প্রথমে খালি গলায় বলতে শুরু করেছিলো লোকটা । তার কথা শিককাবাব বানানোর কয়লার চুলোর আগুনের মতো আস্তে আস্তে গরম হতে শুরু করলে তাতে হাওয়া দিতে পাশের জরিনা ইলেক্ট্রনিক্স থেকে কে একজন যেন তার হাতে একটা হ্যান্ড মাইক ধরিয়ে দিয়ে গেছে । এখন তার গলা বেশ ষ্পষ্ট । আশেপাশে জমে উঠছিলো উৎসুক জনতার ভীড় । প্রথমে দু’চার জন করে, পরে তা দশ-বারো - কুড়ি জন হতে হতে এখন তা ষ্টেডিয়ামে ক্রিকেট খেলার অগ্রিম টিকিট কিনতে জড়ো হওয়ার মতো মানুষের দঙ্গলে পরিনত হয়েছে । লোকটা দাঁড়িয়ে ছিলো একটু উঁচুতে, সম্ভবত কোন পান-বিড়ি বিক্রেতার টুলখানার উপরে । পান বিড়িওয়ালাও এই ভীড়ে মুফতে একটা মোক্ষম সুযোগ পেয়েছে বেশি বেশি বিক্রির। তাই টুলটা ছেড়ে দিয়েছে সে । বলা যেতে পারে, এই আত্মত্যাগ তার একটা ইনভেষ্টমেন্ট । লোক যতো জমবে তার পান বিড়ি ততো বেশি চলবে । এটা একটা বিজনেস পলিটিক্স।
হলদে চেক চেক সার্ট গায়ে, আটোসাটো জিন্স পরা, পায়ে সস্তা রাবারের স্যান্ডেল আর ছোট করে ছাঁটা চুলওয়ালা একজন, সম্ভবত বেকার; চেচিয়ে বলে উঠলো -
- ভাইজান এট্টু জোরে জোরে কইবার পারেন না ? পেরথম থন কন ।
লোকটা তার হাতের মাইকে বারদুয়েক হ্যালো ...হ্যালো বলতেই ভীড়টা নড়েচড়ে উঠলো । ঠেলাঠেলি গুঁতোগুঁতি বাড়লো খানিকটা । সেই দোলায়িত ভীড়ের মাথার উপর দিয়ে ভেসে এলো লোকটার কিছুটা ফ্যাঁসফেঁসে গলা -
“ আমি আইজউদ্দিন । মনে লয় আম্নহেরা আমারে চিনতে পারছেন । ঢাহা ভার্সিটি এলাকায় আর পুরাইন্না ঢাহায় আমি অনেক আগে দেওয়ালে চিকা মারছিলাম এইডা কইয়া -“ কষ্টে আছি - আইজউদ্দিন ” । মনে আছে আম্নহেগো ? ভার্সিটির পোলাপানে আমারে লইয়া কতো কেচ্ছা বানাইছে কিন্তুক দুঃখ, কেউ আমার খোঁজ লয় নাই । আমি আছি না মইররা গেছি, হেডা দ্যাকতে আয় নাই কেউ । ভাবছেন দেওয়ালের লেহা দেওয়ালেই পইররা থাহে । দেওয়ালের লেহা দেওয়ালেই থাহেনা , থাহে আমাগো জীবনেও । আম্নহেরা এক একজন হেই দেওয়ালেরই আইজউদ্দিন । আইজ এক দেওয়ালের আইজউদ্দিন আমনহেগো হোমকে খাড়াইন্না ....... “
ভীড়ের ভেতরে ফিসফিসানী শুরু হয়ে গেলো জোড় কদমে যেন গোপন কোনও ষড়যন্ত্রের শলা-পরামর্শ চলছে তাদের ভেতর । হরেক কিসিমের মানুষের জটলার এখান ওখান থেকে বুদবুদের মতো ফুস করে উঠে বাতাসে মিলিয়ে গেলো কিছু হাততালি । পান বিড়িওয়ালার দোকানে সিগ্রেট কেনার হিড়িক পরে গেলো । পিচিক করে কেউ একজন পানের রস ফেলতেই তা পাশের লোকটার পায়ে গিয়ে পড়ায় শুরু হয়ে গেলো খিস্তি খেউর । কোনে দাঁড়ানো দু’জন হাবলা টাইপের যুবক অবাক দৃষ্টিতে হাত নেড়ে নেড়ে একজন আরেকজনকে কি যেন বোঝাতে লাগলো । সম্ভবত তারা ভার্সিটির ছাত্র । আইজউদ্দিন নামটি শুনে হয়তো তারা বেশ মজা পেয়েছে বা অবাক হয়েছে অথবা হতে পারে তাদের স্মৃতিতে কোনও ঘা লেগেছে ।
