আগের সিস্টেম। এই সিস্টেম আজকের আধুনিক যুগে কাজ করবে না। বিশ্ব অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্তান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্তান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের বিয়ের খাওয়া

লিখেছেন প্রামানিক, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৮


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

১৯৬৮ সালের ঘটনা। বর আমার দূর সম্পর্কের ফুফাতো ভাই। নাম মোঃ মোফাত আলী। তার বিয়েটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। বাবা ছিলেন সেই বিয়ের মাতব্বর।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপি-আওয়ামী লীগের মধ্যে মৈত্রী হতে পারে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০০


২০০১ সাল থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত আওয়ামী লীগের ওপর যে নির্যাতন চালিয়েছে, গত ১৫ বছরে (২০০৯-২০২৪) আওয়ামী লীগ সুদে-আসলে সব উসুল করে নিয়েছে। গত ৫ আগস্ট পতন হয়েছে আওয়ামী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×