উপক্রমনিকাঃ
২০১৮য়ের “ব্লগ-ডে”র আয়োজনটি একেবারেই ছিলো প্রচলিত প্রথার বিপরীতে। ব্লগার “অগ্নি সারথী”র উচ্ছাসী আমন্ত্রনে আর সামু নিবেদিত ক’টি হৃদয়ের অশ্রুত আহ্বানে সাড়া দেয়া সামুর কিছু মুখের দেখা মিলেছিলো সেদিন। হাসি-গল্পে বিকেলটা গড়িয়ে গেছে সন্ধ্যায়। আনুষ্ঠানিক পরিচয় পর্ব, প্রানের উচ্ছাসে আর তেমন আনুষ্ঠানিক থাকেনি। যেন এক পড়ন্ত বিকেলে একঝাঁক অচেনা মুখেরা নিজেদের চিনে নেবার বাসনায় ঝাঁপটে গেছে পাখা!
মিলনমেলা সাঙ্গ হলে সামুর সদর দরজায় তার সব ছবি ঝুলিয়ে দিয়ে গেলেন নাহিদ০৯। সে দরজার কড়া নাড়া শেষ হতেই সহব্লগার “অপু দ্যা গ্রেট” এর পোস্টকৃত “এক ঝাক তারার মেলায় সামুর ১০ম ব্লগ ডে উদযাপন এবং বিস্তারিত - ছবি ব্লগ”টি চোখে পড়লো। মন্তব্য করলুম। কিন্তু আমার করা মন্তব্যটি বেশ বড় হয়ে গেছে মনে হতেই ভাবলুম মন্তব্যটিকে একটা পোস্ট করে দিলে কেমন হয়! নিভৃত কোনে একটি মন্তব্য হয়ে নয়, একটা পোস্টের লেখা দলিল, বিশেষ করে ব্লগারদের পুণর্মিলনীর দলিল হিসেবে সবার চোখের সামনে থেকে যেতে পারে তাহলে!
অন্যদিকে সহব্লগার নাহিদ০৯ এর “এক ঝাঁক হাসিমুখ - ব্লগারদের পুণর্মিলনী অনুষ্ঠান ২০১৮” নিয়ে “দৃষ্টি আকর্ষণ” পাতার লেখাটির প্রলম্বন হতে পারে তা। হতে পারে এর মধ্যেই ব্লগ দিবসটিকে নিয়ে যারা যারা লিখেছেন তাদের লেখারও সম্পূরক।
এ প্রয়াসটি সে সব লক্ষ্য করেই..........................
অপু দ্যা গ্রেট,
ব্লগারদের পুণর্মিলনীতে উৎসর্গের এই কবিতাখানি দিয়েই শুরু করি এক ঝাঁক তারার মেলায় বিজয় অভিযান ----
তোমাকে দেখবো বলে,
হে পৌষের সোনাঝরা বিকেলের দিন!
চালসে পড়া চোখে মেখেছি সুরমা স্মৃতির।
কতোটি বছর ধরে যে বেড়ে ওঠা তরতর
তাতে ধরেছে ক’টা ফুল চৈতালীর,
তাকে দেখবো বলে ক্ষয়ে ক্ষয়ে আসা মাংস-হাড়
জড়ো করে মেলেছি তোমার উঠোনে তার
অমৃত সম্ভার।
মিলেছে তারে আনন্দ ঝংকারে
বিকেলের রোদে হেটে আসা যতো মুখ
অপার নিঃস্বর্গের হাসি ধরে
জোছনা ফুটিয়ে গেছে সংস্কৃতি বিকাশ চত্বরে!
হে একুশের সোনাঝরা বিকেলের দিন!
তোমাকে দেখবো বলে
চালসে পড়া চোখে আবার মাখাবো সুরমা স্মৃতির।
শুরু থেকে অনুষ্ঠানের ধারাবাহিকতা অনেকটাই ধরে রেখেছেন আপনার পোস্টের ছবির ক্রম তালিকায়। তবে চনমনে মনের, ছটফটে নবীন তরুন অপুর ছবিখানা থাকলে তা আরও পূর্ণতা পেতো। এই ঘাটতিটা গ্রেট হয়নি!