“----তো ভাইসাবেরা , আম্নহেরা আমারে পাগল ভাইব্বেন না । আমি আম্নহেগো সমাজের বানাইন্না বিভেদের শিকার হইয়া চিপার ভিত্রে আছি । এই বিভেদ দিয়া আম্নহেগোও রেহাই নাই । আম্নহেরাও ভাগে ভাগে ভাগ । যাইবেনই বা কই ? দ্যাশটাই তো দুইভাগ তিনভাগ কইররা হালাইছেন আম্নহেরা । এ্যাহোন আম্নহে কইবেন , এগুলা তো আমরা করি নাই , করছে রাজনীতিবিদরা আর সরকার । তা আমি জিগাই, আম্নহেরা আছেলেন কই ? এই আইজদ্দিন আম্নহেগো জিগাইতেছে --আম্নহেরা আছেলেন কই ? জবাব দেন ভাইসাবেরা , কই ছিলেন তহোন, দ্যাশটা যহোন দুইভাগ তিনভাগ হয় ? ”
ভীড়ের ভেতরে একটা গুঞ্জরণ ওঠে । মৌমাছির গুনগুন শব্দের মতো শুরু হয়ে তা যেন মাথার উপর থেকে উড়ে যাওয়া এ্যারোপ্লেনের গুমগুম শব্দের মতো হতে থাকে ভারী । কিছুটা ঠেলাঠেলি শুরু হয়ে গেলে পূবদিকের গেটের ওখানে, জনতার ভেতর একটা চাপা আতঙ্ক ভর করে । লোকের জমায়েত দেখলেই কিছু না বুঝেই সেই স্রোতে গা ভাসিয়ে দেয়ার যে স্বভাব আছে বাঙালীর , তা পরিষ্কার হলো জনতার ঠেলাঠেলিতে । পথশোয়া মানুষেরা যারা শিতলতম ও ছায়াফেলা বারান্দা ও পেভমেন্ট, যেখানে তারা রাতে শুয়ে থাকে ছালার চট, কার্ডবোর্ড বাক্স বিছিয়ে, নবাগত জনতার চাপ সেই সব পথশোয়া মানুষদের স্থানচ্যুত করে দিলে তারা সরে গিয়ে গণশৌচাগারের দরজার কাছে বসে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রইলো এই অদ্ভুত গণজমায়েতের দিকে ।
“ ----বড় সরকারের মতো ছোড ছোড সরকারও তো হাটতেছে একই রাস্তায় । উত্তর -দক্ষিন । এই যে পাশেই রইছে যে টয়লেট হেহানেও তারা বানাইয়া রাকছে বিভেদ । পুরুষ - মহিলা আলাদা আলাদা । পেসাব করতে ২ টাহা, পায়খানা - ৩ টাহা, গোছল-৫ টাহা । বাসেও পুরুষ আর মহিলা সীট আলাদা আলাদা। এই রহম ছোডখাডো -মাঝারী-বড় বিভেদ আম্নহেগো ভিত্রে সব খানেই আছে । আছেনা ? শিক্ষকগো মইদ্যে ভাগ । লাল, নীল , সাদা , সবুজ । প্রাইমারী-হাইস্কুল আর কলেজের শিক্ষকগো মইদ্যেও বিস্তর ফারাক । প্রাইমারীয়ালাগো কোনঠাসা কইররা রাখছেন আম্নহেরা । ভাগ কইররা রাকছেন টুফিওয়ালা মাদ্রসা-মক্তবের পোলাপান আর স্কুলের পোলাপানেগো ভিত্রে । ভাগ করছেন আস্তিকে , নাস্তিকে । সুশীল আর বেসুশীলে । ভাগ করছেন শাহবাগে আর হেফাজতে ।
আমার ছাত্রভাইগো মইদ্যেও ভাগ আর ভাগ । এক ভাগ, পাবলিক ভালো কিছু নিয়া রাস্তায় নামলেই পিডাইতে আহে ; আর এক ভাগ রাস্তার পাবলিকের পক্ষে নামে । পথে-ঘাডে যে সোজা হইয়া হাডবেন হের উপায়ও নাই । ফুটপাতগুলারেও ভাগ ভাগ কইররা আম্নহেরা ইজারা লইছেন । রাস্তা-ঘাড-মাঠ-ময়দান সব ভাগ কইররা হালাইছেন । কোনায় -চিপায় খুপড়ি ঘর বানাইয়া সাইনবোর্ড লাগাইছেন অমুক দল , তমুক দল , অমুক শ্রমিক দল, তমুক শ্রমিক দল। আম পাবলিকের খেদমত করার মহান ইচ্ছা লইয়া হেহানে আম্নহেরা দিনরাইত ক্যারম-লুডু খেলেন আর গাঁইটের পয়সা দিয়া দ্যাশ ও জনগণের সেবা করবেন বইল্লা সুযোগ বুইজ্জা গলা ফাডান। কিন্তুক খিচুরী-বিরানী খান এই খয়রাতী জনগনের পয়সায়।
এইযে সব ভাগ কইররা লইয়া গেছেন হেই সব ভাগের পয়সা গেছে কই, কার পকেটে ঢোকছে ? হেই পয়সা কি সরকারের ট্রেজারীতে জমা হয় ? হয়না । হেহানেও আছে ভাগ, কারে কতো ভাগ দেতে হইবে, সব হিসাব করা । অর্থমন্ত্রীরে জিগান, হে কইবে এই টাহা কোনও টাহা না । ”
হাসির ফোয়ারা ছুটলো এই মিশ্র সমাগমের মাঝে । লোকটা, যে তার পরিচয় দিচ্ছিল আইজদ্দিন বলে, সেটা ঠিক হলেও হতে পারে কিম্বা না, হতে পারে সে এক সম্ভাবনা সঞ্জাত কিছু, অলীক কিছু ভ্রম । আমাদের ভ্রম , যারা জীবনের বস্তুগত সব বিষয়আশয়ে পুষ্ট ছিলাম , কিন্তু কখনই যাদের অভিজ্ঞতায় ছিলোনা বৃক্করসের ধাবন, ব্যাপক প্রতিবাদে অংশগ্রহণ থেকে আসা ন্যায্য ক্রোধের স্বাদ । তার কথা ছাপিয়ে দঙ্গলের কথাগুলো এমন জট পেঁকে গেলো যে , কে কি বলছে শোনা ও বোঝা গেলোনা তার সব ।
সমাবেশে মানুষ বাড়ছে ধীরে ধীরে । দীর্ঘ গরম ক’টা দিনের ভিক্ষা থেকে তমসাচ্ছন্ন ও ক্লান্ত ভিখিরিরা, যারা ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিলো কিছু ভিক্ষের আশায়, তারাও বাড়াচ্ছিলো ভীড়ের আয়তন । তাদের চোখেমুখের ভাব ছিলো এমন যে, তারা যেন এসেছে সেইখান থেকে , আরেক বিশ্ব থেকে । সে জমায়েতে বর্ণ-ধর্ম, জাত-পাত,গরীব -মধ্যবিত্ত, ঠেলাওয়ালা-বাদামওয়ালা, খুচরা-পাইকারী ক্রেতা, কোর্টের মহুরী-দালাল, গুলিস্থানের চাঁদাবাজ-মাগীবাজ ইত্যাদিতে সবাই একাকার হয়ে গেলেও পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছিল বেশ কিছু উপস্থিতি, যাদের গায়ে চড়ানো ছিলো খাঁকি উর্দি । তারা ছড়িয়ে ছিটিয়ে জটলা দেখছিলো একটু দূর থেকে , হাতে ছিলো শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার মারনঘাতী যন্ত্র । তাদেরকে আগেও যেমন জনতার বন্ধু মনে হয়নি এখনও তাদের হাবেভাবে তেমন মনে হচ্ছিলো না । তারা পায়চারী করছিলো নিজেদের বৃত্তের ভেতর থেকে । যে বৃত্ত ভাঙার সাহস নেই কারও । এসব বৃত্ত, লক্ষন রেখার মতো তাদেরই আগলে রাখে যারা এদেরও আগলে রাখে সযত্নে, নিজেদের ক্ষমতা ও বলবীর্য্য রক্ষার তাগিদ থেকে ।
----“ খেলতে খেলতেও আম্নহেরা ভাগ হইয়া গেছেন আরজেনটিনা-বেরাজিল-জারমানীতে । হেগো দ্যাশের পতাকায় আকাশ ঢাইক্কা হালাইছেন । ঢাইক্কা হালাইছেন নিজেগো বিচারবুদ্ধি আর বিবেকটারেও । এক দ্যাশের ফ্লাগ যে আরেক দ্যাশে উড়ান যায়না এই জ্ঞায়ানডাও আম্নহেগো হয় নাই । দ্যাশপ্রেম যে আম্নহেগো মইদ্যে মোডেও নাই এইডাই হের পেরমান । কইবেন , খেলার মইদ্যে কোনও রাজনীতি নাই । রাজনীতি কোনহানে নাই ? এই যে আম্নহেরা আমার কতা হোনতেছেন হেহানেও মনে মনে আম্নহেরা রাজনীতি করতেছেন । কতা যাগো পছন্দ হইতেছে হেরা তালি দিতেছেন। আর যাগো পছন্দ না, হেরা মনে মনে কইতেছেন - “হারামজাদা কয় কি !”