পূর্ণতা পেতো, হাসিমুখের বিদ্রোহী ভৃগু, বলিষ্ঠ ব্লগার হামিদ আহসান, বিয়ের ভয়ে কাতর সৈয়দ তাজুল ইসলাম, ব্লগ অন্তপ্রান সৌম্য দর্শন সত্যপথিক শাইয়্যান, চৌকস চেহারা আর কথার মাহতাব সমুদ্র, এমনি আরো অনেকের ছবি থাকলে।
অনুষ্ঠানের আগে পিছের ফাঁকে ফাঁকে চকিতে যাদের সাথে হঠাৎ কিছু কথা হয়েছে, যাদের মুখ সৌষ্ঠবে এই আনন্দমেলা কি আলো জ্বেলে দিয়ে গেছে তার কিছুটা না বললে আপনার এই “গ্রেট” পোষ্টটির আকুতির প্রতি অবিচার করা হবে।
কায়সার চৌধুরী - মনে হয় নিভৃতচারী এক মানুষ। এসেছেন সেই সুদূর সিলেট থেকে বাংলায় সেরা ব্লগ সামুর টানে । টানটা তার বাংলা ভাষার প্রতিও অদম্য। বাংলা যে কেন শিক্ষার একমাত্র বাহন হয়না, আক্ষেপ তা নিয়েও। নিজের ভাষনে বলেছেন তাও। নিজেকে লুকিয়ে রাখার চেষ্টায় রত এই মানুষটির প্রতি আকর্ষণ বাড়লো বটে।
বিদ্রোহী ভৃগু - যতো দাঁত ভাঙা সব জটিল শব্দের সমাহার ঘটিয়ে যিনি কবিতা সাজান, সে মানুষটির হাসি কিন্তু মোটেও জটিল নয়, ঝকঝকে আস্ত দাঁতে মিষ্টি হাসির জোছনা ছড়িয়ে দেয়া এক মানুষ। দেখে মনে হলোনা বিদ্রোহ করতে জানেন, একদম বিপরীত মানুষ প্রেমে ও পুজায়।
সেলিম আনোয়ার - সরল অতি সরল একটি মাটির মানুষ। পাথুরে মাটি খুঁড়ে খুঁড়ে যে মানুষটি কঠিন শিলা তুলে আনেন, সে মানুষটি যে পলিমাটির মতো এতো নমনীয় হবেন বুঝতে পারিনি। সহজ-সরল-শিশুর মতো অপাপবিদ্ধ তার চোখ, কথা বলার ধরন। ভালো লাগলো-খুব ভালো লাগলো এমন আবেগী মানুষটিকে।
প্রামানিক - ভাঙা হাত, লোহা-লক্কর, বল্টু লাগানো শরীর নিয়ে এখানে এসে প্রমান করলেন - ভালোবাসি....ভালোবাসি....ব্লগটাকে ভালোবাসি। আমার নাম বলতেই এ্যায়সা জোড়ে বুকে জড়িয়ে ধরলেন যে মনে হলো, তার মতো না আমাকেও বুকের খাঁচায় নাট-বল্টু লাগাতে হয়!
আগাপাস-তলা রসিক একজন।
নিমচাঁদ - মনের তারুন্যে ভরপুর একজন। রসিকতা করছিলেন সবার সাথেই। তবে তার নিকটি যে ধার করা সে বয়ান শুনিয়েই বুঝিয়ে দিলেন, নিমপাতার মতো তেঁতো নন তিনি। অনুষ্ঠান অনেকটা তিনিই জমিয়ে রেখেছিলেন ।
রসায়ন - এতোটুকু এক তরুন যে কবিতায় গা না ভাসিয়ে বিজ্ঞান নিয়ে লেখেন , বোঝার উপায় নেই। তার লেখা পড়ে আমার তো মনে হতো তিনি মধ্যবয়েসী কেউ। ভুলটা ভাঙলো কথা বলে। স্বল্পভাষী মনে হলো। অমায়িক একজন।
সাইনবোর্ড - রাজনীতির মতো উথাল-পাতাল বিষয় নিয়ে যিনি লেখেন, তিনি মোটেও উথাল-পাতাল-জটিল কিছু নন। হাসি হাসি মুখে লজ্জা ছড়ানো শান্ত-স্নিগ্ধ এক মানুষ। কথা বলতে গিয়েও যেন ভেঙে পড়ছিলেন লজ্জায়!