কি ভুল কিছু কইছি ? আম্নহেরাও আমারে আম্নহেগো নিজের নিজের দলের লোক ভাবতেছেন । আসলে আমি কোনও দলের না , আমি আমজনতার । আমার কোনও কোডা নাই । ”
সমাগমের মাঝে জোরেসোরে একটা দোল উঠতেই বোঝা গেলো জনতা বেশ মজা পেয়েছে লোকটার কথায় কিম্বা দোলাটা হতে পারে তাদের কথাই আরেকজনার মুখনিঃসৃত হচ্ছে বলে ভেতরে ভেতরে উচ্ছসিত শঙ্কা থেকে উদ্ভুত । এ দোলা প্রথমে নদীর জলে হাওয়া লাগার মতো, যা পরে হাওয়ার তোড়ে তোড়ে দু’কূল ভাঙার মতো প্রবল হয়ে ওঠে ধীরে ধীরে । নিজেদের অনুক্ত উচ্চারণ এই ভরা মাহফিলে কেউ একজন সবটা এভাবে উগড়ে দিচ্ছে বলে ভয় আর কৌতুহল নিয়ে একটা অনিশ্চয়তার বাতাস যেন একটা চক্কর খেয়ে গেলো সমাগমের চারধারে । আবারও কিছু বলতে শুরু করলে হ্যান্ডমাইকের আওয়াজটা উদ্ভট কিচকিচ আর খরখর করে উঠতেই জরিনা ইলেক্ট্রনিক্সের এক কর্মচারী তার হাত থেকে মাইকটা টেনে নিয়ে তাতে গোটা দুই চড়থাপ্পড় দিতেই আবার চালু হলো মাইকটা ।
-----“ তো ভাইসাব ; এই যে জরিনা ইলেক্ট্রনিক্স আমারে হেল্প করতেছে এর জন্য আগেই জরিনা ইলেক্ট্রনিক্সরে আমার ধন্যবাদ জানান উচিত ছিলো , ভুল হইয়া গেছে ; এবারে হেগো ধন্যবাদ জানাই । এডাও কিন্তু একটা রাজনীতি ; প্রচারের রাজনীতি । আপনেরা জরিনা ইলেক্ট্রনিক্সের নামডা হোনলেন । নামডা প্রচার হইয়া গেলো । প্রচারেই তো প্রসার ? এইভাবেই তো নিজের নিজের নামে অমুক শুভেচ্ছা , তমুক শুভেচ্ছার পোষ্টার ছাপাইয়া দ্যাশটারে ভইররা হালাইছেন । এডাও তো একরহমের নিজের প্রচার । ”
যতো দরকার তার চেয়ে বেশী হাসি ছিলো তার মুখে এবং সে সৃষ্টি করেছিলো এক আনত, কিছুটা আনাড়িসুলভ বশংবদের আবহ । জরিনা ইলেক্ট্রনিক্স এর অবস্থানগত দ্রাঘিমাংশ -অক্ষাংশ নির্ধারণে সমবেত জনতার মাথা উপরে -নীচে, ডাইনে-বায়ে, কোনাকুনি, আশেপাশে ঘুরে গেলে তাদের দৃষ্টিতে আবার ধরা দিয়ে গেলো প্রতিদিনের দৃশ্যমান অথচ অবহেলা , অদেখায় পড়ে থাকা হোর্ডিংগুলো ।
“ স্বপ্ন নীড়” মতিঝিল থেকে মাত্র ১০ মিনিটের পথ । আপনার স্বপ্নের আবাসিক এলাকা ......।
মাত্র ১ মিনিটেই সব জীবানু সাফ - লাইফবয় হ্যান্ডওয়াস ........ ।
হয়তো ইতিহাস ও মানবসভ্যতার সংঘাতের একজন ছাত্রের তুলনামূলক পরিভাষায় এর বিবরণ বা গোপন ব্যাখ্যা হতে পারে এমন - আমজনতার স্বপ্নের কোনও নীড় হয়না যেখানে ১০ মিনিট কেন , ১০ সহস্রাব্দেও যাওয়া সম্ভব নয় কারো । সমাজের যতো নোংরা জীবানু থেকে বাঁচাতে তেমন একটা হ্যান্ডওয়াস নিয়ে কে আসবে, কবে !
-----“ এই যে স্বপ্ননীড়ের সাইনবোর্ড দ্যাকতেছেন , এইরহমের স্বপ্ননীড় তো আম্নহেরা এদ্যাশে বানান নাই । ব্যাংকের টাহা , শেয়ার বাজারের টাহা নিয়া অন্য দ্যাশে স্বপ্ননীড়ের ভিত গাড়ছেন । আম্নহেগো মাইয়া পোলা হেই দ্যাশে থাহে । আম্নহে থাহেন এহানে পইড়রা। ক্যান ? হেই স্বপ্ননীড়ডারে সোনা দিয়া বান্দাইতে টাহার যোগান দেওয়ার মতো টাকশাল , এই দ্যাশটা ছাড়া আম্নহে আর কোতায় পাইবেন ? এই দ্যাশটা তো আম্নহেগো টাহার খনি । কয়লা খনির কয়লা দিয়া দাত মাইজজা হালাইছেন বুড়িগঙ্গায় , হের লইগ্যাই নদীডার পানি এতো কালা কালা । মাঠ-ঘাট তো আগেই খাইছেন এহোন পাত্থরও খাইতেছেন । আম্নহেগো এই খাই খাই যায়না । কিভাবে কি খাইতে হয় সব কায়দা-কানুন আর ইঞ্জিনিয়ারিং আম্নহেগো মুখস্ত। রাস্তা, দালান, কালভার্টে দেশি প্রযুক্তি ব্যবহার কইররা রডের বদলে বাশ দিয়া বানাইন্না শিইক্কা হালাইছেন আম্নহেরা । এর চাইতে বড় সাশ্রয়ী আবিস্কার আর কি আছে ? এই উদ্ভাবনের জইন্যো আম্নহেগো একটা নোবেল প্রাইজ পাওনা হইছে .......................”
লোকটার কথা চাপা পড়ে গেলো সমবেত জনতার বাঁধভাঙা আবেগের ব্যক্ত সব মূহর্মূহ ধ্বনিতে । তাতে ভয় পেয়ে আশেপাশে থাকা গুটি কয়েক কাক উড়ে যেতে যেতে ভয়ার্ত চীৎকার জুড়ে দিলে তা মিশে গেলো জনতার ধ্বনির সাথে। হুড়োহুড়ি লেগে গেলে সেখানে নতুন করে জড় হতে থাকলো বাস্তুচ্যুতরা, যারা গা-গেরাম থেকে এসে আশ্রয় নিয়েছিলো নগরীর কোনাকাঞ্চি, ফুটপাথ, পার্ক, রেলষ্টেশন আর বাসস্ট্যান্ডের ঘুপচিতে । যারা আবির্ভুত হতো দলে দলে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মসৃন গাড়ীগুলোর চারপাশে । বিক্রি করতো কাপড়ের ঝাড়ন, পাটের তৈরী হাতব্যাগ, ফুলের দোকান থেকে কুড়িয়ে আনা ফুল, মোবাইল ফোনের চার্জার, ইয়ার ফোন , বাঘ-হাতি আঁকা শিশুদের বই, বেহেশতি জেওর- সহিহ হাদিস আর নামাজ শিক্ষা- সাধারন জ্ঞানের বই, ঝিলমিল করে জ্বলে নেভে এমন সব খেলনা, পিস্তল, বানিজ্য বিষয়ক সাময়িকী, বিল ক্লিনটন -নেলসন ম্যান্ডেলার আত্মজীবনী, ৬৪জেলার ম্যাপ, সেফটিপিন, চুলের ফিতা-রাবার ব্যান্ড, সস্তার নেইল পলিশ-কানের দুল । বানের জলের মতো তাদের আগমনে জনতার পরিধি ছড়িয়ে গেলো খোলা জায়গাটা ছাড়িয়ে রাস্তায় । রাস্তায় জ্যাম লেগে গেলে একটা রগূড়ে খেলা জমে ওঠার আশায় খাকি উর্দিপরাদের মাঝেও জমতে থাকলো অস্থিরতা আর ঘৃনা । তাদের কাজের এই উটকো , নির্দয় দিকগুলোর প্রতি বিদ্বেষ ।
এইসব খাকি পোষাকধারীদের দলনেতার ছিলো একজন আঁতেলের অভ্রান্ত, সিগ্রেট খাওয়া ঠোটের গভীর ছিনালিপূর্ণ মুখচাপা হাসি, যা ছিলো কূটনৈতিক মহল্লায় থাকা মানুষজনের মতো ধোয়াশায় ভরা । যার অর্থ হতে পারে দুই, তিন বা বেশী রকমের । প্রশ্রয়ের বা নিগ্রহের কিম্বা জিঘাংসার বা স্রেফ উপরিওয়ালাদের ( পুতুল নাচের দড়ি টানাওয়ালাদের ) খুশি রেখে নিজেদের উচ্চপদ লাভের প্রতিযোগিতার ।
এইমাত্র তাদের সাথে এসে জমা হলো এক ভ্যান কালোউর্দির লোক । এরা বসে রইলো তাদের বহন করে আনা একটা লক্করমার্কা পিকআপের লোহার রড ধরে । ৫ মিনিটের পথ ২৫ মিনিটে পাড়ি দিয়ে পিকআপটিকে আসতে হয়েছে সৃষ্টিছাড়া আর বিশৃঙ্খল ভাবে চলা বাস-টেম্পুর ঘসা থেকে নিজেদের গা বাঁচিয়ে , রিক্সা-ভ্যান ধাক্কা লেগে উল্টে না যায় সেদিকে সতর্ক চোখ রেখে রেখে আর যত্রতত্র রাস্তা পার হওয়া পথচারীরা যাতে চাপা না পড়ে তার জন্যে সন্ত্রস্ত থেকে । এখন অনেকটা নির্লিপ্ত পিকাআপের আরোহীরা । খাকিউর্দিরা জমে ওঠা বক্তৃতার ক্রমশঃ গরম হয়ে ওঠা আবহাওয়াটাকে সামাল দিতে না পারলে দৃশ্যপটে তাদের নেমে পড়ার কথা । কালোউর্দিরা তাই অপেক্ষায় । ধোপ-দুরস্ত কালো পোষাকের ভেতরে এঁটে থাকা মুখগুলোয় যদিও ক্লান্তির ছাপ । সুরক্ষিত প্রাচীরের ভেতর বসবাসকারী সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি বিশেষের অঙ্গুলি হেলেনে , সব অপবাদ গায়ে মেখে জীবনটাকে যারা গলার কাছে আটকে রেখেছে তা থেকে উঠে আসা বিবমিষার বিষাদ মাখা এক একটা মুখ ।