এস এস ইসমাইল - ভেবেছিলুম কে এলেন! কিন্তু যিনি এলেন তিনি অনুষ্ঠাটিকে যেন অন্য আমেজে ভরিয়ে দিয়ে গেলেন। পড়ন্ত বেলার একজন। না, তাঁর সাথে সরাসরি কথা হয়নি। বলিনি, মনে হয় তিনি অনেকটা অসুস্থ্য ছিলেন এবং কথা বলতে তাঁর কষ্ট হচ্ছিল বলে। সেটাকে বাড়াতে চাইনি। তাঁর উপস্থিতিতে একটা সুরই মনে এলো - “যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ণ এই বাটে.....”। উনি যেন এই চির সত্যটাকে আবারও উসকে দিয়ে গেলেন।
অগ্নি সারথী - ধংশের সারথী নয়, সৃষ্টির সারথী হয়ে আসা যে জন! ব্লগটাকে অনেকের আরো কাছে এনে সৌহার্দ্য সৃষ্টি করে গেছেন বাঁধা পেড়িয়েও। একেবারে শুরুর দিকে আঙুল গোনা যে পাঁচ সাতজন ছিলুম আমরা তাদের উষ্ণতায় বরণ করে নিলেও সেই থেকে তাঁর মুখে একটি আশংকা-উৎকন্ঠা আর অতৃপ্তির ছায়া লেপ্টে থাকতে দেখেছি। “বোধ হয় জমলোনা, তবে কি এই ক’জন মানুষ নিয়েই হবে মিলন মেলা!” এমন একটা গুমোট ভাব ছিলো চোখে মুখে । সময় বাড়তেই যখন আরো আরো মানুষের দেখা মিললো, সে মুখের গুমোট ভাব কাটলো বটে অনেকটা কিন্তু পরিতৃপ্তির দেখা অধরাই রয়ে গেলো।
“ব্লগতরী”টিকে তবুও শেষতক ভালোবাসার ঠিকঠাক ঘাটে এনে লাগানোর এই মানুষটিকে তাই “ব্লগ সারথী” বলা ছাড়া আর উপায় থাকেনা।
নুরুন নাহার লিলিয়ান - পরিচয় করতে গিয়ে তাঁকে একটি ধাঁধাঁর উত্তর জিজ্ঞেস করতেই আমার নামটি বলে দিলেন। আনন্দ-হাসি খুঁজে পেতে খুব উৎসাহী মনে হলো, সবার সাথে তার কথা ও ছবি তোলার বহর দেখে। সহজ, প্রানবন্ত একজন মানবী মনে হলো।
মৌরী হক দোলা - এতোটুকুন একটি মেয়ে। প্রথম দেখাতেই আমি যখন বললুম, “পিচ্চি মেয়েটি আবার কে?”, তাঁর সপ্রতিভ উত্তর-মৌরী হক দোলা। দোলাই দিয়ে গেলো মনে। চোখে মুখে দারুন প্রত্যাশা নিয়ে এসেছেন মা’কে সঙ্গে করে। ব্লগিংয়ের প্রতি কতোখানি প্রানের টান থাকলে এমনটা হয়! যে বয়সে সোস্যাল মিডিয়ার নষ্ট স্রোতে তাঁর ভেসে যাবার কথা, সেই বয়সে সেই স্রোতের বিপরীতে সৃজনশীলতার তরী বেয়ে যাবার প্রত্যয় তার চোখে। এতোগুলো পরিনত মানুষের ভীড়ের মাঝেও ঘাবড়ে যায়নি এতোটুকু।