....“ তো আমরা হইলাম বিশ্ব-বেহায়া আর আহাম্মক -বেকুব ! আমার-আম্নহের দ্যাশটা লুডেপাডে , খাই খাইতে যে ফোপড়া হইয়া গেছে , হেদিগে আমাগো নজর নাই, হুশ নাই । নিজের ঘরের, বাসাবাড়ীরও খবর নাই । লাখ টাহা খরচ কইরা পরের পোলার জন্মদিনে শুভেচ্ছার পোস্টার ছাপাইয়া রং করা দেয়ালগুলার চেহারার বারোটা বাজাইছেন । নিজের কয়ডা পোলা , হেগো জন্মদিন কার কবে , হেডা জিগাইলে আম্নহে কইতে পারবেন না । খবর নাই নিজের পোলাপানের লেহাপড়ারও । অন্য মাইনষে লেহাপড়া না কইররা কি ডিগ্রী পাইছে , হের লইগ্যা পাবলিকের পাছায় বাঁশ দিয়া রাস্তা আটকাইয়া রাকছেন আনন্দ মিছিলে মিছিলে । আমার-আম্নহের মতো এরহম বেকুব আর কেডা আছে ? আম্নহেরা হইছেন, বেগানা শাদী মে আবদুল্লাহ দিওয়ানার মতো ।
তয় আম্নহেগো বেকুবও বা কই ক্যাম্নে ? আম্নহেরাই আসলে সবাই ধান্ধাবাজ আর শিয়ালের মতো চালাইক্কা । এতে আম্নহেরা লাভে লাভ খোজেন । নেতাগো চোহে পড়লে যদি ভাগ্য খুইল্লা যায় , হেলে ছাপড়া ঘরডারে ভাইঙ্গা দালান উডাইতে , বিড়ি টানা বাদ দিয়া বেনসন ধরতে আর কয়দিন ? আম্নহেগো এই খচ্চইররা স্বভাব বুইজ্জাই তো আসল মানুষেরা আম্নহেগো মাতায় কাডাল ভাইঙ্গা খায় । আম্নহেরাও মাতাডা আউগাইয়া দ্যান যদি কাডালের একটা দুইডা কোয়াও আম্নহেগো কফালে জোডে । এই রহম লোভের চেতনা-ই আম্নহেগো খাইছে ...................“
কথা বলতে বলতে ঠোটের প্রতিসাম্য বদলে লোকটার চেহারাটা হয়ে উঠেছিলো উদ্ধত । এটা ছিলো তার তীর্যক দৃষ্টি , তার মুখের গড়ন , অনাহারী গালের মাংশপেশীতে টান ধরা প্রায় অদৃশ্য ক্ষতচিহ্ণ । একজন জ্ঞানীর মতো তার বিড়ি-সিগ্রেট-পান চর্চিত ঠোট থেকে উপচে আসা প্রতিটা শব্দ লুফে নিতে চেষ্টা করে যাচ্ছিলো সমবেত জনতা । তারা হয়তো বুঝতে চেষ্টা করছিলো -নিজের নিজের অবস্থান ।
লোকটার প্রলাপ , যদি তা প্রলাপ হয় ; কিম্বা আলোর বৃত্তের ঠিক বাইরে এযাবৎ ঝুলে থাকা অন্ধকারে , রিক্সায় পিঠ ঠেকিয়ে বিশ্রাম নেয়া সত্যালোকের স্পটলাইটটি ঠিক কোনখানে গিয়ে আঘাত করছে তা মেপেঝেপে নিচ্ছিল জনতার কেউ কেউ । আঁকিবুঁকি কেটে যাচ্ছিলো তাদের মগজ বা মনের নোটবুকে । তারা সংশয়ে ছিলো , অনুকম্পা যদি হয় ন্যায়শাস্ত্রের মর্মবস্তু , দুঃখ-দুর্দশা তাহলে হবে সংক্রামক এবং সুখ হবে সকল সন্দেহের বস্তু । যেসব কলকাঠি নেড়ে তারা পার করে এসেছে এ যাবৎ যতো দৈনন্দিকতা, তার অনেক কিছুই যুক্তির অতীত, অনিশ্চিত, অবৈধ, অন্ধকার আর রহস্যময় । সব গোপন, পাপোন্মুখ আর অকথ্য জীবনযাপনের সামগ্রী, কে কতোটুকু ভোগ করছে তার ছবি বায়োস্কোপের মতো ভেসে যাচ্ছিলো তাদের চোখে ।
বাকীরা ছিলো তাদের নিজ নিজ চিন্তা ও কর্মের পরিধির মধ্যে । উদাস মুখ করে , কিছু জানেনা এমন ভাব ধরে কেউ কেউ অন্যের পকেট সাফাইয়ের কাজটি করার সুযোগ খুঁজছিলো । তারা এক একটা দল , সুযোগ সন্ধানী, নিজেদের মতো । যেমন দল আছে বাটপারদের , নগর বনিতাদের, হকারদের । জনতার ভীড়ে মিশে গিয়ে তারা সবাই মিলে একটা মচ্ছবের অপেক্ষায় শান দিচ্ছিলো নিজেদের নিজেদের এলেম এর অস্ত্রে ।
খাকি উর্দিওয়ালারাও সতর্ক রেখেছিলো তাদের শ্রবন । ঢিল দেয়া মাংশপেশীতে খানিকটা সচলতার আভাস দেখাতে সচেষ্ট ছিলো কালোউর্দির লোকেরাও ।
“............আম্নহেরা সুবোধরে পলাইয়া যাইতে কইছেন । সুবোধরে ক্যান পলাইতে কইছেন ? সুবোধ সূর্য্যডারে খাচার বুহে লইয়া যে পলাইন্না দৌড় দৌড়াইতেছে হেমন দৌড়ানী তো আম্নহেরা জম্মের পর হইতেই দিতেছেন । আম্নহের পোলামাইয়ারাও দেবে । সুবোধরে কইছেন হের নাহি কোনও ভবিষ্যৎ নাই । ভবিষ্যৎ তো আম্নহের পোলামাইয়াগোও নাই । আম্নহেগো খাই খাই আর ভাগাভাগিতে পইররাই তো দ্যাশটার ভবিষ্যৎ অন্ধকার । সুবোধরে কইছেন, এহোন সোমায় ঠিক না । সোমায় কবে ঠিক আছিলো ? একাইত্তোইরে ঠিক আছিলো ? আম্নহেরা যুদ্ধ কইররা মুক্তির সূর্য্যডারে উডাইছেন না ? হেই আম্নহেরাই এহোন সোমায় ঠিক না কইয়া হেই সূর্য্যডারে লইয়া সুবোধরে পলাইয়া যাইতে কইতেছেন । কই যাইতে কইতেছেন ? আম্নহেগো সোমায় কবে হইবে , কইতে পারেন ? কার ডরে , কিসের ডরে আম্নহেগো সোমায় ফুরাইয়া গ্যাছে ? এই তো কোন দ্যাশে জানি রোড এক্সিডেন্টে মাত্র ১৪ জন পাবলিক মরছে বইল্লা সড়ক মন্ত্রী আর খোদ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীরে সহ ৩ মন্ত্রীরে সরাসরি বরখাস্ত করা হইছে ! আমাগো দ্যাশে পেত্যেকদিন তো এর চাইয়া বেশী মরে । বাসের চাপায় মরে ,লঞ্চ ডুইব্বা মরে, ধর্ষনের চোডে মরে । হেলে রোজ কয়জন মন্ত্রীরে বরখাস্ত করা লাগে ? অংক কইরা কন, অংক বোজেন তো ? অংক পারলে হিসাব কইররা দ্যাহেন দ্যাশে এতোদিনে কোনও মন্ত্রী থাহার কতা না ............. “
জনতার সমাবেশের ভাব ও ভাষার দিকে, তাদের অস্থিরতা আর নৈর্ব্যক্তিক চলাফেরার দিকে দৃষ্টি দিলে মনে হতে পারে এটা ছিলো লোকটার একটা সহযোগিতামূলক ঝুঁকিপূর্ণ উদ্যোগ । তাদের শত্রুদের চিনতে শেখানো যাতে তাদের ও তাদের পরবর্তী প্রজন্মের লড়াই করার পালা যখন আসবে তখন তারা ব্যাপারটা “ছাত্র আন্দোলন” এর মতো কিছু একটা সংগ্রামে যেন নেমে পড়তে পারে ।
অফিসফেরৎ কেরানী , ঘরে ফিরে যেতে উদ্দ্যত অসংখ্য বেকার মজলুম মানুষ , পরিশ্রান্ত দিন-মজুর, নির্মান শ্রমিক, বাস-টেম্পুর হেল্পার, সিএনজির ড্রাইভার , টেম্পুর যাত্রী, পকেটমার, হকার, ধান্ধাবাজ, কালো গাউনের উকিল আর তাদের মহুরী , জিন্স পড়া ছাত্র , কর্মজীবি মহিলা, সরকারী আমলা, জুতো-প্যান্ট বিক্রয়কারী, চাটুকার, রাস্তার মাস্তান- নেতা- পাতিনেতা , পান-বিড়িওয়ালা, দেহ পসারিনী, টোকাইরা যেন এই মূহুর্তে আবদ্ধ হয়ে গেছে একটা ঘোরের পৃথিবীতে । আইজদ্দিন কিম্বা আইজদ্দিন নয় এমন লোকটা যেন চিনিয়ে দিচ্চে সেই পৃথিবীটাকে যে পৃথিবীটা সম্পূর্ণ আলাদা একটা পৃথিবী- গাঁথুনিহীন, পথহীন, আলোহীন, নিয়মহীন, বন্য, বিপদজনক এক পৃথিবী, যেখানে বাস, ট্রাক, রিকসা, সাইকেল , ভ্যান , ঠেলাগাড়ী আর পথচারীরা টিকে থাকার জন্যে গুতোগুতি করছে দিনরাত ।