মনিরা সুলতানা - চোখে মুখে অনেকটা দুষ্টু হাসির ঝিলিক। কবিতার প্রতি যেমন জোড়ালো আস্থায় তার অবস্থান তেমনি নিজের উপরেও দেখলুম তার আস্থার জায়গাটি। উপস্থাপক ও উৎসাহীদের বারবার ধরিয়ে দিতে চাওয়া মাইক্রোফোন অবলীলায় ঠেলে সরিয়ে, চোখের চকিত চাহনী হেনে দৃপ্ত গলায় বলে গেলেন নিজের কথা। এ পর্যন্ত তাঁর সাথে পরিচিত হইনি। শেষে উপস্থিত প্রায় সবার হাতেই দেখি এক একখানা বই। বিলিয়েছেন নাকি সেই একজনা। কাছে গিয়ে বই চাইতেই আবাক তাকিয়ে রইলেন মুখের দিকে। বললুম , আমি জী এস... আহমেদ জী এস। বিস্ময়ে ফেটে পড়ে কপাল চাপড়ে বলে উঠলেন-- ও মাই......জী এস ভাই আপনি!
চোখে মুখে হাসির ঝিলিক ঝলসে উঠলো আরো একবার। ঐটুকুই ।
কাল্পনিক_ভালোবাসা - আন্ডারস্কোর দিয়ে যার নিক, তার পানে না চাইতেও চোখে যে পড়তেই হয়! কি অক্লেশে সবার কথা ধীর-শান্ত হয়ে উপস্থাপন করে গেলেন আমাদের। বর্ষীয়ান ব্লগার এস এস ইসমাইলকে তুলে ধরলেন পরম মমতায়। শোনালেন নিজের কথাও নিজের স্বভাবজাত চপলতায়। প্রশ্নের জবাব দিয়ে গেলেন একটুও না থেমে হাসি ঠাট্টা আর গাম্ভীর্যতা মিশিয়ে। মডারেটের এমন না হলে হয়না। সবাই-ই মডারেটর হতে পারেনা। মডারেটর হো তো এ্যায়সা- কাভা য্যায়সা..
আর...... আর .....আর শেষে -
অপু দ্য গ্রেট - গিয়ে যখন উঠেছি আসমা হলের ছাদে তখন আঙুল গোনা পাঁচ-সাতজন। কাভা আমার নাম ধরে লাফিয়ে উঠতেই টগবগে তারুন্যের শুভ্রতা মাখা আরো একটি ছটছটে- মুখ এগিয়ে এলো সামনে -“ আমি অপু।” স্নেহমাখা ধমকের সুরে বললুম “অপু আবার কি ? অপু দ্য গ্রেট , তাইনা ?” স্মিত হাসি ছড়িয়ে গেলো আপনার সারাটি মুখে। সে হাসি, মনে হলো, আলেকজান্ডার দ্য গ্রেটের মতো বিশ্বজয় করে ফেলতে পারে। পেরেছেনও তাই। আসমা হলের ছাদে জড়ো হওয়া সেদিনের সবার মন জয় করতে পেরেছেন আপনি অনায়াসে। ভাঙা হৃদয়ের শোকও যে অবলীলায় জয় করে ব্লগ জয়ে বের হয়েছেন আপনি, বললেন অকপটে তাও। জীবনের সেই ক্রান্তিকালটাকে সামাল দিয়েই আপনি সত্যি সত্যিই “গ্রেট” বনে গেলেন মনে হয়!
সংযুক্তি -
সে সব মুখের ছবির জন্যে
নাহিদ০৯ ................. এক ঝাঁক হাসিমুখ - ব্লগারদের পুণর্মিলনী অনুষ্ঠান ২০১৮
অপু দ্যা গ্রেট ..........এক ঝাক তারার মেলায় সামুর ১০ম ব্লগ ডে উদযাপন এবং বিস্তারিত - ছবি ব্লগ
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৫৯