জনসম্মুখে এমন কাজ তাকে যে সময়ের নিয়ন্ত্রকদের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেবে, এটা হয়তো লোকটা ভেবেছিলো কিনা , না কি ভাবেনি ; জানা গেলোনা। তার উগড়ে দেয়া কথাগুলোতে চাবুক পড়লো যেন কিছু লোকের গায়ে । “ ধর .... ধর” করে তাদের গলার স্বরগ্রাম উঁচু হলে লোকটার কথা চাপা পড়ে গেলো তাতে । হুড়োহুড়ি , ঠেলাঠেলিতে তার হাতের হ্যান্ডমাইকটা ছিটকে গেলো যেন কোথায় । “ শালারে পিডা....” বলেই কে একজন হাতের হকি ষ্টিক নিয়ে ছুটে এলে তার প্রথম আঘাতটা এসে লাগলো লোকটার কোমড়ের কাছটাতে । মানুষটা টুলের উপর থেকে মাটিতে পড়ে গেলে সেখানটা ফাঁকা হয়ে গেলো নিমিষে । সে ফাঁকা জায়গাতে দেখা গেলো রাম-দা হাতে কিছু তরুনকে ।
খাকি উর্দিপড়াদের হুংকারে আর লাঠিচার্জে, আগত তরুনদের হাতে রাম-দা দেখে জনতা ছত্রখান হয়ে গেলে সমাবেশের জায়গাটিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতে দেখা গেলো জুতো-স্যান্ডেল, রুমাল, সিগারেটের প্যাকেট, ছেড়া কাগজ, পানের পিক । এতোক্ষন যারা যারা নিজেদের এলেমে ধার দিচ্ছিলো তারা সুযোগ বুঝে নেমে পড়লো কাজে । ঘন্টাখানেকের ভেতরেই সমাগমের প্রাঙ্গনটি সাজলো আবার আগের মতোই জন কোলাহলে । মাঝখান থেকে লোকটা হাপিস হয়ে গেলো খাকিউর্দিদের সাথে আনা কালচে নীল রঙ ভ্যানের গহ্বরে । ধুয়েমুছে গেলো বাতাসে ভেসে থাকা আইজদ্দিন নামের লোকটার কথা । উড়ে গিয়ে লাইটপোষ্টে এতোক্ষন বসে থাকা কাকগুলো ডানা ঝাঁপটে তারস্বরে ডেকে উঠলো শুধু । এটা তাদের একধরনের প্রতিবাদ কিনা , আইজদ্দিন নামের লোকটা ঠিক বুঝে উঠতে পারলোনা । । এছাড়া কোথাও কোন ছন্দপতন হলোনা , না পথচলতি বাস-ট্রাক-টেম্পুর প্রতিযোগিতায় , না নগরের চিরায়ত দৃশ্যপটে ।
শুধু দিনটা গড়িয়ে গেলো সন্ধ্যা থেকে রাতে আর একটি দিনের অপেক্ষায় ....
[ পরিভাষা ---- মনে লয় > মনে হয় । আম্নহেরা > আপনারা । আম্নহেগো > আপনাদের । দেওয়ালের লেহা > দেয়ালের লেখা । পইররা থাহে > পড়ে থাকে । খাড়াইন্না > দাঁড়ানো । হেহানেও > সেখানেও । হালাইছেন > ফেলেছেন । হাডবেন > হাটবেন । জ্ঞায়ানডাও > জ্ঞানটিও । মোডেও > মোটেও । পেরমান > প্রমান । হেরা > তারা । কোডা > কোটা । হের লইগ্যাই > সে জন্যেই । শিইক্কা > শিখে ফেলা । লুডেপাডে > লুটেপাটে । হেদিগে > সেদিকে । জিগাইলে > জিজ্ঞেস করলে । ক্যাম্নে > কি করে ।
হেলে > তাহলে । মাতাডা > মাথাটি । আউগাইয়া > এগিয়ে দেয়া । কফালে জোডে > কপালে জোটে । খাচার বুহে > খাঁচার বুকে । সোমায় > সময় । একাইত্তোইরে > একাত্তুরে । পেত্যেকদিন > প্রতিদিন । চোডে > চোটে । ]